#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১৬
চিন্তায় চিন্তায় সারা রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেলো। শুধু একটা ব্যাপারেই ভেবে যাচ্ছে অভ্র।
-রাজি না হওয়ার কারণটা কি হতে পারে?
রাজি না হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ফুল দেখতে শুনতে খারাপ বা ভালো পরিবারের না এরকম কোনো ইস্যু নেই।শুধু ওর বয়সটা কম। নাকি বাবা চায় আমি ডক্টর হয়ে ডক্টর বিয়ে করি? তাহলে তো হিসেব একটু গড়মিল হয়ে যায় ফুল তো কমার্সের স্টুডেন্ট!নাহ এই সামান্য কারণে তো বাবা নারাজ হওয়ার কথা না। এমন না যে কোনো কিছুর অভাব আছে আমাদের,সেরকম কোনো ইস্যুও নেই।তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আচ্ছা বাংলা সিনেমার মতো কি বাবাও তাঁর কোনো বিজনেস পার্টনার বা বন্ধুর মেয়ের সাথে ছোটো বেলা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে?না এটাও তো মিলছে না, তাহলে তো এরকমটা ভাইয়ার সাথে হতো।আর আমার সাথে হলেও তো এতো দিন এই ব্যাপারে কিছু না কিছু জানতাম। হে আল্লাহ কোন গোলকে ফেললে আমায়?সহায় থেকো প্লিজ! তুমি তো জানো হুরকে আমি কতটা ভালোবাসি!
ভোর হতে না হতেই অভ্রর মোবাইল বেজে উঠলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে বাবা কল দিয়েছে, শরীর টা ঝাঁকি মেরে উঠলো, ঢোক গিলে রিসিভ করে কানে নিয়ে সালাম দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম বাবা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-কেমন আছো বাবা?
-বাবা কেমন আছে সেটা এখন জানতে ইচ্ছে হলো?বাবাকে তো ভুলেই গেছি তাই না?
-না মানে বাবা তুমি ব্যস্ত থাকো তাই বিরক্ত করি না।
-আমার ছেলে আমার সাথে দুটো কথা বলবে, সেখানে কি আমার ব্যস্ততা মানায়?ভুল করেও কি কখনো কল দিয়ে দেখেছো?যদি দেখতে আমি ব্যস্ততা দেখায় তাহলে তোমার কথার যুক্তিটা যথোপযুক্ত হতো।
-সরি বাবা, এভাবে ভেবে দেখি নি।
-আসলে তুমি এই কারণে আমায় কল দাও না ঠিক তা না। আরেকটা কারণ আছে, তোমরা সবাই আমাকে ভয় পাও। জিয়াদ একজন যাকে অফিসের সবাই বাঘের মতো ভয় পায় কোনো স্টাফ ওর সামনে বিনা কাঁপুনিতে কথা বলতে পারে না, সেও আমার সামনে মাথা নিচু করে নিম্ন স্বরে কথা বলে।বিজনেসের কথা ছাড়া তেমন কোনো বাড়তি কথাও বলে না। তোমরা তো তাও একটা একটু বলো। তবে হ্যাঁ এগুলো নিয়ে আমার আফসোস নেই জানো তো।কারণ ছোটো বেলা থেকে আমার কোনো সন্তানকে সময় দিতে পারি নি, বিশেষ করে জিয়াদকে। জিয়াদের শৈশব অনেকটা আমার মতোই নিঃসঙ্গতায় কেটেছে।
-হ্যাঁ বাবা বলেছো তোমার শৈশবের কথা।
-হুম, চারদিকে দেখি বাবা মাকে কাছে না পেয়ে সন্তান বিপথে চলে যায়, নেশা করে,রাস্তা ঘাটে মাতলামি করে নানা রকম ক্রাইম।কিন্তু আমার তিন ছেলে মেয়ে মাশআল্লাহ মানুষের মতো মানুষ হয়েছে,কোনো গুণে এদের কমতি নেই। আমি গর্বিত আমার সন্তানদের নিয়ে।
অভ্রর এখন কি বলা উচিৎ নিজেও বুঝতে পারছে না। বাবা যতোই রাগী গম্ভীর হোক কোনো বিষয়ে কমপ্লিমেন্ট দিতে গেলে কোথাও কম রাখে না।জায়েদ খান যখন ইনফরমাল কথা বার্তা করে তখন তিনি একজন অন্য রকম মানুষ হয়ে যায়, একজন সাদাসিধে সাধারণ মানুষের মতো।
-অভ্র!
-হ্যাঁ বাবা।
-নিশাত কাল রাতে যা বললো তা কি সত্যি?
-হ্যাঁ বাবা।
-কথাটা যদি তুমি আমায় সরাসরি বলতে তাহলে বেশি খুশি হতাম।অবশ্য এখনো কম খুশি হই নি।শুধু এটা ভেবে খুশি তোমার মাও নিশাতের থেকেই শুনেছে।তোমার মা আমার উপরে যেতে পারে নি,হা হা হা।
ফোনের এপাশে অভ্র স্বস্তির হাসি দিলো, মনে হচ্ছে বাবা রাজি।
-নিশাত আমাকে তোমার হুরের ছবি দেখাতে চেয়েছিলো আমি দেখিনি কেনো জানো?
বাবার মুখে “তোমার হুর” শুনে অনেকটা চমকে গেলো।নিশাত এটাও বলে দিয়েছে!
-না বাবা জানি না।
-আমি চাই আমার ছেলের হুরকে দেখতে কেমন, সেটা আমার ছেলের থেকে শুনতে।তারপর টাংগাইল গিয়ে সরাসরি দেখবো।
অভ্র বাবার কথায় খানিকটা লজ্জার সম্মুখীন হলো, বাবার মুখে এরকম কথা শুনবে এক্সপেক্ট করে নি।
-মানে বাবা কিভাবে বলবো!
-তুমি বলো তোমার মতো করে আমি শুনছি।
অভ্র ভেতরে ভেতরে খুশিতে যেনো লাফাতে চাচ্ছে। বাবার কথা শুনে বড্ড প্রশান্তি লাগছে।অভ্র চোখ বন্ধ করে তাঁর হুরের ছবি কল্পনা করে আস্তে আস্তে বাবার কাছে বর্ণনা দিতে লাগলো।
ওপাশে জায়েদ খান চুপচাপ শুনে যাচ্ছে ছেলের বক্তব্য ।সেও স্পষ্ট বুঝতে পারছে তাঁর ছেলে মেয়েটাকে কত ভালোবাসে।তাঁর রাজি হওয়াতে ছেলে কতটা খুশি হয়েছে!
বাবার সাথে কথা শেষ দিয়ে, অভ্র ফোন রেখে আকাশ আর কাব্যকে ডাকতে লাগলো,ওরা এখনো ঘুমোচ্ছে।
-আকাশ উঠ, কাব্য উঠ তাড়াতাড়ি উঠ তোরা।
আকাশ আর কাব্যর গায়ে ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে ডাকতে লাগলো।দুজনে ঘুম থেকে উঠে বসলো,
-কি হয়েছে এতো উত্তেজিত লাগছে কেনো তোকে?
-কি হয়েছে সেটা পড়ে বলছি আগে তোর সাউন্ড বক্সে একটা ঝাকানাকা গান বাজা আমার নাচতে ইচ্ছে করছে আমি এখন নাচবো।
কাব্য হামি তুলতে তুলতে অভ্রকে বললো,
-তোর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ফুপা রাজি হয়ে গেছে।আসলেই কি তাই?
-আবার জিগায় এমনি এমনিই কি এতো খুশি হবো নাকি।বাবা কল দিয়েছিলো মাত্র কথা শেষ হলো।বাবার কথা শুনে মনে হলো আমার ব্যাপারটা শুনে বাবা প্রচন্ড মাপে খুশি আর আমাকে টেনশন করতে না করেছে। আমি যেটা চাই বাবা আমাকে সেটাই দেবে বলেছে।
আকাশ মজার ছলে অভ্রকে বললো,
-মাম্মা এই খুশিতে এক ট্রিট তো বানতাহে!
– আজই দেবো ট্রিট। কি খাবি।পুরো রেস্টুরেন্ট বুক করে দিবো সারাদিনের নামে।আফটার অল তুই তো আমার….!
বলেই অভ্র কিটকিটে হাসি দিলো,খুশিতে বেচারা পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অভ্রর কথা মতো আকাশ সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে দিলো,জাতীয় গান “লুঙ্গী ড্যান্স ” যদিও অভ্র থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়া ছিলো, গান বাজার সাথে সাথে আকাশের থেকে একটা লুঙ্গী নিয়ে উড়াধুরা নাচতে শুরু করলো,পাশের রুমে থেকে, আবীর, অয়ন, সমুদ্র উঠে এসে পড়লো,অভ্র আর আকাশের নাচ দেখে ওরা কারণ না জেনেই উড়াধুরা নাচের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।অয়ন একটা টাওয়াল নিয়ে ওড়না বানিয়ে মেয়েদের মতো করছে।কাব্য বিছানায় ই ছিলো,আস্তে করে জানালা ঘেঁষে পর্দা টা সরিয়ে দিলো,যাতে অভ্রর পাগলামো গুলো ফুল ও দেখতে পারে।
ফুল ঘুম থেকে উঠেছে অনেক ভোরেই, বারান্দার ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলো এমন সময় আকাশের রুমের দিক থেকে গানের শব্দ আসতেই ফুল ওদিকে তাকিয়ে দেখলো একটু আগে আকাশের জানালার গ্লাস, পর্দা আটকানো ছিলো এখন সব খোলা।ভেতরে কি হচ্ছে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ফুলের চোখ সোজা অভ্রর নাচের দিকে যায়, সব কটা কেমন পাগলা নাচ শুরু করেছে,ফুল হাসতে হাসতে কাবু।তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে ফুল অনুকে ডাকতে লাগলো,
-অনু অনু অনু!
অনু ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললো,
-কি হয়েছে?
-তাড়াতাড়ি উঠো,সার্কাস হচ্ছে দেখবে নাকি।
-কোথায় হচ্ছে?
-উঠো তুমি উঠে দেখো।
হামি তুলতে তুলতে অনু উঠে, বসলো, ফুল বারান্দার এপাশে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো, অনুকে ওদিকে তাকাতে বললেই অনুর চোখের ঘুম ছিটকে যায়।
নিজের ভাইয়ের এমন পাগলা রূপ দেখে অনু বিচলিত হয়ে যায়।ঠিক বুঝতে পারছে না কি কাহিনী, রাতেই অভ্র এসএমএস এ অনুকে বলছিলো বাবা দ্বিমত করেছে।খুব আপসেট মনে হচ্ছিলো আর এখন দেখে এই হাল,অনু পেছন ঘুরে সাথে সাথে মোবাইল খুঁজতে লাগলো,মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো অভ্র অলরেডি নাচের কারণ ম্যাসেজ করে দিয়েছে, বাবার সাথে কথা শেষ দিয়ে সাথে সাথে অনুকে ম্যাসেজ করেছে,বাবা রাজি হয়ে গেছে।
অনু ম্যাসেজটা দেখে হেসে দিলো।ফুল পেছন ঘুরে দেখে অনু মোবাইল দেখে হাসছে,আগ্রহ নিয়ে ফুল অনুকে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে তুমি হাসছো কেনো?
-না এমনিই।চলো নাচ দেখি ভাইয়াদের।
বলেই অনু আবার জানালার কাছে এসে বসলো ওদের নাচ দেখে খুব হাসাহাসি করছে দুজনে।
-আচ্ছা ভাইয়া রা এমন সাত সকালে নাচানাচি করছে কেনো?কি কারণ হতে পারে?
-না মানে ভাইয়াদের তো সেমিস্টার হয়ে গেলো কিছুদিন আগে, মেবি তাঁর রেজাল্ট আউট হয়েছে,আর সবাই ভালো রেজাল্ট করেছে বলে নাচানাচি করছে।
-এরকম নাচানাচি কি তাঁরা প্রতিবার ই করে?আকাশ নানা কাব্য নানাও তো ভালো রেজাল্ট করে কিন্তু ওদের তো নাচতে দেখি না।
-এখন তো সবাই এক সাথে তাই নাচছে হয়তো।
-হ্যাঁ হতে পারে।
জায়েদ খান সকাল সকাল অভ্রর সাথে কথা বলে ব্যাপারটা খোলাসা হলো।সবাই যার যার কাজে বের হওয়ার আগে সবাইকে নিচে ডাকলো।নিশাত জিয়াদ নিচে এলো অভ্রর মা নিচেই ছিলো।ড্রয়িংরুমে সবাই কফি মিটিংয়ে বসেছে।
জায়েদ খান কফি খেতে খেতে বললো,
-অভ্রর সাথে আমার কথা হয়েছে, সবটা শুনলাম ওর থেকে। ছেলে যখন একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে আমাদের এখন দায়িত্ব তাঁর সাথেই জোড় বেঁধে দেয়া।
আমার ছেলে মেয়েরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো,আমার এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।শুভ কাজে দেরি না করাই মঙ্গলজনক বলে আমার মনে হয়।
আমি জহির ভাই ইকরাম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি, রাতে তাঁরা আসছে, তাদের ডিনারের আয়োজন টা করো।সামনা সামনি এ ব্যাপারে কথা হবে,আমি আর জিয়াদ অফিস থেকে তাড়াতাড়িই ফেরার চেষ্টা করবো, তোমরা দুজনও তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করো,
-ঠিক আছে বাবা আমি সন্ধ্যার দিকেই এসে পড়বো।আপনি তো রাতে প্রচুর ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।এট লাস্ট আপনার এন্সার পজিটিভ শুনে আত্মা ঠান্ডা। ওদিকে অভ্র তো খুশিতে আত্মহারা অবস্থা। এখন শুধু ভালোই ভালোই ওবাড়ির মানুষ রাজি হলেই হলো।
-কেনো রাজি হবে না কেনো?কোন দিক দিয়ে কমতি আছে আমাদের?ছেলে প্রতিষ্ঠিত না এটা?আমার তিন ছেলে মেয়ে তাদের পুরো ফ্যামিলি নিয়েও সারাজীবন রাজার হালে বসে বসে খেলেও কোথাও কমতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
-না বাবা সেরকম কিছু না, আসলে মেয়ে তো ওবাড়ির চোখের মণি, খুব বেশি আদরের। বাবা মার পুরো বংশে সাত ছেলের পর একটা মেয়ে, ভাবুন একটা বার কত্ত আদরের সে।তাঁর মধ্যে ছোটো বিয়ের বয়স ও হয় নি। এখন তো তাঁরা চাইলেও তাদের মন মানতে চাইবে না।আমার নিজেরই তো ভাবতেই কেমন লাগছে, এতো গুলো ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে ও এবাড়িতে একা একা থাকবে কি করে!আর ওর বাড়ির মানুষই বা ওকে ছাড়া থাকবে কি করে!
-হুম অভ্রর থেকে শুনেছি সব।তবে দেখা যাক কি হয়।হাল ছাড়া যাবে না তো।আল্লাহ ভরসা।
জিয়াদ চা খেতে খেতে বাবাকে বললো,
-তাহলে বাবা উঠি এখন?বের হওয়ার জন্য রেডি হতে হবে।আমার তো রেডিসনে একটা মিটিং আছে।
-নিউজিল্যান্ডের অই ক্লাইন্টটার সাথে?
-হ্যাঁ বাবা।
-কবে এসেছে তাঁরা?
-গতকাল এসেছে মিটিং আজকে রেখেছিলাম।
-ঠিক আছে যাও।বেস্ট অফ লাক মাই সান।
-হুম,তুমি সোজা অফিস চলে যেও।আমি মিটিং শেষে অফিসে আসছি।
-ওকে।যাই করো ৩ টার আগে এসো অফিসে।আমারও মিটিং আছে একটা তিনটার সময়।
-আমি দু’টোর আগেই এসে পড়বো বাবা।
জিয়াদ উঠে চলে গেলো।
নিশাত নিয়ানাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করে দিয়ে, ব্রেকফাস্ট টা নিজের হাতে খাইয়ে দেয়, ততোক্ষণে জিয়াদ গোসল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। জিয়াদকে অফিসের জন্য রেডি করে খাইয়ে দিয়ে বিদায় করে তারপর নিজে খেয়ে হসপিটালে যায় নিশাত ।
দুপুরে খাবার সময় যেনো বাড়ির সবাই খুব বেশিই যত্ন করছে, বিশেষ করে অভ্রকে, আবার সবাই চোখে চোখে ইশারা করে মুচকি মুচকি হেসেও যাচ্ছে। অভ্র কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলো, সাথে সাথে আকাশকে সন্দেহের তালিকায় ফেললো,কিন্তু আকাশ তো কিছুই জানে না। আকাশ অভ্রর বারণ থাকায় কাউকে কিছু না বললেও, ফুপিমা ফুলের চাচী,মামী,মা, আর সব ভাবীদের বলে দিয়েছে।কিন্তু এটা তো অভ্র জানে না।
খাওয়া শেষ হতেই, আকাশ ফুপিকে আড়াল করে নিয়ে জানতে পারলো, কি ঘটনা। অত:পর সে নিজের মুখে স্বীকার করলো,সবাইকে বলে দিয়েছে।ফুলের জন্য অভ্রকে তাদের খুব পছন্দ।
সত্য যে চাপা থাকে না এটাই তাঁর বড় উদাহরণ, একে একে সবাই জেনে যাচ্ছে এখন বাকি আছে ফুলের ছয় ভাই, আর বাবা-চাচা-মামা-ফুপা।
আশিক তো গত কাল অবন্তীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়েছে,আগামীকাল ফিরবে ওরা।
অভ্রর প্রার্থনা জুড়ে শুধু একটাই কামনা যেনো ভালোই ভালোই সবটা মিটে যায়,কোনো আপত্তি না করে যেনো সবাই মেনে নেয়।
আর ফুলতো ফুলই, সে এখনো কিছুই জানে না এসবের।ওর সামনে কেউ সেরকম মনোভাব প্রকাশও করে নি।যখন জানবে তখন এক্সপ্রেশন টা কি হবে!অনেকটা পেছনে পড়ে ফার্স্ট হওয়ার মতো।
-আচ্ছা ফুল সালমা বানুর খবর কি জ্বর কি সেরেছে?
-আবার জিগায়,মহিলা দিব্যি ঘুরছে ফিরছে।
-বলো কি এতো কড়া ডোজ দেয়ার পরেও সে এতো তাড়াতাড়ি রিকভারি করে কিভাবে!
-আরে বুঝো না আপি খারাপ মানুষের রোগ বালাই বেশিক্ষণ টিকে না।যখন রোগ গুলো তাঁর ভেতরে প্রবেশ করে তখন রোগেরাই ভয়ে বেরিয়ে চলে আসে।
অই মহিলা রোগ জীবাণুর থেকেও ডেঞ্জারাস।
-তবে যাই বলো সাইড এফেক্ট হোক বা না হোক সেদিন রাতে মহিলাটা ভয় পেয়েছিলো বেশ।
-একদম দেখার মতো সিন ছিলো।এরকম করে আরেক দিন ভয় দেখাতে হবে।
অয়নী আর ফুলের কথোপকথনে অভ্র ঢুকে গিয়ে বললো,
-এটা একদম ই ফ্লপ আইডিয়া।একই ভাবে যদি আবারও ভয় দেখানো হয়, তাহলে তাঁর বুঝতে দেরি হবে না এটা একটা কৃত্তিম কারসাজি।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফুল অভ্রকে প্রশ্ন করলো,
-তাহলে কি করা যায়?
-তাহলে অনেক কিছুই করা যায়।ভয়ও পাবে আর ধরতেও পারবে না শুধু এবারের ভয়টা অন্য ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে।
-কিভাবে?
-ওয়েট এন্ড সি!আজকের মিশনটাও রাতেরই হবে।
-ওকে।
অভ্রও যে ফুলের থেকে কোথাও কম না তা তো স্পষ্ট। শুধু চুপচাপ থাকে বলে বুঝা যায় না। ফুলের সাথে তাল মিলিয়ে কুবুদ্ধি গুলো প্রকাশ পাচ্ছে।
রাতে ডিনারের পর অভ্রদের বাড়িতে আলোচনা সভা বসেছে, যেখানে অতিথিরূপ ,অভ্রর খালু জহির রহমান,( অয়ন অয়নীর বাবা) যিনি একজন নিউরোসার্জন। আর অভ্রর বড় খালামনি মাজেদা।অভ্রর মামা ইকরাম মজুমদার (কাব্যর বাবা) যিনি একজন ব্যাবসায়ী। আর অভ্রর মামী জাহানারা । সবাই কথা বার্তার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিলো, কাব্যর বাবা মায়ের সাথে যেহেতু ওবাড়ির সম্পর্ক ভালো।তাই প্রস্তাব টা উনারাই দেবেন। উনারা ঠিক করলো ফুলের মামাকে সবটা জানাবে আগে। সকাল বেলা ফোন দিয়ে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।যদি তাঁরা রাজি থাকে তাহলে দুই একের মধ্যে গিয়ে ডিরেক্ট অকাদ করে আসবে।
এখন দেখা যাক কতদূর কিভাবে কি হয়!
চলবে…………