#নয়নতারা
পর্ব ৯
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
সকালবেলা তানিয়ার মা রাবেয়া বেগম হাজির।
—-কেমন আছো মা?
—-আছি গা।তুই কিরাম আছোস?
—-এই তো আছি।
—-কি রে তুই এতো শুকোয় গেছিস ক্যান তানি?হায় হায় মোর তরতাজা মাইয়াডা এমন হইয়া গেছে।ও জামাই তুমি দেহো না।হায় হায় রে।
শাশুড়ির কথা শুনে ফজলে শেখ বেজায় লজ্জাতে পড়লেন।
—-কি বলেন মা?ঠিকই তো আছে তানিয়া।
—-মা ওনাকে বলে তুমি কি করবে?উনি কি কখনো আমার খেয়াল করেন নাকি?
তানিয়া একটু নাক টেনে কান্নার ভান করলো ফজলে শেখের সামনে।তানিয়া আর রাবেয়া বেগমের ঢঙ দেখে রাগে গা জ্বলছে রাহেলা বেগমের।
—-আইছে আরেক কালনাগিন।হের মাইয়ার জন্যি এট্টু শান্তি নাই মোর সংসারে।এইবার হে আইছে।না জানি দুই নাগিন মিলা কি করবানে।
রাহেলা বেগম মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করছেন।
—-তানিয়া মাকে নিয়ে ঘরে যাও।
—-কোন ঘরে যাব?একটা ঘরে তো আমরা থাকি।একটাতে মা।আরেকটাতে সারাদিন মিষ্টি খেলনা ফেলে নোংরা করে রাখে।
—-মিষ্টির ঘরে দেও।মিষ্টি না হয় আমাদের কাছে শুবে।
—-না কি বলছেন আপনি?আমাদের সাথে কেন শুতে যাবে?
—-তা কি করবে।রাতে তো না হয় ওর ঘরে মা এসে শুতো।মায়ের ঘরের খাট টা ছোট।ওখানে দুজন শুবে কি করে।মিষ্টি এমনিতেই ঘুমের ঘোরে হাত পা ছুড়ে।ও আমাদের কাছে এসে ঘুমাবে।
তানিয়ার সাথে তাল মেলাতে শুরু করলেন রাবেয়া বেগম।
—-আরে জামাই কও ডাকি।মিষ্টিরে তুমাগে ধারে ক্যান শুতি নিবা।ও বড় হইতেছে না।এ হন থেইকা মেয়েরে আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস করাও।
—-কটা দিন আমাদের কাছে শুলে কিছু হবে না মা।তাছাড়া আমি রুবি মিষ্টি তো আগে একসাথেই শুতাম।শুধু তানিয়ার জন্য,,,,,,,,,
—-দেহো জামাই তুমি খালি খালি মোর মাইয়াডারে দুষতেছো।ও তো ঠিক করছে মিষ্টির লগে।বড় হইতাছে।এহন মা বাপের লগে শুইবার কি দরকার।আর মিষ্টি না হয় আমার লগে শুইবে।
রাবেয়া বেগমের কথায় রাহেলা বেগমের আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
—-হ একে মাইয়ারে দিয়া মোর মিষ্টির জেবন ডা জারাজারা কইরা শান্তি হইতেছে না।এহন আইছেন উনি।ওরে হামার দরদী রে।মিষ্টির দাদী এহনো মরে নাই।শোন ফজলে কোনো কষ্ট হইবো না হামার।হামার মিষ্টি হামার লগেই শুইবো।কুনো কালনাগিনীর ধারে না।
রাহেলা বেগম পান চিবুতে চিবুতে কথাগুলো বলে চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে।
—-দেখছেন আপনি।আপনার মা কিভাবে আমার মাকে অপমান করলো।
—-আমাকে বেরোতে হবে তানিয়া।খাবার দেও।
ফজলে শেখ হাতের খবরের কাগজটা টেবিলের ওপর রেখে নিজের ঘরের দিকে গেলেন।
—-দেখলে মা।
—-তুই বাদ দে।মুই কিছু মনে করিনি।আরে ঐ বুইড়া বিটি আইজ আছে কাল নাই।তুই জামাই রে কব্জা কর।হের লিগে তো মুই আইছি।এ কদিন ভালো কইরা জামাই এর মন যোগানোর চিষ্টা কর।এইবার একখান বাচ্চা নে।
তানিয়া বেশ খুশি হলো মায়ের কথাতে।এই সুযোগে সে যদি আবার ফজলে শেখকে হাত করতে পারে।
;;;;;
(প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,আল্লাহর রহমতে ইনশাহআল্লাহ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।)
;;;;;
বিকেল বেলা রাহেলা বেগম বসে বসে পুইশাকের ফল বাচছেন।পাশে বসে মিষ্টি রান্না বাটি খেলছে।
—-দাদীমা এগুলো কি?
—-হেই গুলো পুইশাকের ফল।
—-এগুলো দিয়ে কি হবে?
—-এগুলো ভাজি করুম রাইতের বেলা।
—-আমাকে দুটো দেবে।খাব।
—-না না।এইগুলো শুদো খায় না দাদী।এগুলো রাইনধে খাইতে হয়।
—-ও।ওই লাল লাল ওগুলো কি?
—-এই গুলো ও ফল।এইগুলো রে কয় পাকা ফল।
—-ও।
কথার মধ্যে রাহেলা বেগম পাকা ফলগুলো কুটতে বসলেন।পাক ফলে হাত দিয়ে চাপ দিতেই অনেকটা লাল রঙের মতো রস পড়ে রাহেলা বেগমের হাত রঙিন হয়ে গেল।
—-আআআ দাদীমা রক্ত।
—-কই কই রক্ত?
—-তোমার হাতে।
মিষ্টির কথা শুনে হেসে দিলেন রাহেলা বেগম।
—-আরে মিষ্টি হেইডা তো এই ফলের রঙ।পাকা ফল তো।হাত দিয়ে চাপ দিলেই এমন রস বাহির হয়।আয় এইদিকে।তোরে লাগাই দিতেছি।
—-না না।যাব না।
—-আরে আয় দি।
রাহেলা বেগম মিষ্টির হাতেও কিছু ফল নিয়ে ঘসে দিলেন।মিষ্টির ছোটো হাত দুটো মূহুর্তেই রঙিন হয়ে গেল।এটা দেখে মিষ্টিও হেসে দিল।
—-আমাকে আর কটা দেবে দাদীমা।
—-ক্যান নিয়া কি করবি?
—-দেও না।
মিষ্টি এক মুঠ করে পুইশাকের পাকা ফল নিল।রাহেলা বেগম নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন।মিষ্টি ফল গুলো নিয়ে ফজলে শেখের ঘরের দিকে গেল।
বিছানার ওপর শুয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।মিষ্টি পা টিপে টিপে ঘরের মধ্যে ঢুকে তানিয়ার দিকে গেল।
—-আজকে নতুন মাকে ভয় দেব।খালি আমাকে বকা দেয়।
মিষ্টি মুখ টিপে হেসে তানিয়ার হাতে ফলের রস ঘষে দিল।
;;;;;
—-তুই আমাদের সাথে একদিন ও মাঠে খেলতে যাস না নাফিজ।এইটা কি ঠিক?
—-যাব।আমি গেলে মিষ্টি কে ও নিতে হবে।নিবি?
—-মিষ্টি অনেক ছোট।ও কি খেলবে।
—-তাহলে আমিও যাব না।
—-এইটা কোনো কথা হলো।
—-হ্যাঁ কথা হলো।পাড়ার মধ্যে ও সবার ছোটো বলে তোরা কেউ ওকে খেলতে নিস না।না ছেলেরা না মেয়েরা।তোরাও তো ছোটো ছিলি নাকি।ঐ টুকুন মেয়েকে তোরা সব সময় এমন হেলা ফেলা করিস।
—-দেখ নাফিজ চল।আজ ক্লাস দশম শ্রেনীর সাথে নবম শ্রেনীর ম্যাচ আছে।তুই কতো ভালো ক্রিকেট খেলিস।আমরা তো ঐ ক্লাস টেনের ভাইয়াদের কাছে হেরে যাব।ওরা কতো ভালো টিম।
—-দেখ নিলয়।তোদের সাথে খেলার চেয়ে মিষ্টির সাথে খেলাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর বেশি আনন্দ দায়ক।আমাকে আর ডাকবি না।
—-ঠিকাছে।কাল সকালে প্রাইভেট এ আসবি তো?
—-হ্যাঁ যাব।
—-আচ্ছা।আসি।
নিলয় সাইকেল নিয়ে চলে গেল।নাফিজ মিষ্টিদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে।আজ সারাদিন একবার ও তার বেবি সিনড্রেইলার সাথে তার দেখা হয়নি।তাই সে এখন মিষ্টিদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছে।
;;;;;
সন্ধ্যা বেলা মাগরিবের আজান শুনে উঠে পড়লো তানিয়া।অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল সে।
—-আআআ রক্ত।
হাই তুলতে গিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়েই চমকে গেল তানিয়া।
—-আরে এটা তো রক্ত না।গন্ধ টা কেমন যেন।কিন্তু আমার হাতে এগুলো কি করে আসলো।
তানিয়ার কিছুক্ষণ ভেবে রেগে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।
—-মিষ্টি, মিষ্টি,,,,,,,,,
চলবে————
(চরম বাস্তবতাকে নিয়ে লিখছি।ট্রাজেডি থাকবে।ইনশাহআল্লাহ।দুঃখের এই দিনগুলো পেরিয়ে মিষ্টির জীবনটাও কি বাকি পাঁচটা শিশুর মতো হবে? নাকি সৎ মা নামক এই শব্দটা তার জীবনের কাল হবে।সবাই গঠনমূলক সমালোচনা করে পাশে থাকবেন।)