হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_৩১

0
426

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩১
-আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না এখন।
-দম বন্ধ হয়ে আসছে তাই না?
ফুল মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,
-হুম।
-বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যাথা করছে তাই না?
-হুম
-সব কিছু অসহ্যকর যন্ত্রণাদায়ক লাগছে তাই না?
-হুম।
-এগুলো তো হার্টের রোগের লক্ষণ! চিন্তা করো না, ঢাকা পৌঁছেই তোমাকে আমি হার্টের বেস্ট ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
এখনি যদি সেফ না হই আমরা, অসাবধানতার জন্য পরে আবার পটল তুলবে তুমি আর আমি বিধবা ওহ সরি বিপত্নীক হয়ে যাবো।

ফুল অভ্রর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কটমট করছে,
-তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? চোখ বড় বড় লাগছে কেনো?হার্ট অ্যাটাকের সময় তো চোখ বড় বড় হয়,এম্বুলেন্স ডাকবো?

পাশে থেকে বালিশ নিয়ে অভ্রর দিকে ছুড়ে মারলো,অভ্রর মুখ বরাবর পৌঁছাতেই ক্যাচ!
ডিল মারায় ব্যর্থ হওয়াই ফুল অভ্রর কলার চেপে ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বালিশ দিয়ে বাড়ি দিতে শুরু করলো,আর অভ্র নিজের গা বাঁচিয়ে যাচ্ছে, বালিশের আঘাত থেকে নিজেকে প্রটেক্ট করে যাচ্ছে।
একটা সময় পর ফুলের হাত থেকে বালিশটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে ফুলকে টান দিয়ে বিছানায়ে শুইয়ে ফেলে, ফুল হাত ছুড়াছুঁড়ি করতে থাকে, অভ্র ফুলের দুই হাত ওর এক হাত দিয়ে চেপে ধরে। ফুলের উপর ভরে করে শুয়ে পড়ে।

ফুল ভেংচি দিয়ে বললো,
-ছাড়ুন ভালো লাগছে না।
-ওওও হুর এমন করো কেনো?তোমার রাগী চেহারা আমার ভালো লাগে কিন্তু মন খারাপ না। কতবার বলবো আমার সামনে মন খারাপ করে থেকো না,আমার উপর রাগারাগি করো আমি মেনে নেবো,কিন্তু মন খারাপ না।
তুমি কি বুঝো না গো হুর, কতটা বেশি ভালোবাসি আমি তোমায়?
-যতো ভালো শুধু আপনিই বাসেন, আমি তো ভালোবাসা কি বুঝিই না।
-আমি তো জানি তুমিও অনেক অনেক ভালো বাসো।আমরা দুজন দুজনকেই অনেক ভালোবাসি,কিন্তু এখন কি আর করার আছে বলো?
-আপনি কেনো আমার জীবনে এসেছিলেন?
-আল্লাহ পাঠিয়ে দিয়েছে তাই।
-না আসলেই ভালো হতো।
-কেনো?
-আপনাকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না। জানেন যখন আপনি আমার থেকে দূরে চলে যান আমার খুব কষ্ট হয়।আমার কিছুই ভালো লাগে না, দম বন্ধ হয়ে আসে।শুধু মনে হয় আবার কবে দেখা হবে,ইশসস যদি ঘুম থেকে উঠে দেখতাম আমার রাজপুত্র আমার পাশে বসে আছে। নামাজ পড়ে রোজ শুধু একটা দোয়াই করি আল্লাহ আজ যেনো আমার রাজপুত্র আমার কাছে আসে।
-আমার কি খুব ভালো লাগে? তোমার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট হয় আমার জানো?
-……………………

ফুলের চোখ থেকে জল গড়িয়ে দুই পাশ দিয়ে কানের পিঠ হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে।
অভ্র ফুলের দুই গালে, কপালে চুমু খেলো।
চোখের পানি মুছে দিয়ে ফুলের বুকে মাথা রাখলো। ফুল অভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

এগারোটার দিকে বেরিয়ে পড়লো ঢাকার উদ্দেশ্যে, বরাবরের মতোই ফুল অভ্র সবার পেছনে বসে আছে , ওদের সামনে আকাশ অনু বসেছে, আকাশ অনু আজ প্রথম গাড়িতে পাশাপাশি বসলো।

যেরকম হৈ চৈ আমোদ ফূর্তি করতে করতে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলো।আজ ফেরার পথে সেরকম আমোদ নেই, বাকিরা জার্নিটা জমিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু সেদিনের মতো আজ জমছে না, ফুল,আকশ, অভ্র, অনুর মন খারাপ শুধু একটা কারণেই প্রিয় মানুষ ছেড়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।

অভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বসে আছে ফুল।

চারটার দিকে ঢাকা পৌঁছালো।
ফুল আকাশ আজই টাংগাইল চলে যাবে, অভ্রদের আরেকটা গাড়িতে ফুল আকাশকে টাংগাইল পাঠানো হবে,
-আবার কবে দেখা হবে আমাদের?
-আল্লাহ যেদিন লিখে রেখেছে ভাগ্যে!
-অনেক বেশি মিস করবো আপনাকে।
কোনো উত্তর না দিয়ে অভ্র ফুলের কপালে চুমু দিলো, ফুল জড়িয়ে ধরে বললো,
-নিজের খেয়াল রাখবেন,সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন।আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো।
-কতোবার বলবো অপেক্ষা না করতে?
-ওকে অপেক্ষা করবো না, আপনার উপস্থিতি কামনায় পথ চেয়ে বসে থাকবো।
অভ্র ফুলের গাল টেনে বললো,
– পাগলী বউ আমার!

মন না মানলেও বিদায় নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো, দল ছেড়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অভ্রদের অন্য একটা গাড়িতে উঠলো আকাশ ফুল। গাড়িটা আপন গতিতে ছুটতে লাগলো টাংগাইলের পথে।

দুই পাশে দুই ভাই বোনের মন খারাপ।
অভ্রর ভেতরের মন খারাপটা প্রকাশ না পেলেও অনুকে দেখে মনে হচ্ছে এ বেচারীর একদম ভেঙে পড়েছে। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ানাকে নিয়ে বসলো অনু যাতে মন খারাপিটাকে ভুলতে পারে। সিলেট থেকে আসার সময় অভ্র অনু দুজনেই নিয়ানার জন্য অনেক কিছু এনেছে। নিয়ানা সেগুলো পেয়ে খুব খুশি।

অভ্র বিছানায় গা ছেড়ে মোবাইলে থাকা তার হুরের সাথে ছবি গুলো দেখছে আর মিস করছে।একটু পর পর ফুলকে কল দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে কোন পর্যন্ত গেলো।

-পুতুল তুই আমার আর অনুর ব্যাপারে জানলি কিভাবে?
-তোমাদের রোম্যান্স করতে দেখে ফেলেছিলাম আমি।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশ জিজ্ঞেস করলো,
-কখন?
-যেদিন সিলেট গিয়েছিলাম সেদিন রাতে তোমাদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আমি সবাইকে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করি, কিন্তু কাউকে পাই না। আমি আসলে সবাইকে না উনাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম তারপর রেসোর্টের একটা প্লেসে দেখতে পেলাম তোমাকে আর অনুকে, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করি ব্যাপারটা, তোমাদের তো এমনি তে ধারে কাছে ঘেঁষতেও দেখি নি,কিন্তু সেদিন সবার আড়ালে দেখি দুজনে হাত ধরা ধরি করছো, খুনশুটি করছো তখন আর বুঝার বাকি রইলো না।

-আর অভ্রকে কবে বলেছিস?
-সেদিন রাতেই বলেছি।
-কি বলেছিস?
-বলেছিলাম
“- আচ্ছা আপনি যে আমাকে ভালোবাসতেন আমার ভাই রা কি আপনাকে বাঁধা দিয়েছিলো?
-কই না তো।তোমার ভাইয়েরাই তো আমাকে সাপোর্ট দিয়ে আরো উপরে তুলেছিলো।বিশেষ করে আকাশ আর আশিক ভাইয়া।
-সাত পাঁচ না ভেবেই আমার ভাইয়েরা আপনার কাছে তাদের বোন দিয়ে দিলো?
-তাই ই তো।
-তাহলে তো আপনারো তাই ই করা উচিৎ।
-কি করা উচিৎ?.
-সাত পাঁচ না ভেবে আপনার বোনকে দিয়ে দেয়া উচিৎ আমার ভাইকে।
-যদি তোমার কোনো ভাই আমার বোনকে পছন্দ করে , আর আমার বোনও যদি পছন্দ করে তাহলে আমি বাঁধা দেয়ার কে?
-সত্যি বলছেন?
-হুম তাই ই তো,শুধু তোমার ভাই কেনো, অনু যে ছেলেকেই পছন্দ করুক না কেনো আমরা তাকেই মেনে নেবো।
-জানেন আকাশ নানা আর অনু প্রেম করে?
-আকাশ?
-হ্যাঁ
-কই ও তো কিছু বললো না কখনো।
-আপনি বলেছিলেন?
-না।
-তাহলে ও বলবে কেনো?
-তাও ঠিক।আমার ব্যাপারটাও তো আকাশ কাব্যর থেকে শুনেছিলো। আর ওর ব্যাপারটা তোমার থেকে আমি জানলাম।যাক ভালোই হয়েছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।অনুকে নিয়ে টেনশনে ছিলাম কেমন না কেমন ছেলে নিজের জন্য বেছে নিবে।তা তো হলোই, ভালো ছেলেই নিয়েছে,এখন নিশ্চিন্ত ওকে নিয়ে।
-কিভাবে নিশ্চিন্ত! ওরা তো আমাদের মতো বিয়ে করতে পারবে না।
-কেনো?
-আরে ভুলে গেলেন! পলাশ নানা এখনো সিংগেল, সে বিয়ে করতে প্রস্তুত না এখনো।সে বলে বিয়েই করবে না।
-তাড়াতাড়ি তোমার পলাশ নানাকে বিয়ে করিয়ে দাও।
-দেখি বাড়ি ফিরে নেই আগে। কিছু একটা করতে হবে ”

ফুলের কথা শুনে আকাশ একদম হা হয়ে গেছে,ভাইকে নিয়ে ছোটো বোনের কতো চিন্তা।

গল্প করতে করতে বেশ তাড়াতাড়িই টাংগাইল চলে এলো, সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়িতে এসে পৌঁছালো।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই সবাই ফুলকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আদর করতে নিলো,জীবনের প্রথম ফুলকে ছাড়া এতোদিন থাকা সবার।যদিও ফুল অতোটা মিস করে নি সবাইকে শুধু মাত্র তার রাজপুত্রকে পেয়ে, কিন্তু বাড়ির মানুষ গুলো খুব বেশি মিস করেছে। ফুলকে দেখে একেকজনের শরীরে প্রাণ ফিরে আসার মতো অবস্থা।

রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই ফুলের আগে অভ্রর কল ওর ফোনে হাজির।টুকিটাকি কথা শেষে ফ্রেশ হয়ে এলো।
বাড়ির সবার সাথে গল্প জুড়েছে কি কি করেছে ওখানে এ কয়দিন।ফুল বসে বসে সব মজার মজার গল্প বলছে,আর সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

বাড়ি ফিরে ফুল যে মিশনটাই বেশি লেগেছে সেটা হলো পলাশের বিয়ের ব্যাপারে এর মগজ ধোলাই করা। পলাশের বাড়িতে থাকা হারাম করে দিয়েছে ফুল, যতক্ষণ ছেলেটা বাড়িতে থাকে ততোক্ষণ ই ওর বিয়ের কথা বলে বলে মাথা খাওয়া হয়।কিন্তু পলাশ বিয়েতে কোনোভাবেই রাজি না, একবার বলে বিয়ে করতে দেরি আছে আবার বলে বিয়ে করবেই না জীবনে।পলাশের এরকম উদ্যোগ নেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে,কলেজ লাইফে একটা প্রেম ছিলো, বাড়িতেও জানতো ওর প্রেমের কথা।সব ই ঠিক ছিলো , শুধু ঠিক ছিলো না মেয়েটা পলাশকে ছ্যাকা দিয়ে সে কোনো একটা ছেলে বিসি এস ক্যাডারকে বিয়ে করে নেয়। তারপর আর পলাশের জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসে নি, একবার ভেঙে গিয়ে নিজেকে জোড়া লাগিয়েছে, আবার যদি ভেঙে যায় সেই ভয়ে বিয়ে করতে নারাজ।

জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়ে গেলো ফুলের কলেজের, সাথে প্রাইভেট। ফুল আবার অভ্রর সেই মোটিভেশনাল স্পিচ গুলো মগজে ঝালাই দিলো আর আবার নতুন উদ্যমে পড়াশুনা শুরু করলো, সময় গড়িয়ে মাসের পর মাস চলে গেলো।

সময় কেটে যাচ্ছে সেই আগের নিয়মে পড়াশুনা আর প্রেমের মাঝে অতিবাহিত হচ্ছে সময়।
যত দিন যাচ্ছে বয়সের সাথে সাথে ফুল ম্যাচিউর হচ্ছে । অভ্র সব সময় নিজের মতো করে গাইড করছে ফুলকে।অভ্র যা বলে ফুল তাই ই মেনে চলার চেষ্টা করে।
তবে ফুলের কাছে ইদানীং অভ্রর রাগটা আতংকময় হয়ে উঠছে, যদিও অভ্র ফুলের সাথে বেশির ভাগ সময় কেয়ারিং আর মধু মিশিয়ে কথা বলে, আবার হুট করে কোনো কিছু নিয়ে রেগে গেলে দু একটা ধমক ছাড়া আর কোনো রিয়্যাকশন দেয় না তাতেই ফুল ভয় পেয়ে যায়।কখনো উল্টা পাল্টা বাজে কথা বলে ফুলকে আঘাত করে না অভ্র। ফুল কষ্ট পাবে এমন কথা যেনো ভুল করেও মুখ দিয়ে বের না হয় সেদিকে অভ্র খুব বেশি সচেতন।

আজ সারাদিনে ফুল একটা বারও কল দেয় নি অভ্রকে, এসএমএস এ কথা হয়েছে শুধু ।অভ্রও আর কল দেয় নি দেখতে চেয়েছে ফুল কি করে।
কিন্তু অভ্রর দুর্ভাগ্য ফুল কোনো কল দেয় না,বাধ্য হয়ে মাঝরাতে নিজেই কল দিলো,
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করছো?
-ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।এতো রাতে আপনি কি মনে করে কল দিলেন?
-একটা প্রশ্ন ছিলো।
-কি প্রশ্ন?
-আমার ভয়েসটা কি খুব খারাপ?
-নাহ তো। কেনো কি হয়েছে?
-তাহলে আজকে একটা বারও কল দিলে না। শুধু এসএমএস এ কথা বললে একটু।
-আসলে কি হয়েছে বলুন তো! আমি ভেবে দেখলাম আপনার সাথে ফোনে কথা বলার সময় যে ভেংচি গুলো খেতে হয় আর আমি ভয় পাই, এসএমএস এ কথা বললে তো আর আপনি ভেংচি মারতে পারেন না, আমিও ভয় পাই না।
-এরকম করে বলতে পারলে হুর?তুমি জানো কতোটা ভালোবাসি তোমায়!
-আমিও তো ভালোবাসি।কিন্তু আপনার মনে হয় ভালো বাসা কমে যাচ্ছে।কথার মাঝে রাগ করে বসেন, ধমক দেন।আগে এমন করতেন?কত বদলে গেছেন আপনি!
-আমি বদলাই নি ম্যাডাম আগেও যেমন ছিলাম এখনও তেমনই আছি,শুধু সিস্টেম টা চেঞ্জ হয়েছে।আগে রাগ হলে ফোন কেটে দিতাম, এখন ফোন কাটি না তাই তোমার কাছে আমার রাগ প্রকাশ পায়। যদি একসাথে থাকতাম তাহলে এমনটা মনে হতো না। আর বড় কথা কি জানো,প্রথম প্রেমের শুরুতে সব কিছুই বেশি বেশি লাগে, একটু ভালোবাসলে মনে হয় অনেক ভালোবাসা হয়েছে,আবার অভিমান জমলেও আপনা আপনিই একটু পর অভিমান কেটে যায়,তবে মাঝে মাঝে পূর্ণদৈর্ঘ্য অভিনয় করা হয় অভিমানের। একটু কেয়ার করলেও মনে হয় অনেকখানি পেয়ে গেছি।
সময় যত যায় চাহিদা ততো বাড়ে, কিন্তু প্রয়োজন সেই সমপরিমাণই থেকে যায়।

আবার সময় আবহাওয়া ভেদেও সব কিছুর স্বাদ একেক সময় রকম লাগে,যেমন ধরো আমি শীত কালে বললাম তোমাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে তাহলে খুব রোম্যান্টিক লাগবে,কিন্তু যদি একই বাক্য গ্রীষ্মকালে বলি ব্যাপারটা শুনেই ইতস্তত লাগবে।

আর তোমার আমার বিয়ের তো প্রায় বছর হয়ে এলো। এখন অনেক কিছুই অন্য রকম লাগবে,এক জিনিস সব সময় এক রকম লাগে না ।বড় হচ্ছো তো তুমি। আগে আমি যেটা বলতাম সেটা তোমার কাছে ঠিক মনে হতো,কিন্তু এখন তোমার নিজস্ব মতামত দেয়ার মতো ক্ষমতা সৃষ্টি হচ্ছে।

-হয়েছে জনাব বুঝতে পেরেছি।এখন বলুন তো আপনি নাকি দুই একের মধ্যে আসবেন?
-এতো বড় মিথ্যে অপবাদ কে দিলো আমায়?
-যেই দিক,কথা সত্য নাকি মিথ্যা?
-ডাহা মিথ্যা।
-ওকে।আপনি কোথায়?
-এই তো টাংগাইলের কাছাকাছি।
-বাঁকা কথা ছেড়ে সোজা কথা বলেন।
-খাটের উপর।
-ওরে আল্লাহ রে!আপনি দিনের পর দিন পাগল হয়ে যাচ্ছেন।
-আর তুমি সুস্থ হয়ে যাচ্ছো।
-হবোই তো হবু ডাক্তারের বউ বলে কথা।
-আর আমি জামাই পাগল বউয়ের জামাই।
-লিঙ্গ ঠিক রাখেন।
-ওহ সরি পাগলীর বউয়ের জামাই।

পরপর বেশ কয়েকটা কথা বলে অভ্র ফুলকে কিঞ্চিৎ রাগানোর চেষ্টা করলো কিন্তু বার বার ব্যর্থ হলো।আগে ফুলের সাথে কোনো ব্যাপারে মজা করলে সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলতো,কিন্তু এখন আর সেটা হয় না,কারণ এই টুকু বুঝা হয়ে গেছে অভ্র ফুলকে কষ্ট দেয়ার মতো কোনো কথা বলেনা, শুধু রাগানোর চেষ্টা করে মজার ছলে। ফুলের থেকে কয়েক হাজার গুণ দুষ্টু অভ্র।কিন্তু অভ্রর দুষ্টুমি প্রকাশ পায় মানুষ ভেদে,অনেকটা মিচকে টাইপও বলা যায়। কিন্তু ফুল দুষ্টুমি করার জন্য মানুষ গরু কিছুই মানে না, তাই ওর দুষ্টুমি গুলো সবার মাঝে খ্যাতি লাভ করেছে।

ভোর বেলা ফুল ঘুমোচ্ছে আর অভ্র বসে আছে ফুলের পাশে।শরীর সহ ফুলের মুখ পুরোটাই কাঁথা দিয়ে মুড়ানো। অভ্র আস্তে আস্তে ফুলের মুখের উপর থেকে কাঁথার অংশ সরালো।মুখটা বের করে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে , অনেক দিন পর ফুলের এরকম চেহারা দেখতে পাচ্ছে। ইচ্ছে করে সারাটা জীবন এভাবেই তাকিয়ে থাকতে। আলতো হাতে ফুলের নরম ঠোঁটে, গালের উপর অভ্রর আঙুল বুলাতে লাগলো, ফুলের শুঁড়শুঁড়ি লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই সহ্য করতে হবে,ঘুমানোর অভিনয় টা চালাতেই হবে চোখ খুলে অভ্রর সাথে চোখে চোখ পড়লেই লজ্জা পেয়ে যাবে সেই জন্য চোখে ঘুম না থাকা স্বত্তেও চোখ বন্ধ করে আছে।

কিছুক্ষণ পর অভ্র খেয়াল করলো ফুলের পেট বরাবর খানিকটা উঁচু লাগছে। অভ্র বুঝতে পারছে না এরকম উঁচু লাগছে কেনো।
-কি ব্যাপার পেটের ওখানে অমন উঁচু উঁচু লাগছে কেনো?বালিশ নিয়েছে?নাহ বালিশ নিলে তো আরো উঁচু হতো কিন্তু এটা তো সামান্য উঁচু লাগছে,আর গোল লাগছে।তাহলে কি ওর পেট? মোটা হওয়ার কারণে ভুঁড়ি হয়েছে?নাহ ওর চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না ও মোটা হয়েছে,আগে যেমন ছিলো তেমনই তো লাগছে।মোটা হলে তো গাল টা ফুলে যেতো। তাহলে ওরকম পেট ফুলার কারণ কি?হাত দিয়ে দেখবো?

অভ্রর মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকে গেলো,ভেতরে ভেতরে ভয় হচ্ছে খুব। কোনো ভাবে তো ও প্রেগন্যান্ট নয়?

হাতটা খুব কাঁপছে সাহস করে ফুলের পেটের উপর হাত রাখতে না রাখতেই ফুল চোখ খুলে তাকায়। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে ফুল অভ্রকে বলে উঠে,
-আপনি!কখন এলেন?
অভ্র ছিটকে গিয়ে ফুলের দিকে তাকায়, পেটের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
-এতো সকালে এসেছেন!হঠাৎ কি মনে করে? বাড়ির সবাইকে তো বলতে না করেছিলাম বলে দিয়েছে?
-কি বলতে না করেছিলে তুমি?

গায়ে থেকে কাঁথা সরিয়ে ফুল ওর পেট ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসলো, অভ্র তাকিয়ে আছে নির্বাক হয়ে, ওর মুখে বুলি নেই, চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে,ফুল প্রেগন্যান্ট! গা থেকে ঘাম ছুটে গেছে অভ্রর।
– তু তু তুমি প্রেগন্যান্ট!

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here