#নয়নতারা
পর্ব ১৬
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
—-স্যার প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটা লক্ষ্য থাকে।যেটাকে আমরা ইংরেজিতে Aim In life বলি।আমার মনে আছে যে ছোটো বেলায় আমরা যখন ইংরেজিতে এই রচনা টা লিখতাম বেশির ভাগ ই এটা লিখতাম যে আমি ডাক্তার হতে চাই।কিন্তু আসলেই কি সবাই সেটাই হয়?পরবর্তীতে এই লক্ষ্য টি বদলাতে সময় নেয় না।আমি ও তেমন ছোটু থেকে চাইতাম একজন আর্মি অফিসার হতে।কিন্তু বুঝতে পারিনি কখন হুট করে এই লক্ষ্য টা ও আমার জীবনের অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়াবে।
হল রুমে সবার চোখ আপাতত আর্মির সবুজ রঙের মিশ্র উর্দি পরিহিত ব্যক্তিটির দিকে।ছয় ফুট উচ্চতার বলিষ্ঠ ব্যক্তিটির বুকের বা পাশে নেমপ্লেটে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে “নাফিজ”।ব্যক্তিটির এতক্ষণ ধরে বলা প্রতিটি কথা যেন হল রুমে বসা আর্মির উর্দি পরিহিত সকলের চোখের পানির কারণ।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ,আপনি সত্যি আজ সকলকে কাদিয়ে ছেড়েছেন।আসলেই আমাদের সমাজে এরকম প্রতিনিয়ত ঘটে।কিন্তু এতোটা নির্মম করে কেউ কখনো বর্ণনা করতে পারে না।আজ আপনাদের নিউ অফিসারদের ওরিয়েন্টেশন টা সত্যি আমার মনে গেঁথে থাকবে।আমি ও চাই আপনি যেন আপনার লক্ষ্য পৌঁছাতে পারেন।
—-স্যার দোয়া করবেন আমি যেন আমার মিষ্টি পাখিকে খুঁজে পাই।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ আমার আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার ছিল।
মেজর ইমরানের কথা শেষ হতেই মেজর আসলাম উঠে দাঁড়ালেন।
—-জি স্যার।
—-আমার প্রশ্ন হলো যে ওনারা কি বাচ্চাটির জন্য পুলিশে ডায়েরি ও করেনি?
ক্যাপ্টেন নাফিজ চোখ বুজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার দম নিয়ে বলতে শুরু করলেন।
—-স্যার ডায়েরি করেছিল।আমরা ঐ ঘটনার এক সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরি।ঘটনা জানার পর আমার বাবা মা ও পুলিশের কাছে ডায়েরি করতে গেছিল।কিন্তু কি বলবো স্যার মানুষ এতোটা নির্দয় হতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারিনি।ওনারা ভেবেছিলেন মিষ্টির হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তাদের জেল হতে পারে।তাই তারা কোনো ডায়েরি করেনি।আরো অদ্ভুত ব্যাপার পুরো এলাকার কেউ এটা জানতোই না।ঐ ঘটনার তিন দিন পর পাশের আরেক প্রতিবেশী কিভাবে এটা জানতে পারেন।তিনি সবাইকে পরে এটা ছড়িয়ে দেন।মিষ্টির ঐ সৎ মা তানিয়া সবাইকে এটা বলেছিল যে ও ওর নানা বাড়ি তে আছে।কিন্তু ওর নানা বাড়ির লোক কিছুই জানতো না।তারপর অনেক থানা পুলিশ করা হয়।কিন্তু ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।আমরা শুধু এতটুকু ই জানতে পেরেছিলাম ঐ দিন দুপুরে র দিকে একটা বাচ্চার এক্সিডেন্ট হয়।তারপর তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।বাচ্চাটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল।যাদের গাড়িতে এক্সেডেন্ট হয় তারাই নাকি বাচ্চাটাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়।ব্যস এতটুকু ই আমাদের ধারনা হয়েছিল যে ওটা মিষ্টিই ছিল।কিন্তু পরে আর কোনো খোঁজ আমরা পাইনি।
—-সো স্যাড।আসলেই খুব নির্মম ঘটনা।আল্লাহ জানেন কোথায় আছে বাচ্চাটি।আদৌ বেচে আছে কি না।
—-স্যার আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।আমি হয়তো বেশিই আপনাদের কে বলে আবেগী করে ফেলেছি।
—-না ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনার ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আমার খুব ভালো লেগেছে।ওকে সবাইকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে স্বাগতম।আপনারা এর আগেও বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করেছেন।আর নিজেদের যোগ্যতার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন।আর ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনার কথা কি বলবো।অল্প দিনেই দেশের সব ক্যান্টনমেন্টে ছড়িয়ে গেছে আপনার সুনাম।আশা করছি যশোর ক্যান্টনমেন্ট এবং আমাদের ইউনিটের সুনাম আপনি আরো বাড়িয়ে তুলবেন।
—-ইনশাহআল্লাহ স্যার।
—-সো অফিসার্স আপনারা লান্চ টাইমে যান।পরে দেখা হচ্ছে।
সামনে থাকা সকল অফিসার হল রুম ত্যাগ করলেন।বাকিরা সবাই দাঁড়িয়ে তাদের স্যালুট করে তাদের পর বেরিয়ে গেল।
সবাই চলে গেলেও একজন বসে আছে।ক্যাপ্টেন তানহা।তার চোখ দুটো এখনো ভেজা।নিজের অতীতটাকেই যেন এতক্ষন শুনলেন তিনি।সেটাই মনে হচ্ছে তার।
;;;;;
—-নাফিজ ভাইয়া কেমন আছো?
দুপুর বেলা লান্চ টাইমে নাফিজ কুয়াটারে এসেছে।এসেই মামাতো বোন নীলা কে দেখে নাফিজের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।
—-অসভ্য অভদ্র মেয়ে।
—-আমি কি করলাম নাফিজ ভাইয়া।
—-এগুলো কি পোষাক পড়েছিস তুই?
—-জিন্স আর টি শার্ট।কেন?
—-বাইরের পুরুষের সামনে কি ধরনের জামা পড়তে হয় জানিস না।আবার দরজা খুলেই তোর এই মুখ দেখাচ্ছিস আমাকে।দূর হ এখান থেকে।
নাফিজ পাশ কাটিয়ে বিরক্তি নিয়ে নিজের ঘরের দিকে গেল।নীলা নাক টানতে টানতে লতিফার ঘরে গেল।
—-ফুফু নাফিজ ভাইয়া সব সময় আমার সাথে ঐরকম খিটমিট করে কেন?
—-কেন করে বুঝিস না।ও এসব চাল চলন একদম পছন্দ করেনা।আর ও তোর ভাই।এতো ঢলাঢলি করতে যাস কেন ওর সাথে।
—-কেন করি বোঝো না?
—-আমাকে অতো বোঝাতে আসিস না।তোকে কতোবার বলেছি নাফিজের পিছনে লাগতে আসিস না।ও মরবে তবুও অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাববে না।এতোই জেদ ওর।
লতিফা গরম তরকারির গামলা দিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেল।
—-নতুন ইউনিট কেমন দেখলি?
—-ভালো।তোমার এই নতুন জায়গা কেমন লাগছে?
—-খুব ভালো।তোর চাকরির জন্য আর যাই হোক একে একে পুরো বাংলাদেশ ঘোরা হয়ে যাবে আমার।
—-আরেকটু ভাত দেও।
—-তুই নীলার সাথে ওমন করে কথা বলিস কেন?কটা দিনের জন্য বেড়াতে আসে।ওর মন খারাপ হয় না।
—-শোনো মা তোমার ঐ ভাঈঝিকে এখানে আসতে নিষেধ করবে।নতুন এখানে এসে পারলাম না ঠিকানা নিয়ে ঠিক হাজির।অসহ্য পুরো।
—-আর কতোদিন এভাবে থাকবি বলতো।আমি তো কখনো এটা কল্পনা ও করতে পারিনি তোর ছোটবেলাটা তোর মনে এতদূর জায়গা করে রেখেছিল।
—-মা জানো আমি খুব করে চাই খুব মিষ্টি একবার এসে আমাকে নাফিজ ভাইয়া বলে ডাক দিক।
—-ও যদি মরে যায়।
—-জানি না মা আমি কিছু জানিনা।প্রতি রাতে প্রতি মোনাজাতে আমি ওকে চাই।আল্লাহ কি আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দেবে বলো?
চলবে————