#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ২৬
কথা বলার এক পর্যায়ে শিশির বলে উঠলো,
–মা আরেকটা দুঃসংবাদ আছে।”
সাজেদা বেগম একটা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
–এই দুই মাসে অনেকগুলো দুঃসংবাদ শুনেছি এখন আর খারাপ লাগে না। বলে ফেলো নিশ্চিন্তে।”
–মা বিন্দুর টিউমারের অপারেশন খুব দ্রুতই করাতে হবে। টিউমারের বয়সটা নাকি বেড়ে গেছে। ডাক্তার পাঁচদিনের ইনজেকশন দিয়েছে বলেছে, “পাঁচদিন পরেই অপারেশন করাবে নয়তো টিউমার ব্লাস্ট করলে ওর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
সাজেদা বেগম শিশিরকে আশ্বস্ত করে বললেন,
–চিন্তা করো না। আল্লাহকে ভরসা করো। ”
কথা শেষ করেই রুমে এসে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে এক গোছা টাকা নিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–এটা রাখো। আর ভয়ের কারণ নেই। ইনশাআল্লাহ দেখবে সব ভালোভাবে হয়ে গেছে।”
শিশির টাকাগুলো না নিয়েই বললো,
–প্লিজ মা। এটা আমি নিতে পারবো না। ওর সব দায়িত্ব এখন আমার। মেয়ের জন্য কিছু করতে চাইলে সেটা অন্যভাবেও করতে পারবেন কিন্তু এভাবে আমার পক্ষে সম্ভব না।”
–আরেহ পাগল কেউ জানবে না। তুমি আর আমি ছাড়া।”
–না মা এটা হয় না। আল্লাহ তো ঠিকই দেখবেন। সবার আড়াল করে আমার পক্ষে এই টাকা নেওয়া সম্ভব না। আপনি শুধু দোয়া করবেন আমি যেন জীবনে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পারি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।”
সাজেদা বেগম টাকাগুলো ব্যাগে নিতে নিতেই বললেন,
–দোয়া তো সবসময়ই করি। বাবা-মা তো সবসময়ই সন্তানের ভালো চায়।”
–মা আমার একটা ভয় হচ্ছে। বাচ্চা হবে না জানলে বিন্দু কীরকম রিঅ্যাক্ট করে! কারণ ও তো খুব করে চাইতো বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক।”
–দেখো শিশির যেটা হয়নি সেটা তো আর আমরা জোর করে আনতে পারবো না। আর এতই যদি বাচ্চার শখ হয় তাহলে তুমি আছো কী করতে!”
কথাটা শেষ করেই সাজেদা বেগম রুমে খাটের ওপর গিয়ে বসলেন। শিশির কথাটার মানে বুঝতে পেরে বেশ খানিকটা লজ্জা পেলো। আজকাল শাশুড়িরাও কত আধুনিক। খোলামেলা ভাবেই সব ডিসকাস করে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই শিশিরের খুব হাসি পেলো৷ হাসিটাকে কোনরকম আড়াল করে রুমে চলে আসলো।
রাতে খেয়ে- দেয়ে সাজেদা বেগম আর বিধু চলে গেল। আগামী কালকে আবার বিন্দুদের বাসায় ওদের দাওয়াত। সেই জন্য আর থাকলেন না। শাশুড়িকে একেবারে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলো শিশির। রুমে এসে প্যান্ট চেঞ্জ করতে করতেই বিন্দুর দিকে তাকালো। একটা খটকা লাগছে শিশিরের৷ বিন্দু যদি সত্যি সত্যিই প্রেগন্যান্ট না হয় সবার আগে সেটা তো বিন্দুর জানার কথা। তাহলে বিন্দু কেন কিছু বলছে না। আর বিন্দু তো একজন এডাল্ট মেয়ে আর এখনকার এই যুগে এই সামান্য বিষয়গুলো এমনিতেই জানার কথা। কিন্তু বিন্দু কেন সব জেনেও বলছে না। তবে কী বিন্দু সত্যিই জানে না! নিশ্চয়ই কোনো একটা সমস্যা আছে। সেইজন্যেই হয়তো বিন্দুও বুঝতে পারছে না। যেভাবেই হোক শিশিরের এটা ভেবে ভালো লাগছে আর তাকে বিন্দুর থেকে দূরে থাকতে হবে না। যেহেতু বিন্দু প্রেগন্যান্ট না সেহেতু এই বিয়েটাও শরীয়ত সম্মত হয়েছে। ভাবতে ভাবতেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগুলো বিন্দুর দিকে। বিন্দু খাটের মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। শিশির এগিয়ে গিয়ে বিন্দুর পাশে বসলো। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো বিন্দুর কপালের মাঝখানে। বিন্দু চোখ মেলে শিশিরকে দেখেই উঠে বসলো। শিশির মানা করলো তবুও শুনলো না। বেশ গম্ভীরমুখে বললো,
–আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
শিশির নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–কী কথা?”
–আমার বেবীটা ঠিক আছে তো? ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তো?”
কী বলবে বুঝতে পারছে না শিশির। শান্ত চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো বিন্দুর দিকে। বিন্দুর চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বিন্দু তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। মনে হচ্ছে চোঝের ঈশারায় শিশিরকে পিঁষে মারবে। শিশির গলার স্বর সুক্ষ্ম করে বললো,
–বিন্দু এখন ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ। মাথার ব্যথা নয়তো বাড়বে।”
–একদম আহ্লাদ দেখাতে আসবেন না৷ ইচ্ছে করে ফেলে দিয়ে এখন আসছে নেকামো করতে। যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন।”
শিশির অপরাধীদের মতো মাথা নিচু করে রইলো। ধীর গলায় বললো,
–তুমি সত্যিই বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি?”
–তা নয়তো কী? এতদিন ভালো মানুষের মুখোশ পরে ছিলেন। কায়দা করে এখন বাচ্চাটাকেও নষ্ট করার প্ল্যান তৈরী করে ফেলেছেন আবার বলছেন আমি এটা বিশ্বাস করি কি না। আলবাত বিশ্বাস করি। কেন বিশ্বাস করবো না? এমন কোনো পুরুষই নেই যে অন্যের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বলবে। তাই এইভাবে ধাক্কাটা মেরেছেন যাতে সবাইভাবে এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। কিন্তু আমি তো জানি এটা পরিকল্পিত। কোনো এক্সিডেন্ট নাহ্!”
দম বন্ধ হয়ে আসছে শিশিরের। কেন যেন প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। কান্নাও পাচ্ছে খুব। ছেলেদের তো আবার মেয়েদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতেও বারণ। তাহলো সে আবার কেমন ছেলে। নাহ্, যেভাবেই হোক বিন্দুকে শান্ত করতে হবে উত্তেজিত হয়ে পড়লে পরে ওর জন্যই খারাপ হবে। শিশির কোনো কথা না বাড়িয়ে শুধু বললো,
–বাচ্চাটা একদম ঠিক আছে ওর কিছু হয়নি। আর হ্যাঁ, তোমার একটা অপারেশন হবে।”
–কিসের অপারেশন?”
–পেটে টিউমার হয়েছে।”
–পেটে টিউমার নাকি এবোরেশন করানোর ধান্দা। ধাক্কা দিয়েও যখন কাজ হলো না তখন দ্বিতীয় উপায় তাই না?”
শিশির ধরা ধরা গলায় বললো,
–নাহ্। তুমি চাইলে ডক্টরের রিপোর্টগুলো দেখতে পারো।”
বিন্দু আর কিছুই বললো না। চুপচাপ শুয়ে পরলো। শিশিরও লাইট অফ করে বিন্দুর পাশে শুয়ে করলো।
–কী ব্যাপার আজ আবার এখানে শুয়েছেন কেন?”
–বউকে ছাড়া একা ঘুমাতে ভালো লাগে না তাই।”
–বেশি বউ বউ করবেন না তো। অসহ্য লাগে আমার৷ কতবার বলবো, আপনি যাই করেন না কেন আমি শুধু শিহাবকেই ভালোবাসি।”
শিশির হাত বাড়িয়ে বিন্দুকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলো। বিন্দুর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো,
–তা বাসোই না শিহাবকে ভালো। তাতে আমার কী? আমি কি একবারও বলেছি আমাকে ভালোবাসতে হবে?”
বিন্দু সম্পূর্ণ চুপ হয়ে গেল। এত কাছ থেকে শিশিরের স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন শীতল অনুভূতি পুরো শরীরে অনুভব করছে বিন্দু। কেন যেন কথা বলতে ভালো লাগছে না। শিশিরের এই স্পর্শ যেন খুব করে তাকে কাছে টানছে অন্যদিকে শিহাবের ভালোবাসা যেন কোথাও তাকে খুব জোর বাঁধা দিচ্ছে৷ নিজেকে সামলে রাখা অনেকটা শাখের-করাতের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে বিন্দুর কাছে। শিশির আস্তে করে বিন্দুকে ডাকলো।
–বিন্দু! ”
বিন্দু চোখ বন্ধ করে শিশিরের স্পর্শ পেতে পেতে বললো,
–হুঁ।”
–আচ্ছা তোমার পিরিয়ড কী ঠিক কবে হয়েছিল?”
বিন্দু জড়ানো গলায় বললো,
–প্রায় দুই মাস আগে ।”
–আর হয়নি?”
–উঁহু।”
–তোমার কি পরিয়াডে সমস্যা আছে?”
–হুঁ। প্রতি মাসে ঠিক মতো হয় না। কখনো কখনো দুই -তিন মাস পরেও হয়।”
কথা শেষ করে বিন্দু আবারও চুপ করে রইলো। শিশিরের যা বোঝার তা বুঝে গেল। কারণ প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের পিরিয়ড হয় না। আর বিন্দুর এই সমস্যার করণেই মূলত পিরিয়ড হয়নি। কিন্তু বিন্দু বুঝেছে ও প্রেগন্যান্ট তাই পিরিয়ড হচ্ছে না। যাক অবশেষে আরও একটু নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। কিন্তু চিন্তা একটা রয়েই গেছে আবার যখন বিন্দুর পিরিয়ড হবে তখন কিভাবে শিশির সবটা ম্যানেজ করবে!
গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই। আর ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন।
চলবে,,,,,