শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrun Nesa Ripa #পর্বঃ৮

0
449

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ৮

এ পর্যায়ে খানিকটা ভয় পেয়ে গেল বিন্দু। গলার স্বর ক্রমশই সুক্ষ্ম হয়ে আসছে। শিহাবকে এত এত কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোনো কথারই জবাব দিচ্ছে না শিহাব। বিন্দুর অস্থিরতা কিছুটা কমানোর জন্য শিহাব বিন্দুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

–একটুও কী এই ছেলেটাকে বিশ্বাস হয় না তোমার?”
কিছুটা সাহস ফিরে এসেছে বিন্দুর শরীরে। বিন্দু মৃদু গলায় বললো,
–আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
বলতে বলতেই সিঁড়ির সাথে পা লেগে পরে যাচ্ছিলো বিন্দু ওমনিই শিহাব ধরে ফেললো। চোখ বাঁধা অবস্থায় বিন্দুর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে দেখে শিহাব কিছু না ভেবেই কোলে তুলে নিলো বিন্দুকে। একেবারে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে নামালো । এক ঝটকায় খুলে ফেললো বিন্দুর চোখের বাঁধন। অনেকটা স্বস্থি লাগছে৷ এতক্ষণ যেন কোনো অন্ধকারে আটকে ছিল। চোখে এখনো সব কিছু ঝাপসা দেখছে। চোখটা হাত দিয়ে ডলতে ডলতে সামানে তাকাতেই চোখ দু’টো ছানাভরা বিন্দুর। আজ তো কোনো স্পেশাল ডে নয় তাহলে কিসের জন্য এই সারপ্রাইজ? নিজের মনকে প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর মিলাতে পারলো না। তাই প্রশ্নভরা চোখে তাকালো শিহাবের দিকে। শিহাবের চোখেমুখে হাসির রেখা স্পষ্ট। কিন্তু শিহাব কিছু বলছে না দেখে বিন্দুই মুখ খুললো,
–এখানে কেক কেন? আর এত সুন্দর করে ঘরটা সাজিয়েছোই বা কেন?”
শিহাব বিন্দুর দিকে এগিয়ে এসে বিন্দুর কাঁধ জড়িয়ে বললো,
–প্রথমত আজ আমাদের রিলেশনের ছয়মাস পূর্ণ হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত এই যে পুরো বাড়িটা দেখছো এটা আমার নিজের টাকায় গড়া। তবে জমিটা বাবার। সিয়ামকেও বাবা এতখানি জমি লিখে দিয়েছেন। বলেছেন ঘর করার দায়িত্ব তোমাদের। আমি আমার দায়িত্ব সেরে ফেললাম। আর ঘরের কাজ শেষ হওয়ার পর আজই প্রথম তোমাকে নিয়ে এ বাড়িতে পা রেখেছি। আর এই যে দেখছো সব গুছানো এগুলো সব কাজের মানুষকে দিয়ে করে রেখেছি তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে। কেমন লাগলো এই ছোট্ট সারপ্রাইজটা?”
–অসাধারণ লেগেছে। আর আমি তো ভুলেই গেছি আমাদের রিলেশনের যে আজ ছয় মাস।
কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল?”
–বলো?”
–তুমি এত টাকা কোথায় পেলে?”
বিন্দুর কথায় স্ব শব্দে হেসে ফেললো শিহাব। তারপর গর্বের সহিত বলতে লাগলো,
–আগে বাবা দেশেই বিজনেস করতো। দেশে বাবার একটা অফিস ছিল। আমি যখন ক্লাস টেনে পরীক্ষা দেই তখন থেকেই বাবার সাথে ব্যবসায়ে যোগ দেই। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করতে থাকি। বছর পাঁচ-ছয়েক ঘুরতেই বাবা ব্যবসায়ে লস দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাবা বিদেশ চলে যান। এখন সেখানে বাবার এক বন্ধুর সাথে শেয়ারে ব্যবসা পরিচালনা করতেছেন। বাবার অফিসে যখন কাজ করতাম বাবা আমাকে বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মতোই প্রতি মাসে মাসে টাকা দিয়ে দিতেন। আমার এত টাকা লাগতো না। কারণ আমার পড়ার সব খরচ তো বাবাই চালাতেন। তাই আমি টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে দেই। ইন্টারেস্টসহ বেশ ভালো টাকাই পাই ব্যাংক থেকে। আর তাছাড়া আমি সেই ব্যাংকের এখন সিনিয়র অফিসার আমার তো এক্সট্রা পাওয়ার আছেই। সেই দিয়েই বাড়িটা গড়া। আমার স্বপ্নের বাড়ি এটা। আর আমার স্বপ্নের সেই পরীটাকে প্রথম বাড়িটায় এনে তুললাম।”
বিন্দু জাস্ট ভাবতে পারছে না শিহাব ঠিক কতটা কর্মীক একটা ছেলে। সেই পিচ্চি থেকেই সঞ্চয় করা শিখেছে। এরকম একটা ছেলেকেই তো মেয়েরা জীবন সঙ্গী হিসেবে চায়। তাহলে সে জীবনে কোনোই ভুল করেনি। তার স্বপ্নের সেই রাজপুত্রটি তাহলে শিহাব ছাড়া আর কেউ নয়। এমন কাউকেই তো চেয়েছিল বিন্দু। বিন্দুকে কিছু একটা ভাবতে দেখেই শিহাব বিন্দুর মুখের সামনে তুড়ি বাজালো। বিন্দুর ঘোর কাটতেই হেসে উঠে বললো,
–সত্যিই তুমি অনেক পরিশ্রমী একজন মানুষ।”
শিহাব উচ্চস্বরে হেসে বললো,
–হয়েছে মেম আর আমার প্রশংসা করা লাগবে না। এখন বোরকাটা খুলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও৷ আমি নাস্তা রেডি করে আনছি।”
–এই শোন। তুমি একা করবে কেন? আমি আর তুমি মিলে তবেই নাস্তা তৈরী করবো।”
–উঁহু এখন কিছুই করতে হবে না। যখন একেবারে বউ হয়ে আসবে তখন সারাদিন রান্না করো আমার আপত্তি থাকবে না।”
–আচ্ছা এখন বলো তো আন্টি আর সিয়ামও কি এ বাসায় আসেনি?”
–নাহ্। তোমার আমার বিয়ের আগের মুহূর্তেই মাকে আর সিয়ামকে এখানে নিয়ে আসবো। খুব শিঘ্রই মাকে তোমাদের বাসায় পাঠাবো আমার বউটাকে একেবারে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য।”
বিন্দু লাজুক হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো শিহাব একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিন্দু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই শিহাব ব্যাগটা বিন্দুর দিকে এগিয়ে ধরলো,
–কী আছে এতে?”
–শাড়ি।”
–আমি শাড়ি দিয়ে কী করবো?”
–পরবে।”
–এখন শাড়ি পরবো? ইমপসিবল।”
–প্লিজ বিন্দু এই অাবদারটুকু রাখো। আমি অনেক শখ করে তোমার জন্য শাড়িটা কিনেছি।”
–কিন্তু ম্যাচিং পেটিকোট আর ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি কিভাবে পরবো?”
–সব আছে?”
–সাইজ যদি না মিলে?”
–মিলবে আমি এক টেইলরের কাছে তোমার বর্ননা দিয়ে কিনেছি। হয়তো অল্প লুজ হতে পারে। বেশি সমস্যা হবে না।”
এবারে বিন্দু আর দ্বিমত করতে পারলো না। ভালোবেসে শিহাব শাড়িটা এনেছে কী করে ফিরিয়ে দেবে? বিন্দু শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। শাড়ি পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলো শিহাব নাস্তার ট্রে খাটের ওপর রেখে ফোন টিপাটিপি করছে। বিন্দুর ভিষণ লজ্জা লাগছে। আবার কেমন যেন আজ নিজেকে শিহাবের বউ বউও মনে হচ্ছে। কেউ নেই অথচ দুইটা মানুষ আজ একা এ ঘরটাতে। হাজবেন্ড আর ওয়াইফই তো এরকম একান্তে সময় কাটায়। যদিও ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু বিন্দুর নিজেকে আজ শিহাবের বউই মনে হচ্ছে। শিহাবের পছন্দ আছে বলতে হয়। লাল জর্জেটের একটা শাড়ি পাড়গুলোতে কালো লেস তার সাথে থ্রি কোয়াটার হাতার মাখন জর্জেটের ব্লাউজ। সব মিলিয়ে শাড়িটা ভিষণ পছন্দ হয়েছে বিন্দুর। কিন্তু এখন কীভাবে নিজেকে শিহাবের সামনে প্রেজেন্ট করবে ভাবতে পারছে না সে। লজ্জায় মুখখানা রাঙা হয়ে উঠছে বারবার। হঠাৎ শিহাব খেয়াল করলো ওয়াশরুমের সামনে বিন্দু শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। এক লাফে নিচে নামলো শিহাব। বিন্দুর কাছে এগুতেই বিন্দু যেন আরও জমে যাচ্ছে। হাত-পা খিঁচে একইভাবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। শিহাব বিন্দুর কাছে গিয়ে বিন্দুর চুল থেকে কাঠিটা সরিয়ে দিতেই চুলগুলো পুরো পিঠে এলিয়ে পরলো। কোনো সাজ নেই শুধু ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। এই অল্প সাজেও মনোমুগ্ধকর সুন্দর লাগছে বিন্দুকে। শিহাব খানিকটা সময় মুগ্ধ হয়ে তার বিন্দুকে দেখলো।
–মাশআল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে আমার বিন্দুকে।”
বিন্দু লজ্জায় আরও মাথা নিচু করে রাখলো।
–হয়েছে এত লজ্জা পেতে হবে না। এখন চলো নাস্তা করে নেই।”
বিন্দু কোনো আপত্তি না করেই নাস্তা খেতে চলে গেল। যত বেশি লজ্জা পাবে ততই গুটিয়ে থাকতে হবে। তার চেয়ে সহজ হওয়াটাই বেটার। নাস্তা শেষে শিহাব এটো প্লেট,পেয়ালা নিয়ে নিচের দিকে চলে গেল।

হঠাৎই আকাশ পৃথিবীকে কাঁপিয়ে গুরুম গুরম করে ডাকতে শুরু করলো। তার সাথে পাল্লা দিয়ে জড়ো হাওয়া বইছে। বিন্দু এগিয়ে গেল ব্যালকনিতে। বাতাসের তোড়ে পাতলা শাড়ির আঁচলটা এদিক-সেদিক উড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে বিন্দুকেও উড়িয়ে নিয়ে যাবে। নিজের শাড়িটা ঠিক করতে করতেও একরকমের ক্লান্ত হয়ে পরেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টির আগমনে বাতাসের দাপট অনেকটাই কমে এসেছে। হালকা হালকা বাতাসে বৃষ্টির ছিটা এসে বিন্দুকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বিন্দুরও বেশ ভালো লাগছে। হাত বাড়িয়ে বিন্দুও পরম স্নিগ্ধতায় বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই শাড়ির নিচ দিয়ে পেটের ওপর একটা হাত আবিষ্কার করলো বিন্দু। স্পর্শ পেতেই বিন্দুর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে রইলো। গলার কাছে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই ঝট করে অনেকটা দূরে সরে দাঁড়ালো। তখনও চোখজোড়া বন্ধ করে রেখেছে বিন্দু। পুরো শরীরে এক অদৃশ্য কম্পন শুরু হয়ে গেছে । শিহাব আবারও পেছন থেকে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরলো। বিন্দুর শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে আসছে বারবার । রক্তা চলাচল যেন থেমে গেছে। গভীর এক শিহরণ পুরো শরীরে বইছে বিন্দুর। ঠোঁট জোড়া মৃদুভাবে অনবরত কাঁপছে। বিন্দু কাঁপানো কণ্ঠে বললো,
–প্লিজ শিহাব। লিভ মি এলোন।”
হঠাৎই আকাশে ভয়ংকরভাবে বিদ্যুৎ চমকালো। বিন্দু হুট করেই জড়িয়ে ধরলো শিহাবকে। দু’টি মন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে সেই সাথে দু’টি দেহ। দু’জনের শরীরেই যেন বিদ্যৎপ্রবাহ চলছে। ক্রমে ক্রমে দু’জনেই মিলিত হতে লাগলো নতুন এক বন্ধনে। শিহাবের সম্পূর্ণ সাড়া পেয়ে বিন্দুও আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। অজানা এক নিয়তিতে নিজেকে বিলিয়ে দিলো শিহাবের হাতে। শিহাব ঝট করে কোলে তুলে নিলো বিন্দুকে। বিছানায় এনে খাটের ওপর আলতো করে রাখলো বিন্দুর কোমল শরীরটা। বিন্দু তখনও শিহাবের টিশার্ট খামচে ধরে রেখেছে। আর জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছো। অতঃপর দু’জন মানুষ সম্পূর্ণ এক নতুন পরিনতির মাঝে নিজেদেরকে আবদ্ধ করলো। আবদ্ধ করলো নতুন এক মায়ার জালে। এই জাল ছেড়ে কী কখনো তারা বিচ্ছিন্ন হতে পারবে? নাকি এই পরিনতি তাদের জীবনে নতুন অন্য এক পরিনতি হয়ে ধরা দেবে!

বৃষ্টি কমে গেছে আকাশটা একদম সাদা। মেঘগুলো তখনো আকাশের বুকে ছুটোছুটি করছে। গাছের পাতা থেকে টুপটুপ পানি পরার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। দু’জন মানুষই ঘরের মধ্যে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। বিন্দুর আস্তে আস্তে হুঁশ ফিরতেই তাড়াতাড়ি উঠে বসলো৷ এতক্ষণ যেন একটা আলাদা ঘোরের মধ্যে ছিল সে। নিজের পরনের এলোমেলো শাড়ি দেখে অস্থির হয়ে সেগুলো ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। পাশে চোখ পরতেই দেখলো শিহাব খালি গায়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কী হয়েছে দু’জনের মধ্যে সবটা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো বিন্দুর। মুহূর্তেই চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু অশ্রুকণা বাঁধ মানলো না। গাল বেয়ে গড়াতে লাগলো। বিন্দু দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। কী করে সে এত বড় ভুল করতে পরলো। কী করে পারলো না এই মোহো থেকে বেরিয়ে আসতে। এখন কী করে এখন এই মুখ কাউকে দেখাবে। ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো বিন্দু। শিহাব পাশ ফিরতেই দেখে বিন্দু নেই। ওয়াশরুমের দিকে তাকাতেই দেখলো দরজা বন্ধ। শিহাব অনেকবার বিন্দুকে ডাকলো কিন্তু বিন্দু দরজা খুললো না। প্রায় ঘণ্টা খানেক পরেই বিন্দু ওয়াশরুম ছেড়ে বের হলো। বিন্দুকে দেখেই কলিজায় পানি এলো শিহাবের নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে নিলেই বিন্দু হাতের ঈশারায় না বললো। বিন্দুর চোখ,নাক,মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে বিন্দু এতক্ষণ কেঁদেছিল। শিহাব ভয়ার্ত গলায় বললো,
–স্যরি বিন্দু আসলে তখন…
বিন্দু থামিয়ে দিয়ে বললো,
–আমি এখন বাড়িতে যাব। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
–কিন্তু এখনো তো কেকই কাটা হলো না।”
বিন্দু গালের এক পাশে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
–তার আগেই তো আমি অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়ে গেছি নিজের সবটা হারিয়ে।”
আর কোনো কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না শিহাবের। শুধু আস্তে করে বললো,
–একটু ওয়েট করো আমি রেডি হয়ে নেই।”

বিন্দুর খালি কান্নাই পাচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে বড় জায়গায় আজ সে হেরে বসে আছে। একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদ হলো তার চরিত্র আজ সেই ঝকঝকে চরিত্রটায় কালিমার কালো দাগে পুরো কালচে হয়ে গেছে। মেয়েরা হয় বাগানের সেই পবিত্র ফুলের মতো। যাকে সবাই পেতে চায়, একটু ছুঁয়ে দিতে চায়। কিন্তু যখনই কেউ ফুলটাকে একটু মুচড়ে দেয় ক্রমেই ফুলটার সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। তা আর কখনো পূর্বের রুপে ফিরে যায় না।
চরিত্র অনেকটাই ধবধবে সাদা কাগজের মতো। সাদা কাগজে যেমন একবার কালো দাগ লাগলে হাজার চেষ্টা করেও তা উঠিয়ে ফেলা যায় না। তেমনই চরিত্রে যদি একবার দাগ লেগে যায় হাজার চেষ্টা করেও সেই দাগ তুলে ফেলা যায় না।

অবশ্য শিহাবেরই বা একার কী দোষ? সে তো নিজেও বেহায়র মতো নিজেকে মেলে ধরেছিল শিহাবের কাছে। কেন পারেনি আর একটু কষ্ট করে নিজেকে আটকে রাখতে? কেন সেও মত্ত হয়েছিল এই প্রেম প্রেম খেলায়। যা সম্পূর্ণই অবৈধ। কী করে পারলো এই অবৈধ নেশায় মেতে উঠতে। কেউ চাইলেই বা কেন তাকে সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। অবশ্য শিহাব এমনটা না করলে সে কখনোই এভাবে নিজেকে শিহাবের কাছে সমর্পণ করতো না। আর ভাবতে পারছে না বারবার চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে উঠছে ক্রমেই । তাড়াতাড়ি করে বোরকাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো বিন্দু। পুরো রাস্তায় একটাও কথা বললো না শিহাবের সাথে। যদিও শিহাব কথা বলার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনোভাবেই বিন্দু শিহাবকে কথা বলার সুযোগ দিলো না।
বাসায় পা রাখা মাত্রই কত কথা জিজ্ঞেস করলেন সাজেদা বেগম। কিন্তু কোনো কথার উত্তর না দিয়ে মায়ের সামনে বসে থাকা পুরোটা সময় বোবার মতো বসে ছিল বিন্দু। তারপর আর সহ্য করতে না পেরে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো। এ কোন পরিণতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেললো বিন্দু? এই পরিনতি কী আধেও তার জীবনে সফলতার আহ্বান নিয়ে আসবে নাকি অন্তরদ্বন্ধের গ্লানিতে চুরমার করে সব তছনছ করে দেবে?

কেউ বাজে মন্তব্য না করে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আর হ্যাঁ এরপর গল্পটাতে কী হবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করুন। আশা করি কেউ আশাহত হবেন না।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here