অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা পর্ব ১১

0
717

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১
ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। একটা গাছের নিচে দাঁড়ানো সত্ত্বেও সূর্য যখন কালো মেঘ থেকে বেরিয়ে এসে ভেলকি দেখাচ্ছে তৎক্ষনাৎ জ্বলে যাচ্ছে মাধুর্যের শরীর। তার ওপর অরুণের বলা কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ায় সেটা মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে মাধুর্য। তবে কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছে না। পাশেই কবিতার মুখে ননস্টপ কথা পপর্কণ ফুটছে। সব মিলিয়ে অতি বিরক্ত সে। তাই একটা গাড়ির অপেক্ষা করছে সে। একসময় মাধুর্য ধমক দিয়ে বলে ওঠে….
–“কবিতা, চুপ করবি? একে তো গাড়ি পাচ্ছি না তার ওপর তোর ননস্টপ বকরবকর। তোর মুখ ব্যাথা করে না?”

ভেংচি কেটে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেলেও আবারও একই প্রসঙ্গ তোলে কবিতা।
–“আরে আমি তো হুদাই কোনো কথা বলছি না। তুই-ই ভাব একটা ছেলে অযথা কেন তোকে জ্ঞান দেবে? মানে দেখ, ওই অরুণ তোকে যেসব কথা বলল সেসব কেন বলল? জানিস কিছু?”
–“না আমি কিছু জানি না।”
কথাটা বলে আনমনে পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে মাধুর্য। ওকেও সত্যিই অরুণের কথাগুলো বড্ড ভাবাচ্ছে। কি বলতে চায় এই অরুণ?
–“আমি কিন্তু জানি। অরুণ কেন তোকে এই কথা বলেছে।”
কবিতার কথায় রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে বেশ কৌতুহলী চোখে তাকায় মাধুর্য। ও তো এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে। বেশ উত্তেজনা নিয়ে বলল….
–“কেন বলেছে?”

–“অরুণ তোকে লাইক করে বা ভালোবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আই থিংক আজ সে অনুভবের সঙ্গে তোকে দেখে নিয়েছে। জেলাসিতে কি উল্টোপাল্টা কথা বলে গিয়েছে সে নিজেই জানে না। সিম্পল!”
মাধুর্য মুখ ফুলিয়ে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে। ও ভেবেছিল কবিতা সত্যিই ওকে অরুণের সেসব কথা বলার কারণ ধরতে পেরেছে। কিন্তু না। ওর মাথায় তো গোবর ভরা। সারাদিন মাথায় লাভ, লাভস্টোরি এগুলোই মাথায় গিজগিজ করে। মাধুর্যের এমন রিয়েকশনে কবিতা ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে….
–“আমি ভুল কি বলেছি তুই বল? অরুণ যে তোকে কতটা পছন্দ করে সেটা তুইও জানিস আমিও জানি। কিন্তু তুই ওকে পছন্দ করিস না কেন? আমার তো মনে হয় না ওর মধ্যে কোনো খামতি আছে বলে। গুড লুকিং, ড্যাশিং, স্মার্ট আর সব দিক থেকে পারফেক্ট একটা ছেলে। তোকে ভালোও বাসে। তাহলে?”
–“একপক্ষ থেকে ভালো লাগলে বা ভালোবাসলে সেটা সার্থক হয় না কবিতা। আর আমার অরুণের সংস্পর্শে বিচ্ছিরি একটা অনুভূতি হয় যা তোকে বোঝাতে পারব না। আমার মনে হয় আমি অরুণের নই। আমি অন্য কারোর। আমি যার সে নিশ্চয় আমাকে খুঁজছে।”

কবিতার চোখ চকচক করে ওঠে। মাধুর্যের হাত শক্ত করে ধরে বলে….
–“আহা! কি ফিল্মি কথাবার্তা। তা কোন ফিল্ম দেখছিস আজকাল।”
চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাধুর্য। ও হুট করেই মুখ ফসকে কথাগুলো বলে ফেলেছে। এই কবিতা মেয়েটা সেটা নিয়েই ফালাতে শুরু করেছে। ভাবা যায়?
আগপাছ ভাবতেই তাদের সামনে এসে হুট করেই একটা গাড়ি থামে। সাদা রঙে চকচক করছে গাড়িটি। মাধুর্যের গাড়িটি চিনতে দেরি হয় না। তবে কবিতা ভ্যাবলাকান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে অনুভব। ওর তখনকার পোশাকের সাথে এখনকার পোশাকে কোনো মিল নেই। পুরো ফর্মাল লুকে এসেছে সে। কালো কোট, ভেতরে সাদা শার্ট, লাল টাই, কালো প্যান্ট, কালো বুট জুতা, হাতে মোটা চেইনের ঘড়ি বরাবরের মতো, চোখে কালো সানগ্লাস, চুলগুলো জেল দিয়ে ওপর দিকে করে রাখা আর ঠোঁটে অদ্ভুত মোহময় হাসি।

তাকে দেখে যে কোনো মেয়ে ঘায়েল হতে বাধ্য। কবিতা তো আগেই হা করে চেয়ে আছে অনুভবের দিকে। মাধুর্য একবার তাকাচ্ছে একবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। ওর চোখ যাচ্ছে বারবার অনুভবের দিকে। সে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে গলা খাদে নামিয়ে বলে….
–“আপনি?”
–“হুমম আমি। আই নো, আমি এই মূহুর্তে এখানে বেশ আনএক্সপেক্টেড। কিন্তু কি করব? সবাইকে চমকে দিতে আমার ভালো লাগে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলে তোমরা?”
মাধুর্য কিছু বলার আগেই কবিতা এগিয়ে গিয়ে দ্রুত বলে ওঠে…
–“হ্যাঁ। আজ তো আপনাদের অফিসে ওর প্রথম দিন। তাই তাড়াতাড়ি না পৌঁছুলে হয় বলুন?”
বাঁকা চোখে তাকায় মাধুর্য। কবিতা এতো এক্সাইটেড হয়ে কথা বলছে যেন অনুভব ওর সম্পর্কে কেউ। কি আর করার? মেয়েটাই এমন।

অনুভব সানগ্লাস খুলে হাতে নিয়ে কবিতার পাশ কাটিয়ে মাধুর্যের সামনে এসে দাঁড়ায়।
–“আমি অফিসেই যাচ্ছি। চলো একসাথে যাওয়া যাক মিস. মাধুর্য।”
মাধুর্য হালকা হেসে সম্মতি জানায়। অনুভব হালকা ঘুরে কবিতার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….
–“চাইলে তোমাকেও ড্রপ করে দিতে পারি।”
কবিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে….
–“সিউর।”
দ্রুত পায়ে গিয়ে অনুভবের গাড়ির সামনের সিটে বসে পড়ে কবিতা। মাধুর্য দাঁতে দাঁত চেপে কবিতাকে চোখ রাঙায়। কবিতা এতোটা হ্যাংলা হলো কবে থেকে? কি অদ্ভুত আচরণ তার। আর কিছু বলে না মাধুর্য। ও নিজে গিয়ে বসে পড়ে গাড়ির পেছনের সিটে।

কবিতাকে ওর বাড়ির রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে অফিসে পৌঁছে যায় অনুভব ও মাধুর্য। অফিসে প্রবেশ করে ওরা। অনুভবের সঙ্গে একটা মেয়েকে দেখে প্রায় স্টাফের চোখ গোলগোল হয়ে যায়। সবাই কাজ ছেড়ে ওদের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুভব পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতেই সে চোখ বন্ধ করে বলে….
–“নিজেদের কাজে মনোযোগ দাও সবাই। এখানে ফ্যাশন শো চলছে না।”
সবাই নড়েচড়ে আবারও কাজে মন দেয়। এই খবর পৌঁছে যায় অনুভবের বাবা প্রলয় সিনহার কাছে। প্রলয় তেমন আগ্রহ দেখান না এই ব্যাপারে। উনি জানেন অনুভব কাকে এনেছে। কিন্তু অনুভব কেন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে এই ব্যাপারে তা জানা নেই প্রলয়ের। উনি জানবার চেষ্টা কম করেননি। মাধুর্যের মাঝে কি এমন দেখতে পেয়েছে অনুভব? মাধুর্যের পরিচয় জানার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ও সাধারণ পরিবারের মেয়ে। তবে একটা ব্যাপারে তিনি নিশ্চিন্ত তা হলো উনার ছেলে ভাবনার ব্যাপারে কৌতুহলী হয়নি এখনও অবধি। ভাবনার ব্যাপার নিয়ে অনুভব যত দূরে থাকবে ততই ভালো।

মাধুর্যকে কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হয়। ও হিসেব-নিকেশের দিকটা দেখবে। এটাই ওর কাজ। অনুভবও ঢুকে পড়ে কেবিনে। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে….
–“সিট!”
অনুভবের একটা কথাও ফেলতে ইচ্ছে করে না অনুভবের। তার প্রত্যেকটা কথায় যেন মাধুর্য সম্মোহিত হয়ে পড়ে। কথা অমান্য করবার সাহস পায় না। চেয়ার বসে পড়ে সে। তখনই অনুভব বলে ওঠে….
–“তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। তোমার সঙ্গে বাড়িতে একজন থাকছে। অলরেডি বাড়িতে পৌঁছেও গিয়েছে হয়ত। তুমি ওর সঙ্গে থাকবে আজ থেকে। আর যাকে পাঠিয়েছি তার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে অসুবিধে হবে না আসা করি।”
–“থ্যাংকস। কিন্তু আপনি আমার জন্য এতোকিছু কেন করছেন”

প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অনুভবকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মাধুর্য। অনুভব পরিবর্তে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে মাধুর্যের চেয়ারের হ্যান্ডেল ধরে হালকা ঝুঁকে বলে….
–“অনুভব সিনহারও স্বার্থ আছে এতে। অনেক বড় স্বার্থ।”
কথাগুলো অদ্ভুত শোনায় মাধুর্যের কাছে। যেন এই মানুষটি কিছু চায়। খুব দামি কিছু চায়। কিন্তু জিনিসটা কি সেটা আন্দাজ করতে পারে না মাধুর্য। তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় অনুভবের হাতের আওয়াজে। অনুভব আরো ঝুঁকে পড়েছে তার দিকে। কিন্তু তার নীলজোড়া স্থির কম্পিউটারের মনিটরে। মাধুর্যও কম্পিউটারের দিকে তাকায়। কম্পিউটার অন করেছে অনুভব। চোখ মনিটরেই স্থির রেখে সে বলে ওঠে….
–“তা হিসেব নিকেশ করতে জানো তো নাকি?”
–“না জানার কি আছে?”
–“ওহ জানো? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি প্রশ্ন করা আর ভাবাভাবি করা ছাড়া কিছুই পারো না যাক খুশি হলাম।”

কথাটা যে অনুভব মাধুর্যকে ব্যঙ্গ করে বলেছে তা বেশ বুঝতে পারছে মাধুর্য। রাগে কপাল জড়িয়ে সে বলে….
–“আপনার কি মনে হয় হ্যাঁ? সব কাজ আপনি একাই পারেন? আমি কিছু পারি না? শুনুন নিজেকে সবসময় বেস্ট মনে করবেন না। আর….”
বাকিটা বলার আগেই থামিয়ে দেয় অনুভব ইশারা করে। হাসি প্রসারিত করে বলে….
–“তোমার আরেকটা গুন! নাকি অগুন বলব? সবসময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বল। এখন কাজে মন দাও। কাজে লাগবে।”
রাগে গজগজ করতে করতে কাজে মন দেয় মাধুর্য। অনুভব মাধুর্যকে বুঝিয়ে দিতে শুরু করে। আরেকটু নিচু হয়ে মাধুর্যের কাঁধের কাছে এসে থামে সে। মেয়েটার সুন্দর চুলে সুন্দর গন্ধ। যেন তার চুল নয়। ফুলের বাগান। সেই একই চুলের ঘ্রাণ! মন ভরে ঘ্রাণ নিতেই উঠে পরে সে। দ্রুত বলে ওঠে….
–“যা বুঝানোর আমি বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকিটা তুমি করতে পারবে আশা করি। আমারও কাজ আছে আমি আসছি।”

এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে নিজের দ্রুত গতি দ্বারা বেরিয়ে যায় অনুভব। অনুভবের ব্যবহার অদ্ভুত ঠেকল মাধুর্যের কাছে। কিছুক্ষণ লোকটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে। কি রহস্যময় লোকটা। যাকে এক কথায় বলে, ‘Mysterious man’। অতঃপর নিজের কাজে মন দেয় মাধুর্য।
বাইরে বেরিয়ে এসে দেওয়ালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। বেশ চাপা এবং ভার সুরে বলতে থাকে…..
–“ইয়েস মাধুর্য চৌধুরী! তোমাকে আমার সান্নিধ্যে রাখার একটা বড় স্বার্থ আছে। আমি যা ভাবছি তাই যদি হয় তাহলে, অনেক দামি জিনিস চাই আমার তোমার থেকে। তোমাকে নিজের থেকে ছিনিয়ে নেব আমি। তোমার সর্বাঙ্গে শুধু থাকবে এই প্রিন্স অনুভব। সেই একই চলার ধরণ, সেই কথা বলার ধরণ, সেই হাসি, সেই ঘ্রাণ কোনোটাই ভুলতে দাওনি তুমি আমায় ভাবনা! আমি জানি আমার ধারণা ভুল হতে পারে না। আমি তোমাকে চিনতে এতটাও ভুল করতে পারি না। আমাকে ছেড়ে যেতে দেব না তোমায়। ভুল ভাঙাবো। শুধু একবার ফিরে এসো।”

ওয়ারওল্ফ রাজ্যে……
–“আমি জানি না বাবা! আমি ওকে চাই-ই চাই। ওকে আজ আমি অনুভবের সঙ্গে দেখেছি বাবা। আমি যাকে পছন্দ করি বারবার ওই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভব আমার থেকে কেঁড়ে নেয়। কিন্তু সবসময় তো ওর জেদ চলবে না। এবার ওয়ারওল্ফ শয়তান প্রিন্স জিতবে। আর তুমি আমাকে সাহায্য করবে।”
রাগে কর্কশ গলায় কথাগুলো বলতে বলতে কঙ্কালের ন্যায় মোমবাতি ছুঁড়ে ফেলে দেয় অরুণ। ওর চোখ লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। এই অরুণ আর অরুণ হোসাইনের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। এই হিংস্র চেহার এবং কন্ঠ দুটোই আলাদা করেছে। তবে এটাই সেই অরুণ হোসাইন। এই শয়তান ওয়ারওল্ফ রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা হবে সে। নিঃসন্দেহে সেও একজন ভয়ানক ওয়ারওল্ফ। অরুণের কথা শুনে তার বাবা চমকে এসে অরুণের গাল মুঠো করে ধরে বললেন….

–“মাথায় একটু বুদ্ধি রেখে চলার চেষ্টা কর। অনুভবকে দেখেছিস তুই। তার মানে ভাবতে পারছিস? অনুভব কাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে জানিস তুই? হতেই তো পারে তুই যাকে পছন্দ করিস সে আদোও কোনো সাধারণ মেয়েই নয়।”
চকিতে তাকায় অরুণ। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই মাধুর্যকে কল্পনা করে বলে….
–“না বাবা। ওর রুপ ছাড়া সবকিছুই সাধারণ। ওর মাঝে আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি।”
–“এতোটা নিশ্চিত হচ্ছিস কি করে? আশেপাশের খেয়াল রাখ। শুধু ওই মেয়েটাতে ডুবে থাকিস না। ভুলে যাস না কে তুই। তোর উদ্দেশ্যও ভুলবি না।”
–“ভুলব না বাবা। আমার উদ্দেশ্য ওই অনুভবকে ধ্বংস করা। সেটা তো আমি করবই। অর্ধেক কাজ তো তুমিই করে দিয়েছো। আমাদের রাজ্যে ও এসল যত বড় ভুল করেছিল সেই মাশুল ও যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন গুনতে হবে। ভালোবাসা না পেলে সারাজীবন শয়তান সত্তা বয়ে বেড়াতে হবে।”
কথাটা বলে ভয়ানক হাসিতে মেতে উঠল অরুণ।

রাতের আঁধার নেমে এসেছে চারিদিকে। ঝিকিমিকি করছে ওপরে তাঁরা। অর্ধচাঁদও আলতো আলোয় ছুঁইয়ে দিচ্ছে পৃথিবীকে। সবে কাজ শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কাজ কমপ্লিট করে মাধুর্য। কপালে হাত লাগিয়ে চোখ বুঁজে থাকতেই দরজায় নক করে ভেতরে আসে কেউ। মাধুর্য দাঁড়িয়ে দেখে একজন মেয়েকে। সে হচ্ছে প্রলয় চৌধুরী পিএ। নীলিমা নাম। নীলিমা তাড়াহুড়োর সুরে বলে ওঠে….
–“কাজ কমপ্লিট?”
মাধুর্য বাধ্য মেয়ের মতো বলে ওঠে…..
–“ইয়েস ম্যাম। এইযে ধরুন।”
নীলিমাকে কিছু হিসেবের কাগজ প্রিন্ট করে দেয় মাধুর্য। নীলিমা বিস্ময়ের দৃষ্টি তাকিয়ে কাগজ নেয়। সাধারণত নতুন কেউ এই অফিসের হিসেব এতো তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে না। অথচ মাধুর্য বেশ তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। মাধুর্য কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলে….
–“তাহলে আমি কি এখন যেতে পারি?
নিলীমা মাথা নাড়ায়। বেরিয়ে আসে মাধুর্য কেবিন থেকে।

কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরে পা রাখতেই ওর মনে হয় অনুভবের কথা। অনুভবের সঙ্গে সেই দুপুরে দেখা হয়েছিল। সে আর তার কেবিনে আসেনি। তার কেবিন কোনটা সেটাও তো মাধুর্য জানে না। হয়ত অনুভব কাজে ব্যস্ত। এই ভেবে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে মাধুর্য। সিএনজি নিয়ে চলে যায় সেই ফার্মহাউসের দিকে।
সিএনজি ড্রাইভার মেইন রোডেই নামিয়ে দেয় মাধুর্যকে। কিন্তু ফার্মহাউসটা মেইন রোড ছাড়িয়ে জঙ্গলের আরো ভেতরে। একা যেতে ভয় করছে তার। তবুও ভয়ে ভয়ে হাঁটতে শুরু করল সে। একা চলা তো শিখতে হবে। মিনিট দশেক হেঁটে অনেক গভীর জঙ্গলেই এসেছে সে। রাস্তায় সোডিয়াম আলোটাও একবার জ্বলছে একবার নিভছে। দ্রুত গতিতে পা চালায় মাধুর্য। একটা উটকো আর ভয়ানক গর্জনে থেমে যায় সে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে তার। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করতে শুরু করেছে। জঙ্গলের আশেপাশেই চোখ বুলাতে সে দেখতে পায় লাল চোখজোড়া। সেখানকার ঝোপটা নড়ছে বার বার।

হাঁটতেও পারছে না মাধুর্য। তার পা যেন অবশ হয়ে এসেছে। নিশ্বাস আঁটকে আসছে তার। হুট করে সেই ভয়ানক প্রাণীটা লাফ দিয়ে মাধুর্যের সামনে আসতেই ভয়ে পিছিয়ে যায় সে। একটা অদ্ভুত প্রাণী! এমনটা সে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। কি করবে ভেবে কুল পায়না সে। তখনই প্রাণীটি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে। প্রাণীর বড় বড় নখের আঁচড় লেগে কেটে যায় মাধুর্যের বাম হাতের কনুইয়ের ওপরে। তার নিশ্বাস বার বার উঠানামা করছে। আজ যেন তার রক্ষা নেই। প্রাণীটা ধেয়ে আসতেই চোখের মনির রঙ পরিবর্তন হয় মাধুর্যের। নিজের ডান হাত উঠিয়ে নিজের অজান্তেই নখ দিয়ে আঘাত করে প্রাণীটিকে। সরে যায় প্রাণীটা। মাধুর্যের ছোট ছোট নখ ইতিমধ্যে বিশাল আকার ধারণ করেছে। সারা শরীরের রোগ ফুলে উঠেছে। রাতের আবছা আলোয় ভয়ঙ্করী হয়ে উঠেছে সে। যাকে বলে ভয়ঙ্করী সুন্দর।

প্রাণীটা আবারো আঘাত করতে এলে মাধুর্য উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতের নখ দিয়ে আঘাত করে আবারও। প্রাণীটির গলা ধরে নিজের ধারালো আর তীক্ষ্ণ নখ বসিয়ে দেয় গলায়। আকাশের দিকে মুখ করে হা করে সে। হুংকার দিয়ে ওঠে ভয়ানকভাবে। তার দুইধারে দুটো তীক্ষ্ণ দাঁত বেরিয়ে আসে। সেই দাঁত বসিয়ে দেয় প্রাণীর গলার দিকে।

চলবে…….🍀🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here