হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_২২

0
433

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২২
অভ্র ফুলের চোখে চোখ রেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো ,ফুল ঠিক কি চাইতে পারে।

-আপনি আমাদের বাড়িতে ঘর জামাই হয়ে থাকুন প্লিজ!

মনে মনে ঠিক এটাই আন্দাজ করেছিলো।

-এটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু চাও,এটা সম্ভব না কোনো ভাবেই।

চেহারাটা একটু মায়াবী মায়াবী করে ফুল অভ্রর চোখে চোখ রেখে আবার মিনতি করলো,
-প্লিজ!
-তুমি চাইলে তোমাকে বিয়ে করে আমি এখানেই রেখে যাবো।মাঝে মাঝে তোমার সাথে দেখা করতে আসবো।কিন্তু যেটা বলছো সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।কারণটা তোমাকে এখন বুঝালে বুঝবে না সময় হলে তুমি নিজে নিজেই সবটা বুঝবে।
-ঠিক আছে,যা ভালো বুঝেন করেন।
-গুড গার্ল এখন বলো কি চাও।
-এখন তেমন কিছু মাথায় আসছে না,সময় নিয়ে ভেবে পরে বলি?
-কি যে চাইবে আল্লাহ মাবুদ জানে।
-হি হি হি।আপনার কিডনি নিয়ে নেবো।
-একটা নিও,দুটো নিলে মরে যাবো।
-হি হি হি..

টুকিটাকি কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে।অভ্র ফুলের সাথে অনেকটা ফ্রিলি কথা বলছে যেনো ফুল সহজেই অভ্রর সাথে মিশে যেতে পারে। মানুষের মাইন্ড খুব সহজেই ড্রাইভার্ট করতে পারে অভ্র।

দুপুরের পর থেকে বাড়িতে কেমন যেনো সবার মধ্যে একটা তোড়জোড় আয়োজনের চেষ্টা চলছে।আবার বাড়ির ভেতরটাতে আগের থেকে আরো বেশি টিপটপ করে সাজানো হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় কাঁচা ফুল রাখা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান, পরে মনে পড়লো জন্মদিন উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান হবে ,সেজন্যই সাজানো হচ্ছে। তাই বলে এতো ঘটা করে আয়োজন!হতে পারে ফুলকে রাতে আরেক দফা সারপ্রাইজ দেবে বলে এতো তোড়জোড়। ফুল ব্যাপারটা আন্দাজ করে আগ্রহ করে কাউকে জিজ্ঞেস করতে গেলো না।

বাড়ির সবাইকে খুব বেশিই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ জনগণকে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে বাড়িটা বিয়ে বাড়ি।আশিকের বিয়েতেও মনে হয় সবাই এতো ছুটাছুটি করে নি।
-রাজপুত্রের প্ল্যান মতো কাল রাত থেকে সব কিছু হচ্ছে, হতে পারে পরবর্তী আয়োজন গুলোও তার প্ল্যান মতোই হচ্ছে।এটাও ভীন্ন কিছুই হবে স্বাভাবিক। তোমরা যতোই আমাকে না জানিয়ে কাজ চালাও না কেনো, কাল সব বুঝতে পারি নি তো কি হয়েছে আজ সব বুঝতে পেরেছি আমিও প্রস্তুত আপনার নেক্সট সারপ্রাইজের জন্য।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে পা রাখতেই মীনা এসে দাঁড়ালো ফুলের সামনে,
-শুভ জন্মদিন ফুল!

দোলনায় বস্তে বসতে ফুল অভিমানি স্বরে উত্তর দিলো,
-মানুষ রাত বারোটার পর উইশ করে।মানলাম তোর পক্ষে সেটা সম্ভব না।কিন্তু সকালে এসেও তো উইশ করতে পারতিস। দুপুরের রোদ পড়ে গেছে আর তুই এখন আসছিস শুভ জন্মদিন বলতে। একবারে রাতেই আসতে, এসে বলতি শুভ জন্মরাত্রি ফুল,ওটা বেশ ভালো মানাতো।

-আচ্ছা সরি রাতে উইশ করতে পারি নি বলে।কিন্তু আমি সকালে এসেছিলাম দুই দুই বার। একবার দেখি তুই বেঘোরে ঘুমোচ্ছিস,পাশে অনুও ঘুমোচ্ছে।ভাবলাম ঘুমের মধ্যে ডাকবো না।তারপর আবার এলাম তখন নিয়ত করে এলাম তুই যদি ঘুমিয়েও থাকিস আমি তোকে ডেকে উঠাবো,কিন্তু তখন দেখি অভ্র ভাইয়া তোর পাশে বসে আছে আর তুই ঘুমোচ্ছিস।উনার সামনে যেতে লাগছিলো,
সেই জন্য ভেবেছি আবার দুপুরের পর এসে যদি তোকে না পাই আমি আর আসবোই না,তা তো পেয়েই গেলাম তোকে কিন্তু তুই আছিস গাল ফুলিয়ে।

-আচ্ছা ঠিক আছে যা, এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।তা কি গিফট এনেছিস আমার জন্য?
-গিফট আনবো মানে? কিসের গিফট! আমি কি তোর কাছে ট্রীট চেয়েছি?তুই যে আমার কাছে গিফট চাইছিস।
-তুই আমাকে কথাটা এভাবে বলতে পারলি? আয় তুই কতো খাবি চল।বাড়িতে চল।
ফুল উঠে দাঁড়িয়ে মিনার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলো,মিনা থতমত খেয়ে বললো,
-আরে আরে কি করছিস কি, মজাও বুঝিস না তুই দেখি।আমি তো এমনিতেই বললাম।তুই চোখ বন্ধ কর।
ফুল হেসে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো,
-এবার চোখ খোল।
ফুল চোখ খুলে তাকালো,আর দেখলো মীনা একগুচ্ছ কদমফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফুল খুশি খুশি কদম ফুল গুলো হাতে নিলো,মীনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-থ্যাংক ইউ মীনা!
মীনা মুখটা মলিন করে বললো,
-তুই আমার বার্থডেতে কতকিছু দিস।আর তোর বার্থডে তে আমি প্রতিবছর এই কদম ফুলই দিয়ে আসছি।তুই কত্ত খুশি হোস, এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার টাকা নেই বলে আমি তোকে কখনো কিছু দিতে পারি না।

ফুল চোখ বড় বড় করে কোমরে হাত দিয়ে বললো,
-অই তুই কি বললি?আবার বল!ঠ্যাং ভেঙে সালমা বানুর পেয়ারা গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো তোকে।
এই ফুল গুলোতে তোর ভালোবাসা আছে এটা তোর নিজের হাতে গাছ থেকে ছিঁড়ে আনা।এর মধ্যে যা আছে তা কোনো কেনা জিনিসের মধ্যে নেই।আর কে বললো আমাকে কখনো কিছু দিতে পারিস না।এই যে আমার অকাজ কুকাজে সর্বদা সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিস এটা কম কোথায়?
-আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে।কিন্তু আমি তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।
-কি এনেছিস?
মিনা একটা কাগজের প্যাকেট ফুলের দিকে এগিয়ে দিলো, ফুল ওটা হাতে নিয়ে কৌতুহলের সাথে খুলতে লাগলো ভেতরে যাই থাক বাইরের প্যাকেটিং টা যে মীনার খাতার কাগজ দিয়ে করা হয়েছে সেটা স্পষ্ট। ভেতরে দেখতে পেলো একটা কুশিকাটার হেয়ার ব্যান্ড। এটা দেখে ফুলের চোখ দুটো খুশিতে জ্বলজ্বল করতে লাগলো,
-এটা তুই বানিয়েছিস?
-হুম,তোর পছন্দ হয়েছে?
-খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে,বলে বুঝাতে পারবো না কতোটা পছন্দ হয়েছে
তোক আমি থ্যাংকস দেবো না এটার জন্য।এটা আমার প্রাপ্যই ছিলো।
-নতুন কাজ শিখেছি তো তাই হয়তো অতোটা ভালো করে বানাতে পারি নি।
-তুই চুপ করে থাকতো তোর কথা আমার শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
ফুল ব্যান্ড টা মাথায় দিলো, মীনা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
-ফুল তোকে একটা কথা বলবো তুই কিছু মনে করবি না তো?
-আচ্ছা বল আগে শুনি।
-তোদের বিয়ের আগেই অভ্র ভাইয়া তোকে যেভাবে গার্ড দিচ্ছে বিয়ের পর তো তোকে খুব প্যারায় রাখবে!
-কখন গার্ড দিলো?
-তুই ঘুমিয়ে থাকলে তোর পাশে বসে থেকে এখনি পাহারা দেয়,বাকী জীবন তো পড়েই আছে।
-আরে ধুর বোকা সেরকম কিছু না।অভ্র ভাইয়া বসে বসে অপেক্ষা করছিলো কখন আমার ঘুম ভাঙবে আর আমার সাথে কথা বলবে।
-ওহ তাই বল।কিজানি আমার কেনো জানি খুব ভয় লাগে উনাকে দেখলে।
-তুই যে ভীতু তাই।উনি খুব ভাল মনের মানুষ। উনার সব গুণই ভালো।
-হুম্মম দুদিন পর উনি তোমার জামাই হবে কিনা!ভালো তো লাগবেই।আচ্ছা তুইও ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসিস তাই না?
ফুল মুচকি হেসে দিয়ে, মাথা নিচু করে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।

আজকে বাড়ির পুরুষরা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে এসেছে।ড্রয়িংরুমটা বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ফুল ঘুরে ঘুরে দেখছে চারপাশে। এমন সময় অবন্তী ফুলের সামনে এসে বললো,
-বোন আসো তো আমার সাথে একটু।
-কোথায়?
-আমার রুমে।
-কেনো?
-তোমার দাদা ডাকছে।

অবন্তী ফুলকে নিয়ে রুমে গেলো, কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে আশিক রুমে নেই।ভেতরে ঢুকার সাথে সাথে অবন্তী দরজা আটকে দিলো , দরজা আটকানোর আওয়াজ পেয়ে ফুল ছিটকে গেলো।
-ছোটো বউদিদি তুমি দরজা আটকে দিলে কেনো?
-কারণ আছে।
-সিক্রেট কিছু বলবে তুমি?
-তোমার ড্রেস চেঞ্জ করব আসো,বিছানায় যে শপিং ব্যাগ ওটাতে নতুন জামা আছে। ওটা পড়ে এসো আমি সাজিয়ে দেবো তোমাকে।
-কিন্তু কেনো?আমি তো নতুন জামা পড়েছিই।
-আরে এটা তো তোমার ছোটো বউদিদির দেয়া প্রথম বার্থডে গিফট,এইটুকু ডিজার্ব করতেই পারি যে তুমি আজকে এই ড্রেস টা পড়ে সবার সামনে যাবে।
ফুল নিজের কপাল চাপড় দিয়ে বললো,
-ওহ বাবাহ সবাই আমাকে পাগল বানাবে,বাচ্চাদের মতো বায়না একেকজনের।আমি চলে গেলে কি যে হবে এদের!

কথা গুলো বলতে বলতে ফুল জামা হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।

জামাটা পড়ে আসতেই অবন্তী ফুলকে সাজানো শুরু করলো।খুব জাঁকজমক করে সাজিয়ে দেয়া হয় নি,হাল্কা পাতলা সাজিয়ে দিয়েছে।

সাজানো শেষ হতেই অবন্তীর রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যাবে সাথে সাথে উল্টো ঘুরে অবন্তীর কাছে চলে গেলো।

নিচে বাড়ির কর্তারা আর ছেলেরা বসে আছে তো সেই কখন থেকে, কিন্তু এদের সাথে একদল অপরিচিত মানুষ দেখা যাচ্ছে।ফুল তাদের ভালো মতো না দেখেই ফিরে চলে গেছে।

-নিচে উনারা কারা বউদিদি?
অবন্তী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললো,
-তুমি চেনো না উনাদের?
-না তো উনাদের আগে কখনো দেখিনি।
-চলো আমিও দেখছি তোমার সাথে ব্যাপারটা।

অবন্তী আর ফুল আস্তে আস্তে উপর থেকে উঁকি দিতে লাগলো কাউকে চেনা যাচ্ছে না, তিনজন পুরুষ তিনজন মহিলা দেখা যাচ্ছে এরা প্রত্যেকেই বাবা মায়ের বয়সী।
কিছুক্ষণ পর ফুল খেয়াল করলো দুজনকে চেনা যাচ্ছে এরা হলো কাব্যর বাবা- মা ছবিতে দেখেছিলো।বাকিদের চেনা যাচ্ছে না তবে ধারণা করা যাচ্ছে।এরই মধ্যে কাব্যরা সব বন্ধু বান্ধব এসে বসলো তাদের পাশে কিন্তু এদের মধ্যে অভ্র নেই

গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে প্রত্যেকের চেহারা এমন সময় ফুলের পেছনে অনু এসে দাঁড়িয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
-এগুলো তোমার হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

ফুল নজর ফিরিয়ে অনুর দিকে তাকাতেই অনু আবার বললো,
-ওদিকে আবার তাকাও,আমি বলে দিচ্ছি কে কোনটা।অই যে সবুজ রঙের শাড়ী পড়া ভদ্রমহিলা দেখছো উনি আমাদের মা, তাঁর ডান পাশের জন আমার বাবা,আর বাম পাশে আমাদের মামা -মামী মানে কাব্য ভাইয়ার বাবা মা।আর অই বাকি দুজন আমাদের খালামনি- খালুজান মানে অয়ন-অয়নীর বাবা মা।

-ওহ আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পর অভ্র ভেতরে আসলো,অভ্রর কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা, ওটা আর কেউ না নিয়ানা। অভ্রর পাশে একজন ফর্সা সুন্দরী এক নারী।দেখে বেশ ইয়াং লাগছে,অভ্র তাঁর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে এদিকে আসছে অভ্রর আরেক পাশে অভ্রর মতোই একজন লম্বা চওড়া পুরুষ তবে ইনি যথেষ্ট ফর্সা।এদেরকে আর পরিচয় করিয়ে দিতে হলো না, এরা অভ্রর ভাই আর ভাই বউ ই হবে।ফুল উপর থেকে সবাইকে দেখছে।

এবাড়ির বউ গিন্নিরা তাদের সাদরে আপ্যায়ন করছে।

ফুল নিজের রুমে চলে গেলো।উনারা আসবে কেউ কিছু বলেনি ফুলকে।বাড়ির লোকদের মাথায় কি চলছে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।

নিজের রুমে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে এমন সময় ফুলের রুমে নক পড়লো,
-আসতে পারি?
অভ্রর কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।
-আসুন, পারমিশন নেয়ার কি হলো।

অভ্র ভেতরে এলো। ওর কোলে নিয়ানা, নিয়ানাকে দেখে মেজাজটাই ভালো হয়ে গেলো ফুলের।
-ওয়াও কত্ত কিউট নিয়ানা।
উঠে দাঁড়িয়ে নিয়ানার কাছে যেতেই ফুলকে নিয়ানা সালাম দিলো,
-আসসায়ামু আয়াইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো তুমি মা?
– অনেক ভায়ো।
-আল্লাহ কত্ত কিউট করে কথা বলে,কোলে আসো না একটু।

ফুল হাত বাড়াতেই নিয়ানা অভ্রর কোলে থেকে এসে পড়লো।নিয়ানাকে কোলে নিয়ে ফুল ওর গালে চুমু খেলো।

-আল্লাহ গো এতো কিউট বাচ্চা হয়!ইচ্ছে করছে সারা দিন রাত চুমু খাই।
-থাক সবুর করো । আল্লাহ চাইলে আমাদেরও এরকম একটা হবে।
-ধেত আপনি কোন কথা থেকে কোথায় নিয়ে যান।
-ওকে আর নিবো না।কিন্তু কথা হলো অন্যটা।
-কি কথা?
-নিয়ানাকে যেরকম কিউট করে চুমু দিলে ওরকম করে আমাকেও দাও না একটা।আমিও তোমাকে ফিটব্যাক দিয়ে দিবো।
-ছিহঃ ছিহঃ ছিহঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, বিয়ের আগে কিসব বলেন।
-বিয়ে তো করছিই।
-আগে বিয়ে হোক তারপর দেখা যাবে।
-সেটা তো অবশ্যই।আচ্ছা শুনো,তোমাকে কিছু কথা বলি।কিছু মনে করো না প্লিজ।
-আচ্ছা বলুন।
-আসলে কথাটা তোমার বাড়ির মানুষ তোমাকে বলতে সাহস পাচ্ছে না তুমি রাগ করবে বলে,তাই আমাকে পাঠানো হলো।
-ঠিক আছে আপনি বলুন, আমি রাগ করবো না।
-তুমি বসো,ওকে কোলে নিয়ে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে,
-ঠিক আছে আপনিও তাহলে বসুন।

দুজনেই বসলো,অভ্র ফুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,

-আসলে আমরা তো কালকের পরের দিন চলে যাচ্ছি।ঢাকায় ফিরে আবার পড়াশুনায় ফোকাস করতে হবে,মেডিকেল স্টুডেন্টদের এতো আয়েশ করতে নেই।সেখানে কতদিন ঘুরে ফিরে নষ্ট করে দিলাম।তাই পরবর্তীতে হয়তো কোনো সময় বের করতে পারবো না,
আর আমার ফ্যামিলির লোক জনও যার যার কর্ম জীবন নিয়ে ব্যস্ত। সবার একসাথে সময় বের করা টা হয়ে উঠে না।তাই সবাই একত্রে সময় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা টাংগাইল থেকে চলে যাওয়ার আগেই আমাদের দুজনের কাবিন টা করে ফেলবে।

তুমি হয়তো রাগ করতে পারো, তোমার পারমিশন ছাড়া সব ঠিক করলো সবাই,আসলে দোষটা আমারই। আমিই পাগলামো করে ভেবেছিলাম তোমায় সারপ্রাইজ দিবো।পরে মনে হলো, যেটা করতে যাচ্ছি সেটা তো আমাদের সারাজীবনের ব্যাপার,এই ক্ষেত্রে তোমারও আলাদা মত থাকতে পারে।আমার বাড়ির লোকজন এখানে আসার পর ই কথাটা মনে হলো,তাই তোমাকে জানাতে এলাম, তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে।
-সমস্যা নেই,আপনারা যেটা ভালো বুঝেন সেটাই করেন।যেখানে বিয়েতেই আমার কোনো আপত্তি নেই সেখানে তো এটা অতি ক্ষুদ্র বিষয়।

অভ্র প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললো,
-থ্যাংকস! আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি বুঝবে ব্যাপারটা।এই জন্যই তোমাকে হুর বলি,হুরেরা সব দিক দিয়ে গুণে গুণান্বিত হয়।

-ওহ আচ্ছা, তাহলে আমারো কিছু বলা উচিৎ, রাজপুত্ররাও অনেক ভালো হয়।

-পাকা বুড়ি তুমি।
-আচ্ছা আপনাদের বাড়ির সব লোকই তো অনেক ব্যস্ত তাদের পেশা নিয়ে।সবারই আলাদা ক্যারিয়ার আছে। আমি কিন্তু আগেই বলে দিচ্ছি ওসব চাকরী বাকরী আমার দ্বারা হবে না।
-কেনো?
-পড়াশুনায় করতে ইচ্ছে করে না, আর তো চাকরি!
-মেয়েদের সেল্ফডিপেন্ড হওয়াটা জরুরি মনে করি আমি,এখন বাকিটা তোমার উপর।
-আপনি কি জানেন আমি কেনো এই বিয়েতে রাজি হয়েছি?
-না, কি জন্য?
-যদি আমার একটা বর থাকে, মানে বিয়ে হয়ে যায়। তাহলে বিয়ের পর মা যখন আমায় পড়তে বলবে, আমি বলবো”বিয়েতো হয়েই গেছে পড়াশুনা করে কি করবো! কামাই করার জন্য জামাই তো আছেই ”
-যদি আমি মরে যাই তখন?
-বাপের বাড়ি চলে আসবো তখন।এখন যেরকম আছি তখনও সেরকম থাকবো।
-এখন যেরকম আছো তখনও সেরকম থাকবে,
আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে তখন?কষ্ট হবে না?
-টাইম মেশিন দিয়ে ভবিষ্যতে গিয়ে দেখে আসতে হবে ব্যাপারটা।
-আচ্ছা বাপের বাড়ি আসতে হবে কেনো,তোমার জন্য ব্যাংক ব্যালেন্স করে যাবো তুমি খাবে আর ঘুমাবে শুধু।
-নাহ এই টপিক বাদ দিন।
-ওকে, আরেকটা কথা।
-কি?
-আমার ফ্যামিলির লোকজন তোমাকে এখনো দেখেনি।তাঁরা তোমাকে দেখতে চাচ্ছে।তোমার তাদের সামনে গিয়ে কোনো ফর্মালিটি পালন করতে হবে না, শুধু আমার সাথে যাবে আর পরিচয় হবে সবার সাথে দ্যাটস ইট।
-ওকে,
-থ্যাংক ইউ।
– একটা কথা বলবো আপনাকে?
-আনলিমিটেড টক টাইম অফার আপনার জন্য ম্যাডাম।
-আমার বার্থডে গিফটটা কি আমি এখন
চাইতে পারি?
-অবশ্যই।
-আর কটা দিন থেকে যান প্লিজ।
-এমন সব আবদার করে বসো যেগুলো মেটানো সম্ভব না, এমন কিছু চাও যেটা দিতে পারবো।

ফুল অভিমানি স্বরে বললো,
-থাক দিতে হবে না, লাগবে না আমার কিছু।
-রাগ করছো কেনো গো।
-রাগ করিনি।
-তোমার পা দুটো আমার দিকে একটু বাড়িয়ে দিবে?
-কেনো?
-দাও না আগে।
-পা ধরে টান দিয়ে ফেলে দেবেন না তো?
-তোমার কি তাই মনে হয়?

অভ্র কেনো ফুলের পা বাড়িয়ে দিতে বলছে বুঝতে পারছেনা, ভয়ে ভয়ে পা দুটো এগিয়ে দিতেই, অভ্র ফুলের পা থেকে নূপুর খোলে ফেললো,
এই দৃশ্য দেখে ফুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,

-একি এটা কি করলেন আপনি?নূপুর খুললেন কেনো?

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here