হৃদয়ে_রেখো #মেঘলা_আহমেদ পর্বসংখ্যা -০৭

0
374

#হৃদয়ে_রেখো
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা -০৭

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। সে নিজ গতিতে বয়ে যায়। দিনকে দিন মিলিয়ার অসুস্থতা ভয়াবহ ভাবে বাড়তেই থাকে। তার শরীরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। মিলিয়া কে তার মা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়। মিলিয়ার মা রিনি কে কল করে। ছুটির দিন হওয়ায় রিনি উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে রুমে। জুবায়ের কে সে ফুসকা আনতে পাঠিয়েছেন। হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সব আবদার করে রিনি। আর সবসময়েই হাসি মুখে তা পূরণ করে জুবায়ের। ভালোবাসার মানুষটির আবদার পূরণ করার মাঝেও একঝাঁক প্রশান্তি আছে। রিনি পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে থাকে। হঠাৎই ফোনের কর্কশ শব্দে রিনি কল্পনা জগত থেকে বেড়িয়ে আসে। ফোনটা কর্কশ ভঙ্গিমাই চিল্লিয়েই যাচ্ছে। রিনির বিরক্ত লাগে। ইচ্ছে করছে ফোনটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলতে। আর কল করা মহান ব্যক্তিটিকে একবার সালাম করতে। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে যায়। রিনি শান্ত হয় যাক কেটে গেছে। কিন্তু ফোনটা রিনি কে অবাক করে দিয়ে নতুন করে পুরোদমে বাজতে থাকে। ওপাশের মানুষ টি যেনো ফোন না ধরা পর্যন্ত থামবেন না। রিনি বিরক্তির সাথে ফোনটাকে হাতে নেয়। স্ক্রিনে মিলিয়ার নামটা জ্বলজ্বল করছে। রিনির রাগ লাগে জেদ করে চলে গেলো এখন আবার কল দিয়ে আদিখ্যেতা যত্তসব। রিনি বিরক্ত নিয়ে কলটা রিসিভ করে কালে ধরে। ইচ্ছে করছে একঝাঁক গালি শুনিয়ে দিতে মিলিয়া কে। কর্কশ কন্ঠে রিনি বলে-

-” তোর এত ঢং আসে কই থেকে? ঢং করে বাড়িতে আসোছ আবার শহরে যাস। নিজের ইচ্ছামত সবাইকে নাচাচ্ছিস। চাইছিস কি? এখন আবার কল করে ঢং করছিস। হাউ? কিভাবে একটা মানুষ এত নাটক করতে পারে?

রিনি কিছুটা জোড়েই বলেছিল কথাটা। কিন্তু অপরপাশে থেকে উত্তর আসেনা। চাপা কান্নার আওয়াজ আসে। রিনি হতভম্ব হয়ে যায়। মিলিয়া কাঁদছে? কেন কাঁদছে? আন্টির কাজু হলো নাকি? রিনি অস্থির কন্ঠে বলে-

-” হ্যালো মিলিয়া শুনতে পারছিস? তততুইইই কাঁদছিস কেন রে? কি হয়েছে বল।

মিলিয়ার মা কান্না থামায়। নাহ তার এত ভেঙে পড়লে চলবেনা। নিজেকে ধাতস্থ করে সে। জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোটদুটো ভিজিয়ে ক্ষীন কন্ঠে বলেন-

-” আমি তোমার আন্টি রিনি। মিলিয়ার ফোন থেকেই কল করেছি। তুমি আসলেই ঠিক বলেছো। আমার মেয়েটা অভিনয় করতে করতে পাক্কা অভিনেত্রী হয়ে গেছে। নিজের জীবন নিয়েও কত সুন্দর অভিনয় করছে।

রিনি থমকায়। আন্টির কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? আর মিলিয়াই বা নিজের সাথে কি নাটক করলো? এরপর সব ঘটনা খুলে বলেন রিনি কে। মিলিয়ার ক্যান্সার, ক্যামো থ্যারাপি নেয়া সার্জারি করা তারপর আবার নতুন করে এই ক্যান্সার দেখা দেয়া। সঙ্গে এও বলেন যে মিলিয়া এখন হাসপাতালে। রিমির সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। আচ্ছা মৃত্যু কি এতই কাছে। রিনি কলটা কেটে দেয়। শরীর ঝিমঝিম করছে। রিনি মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়ে। তাদের মিলিয়ার এই অসুখ সে মানতে নারাজ। কেনো পৃথিবীতে কি মানুষের অভাব ছিলো? এই মেয়েটাকেই কেন এত কষ্ট সহ্য করতে হবে? ভো ভোঁ করা মাথাটা তোলে রিনি। ফোন হাতে নেয় জুবায়ের কে কল করার জন্য। তার আগেই দরজা লাগানোর শব্দ হয়। জুবায়ের এসেছে হাতে ফুসকা তার। রিনির এবার আরো কান্না পায়। ঠোঁট উল্টে কেঁদে ওঠে সে। জুবায়ের রিনির আকস্মিক কান্নায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। ফুসকা আনতে দেরি হয়েছে তাই কি কাঁদছে? নাকি অন্য কারনে? জুবায়ের ফুসকা ড্রেসিন টেবিলের উপর রেখে রিনির পায়ের কাছে ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে। রিনির কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। জুবায়ের বারবার জিজ্ঞেস করছে কাঁদছে কেন কোন উত্তর নেই। উপায় না পেয়ে জুবায়ের জোড়ে এক রাম ধমক লাগায় রিনি কে –

-” সমস্যা কি তোমার? কখন থেকে বাচ্চাদের মতো কাঁদছো। ফুসকা আনতে দেড়ি হয়েছে তাই এভাবে কাঁদবে? দিবো এক চড়।

জুবায়ের ফুঁসে কথাগুলো বলে ওঠে। রিনি ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। জুবায়ের এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মিলিয়ার মায়ের বলা সব কথাগুলো বলে জুবায়ের কে। সব শুনে জুবায়ের থম মে’রে বসে আছে। রোবটের মতো সামনে তাকিয়ে আছে। এটা কিছুতেই হতে পারেনা মিলিয়ার সাথে। মিলিয়া এত বড় একটা সত্য তাদের কাছে থেকে হাইড করে গেল! রিনি কাঁদছে অঝোরে।

-” রিনি কান্না থামাও। ওকে স্বান্তনা না দিয়া তুমি গিয়ে এভাবে কাঁদলে, ওর মনের অবস্থা টা কেমন হবে? ফটাফট রেডি হয়ে নেও আমরা হসপিটালে যাব।

রিনি উঠে দাঁড়ায়। দুজনেই তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নেয়‌। তাদের বাসা থেকে হাসপাতালে যেতে বেশিক্ষণ লাগেনা। হসপিটালে কেবিনে গিয়ে দেখে মিলিয়া হাসছে তার মায়ের সাথে। রিনি আর জুবায়ের কে দেখে মিলিয়া আবারো হাসে-

-“আরে বাহ গোষ্ঠিসহ আমার মা সবাইকে কি না কি বলছৈ আর সবাই এসে হাজির। আজ ছুটির দিনেও তোদের জ্বালাইলাম সরিরে।

রিনির রাগ উঠে যায়-

-” এই তুই কি ভাবিস নিজেকে? আসলে নিজে অভিনেত্রী দেখে কি আমাদের সাথেও অভিনয় করছিস? মানে কি এসবের?

মিলিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে-

-” আমি আবার কি করলাম?

-” তুই কি করিস নি তাই বল। মাসের পর মাস নিজের অসুস্থতা লুকিয়ে রেখেছিস। নিজেকে কি মহান ভাবোস? যে এভাবে তুই ম’রবি, আর সবাই বলবে দেখ দেখ অভিনেত্রী মিলিয়া কি সুন্দর আত্ম বিসর্জন দিয়েছে। এভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়ার মানে কি?

জুবায়ের এর কথায় মিলিয়া চুপ হয়ে যায়। কি বলবে এদের?

-” দেখ আমি দু বছর আগে ক্যামো থ্যারাপি নিয়েছি। সার্জারি করিয়েছি। কিন্তু এখন আর কিছুই করার নাই।

পিনপতন নীরবতা সবার মাঝেই। বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথাগুলো শুনলো আদ্রিদ। সে কি করলো? ঐদিন মিলিয়া বিয়ের কথা বলেছিলো। সে কেন রাজি হলোনা? মেয়েটার কষ্ট তার আর সহ্য হচ্ছে না। সবার মৌনতায় মিলিয়া বলে-

-” এই রিনি আর জুবায়ের তোরা যদি ভাবিস আমাকে ফুপি আর খালা না বানিয়ে ওপারে পাঠাবি তাহলে কিন্তু আমি খুবই রাগ করবো। তাই তারাতাড়ি কয়টা বাচ্চা উৎপাদন কর।

এই রকম একটা পরিস্থিতিতে মিলিয়া এমন মজা করছে কেন? ওর মাথার স্ক্রু মনেহয় সব গেছে। রুমে নার্স আসে। নার্সকে উদ্দেশ্য করে মিলিয়া বলে-

-” দেখুন আমায় রিলিজ দিয়ে দিন। আমি বাড়ি যাব। হাসপাতালে মোটেও ভালো লাগছে না। বোরিং একটা জায়গা। টিভি নেই ধুর।

সবাই মিলিয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।

-” মিলিয়া তুই কি পাগল হইছোস? হাসপাতালে টিভি থাকবে, কেন?

রিনির কথায় মিলিয়া বিরক্ত হয়। নার্স মহিলাটি বলে-

-” ম্যাম আপনাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। রিলিজ হবেনা।

-” দেখুন আমি জানি আমার হাতে সময় বেশি নেই। প্লিজ বুঝুন একটু। এই সময়টুকু হাসপাতালের বেডে শুয়ে এদের চিন্তায় রাখতে পারবোনা আমি। আমি চাই আমার বন্ধু পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। ট্রাই টু আন্ডারস্টেন্ড।

নার্স মহিলাটি কিছু বলেনা। আরেকটা স্যালাইন লাগিয়ে চুপচাপ চলে যায়। আদ্রিদ ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায়। জীবনটা কতো অদ্ভুত হয়ে গেলো। মিলিয়ার জীবন অনিশ্চিত। আদ্রিদ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে টিভি টা অন করে। টিভি তে মিলিয়ার একটা শো চলছে। আদ্রিদ ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখছে। কিন্তু মিলিয়া গিয়ে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো। এটা আদ্রিদের মোটেও ভালো লাগলো না। ছেলেটা মিলিয়া কে ছাড়িয়ে করুন দৃষ্টিতে তাকায়। তখন মিলিয়া বলে-

-‘ তুমি যদি তোমার মনের কথা আমায় না বলো আমি বুঝবো কিভাবে? তুমি এভাবে কেন চেপে যাও সব। যানো কি আমিও তোমাকে ভালোবাসি!

আদ্রিদ চমকে ওঠে। তারাতাড়ি টিভি অফ করে ভাবতে বসে‌। আসলেই সে যদি মিলিয়া কে তার মনের কথা জানায় তাহলে কি মিলিয়া রাজি হবে‌? আচ্ছা মিলিয়া কি তাকে ভালোবাসে? যদি তাই হয়। আদ্রিদ হাজার চিন্তা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। সে মিলিয়া কে তার মনের কথা জানাবেই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here