শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrun Nesa Ripa #পর্বঃ২২

0
383

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ২২

শিশির ল্যাপটপে বসে কাজ করছিল। স্কুলের অনেকগুলো প্রশ্ন করা বাকি। ঈদের পরপরই আবার শুরু হবে পরীক্ষা। আর সব শিশিরকেই করতে হয়। ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা বাজে। বিন্দু খাটের মাঝখানে শুয়ে আছে। শরীরটা প্রচণ্ড ক্লান্ত। তারাবীহর নামজ শেষ করে কিছু না খেয়েই শুয়ে পরেছে। শিরিনা বেগম শিশির এত চেষ্টা করলো কিছু খাওয়াতে তবুও খেল না। কাজ করতে করতে বড্ড টায়ার্ড লাগছে শিশিরের। অনেকদিন হয়ে গেছে ফেসবুকে যাওয়া হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই ম্যাসেজের যেন বন্যা বইছে। পরিচিত -অপরিচিত সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে, কেউ বা শুভ কামনা জানিয়ে উইশ করেছে। শিশির ভেবে পায় না সবাই কী করে জানলো এত তাড়াতাড়ি। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা পোস্ট লিখে পোস্ট করলো। কারণ সবাইকে এককভাবে ধন্যবাদ জানাতে গেলে অনেকখানি টাইম লস হবে তার সাথে একটা পোস্টেই একসাথে সবাইকে ধন্যবাদ জানানোই তো ভালো। পোস্ট শেষে নিউজফিডে ঘুরতেই একটা ইসলামিক পোস্টে চোখ আটকে গেল শিশিরের। পোস্টটা ছিল এইরকম,
“প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বিয়ে হবে কিনা জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন….”

এইটুকু লেখা পরেই ঘামতে শুরু করলো শিশির। ভয়ে পুরো শরীরে যেন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তবুও শিশির থামলো না সাহস নিয়ে লিংকটায় ক্লিক করলো। আর যা শুনলো সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
” প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ইসলামের শরীয়াহ অনুযায়ী কোনো বিয়েই বৈধ হবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। এমনকি যেই ছেলে-মেয়ে দু’টো অবৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যদি মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও সেই ছেলেটা মেয়েটাকে বাচ্চা না হওয়া অব্দি বিয়ে করতে পারবে না। করলেও সেই বিয়ে জায়েজ হবে না।”
শিশিরের মাথা ঘুরতে লাগলো। চিন্তায় কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরেছে। বারবার হাত দিয়ে কপালে জমে থাকা ঘাম মুচছে। পোস্টটা পরে ইউটিউবে সার্চ দিলো। সবখানে ঠিক একই কথা। ল্যাপটপ বন্ধ করে রুমের মধ্যে পায়চারী করতে লাগলো। অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে নিজের তরফ থেকে। এখন কী করে এটা কাউকে জানাবে শিশির তারও তো উপায় নেই। এক কান, দু-কান করে সবার কানে ছড়িয়ে পরবে বিন্দু বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট। যেটা লুকানোর জন্য তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করা শেষমেশ কী সেটাই সবাই জেনে যাবে। নিজের মাথায় হাত ঢুকিয়ে চুলগুলো অনবরত টানতে লাগলো শিশির। কোনো সাজেশনই খুঁজে পাচ্ছে না সে। কার সাথে সেয়ার করবে? কাকে এই সমস্যার সমাধান দিতে বলবে বুঝতে পারছে না শিশির। একবার ভাবলো সাজেদা বেগমকে জানাবে। পরক্ষণেই ভাবলো উনি নিজে এমনিতেই মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় নিজের অবস্থা খারাপ বানিয়ে ফেলেছে এখন আবার এই সংবাদ জানিয়ে নতুন করে টেনশন দেওয়ার মানে হয় না। শিশির রুমের লাইট অফ করে দরজাটা বন্ধ করে সামনের বারান্দার খাটের ওপর গিয়ে শুয়ে পরলো। কিন্তু কিছুতেই চোখে ঘুম আসছে না। চিন্তারা চারদিক থেকে জেঁকে ধরেছে৷ এই পরিণতির ভবিষ্যত কী জানা নেই শিশিরের। কিছুতেই আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারলো না। আর এভাবে যদি শিশির অন্য রুমে ঘুমায় তাহলে তো সবাই সন্দেহের চোখে দেখবে হয়তো এ নিয়ে বিন্দুকেই কথা শুনাবে। কী করবে, না করবে সব মিলিয়ে বড্ড পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। সেহরীর সময় রিদি ডেকে তুললো বিন্দুকে৷ বিন্দু একটু অবাকই হলো শিশিরকে নিজের পাশে না দেখে পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো বিন্দুর ঘুম ভাঙার আগেই শিশির উঠে চলে গেছে। ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেও শিশির এক পলকও বিন্দুর দিকে তাকলো না। বিন্দু না চাইতেও কয়েকবার শিশিরের দিকে তাকিয়েছিল আর প্রতিবারই দেখেছে শিশির নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়া শেষে শিশির আবারও সামনের বারান্দায় চলে গেল। বিন্দু ভেবে ছিল শিশির আসবে রুমে। কিন্তু অনেক্ষণ হওয়ার পরও যখন দেখলো আসেনি তখন শুয়ে পরলো বিছানায়৷ মনে মনে স্বস্তি পেল বিন্দু। শিশির পাশে থাকলে সর্বদা অন্যরকম একটা টেনশন কাজ করে। এক হিসেবে ভালোই হয়েছে দূরে আছে। শিশির নামজ পড়তে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো। নিজের না জেনে করা ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করলো। আর কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তার সমাধান যেন আল্লাহ বের করে দেয়। কারণ এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহই ভরসা।
নামজ শেষে আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিছানায় গিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলো। সারারাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ জোড়াতে ঘুম নেমে এলো।

আজকে বিন্দুদের বাড়ি থেকে বিন্দুকে নিতে আসবে। শিশির সকাল সকালই বাজার করে দিয়ে স্কুলে চলে গেল। সারাদিনে শিশির একবারও বিন্দুর মুখোমুখি হয়নি। বলতে গেলে এক প্রকার পালিয়ে ছিল শিশির। আসরের সময়তেই বিন্দুদের বাসার সবাই চলে এলো। বিন্দুও হাতে হাতে সাহায্য করেছে। সবাই রাতের খাবার খেয়ে বিন্দুকে নিয়ে চলে গেল। তবে সাহেদ আলী আসেননি। উনি ওনার দোকান নিয়ে ব্যস্ত। ওদিকে শিশিরও স্কুলের অজুহাত দিয়ে বাড়িতে রয়ে গেল। সবাই এত সাধলো তবুও শিশির গেল না। বললো,
“স্কুলে অনেক চাপ। স্কুল বন্ধ হলে তবেই যাবে।”
এটা মানা ছাড়া আর কারোরই কিছু করার নেই শিশিরকে না নিয়েই নিজেদের মেয়ে নিয়ে চলে গেলেন সাজেদা বেগম।

অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলেন সাহেদ আলী। এই প্রথম মেয়েকে কাছে ডেকে নিলেন। বাজার থেকে তাজা তাজা দেখে লিচু,আম কিনে আনলেন। নিজের পাশে বসিয়ে বিন্দুকে খেতে দিলেনে। সাথে এটাও জানতে চাইলেন শশুড়বাড়ির সবাই কী রকম জানে ওকে। বিন্দুও সবার প্রশংসা করলো। কারণ সবাই যথেষ্ট আতিথেয়তা পরায়ন। বিন্দু নিজের রুমে আসতেই সাহেদ আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
–এ কার কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছো?”
সাজেদা বেগম কিছুটা বিচলিত হয়ে বললেন,
–কেন?”
–দেখলেনা ভাব ধরে আসলোনা। সবে বিয়ে হয়েছে আর এখনি ভাব ধরা শুরু করে দিয়েছে। দিনে দিনে আরও কত কী যে শুরু করে আল্লাহ মাবুদ জানে।”
–আরেহ তুমি ভুল বুঝছো। শিশির মোটেও ওরকম ছেলে না। আমি আমার মেয়েকে সৎপাত্রেই দান করেছি। দেখে নিও তুমি ইনশাআল্লাহ আমাদের মেয়ে খুব সুখে থাকবে। শিশির ওকে খুব সুখে রাখবে মিলিয়ে নিও তুমি।”
সাহেদ আলী খাটে হেলান দিয়ে শুতে শুতে বললেন,
–হুম তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।”
তখনই সাহেদ আলীর ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। সাহেদ আলী ফোনটা হাতে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
–এত রাতে আবার কে কল দিলো!”
–রিসিভ করে দেখেন। হয়তো কোনো প্রয়োজনে দিয়েছে।”
–হ্যালো।”
–আসসালামু আলাইকুম।”
–ওয়ালাইকুম সালাম। কে আপনি?”
–বাবা আমি শিশির। কেমন আছেন?”
–আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রাখছে। তা তোমার কী অবস্থা? ”
–ইনশাআল্লাহ ভালো আছি। আপনার শরীর -স্বাস্থ্য ভালো আছে?”
–ভালোই আছে৷ তা কাজটা কী তুমি ঠিক করলা?”
–কী কাজ বাবা?”
–এই যে আজ তোমার আসার কথা ছিল অথচ আসলে না। পাড়া-প্রতিবেশিরা তো এ নিয়ে কথা শুনাবে।”
–আসলে বাবা অনেক কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারিনি। কথা দিচ্ছি কাজ হলে আমি আসবোই আসবো।”
–হুম।”
–দোকানের বেচা-কেনা কেমন চলে বাবা?”
–আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। তবে একা হাতে সামালতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। ”
–আমি ভাবছি স্কুলটা বন্ধ দিলে আমিও দোকানে সময় দেব।”
–আরেহ না তুমি হলে জামাই মানুষ।”
–আমি এখন জামাই না আমি আপনার ছেলে। সবসময় আমাকে ছেলে ভাববেন।”

সাহেদ আলীর চোখে পানি চলে আসলো। ফোন কেটে পাশে রাখতেই সাজেদা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন,
–কী বললো শিশির?”
–সাজেদা আমি জামাইকে ভুল ভেবেছি। সত্যিই জামাইর মন অনেক বড়। তুমি কোনো ভুল করোনি। একদম খাটি সোনা বেছে নিয়েছো।”

কিন্তু শিশির যে নিরুপায় না পারছে সত্যিটা কারো কাছে সেয়ার করতে না পারছে বিন্দুর পাশে থাকতে। সব মিলিয়ে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শিশির। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সমাধান কী? কিন্তু কোনো সমাধানই তো খুঁজে পাচ্ছে না শিশির। তবে কী এবার সত্যিটা সবাই জেনে যাবে? তাহলে বিন্দুর কী হবে? সবাই তো দুশ্চরিত্রা অপবাদ দেবে বিন্দুকে! আর বিন্দুর পক্ষেই কী সবটা মেনে নেওয়া সম্ভব হবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করলে খুশি হই। কারণ সেখান থেকে কিছু তথ্য নিয়ে গল্পটাকে আরও সুন্দর করে সাজাতে পারি। আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here