হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_২৭

0
441

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৭
-ভালো কে তো ভালোই বলবো,
-তোমার জন্য আমি ভালো খারাপ সব কিছুই হতে পারি।
-ওরে রাজপুত্ররে, খারাপ হতে হবে না, যেমন আছেন তেমন ই থাকেন।
অভ্র হেসে উত্তর দিলো
-যথা আজ্ঞা হুর!

দুজনে নানান রকম গল্প করতে করতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যাচ্ছে ।

যাওয়ার পথে বেলার সাথে সাথে সবার খিদে পেলো, হাইওয়ে তে গাড়ি থামাতেই উজান ভাটি নামের একটা রেস্তোরাঁ দেখতে পেলো,গাড়ী থেকে নেমে সবাই রেস্তোরাঁতে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলো, খাওয়া শেষে করে আবার রওনা হলো।

শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে গাড়ি থামিয়ে সেখানে সবাই প্রকৃিতির স্বাদ নিতে লাগলো।চা কন্যা মেমোরিয়াল এর চারপাশে চা বাগান, সামান্য উঁচু পাহাড় যেখানে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।এরিয়াটার নাম চা কন্যা না দিয়ে সবুজ কন্যা দিলে বেশ মানাতো।চা বাগানের ভেতর জায়গায় জায়গায় লজ্জাবতী ফুল গাছ,একটা পাতা ছুঁয়ে দিলেই বাকি পাতা গুলো পর্যায় ক্রমে গুটিয়ে যায়।

ফুল বসে বসে লজ্জাবতী গাছের সাথে খুনশুটি করছে।

মাইন্ড ফ্রেশ করে সবাই রেসোর্টের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো,
দুপুরের দিকে রেসোর্টে পৌঁছে গেলো, শ্রীমঙ্গলের গ্র‍্যান্ড সুলতান টি রেসোর্ট এন্ড গোল্ফ নামের ফাইভ স্টার রেসোর্টে। উঠেছে রেসোর্ট আগে থেকেই বুকিং করা ছিলো। একশো পঁয়তাল্লিশ রুম বিশিষ্ট নয় তলার রেসোর্ট এটি।

বারো জন্য জনের পাঁচটা রুম বুক করা হয়েছে ছয় তলায়। অনু আর ফুল একটা রুমে, মীরা অয়নী এক রুমে, অভ্র, কাব্য,আকাশ এক রুমে,সমুদ্র, অয়ন, আবীর একটা রুমে আর একটা রুমে যিনি ড্রাইভার সে আর তাঁর বারো বছর বয়সী এক ছেলে ।

প্রতিটা রুমেই একটা করে সিংগেল বেড আর একটা ডাবল বেড দেয়া।যেহেতু ফাইভ স্টার রেসোর্ট সেহেতু রুম ডেকোরেশনটাও সেই রকমই, কোনো দিকেই কমতি নেই।সব থেকে বড় কথা হলো জানালার পাশে দাঁড়ালে যে ভিউটা আসে সেটা দেখেই আত্মার পূর্ণ প্রশান্তি।প্রশস্ত জানালার পাশে দাঁড়ালে বাইরের সর্বোচ্চ দৃষ্টির পরিসর জুড়ে শুধু চা বাগান, উঁচু নিচু অসমতল পাহাড়ের মেলা।কয়েক সেকেন্ডে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রশান্তিময় এ দৃশ্য।

যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো প্রত্যেকেই।এতো দূর জার্নি করে এসে কারো কোনো ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে না, কারণ প্রকৃতিটা ক্লান্ত হতে দেয় নি।

সবাই এক সাথে লাঞ্চ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে।

বিশাল এলাকা জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। বিশাল বিশাল চা বাগানের পাহাড় গুলো অর্ধেক টা মেঘের আড়ালে কুয়াশার ভাঁজে লুকিয়ে আছে, জাফলংয়ের চা বাগানের পাহাড়ে দাঁড়ালে ওপারে বিশাল মেঘের শহর, শীত বলে কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘালয় পাহাড়ের কাছে এসে ঠেকে আছে।প্রচুর পরিমাণে কুয়াশার জন্য সূর্যের অস্তিত্ব নেই।শ্রীমঙ্গলে যেতেই সবার আগে যে কাজটা করা হয়েছে সেটা হলো এখানকার বিখ্যাতো সাত রঙের চা টেস্ট করা। জাফলংয়ের সব থেকে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো ঝর্ণা, আর বাংলাদেশ ভারতের বর্ডার। কিন্তু ওদিকটাই কেউ গেলো না কারণ এই শীতে ঝর্ণায় পানি নেই, এমনি এমনি ওদিকটাই গেলে গাড়ি রেখে অনেকদূর হাঁটতে হবে, বর্ষাকাল হলে নৌকাতে যাওয়া যেতো।এই উঁচু নিচু ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে এতোদূর হাঁটার রিস্ক অভ্র নিতে চাইলো না, সাথে মেয়েরা আছে বলে। রিস্ক নিলে দেখা যাবে লাস্টে মেয়েদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হবে।

সন্ধ্যার দিকে আবার রেসোর্টে ফিরে এলো।

রেসোর্টের পক্ষ থেকে কমপ্লিমেন্টারি স্ন্যাকস দেয়া হলো প্রত্যেককেই।

রাত নয়টা বাজে ফুল অনু রুমে বিছানায় বসে বসে মোবাইলে ছবি দেখছিলো সারাদিনে যেসব ছবি তুলেছে।
এমন সময় ওদের রুমে নক পড়লো।অনু উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই অভ্রর প্রবেশ।
-জানতাম অসময়ে কাবাব মে হাড্ডি তুমি ছাড়া আর কে হবে!
-জানেনই যখন দরজাটা খোলা রাখতেন, আমার কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না।
-কেনো খোলা রাখবো কেনো?আমার তো এখন আফসোস হচ্ছে দরজাটা না খুললেই ভালো হতো।
-শুনো শাহ্জাদী ভাইকে সম্মান দিতে শেখো, এখন একটু দয়া করে অন্য রুমে যান, আমি একটু প্রাইভেট টাইম চাচ্ছিলাম আর কি।

অনু কোমরে হাত দিয়ে বড় বড় করে তাকালো অভ্রর দিকে,
-কিছু বলবেন শাহ্জাদী?
অনু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে উত্তর দিলো
-ভাইয়া ভালো লাগে না, তুমি সব সময় ফুল আমার মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে ঘুরো।আমার খুব হিংসে হয় আমি যখনি ফুলের সাথে গল্প করতে বসি তুমি এসে বিরক্ত করো আমাদের।
-তোর মধ্যে লেসবিয়ান স্বভাব কবে জন্ম নিলো? আগে জানাবি না তুই এমন!অই তুই আমার বউয়ের সাথে কিছু করিস নি
তো!আমি কি তবে শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দিয়েছি!

অনু দাঁত কিড়িমিড়ি করতে করতে অভ্রর পেট আর হাতের মধ্যে কয়েক দফা কিল ঘুষি দিলো,এতে অভ্র চুল পরিমাণ ব্যাথা না পেলেও অনু অভ্রর কথায় প্রচন্ড রেগে গেছে। অনুর হাত দুটো ধরে থামিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো,
-প্লিজ বোন অমন করে না, আমি না তোর ভাই হই,তোর ভাই তাঁর বউয়ের সাথে কথা বলতে এসেছে আর বলতে দিবি না তুই? দেখ তোর মতো তো আমিও ওকে মিস করি তাই না? তুই আমার কষ্ট টা বুঝার চেষ্টা কর! ভাইয়ের কথা এখন না বুঝলেও পরে ঠিক বুঝবি।

-হয়েছে আর তেল মারতে হবে না, আমি বাইরে যাচ্ছি।
-লক্ষ্মী সোনা বোন আমার।

অনুর হাত ছেড়ে দিতেই অনু ওর মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ফুল এতোক্ষণ ধরে ওদের দুজনের কাড়াকাড়ি দেখছিলো।

অনু বেরিয়ে যেতেই ফুল অভ্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিলো।
-হাসছো কেনো?
-খুশির ঠেলায়!
– এতো খুশি কই থেকে আসে?
-বাড়ি থেকে এনেছিলাম ব্যাগে করে শীতের দিন তো তাই জিনিসটা ভালো আছে।
-হুম সেই জন্যই তো হাসিটা এতো টাটকা লাগছে!
কথাটা শেষ করেই অভ্র ফুলের কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
-মাথার চুল গুলো একটু টেনে দাও তো, জামাইয়ের সেবা করো।
-শুধু চুল টেনে দেবো? হাত পা ও টিপে দেই?
-বেশি পুন্যি করতে চাও তাই না?
-যেটা মনে করে খুশি।

ফুল অভ্রর চুল গুলো আলতো হাতে বিলি কেটে কেটে টেনে দিচ্ছে।আর অভ্র অপলক ভাবে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।

রুমটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিলো বলে ভেতরে শীত করছিলো না, টেম্পারেচার নরমাল হওয়াই গায়ে নরমাল ড্রেস ই ছিলো ফুলের। চুল টেনে দেয়ার পর হাত টিপে দিতে যাবে এমন সময় ফুলের গায়ের এক পাশ থেকে ওড়নাটা সরে যায়,জামার গলাটা বড় হওয়ার কারণে বিউটি বোনের দুই ইঞ্চি নিচে যে একটা তিল ছিলো সেটা বেরিয়ে পড়ে, আর মরতে মরতে ওটা অভ্রর নজরেই বন্দী হয়ে যায়। অভ্রর তাকিয়ে থাকার ধরণ দেখে ফুল বুঝে যায়, সাথে সাথে ওড়না ঠিক করতে নেবে অভ্র তখন ফুলের হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।অস্বাভাবিক ভাবে অভ্রর এভাবে হাত ধরার জন্য অনেকটা ছিটকে ফুল ভয় পেয়ে যায়। অপর হাত দিয়ে ঠিক করতে যাবে ওটাও ধরে ফেলে, ফুলের দুই হাত এখন অভ্রর এক হাতের মুঠিতে বন্দী।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে ফুল প্রশ্ন করলো,
– অ অ( ঢোক গিলে) অমন করছেন কেনো?
অভ্রর আরেক হাতের আঙুল দিয়ে ফুলের ঠোঁটে গালে রাউন্ড দিতে লাগলো,এরপর আস্তে করে উত্তর দিলো,
-ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি কি ভয় পাওয়ার মতো কিছু করেছি?
– না মা মানে হা হাতটা ছাড়ুন না প্লিজ!
-তুমি কি আমাকে ভরসা করো না হুর?
-করি তো।
-তাহলে হাত ধরায় কি সমস্যা?
-না সমস্যা নেই তো,আপনি ছাড়ুন।
অভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে একটু কড়া স্বরে বললো,
-সমস্যা তো আছেই, তোমার ধারণা আমি
তোমার সাথে এখন এমন কিছু করবো যার জন্য তুমি অপ্রস্তুত, আর আমার থেকে অপ্রত্যাশিত!কি ভাবছো তোমার কোনো ক্ষতি করে দেবো? কিন্তু ওটা তো ক্ষতি হবে না, ওটা তো আমার হক। আমি তোমার বর। তুমি সম্পূর্ণ হালাল আমার জন্য।

ফুল কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বরে বললো,
-এই আপনি এমন করে কথা বলছেন কেনো?আমার ভয় লাগছে! এটা আমার রাজপুত্র না! আপনি অন্য কেউ!
অভ্র রহস্যময় ভাবে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
-কে আমি?
-জানি না, কিন্তু আপনি আমার বর না, অন্য কেউ!
-তোমাকে এখানে এনেছি কিসের জন্য জানো?
ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফুল জিজ্ঞেস করলো,
-কিসের জন্য?
অভ্র উত্তর না দিয়ে কিটকিটে হাসি দিয়ে ফুলের গায়ে থেকে ওড়না টা এক টান দিয়ে সরিয়ে ফেললো ।

ফুল চোখ বন্ধ করে বললো,
-প্লিজ কিছু করবেন না, আমি প্রস্তুত না এসবের জন্য!
অভ্র উঠে বসে ফুলের দিকে তাকিয়ে ওর ভয় পাওয়ার দৃশ্য দেখে অনুভব করছে। অত:পর রহস্যমাখা সিন কেটে স্বাভাবিক ভাবে হাসতে লাগলো, ওর স্বাভাবিক হাসি দেখে ফুলের চোখে থেকে ভয় সরে গিয়ে খানিকটা বিষ্ময়কর ভাব বিরাজ করলো,
ওড়না টা ফুলের হাতে দিয়ে বললো,
-সরি হুর! খামোখা মজা নিলাম। সরি!
-ইশশসস্ আপনি আসলেই যা তা!এভাবে পঁচাদের মতো বিহেভ কেউ করে? আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-সরি বললাম তো, আর ভয় পাওয়ার কি আছে এখানে?ওটাই তো ছেলেদের আসল রূপ।
-হতে পারে, কিন্তু আপনার না।
অভ্র আবার রহস্যমাখা এক উত্তর দিলো,
-একদম ঠিক বলেছো,আমি তো এর থেকেও ভয়ানক।
-কি ভয়ানক?
-সময় হলে বুঝবে।
-তাহলে শুনে রাখুন আমি আপনার থেকেও ভয়ানক ।

-তাহলে একটা উদাহারণ দাও দেখি কি রকম ভয়ানক তুমি হতে পারো ।
-না দরকার নেই।
-না আছে, উদাহারণ দাও। না হলে কিন্তু আমি ভয়ানক হয়ে যাবো।
-কিভাবে?
-ওকে
-লাইট অফ করে আসি ওয়েট।
-অই না না দরকার নেই।
-ইশশসস আপনি এতো দুষ্টু জানতাম না । কতো ভদ্র ভাবতাম।
-আমি কি অভদ্রতা করলাম?
-অভদ্রতা করেন নি,দুষ্টুমি করেছেন।
-ওকে সরি আর করবো না।বুঝতে পারি নি নিজের বউ হলেও আপন না, তার সাথে ফরমাল বিহেভ করতে হবে।সরি ম্যাডাম আর হবে না।

অভ্রর কথায় খানিকটা অভিমান প্রকাশ পেলো বলে মনে হলো, ফুল অভ্রর মুখে দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো করে জিজ্ঞেস করলো,
-রাগ করলেন?
-নাহ রাগ করবো ক্যানো?

ফুল অভ্রকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বললো,
-ওরে আমার রাজপুত্র অভিমান করে না।
-রাগ অভিমান কোনোটাই করিনি। এখন ছাড়ো একটু আমার বেরিয়ে যেতে হবে কাজ আছে ।
-ঘুরতে এসে কিসের কাজ!
-আছে, বুঝবে না তুমি।

ফুলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অভ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ফুল হতভম্বের মতো বসে রইলো,কি থেকে কি হয়ে গেলো!আজ অব্ধি কখনো অভ্রর এমন রূপ দেখেনি। রাগ অভিমান নামের বস্তুগুলো অভ্রর সিলেবাসে আছে সেটা ফুলের একদম ই জানা ছিলো না।এখন নিজের উপর নিজের ই বিরক্তি লেগে গেলো,না চাইতেও অভ্রর মন খারাপ করে দিলো।
-ধুর কি করলাম আমি! এতো বোকা কেনো আমি? আফটার অল উনি তো আমার স্বামী।যা হচ্ছিলো হতে দিলে ক্ষতি কি?না ফুল নেক্সট টাইম উনাকে রাগাস না, যা ইচ্ছে হয় উনি করুক, কিচ্ছু বলিস না।এখন আপাততো উনার রাগ ভাঙা যা।কিন্তু উনি কি থেকে কি বানিয়ে রাগ করলেন?এখানে তো রাগ করার মতো কিছু দেখছিই না।

ফুল বিছানা থেকে উঠে রুমের বাইরে গেলো, অভ্র যে রুমে থাকে সেই রুমে গেলো, গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা কেউ নেই!

অয়নদের রুমে গেলো সেখানেও নেই।সব শেষে মীরদের রুমে গেলো,কিন্তু ওখানে অয়নী আর মীরা ছাড়া আর কাউকে দেখা গেলো না, এমনকি অনুকেও না ওদের শুধু জিজ্ঞেস করলো বাকিরা কোথায়, কিন্তু ওরা উত্তর দিতে পারলো না। ফুল এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো।কোথাও দেখতে পাচ্ছে না কাউকে, নিচে গিয়ে খুঁজবে সেই সাহসও হচ্ছে না।

সাহস করে একা একাই নিচে যাওয়ার জন্য মন স্থির করলো,লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে বোতাম টিপতেই মিনিট খানেক পর লিফটের ভেতর থেকে পাঁচ ছয় জন ছেলে বেরিয়ে এলো, ফুল চিন্তিতো মস্তিষ্ক নিয়ে মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে ছিলো,গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে ছিলো।সামনে কে আছে না আছে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না। মন মরা হয়েই ভেতরে পা রাখতেই লিফটের দরজা আটকে গেলো,কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে দেখলো ফুলের পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ফুল আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখে মিডিয়াম হাইটের হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে কানে হেড ফোন, ফুলের দিকে ব্লাশিং মুডে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেটাকে দেখে বেশ বড় ঘরের ই মনে হচ্ছে। ফুল ভ্রু বাঁকিয়ে ছেলেটার দিকে দেখে নজর সরালো।কেনো জানি ছেলেটার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো আবার ভয়ও পেলো।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ফুল কখন লিফট থেকে বের হতে পারবে।
-হাই! আ’ম রাজ!
পাশে থেকে ছেলেটার কথা শুনে ছিটকে গেলো, ফুল বিরক্ত মুখে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো ছেলেটার দিকে , কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো।ছেলেটা আবারও বলে উঠলো,
-তোমার নামটা জানতে পারি?

এবার ছেলেটার দিকে তাকালোও না, সাথে সাথে লিফটের দরজা খুলে গেলো, ফুল বেরিয়ে গেলো বাইরের দিকে। এক ছুটে ছেলেটার সামনে থেকে হাওয়া হয়ে গেলো,রাজ নামের ছেলেটা এদিক ওদিক ফুলকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।

এই ছেলেটাও বেশ ভালোই উচ্চ পরিবারের ছেলে, পাঁচ ছয়জন ফ্রেন্ড মিলে ট্যুরে এসেছে আজ। লিফট থেকে বের হওয়ার সময় ফুলকে দেখে দৃষ্টি আটকে যায়। কোন ঘোরে বন্ধুদের ছেড়ে একা একা ফুলের পিছু নিয়ে লিফটেই দাঁড়িয়ে ছিলো, ছেলেটা নিজেও জানে না।

আর এদিকে ফুল আছে ফুলের তালে বাইরে সুইমিংপুলের পাশ দিয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো সবাইকে কাউকে দেখতে পেলো না।স্পা সেন্টার, জিম সেন্টার, সিনেমা হল, গেম জোন সব জায়গায় খুঁজতে লাগলো,কোথাও কারো হদিস নেই।বাকি জায়গা গুলোতে আর খুঁজতে না গিয়ে মন খারাপ করে আবার উপরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতে নিলো,পেছন থেকে কাব্য ডাক দিলো,
-পুতুল তুমি এখানে একা কেনো?
ফুল পেছনে ঘুরে তাকালো,কাব্যকে দেখে প্রাণ ফিরে এলো।
-কাব্য নানা, তোমরা কোথায় ছিলে! আমাকে একা রেখে সবাই কোথাই হাওয়া হয়েছো?আমার ভয় লাগে না?
-এতো কষ্ট করার কি আছে! একটা কল দিতে এসে পড়তাম।
-আমার মোবাইলটা কোথায় রেখেছি মনে পড়ছে না।ওটা খুঁজতে গেলেও তো আরেকটা মোবাইল দিয়ে কল দিতে হবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে চলো দেখি কোথায় রাখা আছে তোমার ফোন।উপরে তো মীরা অয়নী আছে ওদেরকে বলতে পারতে তাই না?
-আমার আসলে খেয়াল নেই।কিন্তু আপুদের জিজ্ঞেস করলাম তোমরা কোথায় ওরা বলতে পারলো না কিছুই।
-হুম বুঝেছি ব্যাপারটা, ওদেরকেও জানানো হয় নি।
-তুমি কোথায় ছিলে?বাকিরা কোথায়?
-এদিকেই ছিলাম আড্ডা দিচ্ছিলাম রাতে বারবিকিউ করবো সেই প্ল্যান করলাম।
-কবে?
-আমাদেরটা কালকে সিরিয়াল।
-আচ্ছা এটা বলো উনি কোথায়?
-আসছে সবাই। ডিনারের টাইম হয়েছে।
-তাহলে চলো তুমি আমি ওদের আগে যাবো উপরে।

কাব্য হেসে দিলো।

ডিনারের জন্য বসতেই নানান রকম খাবার সামনে। ফুলের ডান পাশে আকাশ বাম পাশে অনু।অপর পাশে অভ্র। অভ্রকে এখনো রাগী রাগী দেখাচ্ছে ফুলের দিকে খুব একটা তাকাচ্ছে না । সামান্য একটা কারণে অভ্র এতোটা রিয়্যাক্ট করবে শুধু আইডিয়ার বাইরে না পুরোটাই অস্বাভাবিক। দুপুর বেলা কতো আদর করে খাইয়ে দিচ্ছিলো ফুলকে আর রাতে খাইয়ে দিবে তো দূরে থাক ধারে কাছেও নেই।

আকাশ খাইয়ে দিতে আসলে ফুল বললো নিজের হাত দিয়ে খাবে।
সামনে এতো এতো খাবার থাকতে ফুল মাত্র দুটো পরোটা আর সাতকড়া দিয়ে গরুর মাংস কষা নিলো।

পাশের টেবিলেই রাজ নামের ছেলেটা খাওয়া বাদ দিয়ে ফুলের দিকে নিরিখ ধরে তাকিয়ে আছে, ছেলেটার ধারণা হয়তো ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ঘুরতে এসেছে। নাম আর ফোন নাম্বার না জানা অব্ধি ছেলেটার শান্তি নেই। প্রথম দেখায় ই বেশ কোমর বেঁধেই পিছু নিয়েছে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here