#নয়নতারা
পর্ব ১৫
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি #নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।
;;;;;
—-ও বাবাই বাবাই একটু খেতে দেও না বাবাই।আমি আর খিদে সহ্য করতে পারছি না।ও বাবাই একটু ভাত খেতে দেও না বাবাই।
মিষ্টির ধাক্কাতে সকালবেলা ঘুম ভাঙালো ফজলে শেখের।তানিয়া ও মিষ্টির গলা শুনে আড়মোড়া দিয়ে উঠে পড়েছে।
—-সমস্যা কি তোর?সাত সকালে একটু ঘুমোতে ও দিবি না।কি হয়েছে টা কি হ্যাঁ।
ফজলে শেখের ধমক খেয়ে মিষ্টি আরো কেঁপে উঠে কেঁদেই দিল।
—-বাবাই আমার খুব খিদে পেয়েছে।পেটে ব্যথা করছে।আমাকে এক টু ভাত দেও না বাবাই।
মিষ্টি পেট চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।গতকাল রাতে মিষ্টিকে খেতে দেয়নি ফজলে শেখ।লতিফার ওমন অপমানের পর তানিয়া তো স্পষ্ট করে ফজলে শেখকে বলেই দিয়েছিল,”মিষ্টির চরিত্র খারাপ হয়ে যাচ্ছে নাফিজের সাথে মিশে।নাফিজ নাকি ভালো ছেলে না।মা আর ছেলে নিশ্চয়ই কোনো ধান্দাতে আছে।না হলে কার খেয়ে কাজ আছে মিষ্টির জন্য দরদ দেখাতে আসবে”।তানিয়ার কথায় ফজলে শেখ শাস্তি স্বরূপ মিষ্টির রাতের খাবার বন্ধ করে দেন।এমনকি সবার খাওয়া শেষে ফ্রিজে ও লক করে দেন।
—-অসহ্য একটা।জ্বালিয়ে ছাড়ছে পুরো।এক রাত না খেয়ে আছিস তো কি হয়েছে মরে গেছিস? যে সাত সকালে এভাবে এসে ডাকবি।
—-উহ এমনিতেই কাল রাতে মাথা ব্যথার জন্য ঘুমোতে পারিনি।এখন সকাল সকাল কাচা ঘুম নষ্ট হয়ে গেল।মাথাটা আবার ধরেছে।
তানিয়ার কথা শুনে ফজলে শেখ উঠে তানিয়ার মাথার কাছে গেলেন।
—-কি হয়েছে?খুব বেশি খারাপ লাগছে?মাথা টিপে দেব?
—-হ খালি বউয়ের মাথাই টেপ।জানোয়ার একখান।ঐ টুকু বাচ্চা আইসা পেট চাইপা কান্না করতাছে তাতে তোর কিছু আসে যায় না তাই না।এতো বড় অমানুষ তুই।এট্টু মন গলে না তাই না।
রাহেলা বেগম এতক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন।উপায় না পেয়ে ছেলে বউয়ের ঘরে ঢুকেই পরলেন তিনি।
—-আচ্ছা মা তুমি সব সময় তানিয়ার সাথে এমন করো কেন বলোতো?এই অবস্থার মানুষ।ওর খারাপ লাগছে সেটা দেখবে না।আর বাবা মা শাসন না করলে ছেলে মেয়ে বিগড়ে যায়।মিষ্টি তো এমনিতেই বিগড়ে গেছে।
—-বদদোয়া লাইগা যাবে কইয়া দিলাম।হ বদ দোয়া লাইগা যাইবে।কই ঐ শয়তানডা তোরে কি কইলো তাই হুনলি।আরে ঐ নাফিজ ওর মা সেই ছোটো থেইকা মিষ্টির ঘু মুতির খ্যাতা খান ও ধুইছে।দরদ কি মাইনসের এমনে আসে।ছি ছি ছি।আর ঐ তানিয়া কি অপবাদ খান দিল ওগে লইয়া।হের জন্যি এই টুকুন মাইয়ারে রাত ধইরা না খাওয়াই রাখছোস। রাত্তিরে এট্টু ঘুমোতে পারেনি মাইয়াডা।খিদের জালায় ছটফট করছে আর কানছে।পানি খাইয়া আর কতোই বা খিদে সামলানো যায়।দে ফ্রিজের চাবি দে।হামি ডিম ভাইজা ওরে খাওয়ামু।দে কইতাছি।
ফজলে শেখ রাহেলা বেগমের সাথে না পেরে উঠে গিয়ে ফ্রিজের চাবিটা নিয়ে রাহেলা বেগমের হাতে দিল।
—-নেও ধর।আর গিলাও তোমার মিষ্টিরে।হাড় মাংস জ্বালিয়ে খাচ্ছে আমার।এই দাঁড়িয়ে আছিস কেন যা বের হ এখান থেইকা।
ফজলে শেখের কথা শুনে মিষ্টি ভয় পেয়ে রাহেলা বেগমের পেছনে মুখ লুকালো।
—-জানোয়ার একখান।বাপ হইয়া এইরাম একখানা কতা কইলি তুই।আইজ নামাজ পইড়া উইঠা এই সকালে তোরে কইয়া দিচ্ছি শুইনা রাখ অভিশাপ লাইগা যাবে।এই মা মরা বাচ্চাডার চোখের পানি এমনে এমনে ঝরবে না।ও এ হন কিছু বুঝে না।কিন্তু হুইনা রাখ এমন দিন ও আইতে পারে এই মিষ্টির জন্যি তুই কাইনদে ও কুল পাবি না।তোর অভিশাপ লাগবে।হামার ডা তো লাগবেই।হেই বাচ্চাডার ও লাগবে কইয়া দিলাম।জানোয়ার হইছে।
রাহেলা বেগম মিষ্টিকে নিয়ে চলে গেলেন ঘর থেকে।
—-আরে যাও তো যাও।আমার জীবনটা পুরো ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে ঐ টুকু মেয়ে।
—-দরজা টা দিয়ে শুতে আসুন তো।আপনার আবার অফিস আছে।
ফজলে শেখ দরজাটা লাগিয়ে তানিয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।সাত সকালে উঠে মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেছে তার।
;;;;;
কড়াই তে গরম তেলে দুটো ডিম ভেজে নিলেন রাহেলা বেগম।একটা মিষ্টির জন্য আরেকটা তার জন্য।মিষ্টির জন্য তিনিও রাতে কিছু খাননি।
—-ও দাদীমা আর কতো দেরী।আমার খুব খিদে পেয়েছে।দেও না।
—-এই তো পাখি হইয়া গেছে।চলো চলো হামরা দুইজনে এহন খাইমু।
মিষ্টি কে নিয়ে রাহেলা বেগম বসার ঘরে খেতে বসলেন।আলু ভাজা দিয়ে ভাত মাখিয়ে এক টু একটু করে ডিম ছিড়ে তার সাথে মেখে মিষ্টির গালে তুলে দিচ্ছেন তিনি।মিষ্টি খুব দ্রুত গতিতে খাচ্ছে।যেন এখনি সব শেষ হয়ে যাবে।
—-আরে আস্তে খা ও মিষ্টি।আহারে মাইয়াডার কি খিদে লাগছে।হামি এতো বড় মানুষ হামার তাই পেট জ্বলতাছে।আর হের।অমানুষ একখান।আল্লাহ তুমি এই অমানুষ গুলার বিচার কইরো।
মিষ্টিকে খাইয়ে দিয়ে রাহেলা বেগম নিজেও খেয়ে নিলেন।একটু পরেই গেট নাড়ানোর শব্দ পেয়ে দরজার দিকে গেলেন রাহেলা বেগম।
—-এহন আবার কেডা?
রাহেলা বেগম দরজা খুলে দেখেন গেটের সামনে লতিফা দাড়িয়ে আছে।
—-আরে বউ তুমি?এতো সকালে।
—-হ্যাঁ কাকিমা।আজ বিকেলে রওনা হবোতো।মিষ্টিটারে রেখে যেতে মন চায় না।এতো মায়া করেছে না আপনার নাতনি টা।তাই ওকে নিতে আসলাম।ও উঠেছে?
—-হ উঠছে তো।খাড়াও হামি ডাকতেছি।ও মিষ্টি।কই গেলি রে।আয় আইসা দ্যাখ কেডা আইছে।
দাদীর গলা পেয়ে মিষ্টিও দৌড়ে দরজার দিকে আসলো।
—-কাকিমা তুমি?
—-হ্যাঁ।চল তোকে নিতে এলাম।কাকিমা গেট টা খুলে দিন।
—-ও হ খাড়াও।তালা দিয়া আছে।হামার তো খেয়ালই নেই।
রাহেলা বেগম চাবি এনে তালা খুলে দিলেন।লতিফার হাত ধরে মিষ্টি বেরিয়ে গেল।
—-কাকিমা ওর চিন্তা করবেন না।দুপুরে ওকে খাইয়ে এখানে দিয়ে যাব।
—-আইচ্ছা যাও।হায়রে আল্লাহ ঐ পরের ঘরের প্রতিবেশীর তাই মায়া দয়া আছে।আর হামার পোলারে দেহো।আল্লাহ তুমি মিষ্টিটার কপালে সুখ দিও।হের মা ডা কম কষ্ট করিনি সংসারের লাইগা।অভাব অনটনের সংসারে আইসা কি খাটান খাটছিল হামার বউডা।আইজ টিনের চাল থেইকা ছাদের ঘর হইছে।কি কষ্ট কইরা জমায় জমায় বউডা ফজলের সাথে মিলা কাম করছে।আইজ দেহো সুখ করবার আগেই হের চলি যাতি হলো।আর হের মাইয়াডা হেই ঘরেই এট্টু শান্তি পাইতেছে না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রাহেলা বেগম।
;;;;;
—-তুমি কোথায় যাবে নাফিজ ভাইয়া?
ছাদের ওপর বসে আছে নাফিজ আর মিষ্টি।নাফিজ বসে বসে সূচ সুতো দিয়ে মালা গাথছে।নয়নতারা ফুলের ডান্টি একটু কেটে নিয়ে ফুলের ভেতর সুচ সুতো ঢুকিয়ে একের পর এক ফুল বসিয়ে মালা গাথছে।
—-মামার বিয়ে রে।সেখানে যেতে হবে।
—-আমি কার সাথে খেলব নাফিজ ভাইয়া?তুমি ছাড়া আর তো কেউ আমাকে খেলতে নেয় না।
—-আরে চলে আসবো তো।থাকবো তো মাত্র কটা দিন।এই কদিন একটু একা খেলিস।
—-নাফিজ ভাইয়া একটা জিনিস দেখবে?
—-কি?
—-আগে চোখ বন্ধ করো।
—-কেন?
—-আরে করোই না।
—-ঠিকাছে।
নাফিজ চোখ বন্ধ করে আছে।কিন্তু র মিষ্টির কোনো সাড়া শব্দ নেই।
—-কি রে মিষ্টি আর কতক্ষণ?
—-আরেকটু।দাঁড়াও।হয়ে গেছে।এবার চোখ খোলো।
নাফিজ চোখ খুলে ভয় পেয়ে একপা পিছিয়ে গেল।
—-ভাউউউউউ।
—-ওরে দুষ্টু।
মিষ্টি নয়নতারা ফুলের পাপড়ি ছিড়ে নখের ওপর চাপ দিয়ে লাগিয়েছে।এতে পাপড়িগুলোকে দেখতে একদম নখের মতো লাগছে।আর বড় বড় নখ হঠাৎ দেখে যে কেউ ভয় পাবে।
—-হি হি তুমি ভীতু।ভয় পেয়েছো।
—-ফাজিল।কোথ থেকে এসব শিখেছিস হ্যাঁ।
—-জানো আমাদের স্কুলেও না নয়নতারা গাছ আছে।আমরা ফুল ছিড়ে এরকম করে রাক্ষস রাক্ষস খেলি।
—-স্কুলে গিয়ে আরো দুষ্টু হয়ে যাচ্ছিস তুই মিষ্টি পাখি।
—-হি হি।
দুপুর বেলা মিষ্টি কে খাইয়ে দিয়ে মিষ্টির চুল নিয়ে বিনুনী করতে ব্যস্ত নাফিজ।
—-ও ভাইয়া কি করছো?
—-এই দাঁড়া নড়বি না।এই তো হয়ে গেছে।
—-কি হয়েছে রে?
এর মধ্যে ঘরে লতিফা হাজির।
—-মা দেখো মিষ্টি বুড়ির বিনুনী করছিলাম।মাত্র দুটো প্যাচ হয়েছে।
—-বাহ ভালোই তো করেছিস।কিন্তু তুই এতো নয়নতারা ফুল কোথ থেকে পেলি।
—-বাগানের সব ফুল ছিড়ে এনেছি।
—-তোরা দুটো যে এই ফুলের কি পাস আমি বুঝি না।
—-এবার দেখো কি করি।
নাফিজ মিষ্টির বিনুনীর ভাজে একটা করে ফুল গুঁজে দিল।দুই কানের কাছে ফুল গুঁজে দিল।তারপর একটা ফুলের মালা মিষ্টির গলাতে,দুটো দুই হাতে আরেকটা মাথায় ক্লিপ লাগিয়ে বেধে দিল।
—-মা দেখো মিষ্টিকে একদম ফুলের রানী লাগছে না।
—-আসলেই।নে তুই ওকে দিয়ে আয়।আমরা বেরুব।তোর বাবা তোর নানু বাড়ি গিয়েই উঠবে।
লতিফা তৈরী হতে নিজের ঘরের দিকে গেলেন।নাফিজের মুখে বিষন্নতার ছাপ।তার কিছুতেই মিষ্টিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
—-মিষ্টি পাখি।
—-হুম।
—-তুই আমার বাগানের রানী হবি?
—-বাগানের রানী কিভাবে হয়?
—-হয়।তুই হবি?
“”””তোকে সাজিয়ে রাখব আমার মনের বাগানে
ছোট্ট আঙিনায়
তুই সকাল বেলা ফুটবি সূর্যের মতো
আর রাতের চাঁদ হয়ে আলো ছড়াবি শুধু আমার ঘরে
তোকে মনের মধ্যে গেঁথে রাখব
মালার মতো একটা একটা করে
তুই শুধু আমার বাগানে সৌরভ ছড়াবি
ফুটে রইবি শুধু আমার নয়নতারা হয়ে””””
হবি বল?
নাফিজের এতো জটিল কথা মিষ্টির বোধগম্য হলো না।
—-তুমি এগুলো কি বললে নাফিজ ভাইয়া?
—-কিছু না চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।
নাফিজ মিষ্টির হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাটছে।কিছুদূর যেতেই মিষ্টিদের বাড়ির সামনে চলে এলো।
—-মিষ্টি পাখি শোন।
—-হুম।
—-তুই তোর নতুন মায়ের সাথে একদম কথা বলতে যাবি না।ওনার ধারে কাছে যাবি না।ওনার কাছে যত না যাবি ততোই তোর পেছনে লাগতে পারবে না।বুঝেছিস আমার কথা।
মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উওর দিল।
—-আর শোন একদিন একদম দুষ্টুমি করবি না।ভালো মেয়ে হয়ে থাকবি।বুঝেছিস।
—-হ্যাঁ।
—-আর মন খারাপ করবি না।আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসব।ঠিকাছে।
—-আচ্ছা।
মিষ্টি কে গেটের সামনে রেখে নাফিজ বেরিয়ে আসতে গেল।পেছনে মিষ্টির ডাক শুনে আবার থেমে গেল নাফিজ।
—-নাফিজ ভাইয়া।
—-কি হয়েছে?
—-টা টা।
মিষ্টি হাত নাড়িয়ে নাফিজকে বিদায় দিল।নাফিজ ও মুচকি হেসে মিষ্টিকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিল।
—-টা টা মিষ্টি পাখি।সাবধানে থাকিস।
;;;;;
এদিকে তানিয়ার মেজাজ একদম টগবগে ফুটছে।মিষ্টি নাড়ু খাবে বলে রাহেলা বেগম নাড়ু বানানোর জন্য নারকেল ছিলছিলেন। গুড় আনতে তিনি রাবেয়া বেগমকে সাথে নিয়ে বাজারে গেছেন।
নারকেলের খোসা দা সব কিছু ঘরে ছড়িয়ে রেখে গেছেন।এটা দেখেই তানিয়ার মেজাজ আরো চড়ে গেছে।
—-অসহ্য মহিলা।কি অবস্থা করে রেখেছে ঘরের।এ উনার মিষ্টি নাড়ু খাবে।খালি গেলা আর গেলা ঐ শয়তানটার।
এর মধ্যে মিষ্টি গেট খুলে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
—-দাদীমা ও দাদীমা।
মিষ্টির গলা পেয়ে পেছনে ঘুরলো তানিয়া।মিষ্টিকে দেখে আরো তার মেজাজ গরম হয়ে গেল।
—-নেও এলেন নবাবের বেটি।উনি খালি খাওয়ার অর্ডার করবেন আর উনার সামনে গিয়ে সব হাজির করতে হবে।
তানিয়ার দিকে একবার তাকালো মিষ্টি।তানিয়ার কথার উওর না দিয়ে মিষ্টি ভেতরে যেতে গেলে তানিয়ার আরো মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।তানিয়া গিয়ে মিষ্টির চুলের মুঠি টেনে ধরে।
—-আআআ নতুন মা লাগছে।
—-শয়তান মেয়ে ডাকছি পাত্তা দিচ্ছিস না এমন ভাব যেন।সেজে গুঁজে কোথ থেকে এলেন আপনি মহারানি?
—-নতুন মা ছাড়ো বলছি।
—-ছাড়ব না।কি করবি তুই?
মিষ্টি তানিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়াতে না পেরে তানিয়ার পায়ে লাথি দিল।
—-আআআ ওরে শয়তান মেয়ে তোর সাহস কম না আমাকে লাথি দিয়েছিস।
—-বেশ করেছি।আমি তো তোমার সাথে কথা বলিনি।তুমি কেন আমাকে মারছো?
—-ও বাবা মুখে খই ফুটেছে দেখছি।ঐ নাফিজের সাথে রঙতামাশা করে এসেছিস তাই না।নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে।এই বয়সে এসব ছি ছি।
রঙতামাশার অর্থ মিষ্টি বোঝে না।ও শুধু তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
—-কি রে কথা বলছিস না কেন?
—-তুমি নাফিজ ভাইয়াকে নিয়ে কি বলছো?
—-ও তুই তা আবার এতো বুঝিস না।অতচ কতো বড় শেয়ানা মাল তুই।তোর ঐ নাফিজ ভাইয়া একটা বদমায়েশ,বেয়াদব।বুঝিস।মানে খারাপ পচা।
তানিয়ার কথা শুনে মিষ্টির প্রচন্ড রাগ হলো।সে আর যাই হোক এতটুকু বুঝেছে নাফিজকে নিয়ে তানিয়া পচা কথা বলেছে।
—-একদম আমার নাফিজ ভাইয়াকে নিয়ে পচা কথা বলবে না।তুমি পচা তুমি খারাপ।তুমি একটা রাক্ষসী।
—-কি বললি।দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে।
তানিয়া মিষ্টিকে ধরতে গেলে মিষ্টি দু কদম পিছিয়ে গিয়ে তানিয়ার দিকে থুথু ছুড়ে দেয়।
—-তুমি পচা তুমি খারাপ।তুমি রাক্ষসী।তুমি খুব খারাপ নতুন মা।
—-তবে রে।
এবার আর মিষ্টি তানিয়ার থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারল না।তানিয়া মিষ্টিকে ধরে এলো পাথাড়ি চড় কিল মারছে।মিষ্টি চেঁচিয়ে কাদছে।
—-আআআআ নতুন মা লাগছে।আআআ।
—-আমার গায়ে থু দেওয়ার আগে মনে ছিল না।তোকে আজ আমি মেরেই ফেলব।কেউ বাড়িতে নেই।আজ দেখব তোর কোন দরদী তোকে মারতে আসে।
তানিয়া মিষ্টির গলা চেপে ধরলে ফ্লোরে শুয়ে মিষ্টি হাত পা ছুটতে থাকে।আর কাশতে শুরু করে।মিষ্টি হাত পা ছুড়তে ছুড়তে তানিয়ার চোখে জোরে ঘুষি বসিয়ে দেয়।
—-আআআঅ।ও মা আমার চোখ গেল।তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলব মিষ্টি।
তানিয়া এক চোখ ধরে ফ্লোরে থাকা দা টা হাতে নেয়।
—-তোরে আজকে জবাই করে তবে আমি ছাড়ব।শয়তান একটা।
মিষ্টি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় দা দেখে।তানিয়া মিষ্টির দিকে এগিয়ে আসতেই মিষ্টি দরজার দিকে দৌড়ে চলে আসে।
—-বাঁচাও বাঁচাও দাদীমা,,,বাবাই,,,,,,
—-আয় আজ তোকে জবাই দিয়ে ছাড়ব একদম।
তানিয়া ক্রোধের সাথে মিষ্টির দিকে দা নিয়ে এগিয়ে যেতেই মিষ্টি গেট খোলা পেয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।মিষ্টি কোনো দিকে না তাকিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ছুটছে।আর বারবার পেছনে তাকাচ্ছে।
—-বাঁচাও বাঁচাও মা,,,,নাফিজ ভাইয়া,,,,,
রাস্তার মধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করেই একটা চলন্ত প্রাইভেট কারের চাকার নিচে পড়ে গেল মিষ্টি।
চলবে————