শ্রেয়সী লেখাঃখাইরুন নেছা রিপা পর্বঃ৩৪

0
370

শ্রেয়সী
লেখাঃখাইরুন নেছা রিপা
পর্বঃ৩৪

মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো রিদি। হঠাৎ করেই চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে সে। জীবনে এমনও একটা দিন দেখতে হবে কখনো কল্পনাও করেনি রিদি। কখনো কাউকে ভালোবাসেনি শুধু মাত্র স্বামী নামক মানুষটাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে বলে৷ বিয়ের পর স্বামীর পাওনা দিতেও তো কোনোদিন আপত্তি করেনি। তাহলে কী করে পারলো তার স্বামী নামক মানুষটা এমন অমানুষের মতো কাজ করতে? জীবন তাকে নিয়ে এ কোন খেলায় মত্ত হয়েছে। এমন জীবন তো সে চায়নি। তাহলে কেন এমন হলো তার সাথে। মনে মনে যতবারই কথাগুলো ভাবছে ততবারই চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে উঠছে। কিছুতেই খনিক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছে না রিদি। কারণ সোহেল তো কখনো কোনো বিষয়ে রিদিকে অভিযোগ করেনি এমনকি রিদিও সোহেলের কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি। তবে কেন এমন হলো?

–মা ভাইয়া ওকে একটাবার কিছু বলার সুযোগ দিলো না। ভাইয়ার তো উচিত ছিলো ওকে এভাবে না মেরে একটাবার জিজ্ঞেস করার। এক পক্ষের কথা শুনেই অপর পক্ষকে এভাবে আঘাত করা কী ঠিক?”

শিরিনা বেগম গম্ভীর কিন্তু নরম লগায় বললেন,
–ওই মুহূর্তে কী আধেও এসব জিজ্ঞেস করার কথা মাথায় আসে? তুই ই বল!”
–মা আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। একটা বিয়ে হয়ে গেছে এখন আবার ডিভোর্স বিয়ের বয়সটাই হলো মাত্র কয়েকটা মাস আর এর মধ্যেই এত বড় একটা ধাক্কা আমি সামলাবো কী করে? আর আমার কেন যেন মনে হয় সোহেল এমনটা করতেই পারে না। ভাইয়া কিভাবে এতটা বদলে গেল? ভাবি বললো আর ও বিশ্বাস করে নিলো সবটা। আমার তো মনে হয় ভাবি হয়তো…
শিরিনা বেগম বেশ কড়া গলায় বললেন,
–রিদি অবুঝের মতো কথা বলিস না। আমি বুঝতে পারছি তোর অবস্থাটা কিন্তু তাই বলে চোখে পট্টি পরে থাকিস না। বিন্দুর কী কোনো শত্রুতা আছে তোর বা সোহেলের সাথে যে ও অযথা এমন একটা মিথ্যা বলবে? আর ওর এখন যেই অবস্থা এই অবস্থায় তোর কী মনে হয় ও এসব মিথ্যা অভিনয় করে শিশিরের মন ভুলাবে। আমাকে বলেছিস বেশ ভালো কথা শিশির শুনলে সহ্য করতে পারবে না। সবসময় তোর জন্য ও বেস্ট জিনিসটাই পছন্দ করতো। সেই ছোট বেলায় তোর বাবা মারা গেছে নিজে পড়ালেখা করেও সংসারের হাল ধরে রেখেছে। এমনও অনেক ঈদ গেছে তোর পছন্দসই জামা কিনতে গিয়ে ওর কিছুই কেনা হতো না এমনকি আমার পছন্দগুলো নিয়ে ও যথেষ্ট কেয়ারফুল ছিলো। তোকে ভালো ড্রেস পরানো, ভালো স্কুলে পরানো ভালো টিউটর ঠিক করে দেওয়া কোনো কিছুতেই ও গাফলতি করেনি কোনোদিন। আর তোর বিয়ের বেলায় ও কত খোঁজ -খবর নিয়েছিলো। সবাই ভালো বলেছিলো তাই বিয়েটা হয়েছে। আর আমিও চেয়েছিলাম তোর এখানে বিয়ে হোক। ও বলেছিলো মা আরেকটু দেখি আমিই মানা করেছিলাম। বলেছি আর কত দেখবি। সেই ভাইকে অল্প কয়েকদিনের আলাপচারিত কারো জন্য ভুল বুঝাটা নেহাত বোকামো ছাড়া আর কিছু না।”
–মা ও আমার আলাপচারিত নয়। ও আমার স্বামী। ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওকে।”
শিরিনা বেগম একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
–ভালোবাসা কখনো এক পক্ষে হয় না রিদি। তার জন্য দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হয়। তুই ভালোবাসিস কিন্তু ও তো তোকে ভালোবাসে না। তাহলে এটাকে কী বলা যায়? শুধু একতরফা ভালোবাসা। জীবনে একতরফা ভালোবাসা কখনোই সুখ দেয় না রিদি শুধুমাত্র কষ্ট ছাড়া।”
–মা ভালোবাসা অত ভেবে চিন্তে হয় না। এটা হয়ে যায়। ভাইয়াকে বলে দিও আমার পক্ষে ওকে ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না।”
শিরিনা বেগম ক্ষুব্ধ গলায় বললেন,
–এত বছরের ভালোবাসা আজ তোর কাছে পর হয়ে গেল তাই না রিদি। মায়া হয় না ভাইটার জন্য? কী না করেছে ও। আর আজ এভাবে ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তুই কী সুখী হতে পারবি? একটাবার ওর কথা ভাব। ওর ভালোবাসার কী কোনোই মূল্য নেই?
তোর বিয়েতে কতগুলো টাকা খরচ হয়েছে এসব লোক দেখানো। কোনো কিছু ত্রুটি রাখেনি শুধু ছেলের বাড়ি থেকে তোকে কথা শুনাবে বলে দু’হাত ভরে খরচ করেছে। আমি মানা করলেও বলতো, মা বোন তো একটাই আর ওর তো অধিকার আছে পাওয়ার বাবা থাকলে হয়তো আরও বেশি পেত। ব্যাংকে কিছু টাকা জমিয়েছিলো তোর বিয়ে উপলক্ষ্যে সেগুলোও শেষ। ধার দেনাও করতে হয়েছে৷ একসঙ্গে কত গুলো হারা পরেছে ঘর করা, নিজের বিয়ে যদিও ওর বিয়েতে তেমন খরচ হয়নি যা করেছে সব তোর বিয়েতে। সারাদিন ছেলেটা গাদার খাটুনি খাটে। সেই সকালে যায় আবার একটায় আসে। কোনোরকম খেয়ে আবার টিউশনিতে যায় তারপর বাড়ি ফেরে আবার রাত দশটায়। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালে মায়া হয় না তোর? যে এভাবে অন্য একজনকে ভালোবাসি বলছিস? তাও একটা জানোয়ারকে।”
–মা ভাইয়ার এসব দায়িত্ব।”
–বাহ্!কত সুন্দর বলে দিলি ভাইয়ার এসব দায়িত্ব। তোর কোনো দায়িত্ব নেই ওর প্রতি? তোরও দায়িত্ব আছে। নিজের দায়িত্বটা এভাবে এড়িয়ে যাস না। তোরই উচিত ছিলো শিশিরকে আগ বাড়িয়ে ডিভোর্সর কথা বলা তা না উল্টো স্বামীর গুণ কীর্তন গাইছিস।”

মায়ের বলা দীর্ঘ প্রত্যুত্তরে আপাতত আর কোনো যুক্তি খুঁজে পেল না রিদি। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফ্লোরের দিকে। শিরিনা বেগম আবারও বলতে লাগলেন,
–বিয়ে একটা মেয়ের জন্য কখনো আশির্বাদ আবার কখনো কখনো অভিশাপ। একবার ভাব তুই আজ আমাদের বিন্দুর দিকে ওর নজর পরেছে তুই তো বিন্দুর থেকে সুন্দর কম না, বিন্দুর মতোই পড়াশোনা করার অবস্থায় আছিস তবুও সোহেল কী কাজটা করলো। আজ না হয় আমরা ওকে ক্ষমা করেই দিলাম নেক্সট যে এমন একটা কাজ করবে না তার কী গ্যারান্টি। আসলে ওর চরিত্রেই সমস্যা। বিন্দুকে দেখলে তো এখন এমনিতেই মায়া হয়। কেমন শুকিয়ে গেছে খেতে পারে না। এই অবস্থায় মেয়েটাকে ওর বাজে চরিত্রটা না দেখালেই কী চলছিলো না। একবার ভাব রিদি। বিয়ে একবার হয়েছে বলেই যে আবার হবে না এমন কোনো মানে নেই। প্রতিনিয়ত কষ্ট পাওয়ার চেয়ে একবার কষ্ট পাওয়া ভালো। ভুলে যা ওকে আমরা তোকে ওর থেকে আলাদা করে ফেলবো। পড়ালেখা করবি তারপর বুঝে-শুনে বিয়ে দেব। এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের দু’বার বিয়ে হয়। আর এটা কোনো খারাপ না। এখনও সময় আছে। শিশিরকেও আর কষ্ট দিস না।”
রিদি ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাথায় যেন কোন কাজ করছে না। কেমন মৃদু যন্ত্রণা হচ্ছে। রিদি এগিয়ে গিয়ে মায়ের কোলে নিজের মাথাটা রাখলো। গম্ভীর গলায় বললো,
–মা একটু চুলে হাত বুলিয়ে দাও তো।”

বিন্দু একটা বাচ্চার পেছনে দাৌড়াচ্ছে। বাচ্চাটা খিলখিল করে হাসছে। বিন্দু যত ওকে ধরতে চাইছে ততই দৌড়ে সামনে চলে যাচ্ছে। বিন্দু বাচ্চাটার মুখও দেখছে না। তবে তার খিলখিল হাসির শব্দ এসে কানে বাজছে। হঠাৎই কোত্থেকে যেন একটা গাড়ি এসে বাচ্চাটাকে চাপা দিয়ে চলে গেল। বিন্দু ঘুমের মধ্যেই চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। শিশিরেরও ঘুম ভেঙে গেল।
–কী হয়েছে বিন্দু? ”
–আমার বাচ্চাটা!”
কথাটা বলেই বিন্দু পেটে হাত রেখে বাচ্চার উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো। পরক্ষণেই চোখ বন্ধ করে খাটে হেলান দিলো। পুরো ঘেমে গেছে। বুকের মধ্যে ধুপধাপ শব্দ হচ্ছে।
শিশির বিন্দুর ওড়না দিয়ে বিন্দুর ঘাম মুছে দিলো। মৃদু গলায় বললো,
–কী হয়েছে বিন্দু? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলে?”
বিন্দু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।
–জানেন আমার খুব ভয় করছে। যদি স্বপ্নটা সত্যি হয় তাহলে আমি কী করবো? মরে যাব আমি!”
শিশির বিন্দুর কপালে নিজের কপাল ঠেকালো। বিন্দুর নাকে নাক ঘষে আলতো করে গাল টেনে দিয়ে বললো,
–এত চিন্তা করলে হয় পাগলী? কিচ্ছু হবে না আমাদের বাবুটার।”
বিন্দু শুধু একটু মিষ্টি করে হাসলো।

কয়েকদিন পর।
মন-মেজাজ একদম ভালো নেই রিদির। প্রতিদিন অনেকবার করে কল দেয় সোহেল। রাগে-ঘেন্নায় ফোন রিসিভ করেনা রিদি। আর শিরিনা বেগমও মেয়েকে বারণ করে দিয়েছেন। কেন যেন রিদির মনে হয় বিন্দু ওর জীবনে একটা অভিশাপ। রিদির সব তছনছ করে দেওয়ার জন্যই এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে।

সকালে নাস্তার টেবিলে কারো সাথেই রিদি কথা বললো না। শিশির কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। শুধু হু, হা করে উত্তর দিয়েছে। উপস্থিত সবাই বুঝতে পারছে রিদির কথা বলার বিন্দু মাত্রও ইচ্ছে নাই। তাই কেউই খুব বেশি ঘাটালো না। নাস্তার টেবিল থেকে উঠতে উঠতেই রিদি বললো,
–মা আমি কলেজে যাচ্ছি।”
–এত সকালে কলেজে যাবি?”
–নাহ্। আগে দিয়ার( ফ্রেন্ড) বাড়িতে যাব। পরে ওর সাথে কলেজে যাব। এমনিতেই তো অনেকদিন কলেজে যাওয়া হয় না।”
পাশ থেকেই শিশির বলে উঠলো,
–আমিও তো এখনই বেড়ুবো। চল আমি দিয়ে আসি।”
রিদি কটাক্ষ করে উত্তর দিলো,
–লাগবে না। আমি একাই যেতে পারবো।”
–সেটা তো আমিও জানি তুই একাই যেতে পারবি। কিন্তু আমার সাথে যেতে সমস্যা কোথায়? আমি বাইক দিয়ে নামিয়ে দিয়ে গেলাম আর দিয়াদের বাড়ি তো স্কুলের পথেই পরে।”
–বললাম তো লাগবে না।”
আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিদি নিজের ঘরে চলে গেল। শিশির রুমে এসে শার্ট-প্যান্ট পরছিলো। বিন্দু এসে বললো,
–আমার মনে হয় সোহেল ভাইকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া উচিত। রিদির মনটা খুব খারাপ।”
শিশির শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,
–এসব নিয়ে ভেবে নিজের মুড খারাপ করো না। এখন নিজের খেয়াল নাও। অন্যসব চিন্তা করতে হবে না। আমি গেলাম।”
কথা শেষ করেই শিশির এগিয়ে এসে বিন্দুর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো। এটা এখন শিশিরের প্রতিদিনকার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। বিন্দুও কেন যেন শিশিরের স্পর্শটা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। এখন শিশিরের একদিনও ভুল হয় না। স্কুলে যাওয়ার আগে বিন্দুর কপালে চুমু আঁকতে।

শিরিনা বেগম বিন্দুর উদ্দেশ্যে বললেন,
–বিন্দু আমি একটু পাশের বাড়ি থেকে আসি। রিনা আফায় একটু ডাকছে(প্রতিবেশী) কী যেন দরকারী কথা বলবে। দরজাটা বন্ধ করে দে। কোনো কাজ করতে হবে না আমি খুব শিঘ্রই চলে আসব।”
–আচ্ছা মা।”

বিন্দু দরজা বন্ধ করে এসে সাজেদা বেগমের সাথে ফোনে কথা বলছিলো। কথার মাঝখানেই কলিংবেল বেজে উঠলো। বিন্দু ফোনে কথা শেষ করে দরজা খুলে দিলো৷ দরজা খুলেই বিন্দুর আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। একে তো বাড়িতে কেউ নেই তারওপর এই শয়তান বাড়িতে পা রেখেছে।

আজ স্কুলে এগারোটা নাগাদ মাসিক পরীক্ষা শুরু হবে ক্লাস নাইনের ছাত্র-ছাত্রীদের। শিশির ভুলে প্রশ্নগুলো বাড়িতে ফেলে গেছে। প্রিন্সিপাল স্যার এসে বললো,
–শিশির প্রশ্নগুলো দেখি একবার।”
–স্যরি স্যার৷ একদম ভুলে গেছি। আমার এমনিতেও এখন ক্লাস নেই। আমি বাড়িতে গিয়ে নিয়ে আসছি।”
–তাড়াতাড়ি এসো।”
–হুঁ।

শিশির বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথেই দেখলো এক ফুসকাওয়ালাকে। বিন্দুকে শিশির অনেকবার জিজ্ঞেস করতো ওর কী খেতে পছন্দ। কিন্তু বিন্দু সেভাবে কিছুই বলেনি৷ একদিন শুধু অনেক জোড়াজুড়ির পর বলেছিলো চকবার আইসক্রিম। সেটা জানার পর শিশিরের একদিনও ভুল হয়নি বিন্দুর জন্য আইসক্রিম আনা শুধু বিন্দুর জন্যই না শিরিনা বেগম আর রিদির জন্য আনতেও ভুল হতো না। আজ ফুসকা দেখেই মনে হলো মেয়েদের তো ফুসকা খুব পছন্দের হয় কিনে নিয়ে গেলে মন্দ হয় না। ওমনি শিশির ফুসকা কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

বিন্দু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
–আ….আপনি?”
–হ্যাঁ, আমি!”
বিন্দু দরজা আটকাতে নিলেই সোহেল পা দিয়ে দরজা শক্ত করে ঠেকালো। বিন্দু দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে যেতেই পেছন থেকে চুল টেনে ধরলো বিন্দু ব্যথায় কুঁকড়ে উঠতেই সোহেল কয়েকটা থাপ্পড় মারলো বিন্দুকে। টাল সামলাতে না পেরে সোফার কার্নিশের ওপর পরতে গিয়েও পেটে হাত দিয়ে নিজেকে কোনরকম মুক্ত করলেও কপালটা গিয়ে পড়লো কার্নিশের কাঠের ওপর। সেখানে পরেই কপাল ফেটে গেল। পরক্ষণেই সোহেল চুল টেনে দাঁড় করিয়ে গলা টিপে ধরলো। দাঁতের সাথে ঠোঁট কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে কপাল থেকেও ফিনকির মতো রক্ত বের হচ্ছে। বিন্দুর চোখ দু’টো যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। অসহায় ভঙ্গিতে অনুরোধপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সোহেলের দিকে। কিন্তু জানোয়ারটার একটুও মন গলছে না তাতে। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে বিন্দুর এই বুঝি প্রাণ বায়ুটা গেল চলে!
–শালি খুব দেমাগ তোর তাই না। একবার তোকে ছুঁলে কী এমন ক্ষতি হইতো তোর? খুব সতি-সাবিত্রি ভাবিস নিজেকে তাই না? আবার এটা সবাইকে ঢোল বাজিয়ে জানাইছোস। কী ভাবছিস আমি তোকে এমনিতেই ছেড়ে দেব? তোর জন্য রিদি আমার সাথে কথা বলে না। তাহলে তোকে রেখে লাভ কী? আমার এতদিনের সম্মান তুই একদিনেই ধূলিসাৎ করে দিলি। এর পরিনাম তো তোকে ভোগ করতেই হবে।”
বিন্দু কিছু বলতে পারছে না। শুধু গোঙাচ্ছে আর দু’চোখের কোণ বেয়ে পানির ফোয়ারা বইছে। তখনই উঠোন থেকে কারো কথা ভেসে আসলো সোহেলের কানে। একজন মহিলা এসে ডাকছে শিরিনা বেগমকে।
–শিরিনা আফা বাড়িতে আছেননি?”
সোহেল ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো বিন্দুকে। বিন্দু পেটে হাত দিয়ে মৃদুভাবে চিৎকার করলো। শরীরে কোনো শক্তি নেই। চোখ জোড়া বুঝে আসতে চাইছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। ঠোঁট আর কপাল দিয়ে তখনও রক্ত বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেল। চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো!

কারো যদি গল্পটা নিয়ে কোনো আপত্তি থাকে তাহলে আমার কিছু করার নেই। গল্প আমি যেভাবে সাজিয়েছি সেভাবেই লিখবো।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here