#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৬
গভীর মনোযোগ দিয়ে ফুল ভেবে চিন্তে বললো,
-পেয়ে গেছি, প্রতিশোধের আইডিয়া।
-কি আইডিয়া পেলে গো?
-প্রচ্চুর পড়তে হবে প্রচ্চুর! অনেক অনেক বেশি পড়াশুনা করে অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে, আগেও তো ঠিক মতো পড়তাম না, খামোখা আপনার দোষ দিচ্ছে।তবে আমি এবার তাদের এই মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আপনাকে অপমান করার ঘোর প্রতিশোধ এভাবেই নিবো আমি সারাজীবন পড়াশুনায় যতোটা মনোযোগ দেই নি এখন সেটা দিবো।যখন অনেক ভালো রেজাল্ট করবো,তখন সবাই বলবে, অভ্রর সাথে বিয়ে হয়েছিলো বলেই ফুল এতো ভালো রেজাল্ট করেছে এক্সামে। ভাগ্যিস অভ্রর সাথে বিয়ে হয়েছিলো, নির্ঘাত অভ্র ফুলকে পড়াশুনা করতে বলেছে সারাক্ষণ আর বুঝিয়েছে পড়াশুনা কতোটা জরুরি।আজ অভ্রর জন্যই আমাদের মেয়ে এমন টপ রেজাল্ট করেছে।
অভ্র নিষ্পাপ ভঙ্গীতে বললো,
-আইডিয়া টা তো দারুণ। কিন্তু কার্যকর হবে তো?মানে তুমি এতো কষ্ট করবে আমার জন্য?শুধু মাত্র আমাকে করা অপমানের জবাব দেয়ার জন্য তুমি এতো কষ্ট করবে তাই?
ফুল কড়া স্বরে বললো,
-অবশ্যই করবো।আমার রাজপুত্রের দিকে কাউকে আঙুল তোলার সুযোগ আমি দিবো না।আপনার অপমান মানে আমার অপমান, তাই আমি এই প্রতিশোধ নিবোই।
অভ্র অসহায়ের মতো ভঙ্গীতে বললো,
-ঠিক আছে যা ভালো বুঝো করো।ভেবে চিন্তে করো, আমি জানি তুমি আমার কষ্টটা ফিল করতে পারছো হুর। তুমি সব সময় আমাকে এতোটা বুঝো বলেই তোমাকে আমি এতোটা ভালোবাসি
-আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে, আপনার কষ্ট হলে আমার তো তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হয়।
-আই লাভ ইউ হুর!
-আই লাভ ইউ টু রাজপুত্র!
অভ্রর ঠান্ডা মাথার ডোজটা মনে হয় ফুলের মাথায় বেশ ভালো করে ব্রেইনে সেট করে দিয়েছে।অভ্রর সাথে কথা শেষ করে মোবাইলটা দূরে রেখে ফুল পড়তে বসলো, খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আজ। নিজের সবটুকু মনোযোগ এখন পড়াশুনায়।
গভীর রাত অব্ধি পড়াশুনা করলো,আবার ফজরের নামাজ পড়ে নিজ দায়িত্বে পড়তে বসলো।
পড়াশুনার ঝুঁকটা বেশ ভালো মতোই উঠেছে দেখা যাচ্ছে।আয়েশা বেগম তো মেয়ের এমন পরিণতি দেখে অবাক!অভ্র কি এমন কথা বুঝালো যার জন্য ফুল এতোটা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে।
সন্ধ্যায় প্রাইভেট টিউটরও চলে যাওয়ার সময় আর বিচার দিলো না, দিবে কি করে ফুল সব পড়া কমপ্লিট করে রেখেছিলো, আর পড়ানোর সময়ও মনোযোগী ছিলো।
বেশ কয়েকদিন চলে যেতে লাগলো, ফুল এখন এতো বেশি এতো বেশি পড়াশুনা করছে,বাড়ির প্রত্যকেই অবাক!প্রাইভেট স্যারের থেকে কোনো বিচার না পেয়ে পড়াশুনা সংক্রান্ত ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানান,ফুল খুব ভালো মত পড়াশুনা করছে, কোনো ফাঁকি দিচ্ছে না ।
বাড়ির লোক যখনি ফুলের রুমে আসে তখনি দেখে বই খাতা নিয়ে পড়ে আছে,মোবাইল ওর ধারে কাছেও নেই। অকারণে ফোন টেপানো বাদ দিয়েছে,শুধু মাত্র অভ্রর সাথে কথা বলার প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলের ধারে কাছেও যায় না। অভ্রর আর ফুলের দৈনন্দিন রুটিন এখন এক নিয়মের, বেশিরভাগ সময় পড়াশুনা করা হয়, আর দিন রাতের নির্দিষ্ট সময়ে দুজনের ফোনে কথা বলা হয়।
বেশ ভালো মতোই ফুলকে হ্যান্ডেল করা যাচ্ছে ।
পড়াশুনা আর প্রেমের পেছনে সময় দিয়ে ফুল একটু একটু করে শান্ত স্বভাবের হচ্ছে, আগের থেকে দুষ্টুমি গুলো কম কম করে। রোজ প্যাটেল এরিয়ার বাইরেও খুব কম যায়। বান্ধুবী আর বিচ্ছু গ্যাং নিয়ে দুষ্টুমি, ছুটাছুটি, টইটই করা কমে যাচ্ছে। এতে বাড়ির প্রত্যেকেই বিশেষ করে আয়েশা বেগম প্রচুর খুশি, অবশেষে তার মেয়ে একটু একটু করে তার মন মতো হয়ে উঠছে!
-বাবা অভ্র তুমি কি এমন ডোজ দিয়েছো, ও যে এতো তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছে?মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এই পরীকে চিনিই না, ভূতে ভর করে নি তো মেয়েকে! বাপরে বাপ আমি কোনো দিনও কল্পনা করি নি, পরী যে এরকম বদলে যাবে একদিন।
-ও পড়াশুনা ঠিক মতো করে তো মা?
-বাবারে শুধু কি ঠিক মতো পড়াশুনা! আগে তো ওকে আমি বাড়িতেই পেতাম না কার বাগানের কোন ডালে ডালে থাকতো ও, কেউ জানতামও না আর সেই মেয়ে এখন বাড়ি থেকে বাগানেও যেতে চায় না। যখন দেখি তখনি মেয়ে পড়ছে, আর মোবাইলটাও ওর ধারে কাছে দেখি না । আচ্ছা ওকি তোমার সাথে কথা বলে ঠিক মতো?
-হ্যাঁ মা বলে তো, আগেও যেমন বলতো এখনও তেমনই বলে।পড়াশুনা ঠিক মতো না করলে আমাকে বলবেন আমি আবার নতুন করে ডোজ দেবো।
– সেটা তো অবশ্যই, কিন্তু যা দেখছি মেয়ে আমার যেভাবে পড়াশুনা করে, তাতে ও লেখা পড়ার বিরাট নেশায় পড়ে যাচ্ছে।আচ্ছা অভ্র আমরা সারাজীবন ওকে এতো বলে নিজে থেকে পড়তে বসাতে পারলাম না, সেখানে এই কঠিন কাজ তুমি কি করে করলে?
-তেমন কিছুই করি নি মা। একটা কথা মাথায় রাখি আমি সব সময়,অনেক বড় সমস্যার সমাধান অনেক ছোটো হয়, অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সব চেয়ে সহজ হয়।জটিল ব্যাপার জটিল ভাবে নিলে সেটা আরো জটিল রূপ ধারণ করবে।
-বুঝেছি বাবা, পরীর এরকম পরিবর্তনের জন্য তোমায় ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না, ও তো তোমারই বউ। তুমি যেভাবে গাইড করবে সেভাবেই হবে।
-ওর ভেতরটা খুব নরম মা, যতটা দুষ্টু তার থেকে হাজার গুণ ভদ্র। ভালোবাসার মানুষগুলোকে কিভাবে সম্মান দিতে হয় আর আঁকড়ে ধরে রাখতে হয় নিজের জীবনের সাথে, সেটা ও খুব ভালো মতোই জানে।
-সত্যি বাবা তুমি আমার মেয়ের জীবনে আসার পর সব রঙ বদলে দিয়েছো,তোমার মতো করে পরীকে হয়তো অন্য কেউ বুঝতো না, আমরাই তো আমাদের মেয়েকে বুঝি না ।আল্লাহ তোমাকে অনেক বড় করুক বাবা।অনেক ভাল রাখুক তোমাদের।
-দোয়া রাখবেন মা।
দিনের পর দিন অভ্র নামটা শুধু ফুলের বিশ্বস্ত আর ভালোবাসার হয়ে উঠছে না, ফুলের বাড়ির প্রত্যেকের অভ্রর প্রতি অন্যরকম মায়া নির্ভরতা কাজ করে, সবার কাছে অনেক বেশি বিশ্বস্ত ও ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছে। নিজের ছেলেদের মতো জায়গা হয়ে গেছে অভ্রর।
দূরে থাকলেও ফুলের প্রতি এতো বেশি কেয়ারিং আর রেসপন্সেবল যে কারণে সবাই উপর আলার কাছে ধন্য যে তাদের মেয়ের ভাগ্যে এমন সুপাত্র লিখে রেখেছিলো।
ফুলের হাফ ইয়ারলি এক্সাম হয়ে গেলো। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এক্সাম শেষ। এক্সামের পর কলেজে শীতের ছুটি দিলো।
বেশ কয়েকদিন যেতেই মেডিকেল কলেজ গুলোতেও কিছুদিনের শীতের ছুটি দিলো।
অভ্ররা সব ফ্রেন্ড মিলে একটা ট্যুর প্ল্যান করলো, কয়টা দিন দূরে কোথাও ঘুরে আসা যাক। প্রতিবছর ছুটি পেলে ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চলে যায়।
ছুটি পেয়ে কাব্য এখনো টাংগাইল থেকে যায় নি, ট্যুরের ডেট টাইম ফিক্সড করে আকাশকে নিয়ে একসাথে যাবে।ও হ্যাঁ এবারের ট্যুরে ওদের সাথে নতুন অতিথী যোগ দিচ্ছে, সেটা হলো ফুল।ওদিকে অভ্র তো যেখানে যায় অনুকে সাথে নিয়ে যায়। প্রতিবার বড়দের সাথে ঘুরতে হয় এবার সমবয়সী তার প্রাণের বান্ধুবী ওরফে ভাই বউ ফুল যাচ্ছে শুনেই অনু খুশিতে গদগদ!
আর এদিকে অনেক দিন পর ফুলের রাজপুত্রের সাথে দেখা হবে ভেবেই আনন্দে দিশেহারা।
সবাই মিলে ঠিক করেছে সিলেটের দিকে যাবে।
প্ল্যান মতোই যাওয়ার ইভেন্ট ফিক্সড করা হলো, কাব্য, আকাশ,ফুল টাংগাইল থেকে সোজা ঢাকা যাবে আর সেখান থেকে সিলেটের উদ্দ্যেশে রওনা হবে।
ঘুরতে যাবে বলে ফুলকে ভাইয়েরা এতো এতো শপিং করে দিতে লাগলো,যেনো সামনে ঈদ। ফুলের বিয়ের পর থেকে ভাইয়েরা আগের থেকে আরো বেশি সক্রিয় হয়েছে ওর প্রতি। বোনের বিয়ের রাতেই সব ভাই ফুলকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিয়েছিলো।যখন ফুল শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে তখন এই প্রাণ ভ্রমরটাকে ছাড়া ভাইয়েরা থাকবে কি করে! ফুল এবার প্রথম বাড়ির লোকদের ছেড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে।ওর জীবনে এমন একটা রাত কাটে নি যেখানে ওর পরিবার নেই।
আকাশ যাচ্ছে বলেই ফুলকে যেতে দেয়া হচ্ছে,আর ফুলও একটু স্বস্তিতে আছে পুরো পরিবার না থাকলেও পরিবারের একজন সদস্য অন্তত আছে।
দেখতে দেখতে সেই দিন ঘনিয়ে এলো, আকাশ, কাব্য, ফুল তিনজনের সময় ঘনিয়ে এলো যাওয়ার।তবে ঢাকা যাওয়ার আগে ফুল বায়না করলো গাড়িতে না গিয়ে সে ট্রেনে করে যাবে, তার খুব ট্রেনে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। বোনের আবদার রাখার জন্য সেটাই মেনে নিতে হলো,
সকাল ৮ টাই ট্রেন,সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো,
বাড়ির গাড়ি নিয়ে ওদের রেলস্টেশন অব্ধি দিতে গেলো ফুলের বাকি ভাইয়েরা।
ট্রেনে উঠতেই ফুল জানালার পাশে বসে আর পাশে আকাশ বসে অপর পাশে কাব্য।
এমন মৌসুমে সকাল বেলা ট্রেন জার্নিটা অনেক রোমাঞ্চকর হয়, চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন, প্রকৃতি এক অনন্য রূপ ধারণ করে আছে।কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি গা ঢাকা দিয়ে আছে।
বেলা যত হচ্ছে কুয়াশা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে, আর মাঠের পর মাঠ তাদের হলুদ রংটা ফুটিয়ে তুলছে। সরিষার ক্ষেত গুলোতে সবে ফুল ফুটেছে, কি আশ্চর্য সব ক্ষেতে একসাথে ফুটে ফুল! যার জন্য যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ।ইচ্ছে করছে এ হলুদের মাঝখান দিয়ে এক ছুটে কোনো এক প্রান্তরে হারিয়ে যেতে ।
প্রকৃতি দেখতে দেখতে মৌচাক অব্ধি আসার পর, ফুলের চোখ ঘুমে আটকে আসছে, অবশেষে চোখের কাছে হার মেনে ঘুমিয়ে গেলো,
এক ঘুমে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন পৌঁছে গেলো।
রাস্তায় ক্রসিং খাওয়ার জন্য ঢাকা পৌঁছাতে সময়টা বেশি লেগে গেছে,সাড়ে এগারোটার দিকে এসে পৌঁছেছে
ফুলকে ডেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে
ট্রেন থেকে নামালো, ফুলের চোখ থেকে এখনো ঘুমের ঘোর কাটে নি চোখ ঢলতে ঢলতে ট্রেন থেকে নামতেই দেখে ট্রেনের যে বগী থেকে নামলো সেই বগীর গেটের সামনে অভ্র পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অভ্রকে দেখে চোখের ঘুম সরে গিয়ে ঠোঁটে হাসি বিরাজ করলো,কাব্য আকাশ ব্যাগ নিয়ে নামছে, অভ্র ফুলের কাছে গেলো,
-কেমন আছো?
-ভাল, আপনি?
-এই মুহুর্তে অনেক ভালো।
কাব্য আর আকাশ ওদের কাছে আসতেই কাব্য বলে উঠে,
-ভাই আমরা কেমন আছি সেটা তো জিজ্ঞেস করবা না, এখন বউ পাইছো। এখন আসছোই যখন বউয়ের ব্যাগটা আগাইয়া নাও।
অভ্র বাচ্চাদের মতো করে উত্তর দিলো,
-এমন করে বলো কেনো কাব্য নানা? নিয়ে আসো না ব্যাগটা, আমি বউকে নিয়ে যাচ্ছি।তোমরা দুই জন থাকতে আমি ব্যাগ টানবো সেটা আমার বউয়ের সহ্য হবে?
-ভাই তুই এভাবে পর হয়ে যাচ্ছিস!
অভ্র উত্তর না দিয়ে ডেভিল স্মাইল দিয়ে ফুলের হাত ধরে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলো,কাব্য আকাশ পেছনে। যদিও ওদের জামা কাপড় গুলো স্কুল ব্যাগে, কিন্তু ফুলের জন্য ওর বাড়ির লোক গুলো অনেক গুলো জামা দিয়ে দিয়েছে বড় ট্রলি ব্যাগে, নরমাল জামার থেকে শীত নিয়ন্ত্রক জামা কাপড় ই বেশি।
-হাত ঠান্ডা কেনো এতো?
-আমার হাত পা এমনি, আগুনে পোড়া দিলেও ঠান্ডাই থাকে।শীত এলে হাত পা প্রচুর ঘামে কিন্তু কখনো গরম হয় না, ঠান্ডা বরফ!
-আইস্ক্রিম খাবে?
-এখন আইস্ক্রিম!
-হ্যাঁ তো?
ফুল মনমরা ভাবে উত্তর দিলো,
-শীত এলে আমাকে আইস্ক্রিম খেতে দেয় না কেউ,
-চলো আমি খাওয়াচ্ছি।
-না না ছোটো নানা খেতে দেবে না, বাড়িতে বলে দেবে ।
-ছোটো নানা দেখলে তো বারণ করবে!
ফুল অভ্রর মুখের দিকে তাকালো,
অভ্র পেছন ঘুরে ওদের বললো,
-অই তোরা গাড়ীতে উঠ,আমরা আসছি।
কাব্য আকাশ কোনো প্রশ্ন করার আগেই অভ্র ফুলকে নিয়ে মানুষের মাঝে হাওয়া হয়ে গেলো।দুজনে অসহায়ের মতো গাড়িতে গিয়ে বসলো, কিছুক্ষণ পর অভ্র ফুলকে নিয়ে এলো। অভ্র গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাশে ফুল বসেছে, পেছনে আকাশ আর কাব্য।অভ্র অনুকে নিয়ে ঘন্টা খানেক আগে কাব্যদের বাড়িতে এসেছে,অনুকে রেখে অভ্র একাই স্টেশনে এসেছে ওদের রিসিভ করার জন্য।
এখন সবাই কাব্যদের বাসায় যাবে, কাব্যদের বাসা এয়ারপোর্টের কাছে, আজকে এখানে থাকবে ওরা,কাল সকালে সবাই রওনা হবে সিলেটের উদ্দেশ্যে ।
কাব্যদের বাড়িতে ফিরতেই কাব্যর বাবা মা সাদরে বরণ করে নিলেন, উকিল মেয়ে বলে কথা।
ফুলকে দেখে অনু তো মহা খুশি,ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই অনু ফুলকে জড়িয়ে ধরলো।কতদিন পর দেখা হলো দুজনের!
ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে যোহরের আজান দিয়ে দিলো। নামাজ শেষে সবাই লাঞ্চ করতে বসে গেলো,কাব্যর মা নিজের হাতে ফুলের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে।নিজের দুই মেয়ের মতো ফুলকেও আদর যত্ন করছে, খাইয়ে দিচ্ছে।
খাওয়া শেষে বসে বসে অনুর সাথে গল্প করছে, কথার মাঝখানে ফুলের খুব ঘুম পাচ্ছে, এর মধ্যে অভ্র এসে পাশে বসে অনু আর ফুলের সাথে দুষ্টুমি করতে লাগলো।কিন্তু ফুলের দুষ্টুমি করার মুড আসছে না,ঘুমে চোখ দুটো ছোটো হয়ে আসছে, অবশেষে থাকতে না পেরে ঘুমিয়েই গেলো।অনু আর অভ্র ফুলের ঘুমে ডিস্টার্ব না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙতেই চোখ খুলে দেখে অভ্র পাশেই বসে ফোন চালাচ্ছে, হামি তুলতে তুলতে ফুল উঠে বসে অভ্রকে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি কখন এসেছেন?
অভ্র ফুলের দিকে ফিরে উত্তর দিলো,
-আমি কোথায় গিয়েছিলাম যে আসবো?
-কি যা তা বলছেন বলুন তো।আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য না জানিয়ে এসেছেন তাই না?
ফুলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না, পরে খেয়াল হলো আসল ঘটনা, অভ্র কোনো উত্তর না দিয়ে ফুলের হাতের দুই ডানা ধরে খানিকটা জোরে গা ঝাঁকি দিলো,ফুলের কাছে ঝাঁকিটা কারেন্টের মতো লাগলো,
-কি করছেন পাগল!
-তোমার হুঁশ ফেরানোর জন্য করলাম, এখন পুরো রুমটা একটু ভালো করে দেখো,তারপর যা জিজ্ঞেস করার করো।
ফুল অভ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে পুরো রুমটা চোখ ঘুরিয়ে দেখলো,পরক্ষণেই মনে পড়লো,ফুলতো বাড়িতে না, ঢাকায় এসেছে।
অভ্রর দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-সব ই বুঝলাম কিন্তু এটা বলুন, এখন সকাল কয়টা বাজে?
-ওরে আল্লাহ রে!এখন সকাল না বিকেল,ভুলে গেছো দুপুরে গল্প করার সময় মাতালের মতো করছিলে তারপর ঘুমিয়ে গেলে।
-ওহ মনে পড়েছে, আচ্ছা আসরের আজান দিয়েছে?
-হুম দিয়েছে।এখন উঠে নামাজ পড়ো।
-যাচ্ছি,
-আর শুনো!
-বলেন
-ঘুরতে যাবে?
-নাহ ভালো লাগছে না।
-ওকে।
ফুল উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।
দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠার পর শরীর দুর্বল দুর্বল লাগে এটাই স্বাভাবিক, ফুলের ক্ষেত্রেও তাই ই হচ্ছে। মনে হচ্ছে গায়ে এক ক্যালোরি শক্তিও নেই।
আজকের মতো ওরা কাব্যদের বাড়িতেই কাটালো।
সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে সবাই রেডি হয়ে ব্রেক ফাস্ট না করে শুধু মাত্র চা কফি খেয়ে বেরিয়ে গেলো,রাস্তায় খেয়ে নিবে বলে জানিয়েছে বাড়িতে ।
ওরা পাঁচজন বেরিয়ে গেলো,সমুদ্র আবীর, অয়ন, অয়নী,মীরা ওরা একত্র হয়ে ছিলো ওদের পিক করে নিয়ে গেলো অভ্ররা।ট্যুরে সবাই গেলেও বৃষ্টি যাচ্ছে না, বাবা মায়ের সাথে জাপানে বেড়াতে গিয়েছে ও।
গাড়ির একদম পেছনের সীটে অভ্র আর ফুলে বসেছে, ফুলের পাশে অনু বসতে চাইলে অভ্র বসতে দেয় না। বাধ্য হয়ে অনুর কাব্যর পাশে বসতে হলো, আকাশ অয়ন একসাথে, আবীর সমুদ্র একসাথে বসেছে,আর অয়নী মীরা একসাথে বসেছে।
সারাপথ অভ্র আর ফুল বাধা বিহীন রোম্যান্স করে গেলো। ফুল জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,অভ্রও ফুলের গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে।হাত বাড়িয়ে বাইরের কুয়াশা স্পর্শ করার চেষ্টা করছে।
দুজনের পেছনে বসার কারণ, সামনে বসলে বিচ্ছু মার্কা বন্ধুগুলো বিশেষ করে কাব্য, সমুদ্র, আর মীরা প্রচুর জ্বালাতো।
এখন পেছনে বসেছে বলে অতোটাও বিরক্ত কেউ করতে পারবে না ।
-একটা কথা বলবো আপনাকে?
-বলো।
-আমার খুব ইচ্ছা ভোর সকালে আমি আর আপনি ঢাকা টু টাংগাইল ট্রেন জার্নি করবো,জানেন অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য,কাল আসার সময় মনে হচ্ছিলো পাশে যদি আপনি থাকতেন কতোই না ভালো হতো।
-ওকে ম্যাডাম আপনার এই স্বপ্ন আমি পূরণ করবো,আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক।
ফুল খুশি হয়ে বললো,
-আপনি সত্যি অনেক অনেক ভালো।
অভ্র রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
-আর কোনো কমপ্লিমেন্ট পেলে না?
চলবে…………