#হৃদয়ে_রেখো
পর্বসংখ্যা -০৪
সকালে উঠে তিনজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে। মিলিয়ার মা খাবার সার্ভ করছে। তিনি খাবার সার্ভ করে দিয়ে উপরে চলে গেলেন। ফোনকলে কথা বলতে। খাওয়ার মাঝে জুবায়ের বলে-
-” মিলিয়া একটা কথা কাল থেকে বলবো বলবো করে বলাই হয়নি।
-” কি কথা চট করে বলে দে।
-” তুই এমন বুড়ো মানুষের মতো হয়ে গেছিস কেনো? এমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে কেন চেহারা? তোর কি হয়েছে?
-” আরে ক কই কিছুই না। তোর চোখে ছানি পড়েছে বন্ধু। বুঝলি ডাক্তার দেখাইস।
মিলিয়ার কথায় তান মিলিয়ে রিনি বলে –
-” আসলেই। এই ছানি পড়া পোলা নিয়া আমি যে কি করি?
দুজনেই হেসে দেয়। জুবায়ের বাল ফুলায়। এরই মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজ হয়।
-” এই অসময়ে কে এলো বল তো তোরা?
-” আমি কি করে জানবো মিলিয়া? জুবায়ের জানো নাকি?
-” মিলিয়া আগে গিয়ে দরজা খুলে গিয়ে দেখ।
জুবায়ের খাবার চিবোতে চিবোতে বলে। তার মুখে একটা বেপরোয়া ভাব। জানি সে বুঝে গেছে কে এসেছে। মিলিয়া বিরক্তিকর মুখে খাবার রেখে উঠে যায়, দরজা খুলতে। দরজাটা খুলেই হা করে তাকিয়ে আছে মিলিয়া।
-” কেমন আছো মিলি!
আবার সেই পরিচিত মুখ। আবার সেই পরিচিত ডাক। মিলি! দমবন্ধ অবস্থা হয়ে যায়। শরীরটা একটু অক্সিজেনের জন্য জায়গা খুঁজছে। আদ্রিদের গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সাদা গালে কালো দাড়িটাই যানি মানায়। পাতলা গোলাপী ঠোঁট, ধবধবে সাদা শরীর। মিলিয়া রং ধবধবে সাদা ছেলেদের কোন কালেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু আদ্রিদ হলে সেটা অন্য ব্যাপার। সিল্কি চুলগুলো জেল দিয়ে কি সুন্দর সেট করা। কালো পাপড়িতে ঢাকা দুটো গভীর চোখ তাকে দেখছে ভাবতেই জড়তা ঘিরে ধরল। চোখ সরাল মিলিয়া। নিজেকে নিজেই বকছে- মিলি তুই এতো বেহায়া হলি কবে রে? এভাবে একটা ছেলের দিকে কেউ তাকায়? ছিহ ছিহ লজ্জা সর’মের মাথা খেয়েছিস তুই। ইচ্ছেমতো নিজের মনে বকতে থাকে। আদ্রিদ আবারো বলে-
-” মিলি বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবো আমি?
মিলিয়া জিভ কাটে। এতক্ষন ছেলেটাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সে? ভাবতেই আবারো লজ্জা পায়। সরে দাঁড়ায় দরজা থেকে আদ্রিদ ভিতরে ঢুকে।
-” আগের থেকে বেশি সুন্দরী হয়ে গেছো।
আদ্রিদের এই বাড়ির প্রতিটা দেয়াল চেনা। তাই গিয়েই জুবায়ের আর রিনির সামনে গেলো। জুবায়ের আর রিনি হাই হ্যালো করলো। মিলিয়া ততক্ষনে এসে গেছে।
-” আদ্রিদ বসো আমি খাবার দিচ্ছি।
-” না না আমি খেয়েই এসেছি।
-” তা তো হবেনা। আমার আম্মুর রান্না খাবেনা?
সবার জোড়াজুড়িতে শেষমেষ আদ্রিদকে বসতেই হলো। চারবন্ধু মিলে অনেক খোশগল্প করে। কিন্তু আদ্রিদ আর মিলির মাঝে কথা হয় না। এখনো ঘরেই আছে মিলিয়া। খাবার শেষ করে আদ্রিদ মিলিয়ার মায়ের রুমে যায়।
-” আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি কেমন আছেন?
মিলিয়ার মা আদ্রিদকে একটু ভালোবাসেন বেশিই। তাই তো আদ্রিদকে দেখেই তার মনটা ভালো হয়ে গেছে।
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম বাবা আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
-” জ্বী ভালোই।
-” আমাদের বাসায় থাকতেই হবে। মিলিয়ার সাথে আড্ডা দিবি সবাই মিলে। মেয়েটার শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না। বাঁচার কোন ভরসা নেই। কেন যে আমার মেয়েটার ছোট বয়সে এই কঠোর রোগে ধরলো? আমার মেয়েটা কি পাপ করেছিলো?
মিলিয়ার মা ডুকরে কেঁদে উঠে। এদিকে আদ্রিদের মাথা ভনভন করছে। কি হয়েছে মিলিয়ার? কি এমন যাতে তার মিলি বাঁ’চবে না? মিলিয়ার মা আঁচলে চোখের পানি মুছে আদ্রিদের দিকে তাকায়।
-” যাও আদ্রিদ ওর সাথে থাকো। কত বছর পর দেখা তোমাদের। আড্ডা দাও যাও আমার রান্না করা লাগবে।
মিলিয়ার মা আদ্রিদের পাশ থেকে চলে গেল রান্নাঘরে। আদ্রিদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে এসব। এতকষ্ট করে একটা মানুষ কে সে মনে রাখলো। আর সেই মানুষটি কিনা তাকে ফাঁকি দিয়ে যাবে। হতবুদ্ধি হয়ে এগিয়ে গেলো মিলিয়ার ঘরের দিকে। মিলিয়া, রিনি আর জুবায়ের বসে গল্প করছিলো। আদ্রিদ এসে বসে খাটের এক পাশে। রিনি তখন চেঁচিয়ে বলে-
-” হায় আল্লাহ জুবায়ের আমাদের না ফুপ্পিকে কল দিতে বলেছিলো? দেখলে। চলো চলো ভিডিও কল দিতে হবে।
রিনি জুবায়ের কে টেনে হিচড়ে রুমে নিয়ে যায়। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মিলিয়া আর আদ্রিদকে স্পেশ দিয়ে গেল। আসলে ওদের মাঝে যোগাযোগ নেই এই জন্যই ওরা এদেরকে একা ছেড়ে দিলো। দুইজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা। মিলিয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে-
-” ধন্যবাদ!
-” কেনো মিলি?
-” আমাকে কেক পাঠানোর জন্য।
চিঠির ব্যাপারটা মিলিয়া চেপে গেল। আদ্রিদ সরু চোখে মিলিয়ার দিকে তাকায়। নড়েচড়ে গলা ঝেড়ে বলে-
-” তুমি কি সিআইডি নাকি?
-” মজা করছো? নাকি কথা ঘুরাচ্ছো? কোনটা?
আদ্রিদ সিরিয়াস ফেস নিয়ে বলে-
-” মোটেও না।
-” তাহলে?
-” আসলে তুমি কিভাবে জানলে আমি কেক পাঠিয়েছিলাম?
আদ্রিদ কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করে। মিলিয়া হেসে বলে-
-” আন্দাজে ঢিল ছুড়ছি লেগে গেছে। তো তোমার আমাকে এখনো মনে আছে?
-” মনে থাকবেনা কেন? দীর্ঘ ৬ বছর আমি তোমাকে ভালোভাবেই মনে রেখেছি।
মিলিয়া মুখ কালো করে ফেলে। ঠোঁট উল্টে বলে-
-” তাহলে কেন যোগাযোগ ছিন্ন করলে? কেন বললে যে তুমি আমায় ভূলে যাবে। তোমার নাকি এ্যালজাইমার আছে। তুমি নাকি সব ভূলে যাবে?
-” হ্যা আছে এখনো। কিন্তু তোমায় ঘিরে সবই মনে আছে। মনে রেখেছি। আর তুমি কল বা মেসেজ দাওনি। কিন্তু তোমার প্রতি মিনিটেরও আপডেট আমার কাছে থাকতো।
-” আচ্ছা বলো তো আমি কোনদিন তোমার এ্যালজাইমারের কথা জানতে পেরেছিলাম।
-” বিদায় অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে। আর তখন আমি সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম। পরেই তোমাকে বলেছিলাম যে আমার অ্যালযাইমার আছে। ঠিক না।
মিলিয়া চুপ করে আছে। ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেমন থাকে তার অবস্থাও তেমন।
-” আসলে তুমি একটা মিথ্যাবাদী আদ্রিদ। তোমার কখনোই কোন অসুখ ছিলোনা। তুমি আমায় সব ভূল বলেছো। আমার সাথে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করোনি। আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলতে চাই না। যাও তো আমায় একা ছেড়ে দাও।
-” সরি মিলি। আমার কথাটা শোনো।
-” লিভ মি এলন। যাষ্ট লিভ মি। তোমার কোন কথা শুনতে চাই না ইচ্ছে নেই।
আদ্রিদ আর কোন কথা না বলে চুপ করে উঠে পড়ে। যাওয়ার সময় একবার তাকায়। দরজা চাপিয়ে চলে যায়। মিলিয়া চুপ করে বসে আছে। সবাই তাকে ঠকায় কেন? সে একদিন সবাইকে ছেড়েছুড়ে চলে যাব। কাউরে আর বিরক্ত করবো না। কাউরে না। আদ্রিদ কে মিলিয়া দের বাসা থেকে বের হতে দেখে দৌড়ে গেল রিনি। জুবায়ের গেল মিলিয়ার কাছে।
-” আদ্রিদ দাঁড়া। কই যাস?
-” আটকাস না আমায় রিনি যেতে দে।
-” আদ্রিদ আদ্রিদ শোন..
রিনি ডেকেই যাচ্ছে। আদ্রিদ হনহন করে চলে যায়। রিনি এবার যায় মিলিয়ার ঘরের দিকে।
-” মিলিয়া কি হয়েছে বল।
-” জুবায়ের রিনি যা এখান থেকে আমায় রাগাস না। আমায় একা ছেড়ে দে।
-” কিন্তু মিলিয়া।
-” প্লিজ।
জুবায়ের বেড়িয়ে যায়। রিনি কে উপরে আসতে দেখে আটকে দেয় সে।
-“যেওনা ও একা থাকতে চায়।
রিনি আশাহত হয়ে তাকায় জুবায়ের এর দিকে। জুবায়ের চোখ দিয়ে ভরসা দেয় কিছু হবেনা। তারা পারবেই আবার। রিনিও মাথা নাড়ায়।
।
আদ্রিদ ঘরে বসে আসে। ভাবছে সে এই কবছর কত কষ্ট করেই না মিলিয়া কে মনে রেখেছে। এত রাত জেগেছে মিলিয়া তার কথা শুনলো ও না। এত ভালোবাসা কি সব বিফলে যাবে। মিলিয়ার কি হয়েছে তাও জানতে পারলাম না। মিলিয়া এতো অভিমান কেনো তোমার। তোমার ভালোর জন্যই যোগাযোগ ছিন্ন করেছি। তুমি আমায় একটা বারো বুঝলে না। যাই হোক তোমার তো আনাফ আছেই আমায় কি দরকার? তবুও মিথ্যার দেয়ালটা ভেঙে দিব শিঘ্রই –
-” আমার অভিমানীনি তোমার সব অভিযোগ আমি শুনবো। নিজেকে শুধরে নিব।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)