#নয়নতারা
পর্ব ১৩
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
(আমার ছদ্মনাম টা শুনে অনেকেই ধারনা করেন যে আমি ছেলে।কিন্তু সেটা ভুল।আমি একজন মেয়ে।)
আজ শুক্রবার।ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে এসেছেন ফজলে শেখ।তানিয়ার জন্য ই মূলত এতো বাজার।গতকাল ডাক্তার জানিয়েছেন তানিয়া মা হতে চলেছে।ফজলে শেখের খুশি আর দেখে কে।এদিকে রাহেলা বেগম ও মনে মনে এটা ভেবে খুশি হচ্ছেন এবার যদি তার বংশ রক্ষার জন্য কেউ আসে।
—-শোনো জামাই,মুই তো চইলা যাইতেছি।তুমি কিন্তু তানির খেয়াল লইয়ো।হেইবার যদি আল্লাহ একখান পোলা দেয় তয় তো তুমার ই লাভ।শত হলিও বুড়া বয়সে তুমার লাঠি ধরবার কাউরে পাইবা।
—-আচ্ছা মা।আপনি আর কটা দিন থেকে যেতেন।
—-নাহ।আর কি থাকুম।এই দুটোদিন ছিলুম তাই তোমার মায়ে মুরে খুটা দিয়ে ধুইয়া ছাড়ছে।
—-কিহ!মা আপনাকে খোঁটা দিয়েছে?
—-তা নয়তো কি!
কথাটা বলেই রাবেয়া বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে নাক টেনে একটু কান্নার ভান করলেন।ফজলে শেখ বেজায় লজ্জাতে পড়েছেন।তার শাশুড়িকে তার মা এমন অপমান করেছে শুনেই তার মুখ লজ্জায় রক্ত বর্ন ধারণ করেছে।
—-না আপনি মায়ের কথা কেন কানে নিচ্ছেন।বয়স্ক মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে।আপনি আর কটা দিন থেকে যান।
—-তুমি কইতাছো জামাই!
—-হ্যাঁ।
—-আইচ্ছা।তুমি যহন কইতাছো মুই আর যাইতাম না।
ফজলে শেখ রাবেয়া বেগমের সাথে কথা বলে রাহেলা বেগমের ঘরের দিকে গেলেন।
—-মা এগুলো কি?
—-আরে ফজলে তুই?
—-তুমি তানিয়ার মাকে খোঁটা দিয়েছো কেন?
—-ও তুই বুঝি এহন বউয়ের সাথে সাথে শাশুড়ি লইয়া ও সালিশ করতে আইছোস?
—-তুমি খোঁটা দিয়েছো কেন ওনাকে?
—-দিছি বেশ করছি।ঐ কালনাগিনীর মা তো আরেক কালনাগিনী।দিন রাত মোর পোলার ঘাড়ের ওপর বইসা গান্ডে পিন্ডে গিলতাছে।আর হামারই সংসারে আইসা হেতি কলকাঠি নাড়তাছে।কুটনি একখান।
—-মা আর দ্বিতীয় বার যদি শুনি তুমি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করেছো,,,,,
—-হুনলে তুই কি করতি ক দেহি?বাইর কইরা দিবি!এই ভয় দেহাইতাছোস হামারে।হুইনা রাখ মোর সোয়ামীর বাড়ি জমি সব এহন মোর নামে।হামি বাইচা থাকতি তোর ক্ষেমতা নাই মুরে বাইর করার।তুই যদি বেশি বাড়াবাড়ি করোস তোরে আর তোর ঐ বউরে হামি ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাইর করুম।হামার পেটের পোলা হইয়া দুদিনের শাউড়ি রে এহন চিনো।মারে গুনতিতি নেও না।তাই না।
ফজলে শেখ রাহেলা বেগমের সাথে আর কথা বাড়ালেন না।বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি #নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।
;;;;;
—-আর ভালো লাগছে না।এবার আমাদের মিষ্টির কপাল টা সত্যি সত্যি বোধ হয় পুড়লো রে নাফিজ।
নাফিজ অঙ্ক কষা বাদ দিয়ে লতিফার দিকে তাকালো।দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকলো লতিফা।
—-কি হয়েছে মা?
—-তানিয়া মা হতে চলেছে।
—-ও।
—-এরকম সুখবর শুনে খুশি যে কেউ হবে।কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে মিষ্টিটার জন্য।
—-আসলেই মা।এখন ও একা।তাই তানিয়া কাকি ওকে কি অত্যাচার দুরছাই করে।এরপর যদি ওনার নিজের একটা বাচ্চা হয়,,,,,,,,,
মিষ্টির কথা ভেবেই নাফিজ লতিফা দুজনের ভেতর থেকেই এক অজানা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
—-ও তোকে তো বলতে ভুলে গেছি তোর বাবা ফোন করেছিল।
—-বাবা কবে আসবে মা?কতোদিন দেখি না বাবাকে।
—-সামনের সপ্তাহে বিশ দিনের ছুটিতে ঢাকা থেকে আসবে।
—-যাক।কতোদিন পর বাবাকে দেখব।
—-আরেকটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি।
—-কি?
—-সামনের সপ্তাহে তোর ছোটো মামার বিয়ে।তোর নানু একটু আগে ফোন করেছিল।আমাদের আগে আগে যেতে বলেছে।
—-কবে যাবে?
—-কাল পরশু।আচ্ছা তুই পড়।আমি রান্না বসাই গিয়ে।
নাফিজের আর পড়াতে মন বসলো না।না তার মনে মামার বিয়ের আনন্দ।তার মনে শুধু একটাই চিন্তা এখন তার মিষ্টি পাখিকে রেখে সে থাকবে কি করে এতোদিন।
;;;;
—-ও নতুন মা নতুন মা আরেকটা আপেল দেওনা।
মিষ্টির কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তানিয়ার।বসার ঘরে বসে সে আপেল কেটে খাচ্ছিল।এর মধ্যে মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে হাজির।রাহেলা বেগমকে দেখতে পেয়ে সে যা মিষ্টিকে এক টুকরো আপেল দিয়ে ছিল।এখন মিষ্টির এই আবদারে বড্ড রাগ হচ্ছে তার।
—-যা তো এখান থেকে।সব সময় খালি খাই খাই।
—-ও নতুন মা দেও না।খুব খিদে পেয়েছে।আর আপেল গুলো কি মিষ্টি।কতোদিন পর বাবাই আপেল এনেছে।দেও না একটা।
তানিয়া মিষ্টির কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে।মিষ্টি গিয়ে তানিয়ার আঁচল নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।
—-ও নতুন মা।একটা দেও না।
—-শয়তান মেয়ে একটা।দূর হ এখান থেকে।
বলেই তানিয়া মিষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল।
—-আআআআ মা,,,,
ব্যথা পেয়ে মিষ্টি জোরে কান্না শুরু করে দিয়েছে।মিষ্টির কান্না শুনে রাহেলা বেগম ফজলে শেখ দুজনেই ছুটে এলো।
—-কি হয়েছে কি মিষ্টি?
—-আরে ও মিষ্টি কি হইছে?আরে আরে।ওঠ উঠ।
রাহেলা বেগম মিষ্টিকে দাঁড় করিয়ে দেখে মিষ্টি বারবার হাঁটুতে ঘষছে আর জোরে কাদছে।
—-ও মিষ্টি ব্যথা পাইছোস।কেমনে পড়লি?
—-নতুন মা আমাকে ব্যথা দিয়েছে।একটু আপেল চেয়েছি বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।দাদীমা আমার হাঁটুতে খুব ব্যথা করছে।
মিষ্টির কথা শুনে ফজলে শেখ বেশ চটে গিয়ে তানিয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন।তানিয়া ঢোক গিলছে বসে বসে।
—-তুমি ওকে ধাক্কা দিয়েছো কেন তানিয়া?
—-কি করব।আঁচল ধরে টানাটানি করছিল।ছাড়তে বলছি তাও ছাড়ে না।
—-ওকে একটা আপেল দিলে কি হতো তোমার?
—-একটা কেন।এসে খেতে বসে পারলাম না ও এসে খেয়েই যাচ্ছে।আমার জন্য কিছু রাখছে নাকি।এইটুকুন মানুষ অতো খাই খাই কেন সব সময়।আমার বাচ্চার জন্য এখন পুষ্টি প্রয়োজন।আমি নিজে কি কিছুই খাব না।সব কি আপনার মেয়েকে গিলাবেন আপনি।
—-এসব কোন ধরনের কথা তানিয়া?
তানিয়া আপেলের বাটিটা মিষ্টির সামনে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।
—-মিথ্যাবাদী মেয়ে একটা।নে জন্মের গিলা গেল।গিলে মর।মরে শান্তি দে আমায়।তোর জন্য একটু খেতে ও পারব না।যখন তখন এসে শুধু নজর দেবে।আর এর বাপ এসে আমাকে শাসাবে।কি পেয়েছেন কি হ্যাঁ।আজ ই আমি বাপের বাড়ি চলে যাব।আপনি বসে বসে আপনার ঐ মেয়েকে নিয়ে থাকেন।আর ওকেই জনমের গেলান গিলান।
তানিয়া ন্যাকা কান্না করতে করতে ঘরের দিকে গেল।ফজলে শেখ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টি কে রাহেলা বেগমের থেকে ছাড়িয়ে এলো পাথাড়ি থাপ্পড় দিতে লাগলেন।
—-তোর জ্বালায় একটু শান্তি নেই আমার।মরতে পারিস না।জ্বালিয়ে খাচ্ছিস তুই।তোর জন্য আমার সংসারে একটু শান্তি নেই।অলক্ষী একটা।
;;;;;
দুপুরের কাঠফাটা রোদে রাস্তার কাছে দাড়িয়ে আছে মিষ্টি।মুখ উঁচু করে সূর্যের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে।মুখ দিয়ে টপ টপ করে ঘাম বেয়ে পড়ছে।ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।
—-ও সূর্য মামা তুমি একটু আমার মাকে এনে দেবে।আমি মায়ের কাছে যাব।ও মা মা তুমি কোথায় মা?কোথায় গেলে তুমি? বাবাই আমাকে একটুও ভালোবাসে না।কতো ব্যথা দিয়েছে আজ আমাকে।মা মা আমার গা হাত পা খুব ব্যথা করছে।দেখো আমি না খেয়ে বাইরে চলে এসেছি।কেউ আমাকে ডাকতে এলো না।তোমার সাথে দুষ্টুমি করলে তুমি তো বকা দিতে।পরে তো আবার আমাকে খুঁজতে আসতে।ও মা মা তুমি কোথায়?
মিষ্টি হাঁটতে হাঁটতে কখন যে রাস্তার মাঝের দিকে চলে এসেছে তার খেয়াল নেই।এর মধ্যে একটা মালবাহী ট্রাক এগিয়ে আসছে মিষ্টির দিকে।
চলবে———