#নয়নতারা
পর্ব ৫
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
—-আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া তুমি বললে না তোমার স্বপ্ন আছে।কি স্বপ্ন?
মিষ্টিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে নাফিজ।রোদে পুড়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
—-উহ মিষ্টি কুমড়ো তুই দিন দিন আরো ভারী হয়ে যাচ্ছিস।এরপর থেকে আর কোলে উঠতে চাইবি না।
নাফিজের কথায় মিষ্টি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।রোদের তাপে মিষ্টির গাল দুটো লাল বর্ন ধারণ করেছে।নাফিজ মুচকি হেসে গাল দুটো টেনে দিল।
—-কি হলো?মুখটা কে টমেটোর মতো করে রেখেছিস কেন?
—-তুমি ও আমাকে আর ভালোবাসো না।ঠিক নতুন মার মতো।
—-এ মা আমি আবার কি করলাম?
—- একটু কোলে উঠতে চেয়েছি বলে তুমি আমাকে কুমড়ো বলছো কেন?
—-আহ।আমি কি তাই নিয়ে কিছু বলেছি।দেখ তুই তো বড় হচ্ছিস এখন কি আর তোকে কোলে করে ঘুরে বেড়ানো যায়।মানুষ তো হাসাহাসি করবে।
—-বড় হলে কোলে ওঠা যায় না?
—-না রে।বড় হলে কোলে ওঠা যায় না।বুঝেছিস?
—-হুম।নাফিজ ভাইয়া তুমি তো বললে না তোমার কি স্বপ্ন আছে?
—-স্বপ্ন না।এইম-জীবনের লক্ষ্য।
—-সেটা আবার কি?
—-সেটি হলো আমি বড় হয়ে কি হতে চাই সে টা।এই যেমন ধর কেউ ডাক্তার হয়,কেউ শিক্ষক এরকম।বুঝেছিস?
—-হ্যা।তুমি কি হতে চাও ?
—-আমি একজন বড় আর্মি অফিসার হতে চাই।
—-সেটা দিয়ে কি হয়?
—-এই ধর দেশকে রক্ষার করা।বন্দুক হাতে নিয়ে ঘোরা।
—-পুলিশ কাকুদের মতো?
—-অনেকটা তাই।
—-আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া ঐ আম্মি না কি বললে ওটা তে কি মারামারি করে?
—-কেন?
—-বলোই না।
—-হ্যাঁ মারামারি করা যায়।কেন বলতো?
—-তাহলে তুমি তাড়াতাড়ি ঐ আম্মি হয়ে যাও।আর নতুন মাকে এসে ডিসুম ডিসুম করে মেরে দেও।নতুন মা খালি আমাকে ব্যথা দেয়।
মিষ্টির কথাতে নাফিজ আর না হেসে পারলো না।হো হো করে হেসে দিল সে।
;;;;;
—-আজ যে বিকেলের আগেই চলে এলেন?
—-গরমে ভালো লাগছিল না।তাই দুপুরের খাবার না খেয়েই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি।
—-শুনুন না।আপনাকে কিছু বলার ছিল?
—-কি বলবে বলো?
তানিয়ার হাতে পানির গ্লাসটা ধরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন ফজলে শেখ।তানিয়া গ্লাসটা একপাশে রেখে স্বামীর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
—-কি হলো?আজ এতো আদর যত্ন কেন?
—-এতে আদর যত্নের কি হলো?আমি বুঝি আপনার যত্ন নেই না।
—-তা তো নেও।
—-তাহলে?আপনিই বরং একটু ও আমার দিকে খেয়াল করেন না।
—-কি বলবে তাই বলো।
—-বলছি বিয়ের তো অনেকদিন ই হলো।
—-হুম।তো কি হয়েছে?
—-বলছি আমার না খুব ইচ্ছে করছে ছোটো ছোটো হাত পা নিয়ে খেলতে।
তানিয়ার কথায় বেশ চমকে গেলেন ফজলে শেখ।শোয়া থেকে উঠে বসলেন।
—-আরে উঠছেন কেন?
—-তোমার কথা বুঝতে পারছি না।
—-উহ।আপনিও না।এতো লজ্জায় ফেলেন কেন বলুন তো।
—-এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে সোজাভাবে বলো।না হলে যাও তো।মাথা ধরেছে আমার।
—-বলছি আমাদের একটা বাচ্চা নিলে হতো না?
—-বাচ্চা!
—-হুম।
তানিয়া কথাটা বলেই আঁচলে মুখ ঢাকলো লজ্জা পেয়ে।ফজলে শেখ কিছুক্ষণ বসে ভাবছেন।
—-মিষ্টি আছে তো।ও বড় হোক।
—-আচ্ছা সব সময় সব কথাতে কেন ওকে টানেন বলুন তো মিষ্টি আছে তো কি হয়েছে।তাই বলে আমি আমার নিজের পেটের সন্তান নেব না।আপনি তো বিয়ের আগে কখনো এমন বলেন নি।এরকম তো কথা ছিল না।
—-আমি কি একবার ও বলেছি যে সন্তান নেব না।নেব কিন্তু মিষ্টি আরেকটু বড় হোক।তারপর।
—-আমি ওর বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারব না।সব সময় আপনি শুধু আপনার ঐ ঘরের মেয়েটাকে নিয়েই ভাবেন।আমাদের পরিবার নিয়ে চিন্তা করেন না।
—-তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছো তানিয়া।
—-কি বেশি বেশি বলেছি।হয়েছে তো এক মেয়ে।ঐ মেয়ে দিয়ে কি হবে শুনি।বড় হলেই তো বিয়ে দিয়ে দেবেন।আর পরের ঘরে চলে যাবে।বংশ রক্ষা বলেও তো একটা জিনিস আছে।
তানিয়ার কথাগুলো বলে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ফজলে শেখ গভীর চিন্তায় মগ্ন।
—-আসলেই তো তানিয়া ঠিক বলেছে।একটা ছেলে না হলে আমার বংশের খুঁটি ধরবে কে ।
“মেয়ে হলো দুদিনের অতিথি,আর ছেলে ঘরের খুঁটি।খুঁটি ছাড়া ঘর দাঁড়াবে কি করে”।
;;;;;
—-এই যে মিষ্টি বুড়ি।
কারোর গলা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল মিষ্টি।জামার ফিতা নাড়াতে নাড়াতে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল সে।
—-আরে শেখর দাদু যে।
—-হ্যাঁ।এই ভর দুপুরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
—-কোথাও না দাদু।বাড়ি যাচ্ছি।
—-আরে বাড়ি গিয়ে এখন কি করবে?আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে?
—-কোথায়?
—-অনেক সুন্দর জায়গা।অনেক মজা করব আমরা।
পঞ্চাশোর্ধ বয়সের শেখর বুড়োর কথায় মুখে আঙুল দিয়ে ভাবছে মিষ্টি।গেলে মন্দ হয় না।
—-কিন্তু বাবাই তো বকবে।দেরি করে ফিরলে।
—-বেশি সময় নেব না।চলো না।
—-আচ্ছা চলো।
শেখর বুড়োর হাত ধরে মিষ্টি কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে।
—-নাফিজ তাহলে তুই বাড়ি যা।কাল মনে করে নোটটা নিয়ে আসিস।
—-আচ্ছা।
নাফিজের সাথে কথা বলে নিলয় সাইকেল ঘুরিয়ে চলে গেল।
—-মিষ্টি কি বাড়ি পৌছেছে নাকি?বললাম একটু দাঁড়াতে। আর এই নিলয় টাও না।ডাক দেওয়ার আর সময় পায় না।নাহ একটু এগিয়ে দেখে আসি।বাড়ি থেকে অনেক দূর চলে এসেছি।ছোটো মানুষ একা এতদূর যেতে পারবে কি না।রাস্তার ধারে আবার জঙ্গল ও বাধবে।না দেখে আসি।
নাফিজ ও রাস্তার ধরে হাঁটা শুরু করলো।
—-আআআ দাদু আমার হাতে ব্যথা লাগছে।
—-কিছু লাগবে না।এদিকে আয়।
—-না আমি তোমার কাছে যাব না।
—-আরে আয় না।জামা টা খোল।এই গরমে জামা পড়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না।
—-না আমি জামা খুলবো না।আমাকে বাইরে নিয়ে চলো।জঙ্গলের ভেতর ভয় করছে।যদি সাপ আসে।
চলবে——–
(বিদ্র:কেউ খারাপ ভাবে নেবেন না।আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে।আমি শুধু লেখনির মাধ্যমে কিছু বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চাইছি।কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)