#শেষটা_সুন্দর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব___৩৯
তরী থামলো না। নির্ঝরের গাল ছুঁয়ে দিল, আলতো করে নাক ছুঁয়ে দিল। ঠোঁটের উপর৷ আঙুল রাখতে নির্ঝর কেঁপে উঠলো। তরী মুগ্ধ নয়নে নির্ঝরের মুখপানে চেয়ে আছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে নির্ঝরের হার্টের প্রতিটি বিটের শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে যেন। সে নিচু হয়ে নির্ঝরের বুকের বাঁ পাশে মাথা রাখলো। কান পেতে শুনলো অগোছালো হৃদযন্ত্রের ধুকপুক শব্দ। একটুপর মাথা তুলল সে। নির্ঝর এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। সে মৃদু স্বরে বলল,
‘শুনছেন?’
নির্ঝর তরীর হাতে একটু চাপ দিয়ে বলল,
‘হুঁ!’
‘ক্ষুধা লাগেনি?’
‘এতক্ষণ লাগছিল। এখন নেই!’
‘ঢং! শাওয়ার নিয়ে আসুন। আমি খাবার রুমে এনে রেখেছি। উঠুন!’
নির্ঝরের মধ্যে উঠার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। হালকা নড়েচড়ে বলল,
‘উঠবো না।’
তরী চুপ হয়ে গেল। নির্ঝরের মুখ শুকনো শুকনো লাগছে। দুপুর বেলা একত্রে দুজন খেয়েছিল। এরপর বোধ হয় নির্ঝরের আর খাওয়া হয়নি। সে জোরপূর্বক নির্ঝরকে কোল থেকে সরাল। নির্ঝর চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। সে চাহনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তরী তাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিল। নির্ঝর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। বলল,
‘কি হলো আবার? একটু ঘুমাতে চাইলাম।’
তরী টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। এক হাতে খাবারের প্লেট আরেক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে এগিয়ে এলো। ভাতের প্লেট নির্ঝরের সামনে মেলে বলল,
‘মুখ শুকনো লাগছে আপনার।খেতে হবে না?’
‘কিন্তু হাতে পায়ে ময়লা। এতক্ষণ বাহিরে ছিলাম। শাওয়ার নিতে হবে তো।’
‘আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু হাঁ করুন তো।’
তরীর অধিকারবোধ দেখে নির্ঝর মুচকি হাসলো। তরীর দিকে আর একটু এগিয়ে এসে যুতসই বসলো। মুখ হাঁ করে বলল,
‘নাও খাইয়ে দাও।’
তরী ভাজি দিয়ে ভাত মেখে নির্ঝরের মুখের সামনে ধরলো। নির্ঝর হাত দিয়ে বাঁধা দিল। বলল,
‘তুমি খেয়েছ?’
‘আমি না খেয়ে থাকতে পারি? ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। আপনি জানেন না?’
‘উঁহু! মানবো না। আমাকে রেখে খেয়েছ, শাস্তিস্বরূপ আবার খেতে হবে এখন।’
তরী হাসলো। মাথা নেড়ে সায় জানাল। তবেই নির্ঝর পুনরায় হাঁ করলো।
খাওয়া শেষ করে নির্ঝর ওয়াশরুমে ঢুকলো। দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে সে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। পরিষ্কার আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখলো। ডান হাতটার দিকে তাকালো। অল্প একটু জায়গা কেটে গেছে। রক্ত পড়া অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সে ট্যাপ ছেড়ে হাতে পানি ঢাললো।
আশিককে সে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পেরেছে দেখে মনে শান্তি পেল সে। একটু হলেও নিজেকে এখন সান্ত্বনা দিতে পারবে। ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ জেগে উঠবে না। স্বামী হিসেবে তার কর্তব্য ছিল স্ত্রীর সাথে দূর্ব্যবহার কারীকে শাস্তি দেওয়া। সে সেটাই করেছে। তবে তার এ কাজে সাহায্য করেছে থানার ওসি! ওসি শাহেদুজ্জামান। তার বাল্যকালের বন্ধু। হাইস্কুল পর্যন্ত একত্রে পড়ালেখা করেছে। তুখোড় মেধাবী ছাত্র। ভার্সিটি শেষ করেই বিসিএস দিয়ে ফার্স্ট হয়েছে। সে-ই রাতের আঁধারে তাকে সাহায্য করেছে আশিকের কাছে পৌঁছাতে।
ট্যাপ বন্ধ করে নির্ঝর গায়ের শার্ট খুলে ফেলল। ঘামের গন্ধ বের হয়েছে। শার্টটা একপাশে রাখলো। আঙুলের ডগায় ফেসওয়াশ নিয়ে মুখে ঘঁষলো। তরীকে একটা জিনিস জানানো হয়নি। সে মাস্টার্সের একটা সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে পারেনি। রি-টেইক নিতে হবে। শুধু তরীকে নয়, বিষয়টা সে কাউকেই জানায়নি। তবে এটা নিয়ে তার দুঃশ্চিন্তা নেই। ভার্সিটি লাইফে দু একটা সেমিস্টার ড্রপ দেয় এমন স্টুডেন্টের সংখ্যা অগুনতি। এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তার স্বপ্নকে পাশে পেয়েছে। আর কোনো কালো ধোঁয়া তাদের জীবনে পড়বে না। এখন থেকে ইনশাল্লাহ সব ভালো হবে। সব!
মধ্যরাত! আকাশে ধনুকের মতো এক ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে যাচ্ছে এ মাথা থেকে ও মাথা। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। প্রকৃতির কেমন মাতাল করা গন্ধ। অন্ধকারের কেমন পাগল করা গান! তরীর মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের বেপরোয়া ঢেউয়ের মতো ভেসে যেতে ইচ্ছে করছে দূর থেকে বহুদূরে। সে দৌঁড়ে বেলকনি থেকে রুমে ঢুকলো। আলমারির কাছে গিয়ে নির্ঝরের পছন্দের শাড়িটা বের করলো।
কালো রঙের নতুন শাড়িটা হাতে নিয়ে সে ওয়াশরুমের দিকে তাকালো। নির্ঝরের শাওয়ার নিতে অনেকটা সময় লাগে। এই সময়ই যথেষ্ট তার তৈরি হওয়ার জন্য। সে মুচকি হাসলো। বহুদিন পর আজ সে শাড়ি পড়বে। মনের মতো করে সাজবে। তার মনের মতো নয়, নির্ঝরের মনের মতো!
__________
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চোখে কাজলের শেষ রেখা টেনে দিল তরী। ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দিল। কানে ভারী দুল, গলায় ভারী নেকলেস আর হাত ভর্তি চুড়ি পড়লো। মাথার খোলা চুল গুলোতে আরেকবার ব্রাশ করলো। তার ব্রাশ করা অবস্থায় ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। মুহূর্তে জমে গেল সে। চুলের উপর হাত থেমে গেল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বড় বড় চোখে তাকালো। দেখলো যে নির্ঝর খালি গায়ে বের হয়েছে। ধূসর রঙের ট্রাউজারের উপর খালি গা! মাথার ভেজা চুল গুলো নির্বিকার ভাবে মুছে যাচ্ছে।
তরী ভয়ে ঢোক গিলল। নির্ঝরের সাথে এতদিনের সাক্ষাতে সে কোনোদিন তাকে খালি গায়ে দেখেনি। তার মতোই প্রতিবার শাওয়ার শেষ করে কিছু না কিছু গায়ে দিয়ে বের হতো। মাঝে মধ্যে কদাচিৎ সে রুমে শার্ট চেন্জ করতো। তখন অবশ্য নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি থাকতো। এভাবে সম্পূর্ণ খালি গায়ে সে কখনো দেখেনি। নির্ঝর কি আজ টিশার্ট পড়তে ভুলে গেছে? সে কি মনে করিয়ে দিবে?
তার ভাবনার মাঝে নির্ঝর তাকে পাশ কাটিয়ে বেলকনিতে ঢুকলো। অর্ধ খোলা কাচ দিয়ে তরী দেখল নির্ঝর মাথার ভেজা চুল দু হাত দিয়ে ঝাড়ছে। তার ফর্সা বুকের বেশ খানিকটা ভেজা। শাওয়ারের পর কি স্নিগ্ধ লাগছে! তরী উঠে দাঁড়ালো। সে যে শাড়ি পড়েছে তা নির্ঝর এখনো খেয়াল করেনি। সে এগিয়ে গিয়ে পর্দার আড়াল হলো। নির্ঝর তার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে পর্দার আড়ালে থেকে একটুখানি মুখ বের করে বলল,
‘শুনেন না?’
তরীর নাঁকি সুরটা নির্ঝরের বুকের গহীনে গিয়ে ঢেউ তুলল। ঠিক এই মুহুর্তে মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু মানুষ সে। পেছন ঘুরে তরীর মুখটা দেখার মতো সাহস তার হলো না। ভেজা টাওয়াল টা আবার মেলে দিয়ে বলল,
‘বলো না!’
‘আপনি খালি গায়ে কেন?’
নির্ঝরের বুকের গহীনের ঢেউ থেমে গেল। ফিক করে হেসে দিল সে। বোকারানী রে! সে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
‘জামাকাপড় কিছু খুঁজে পেলাম না। তাই!’
‘এনে দিবো?’
নির্ঝর উত্তর দিল না। মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকল। রুমে ঢুকেই পর্দাসমেত তরীকে জড়িয়ে ধরলো। তরীর হাত দুটো নির্ঝরের উন্মুক্ত বুক স্পর্শ করতে তরী চমকে গেল। আস্তে ধীরে মুখে লজ্জার ছাপ স্পষ্ট হলো। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। লজ্জায় চোখ তুলে নির্ঝরের দিকে তাকাতে পারলো না।
নির্ঝর হাতের বাঁধন আরো শক্ত করলো। তরীকে উঁচু করে এনে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো। কয়েক সেকেন্ড পর পিছিয়ে এসে তরীর পা থেকে মাথা অবধি পরখ করলো। তরীর পরণের পাতলা শাড়ি তার মাত্র নজরে এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সে চেয়ে রইলো তরীর মুখপানে। আলতো হাতে তরীর গলার নেকলেস স্পর্শ করলো। কানের দুলে হাত ছুঁইয়ে গালে গিয়ে হাত থামলো। সে আরেকটু তরীর দিকে ঝুঁকে বলল,
‘হঠাৎ এত সাজ কিসের জন্য? কোনো স্পেশাল ডে আজ?’
তরীর ভেতর ইতোমধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। অগোছালো ঢেউগুলো দ্বিকবিদিগ জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটে চলেছে। গলা শুকিয়ে আসতে চাইছে বার বার। সে দু হাতে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলো। কম্পমান ঠোঁট জোড়া আলগা করে বলল,
‘উঁহু!’
নির্ঝর মুচকি হাসলো। তার এক হাত দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। আরেক হাত তরীর খোলা চুলে বিচরণ করছে। সে নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলল,
‘মানলাম তুমি আমার চেয়ে বেশি সুন্দরী। তাই বলে কি আমি এতটাই কুৎসিত যে আমার মুখের দিকে তাকানো যাবে না?’
তরী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আপনা-আপনি মাথা তুলে নির্ঝরের মুখপানে তাকাল। গাল ফুলিয়ে বলল,
‘সরে যান তো সামনে থেকে!’
‘সরবো না! তিন সেকেন্ডের একটা চুমু খাই?’
তরী হঠাৎ করেই আবার মুখ নিচু করলো। চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়লো রক্তিম আভা। নির্ঝর পুনরায় বলল,
‘এত সাজ কেন হঠাৎ?’
নির্ঝরের ঘোর লাগা কন্ঠ তরীর কানে আসতে আরো বেশি অগোছালো হয়ে গেল। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে তার। বুকের ভেতর অজানা অনুভূতি গুলো এলোমেলো হয়ে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। সে নির্ঝরের চোখে চোখ রাখলো। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
‘আপনার পছন্দ হয়েছে?’
‘আমার তো গোটা তুমিটাই পছন্দ। শুধু পছন্দ নয়, মারাত্মক পছন্দ। এই তুমিই আমার ভেতর ছোঁয়াচে রোগের ভাইরাস বপন করে দিয়েছ । আজ থেকে সাড়ে সাত বছর আগে খেলার ছলে একবার ছুঁয়ে দিয়ে মরণঘাতী ব্যাধি বানিয়ে দিয়েছ ভেতরে। প্রেমের ব্যাধি! যে ব্যাধি অন্য কিছুতে সারে না। শুধুমাত্র তুমি পাশে থাকলে, কাছাকাছি থাকলে, ছুঁয়ে দিলে তবেই শান্তি পাই। তোমার জানতে ইচ্ছে করে না, কতটা ভালোবাসি তোমায়? সত্যি বলতে তোমায় কতটা ভালোবাসি জানি না। শুধু জানি, তুমি কপাল স্পর্শ না করলে আমার জ্বর কখনো কমবে না। তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে আমার মাথা ব্যথা চিরকালের জন্য থেকে যাবে। অফিস থেকে ফেরার পর তুমি জড়িয়ে না ধরলে আমার সারাদিনের ক্লান্তি কিছুতেই উবে যাবে না। তোমায় বুকে না জড়ালে আমার চোখজোড়া নির্ঘুম রাতের সাক্ষী হবে। এই হাতজোড়া তোমার আঙুল আঁকড়ে না ধরতে পারলে কর্মক্ষমতা হারাবে। চোখজোড়া চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যাবে তোমায় দেখতে না পেলে। তুমি বিনে জীবন্ত পঙ্গু হয়ে যাব আমি ডিঙিরানী। বুঝতে পেরেছ তুমি?’
তরীর ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। চোখের কোণ ভিজে উঠলো। নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস তার মুখে আছড়ে পড়ছে৷ সে ঝাপসা চোখে নির্ঝরের উন্মুক্ত বুকে পর পর চুমু খেল। পুনরায় নির্ঝরের চোখে চোখ রেখে বলল,
‘আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ আপনি। এই যে আপনার বুকে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, ভুলেও এই বুকের মালিক যেন অন্য কেউ না হয়। ভালোবাসি আপনাকে নির্ঝর।’
‘নৌকারানী! কতবড় সাহস তোমার। আমার নাম ধরে ডাকো? পিচ্চি একটা! আমায় নাম ধরে ডাকার শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে!’
নির্ঝরের সিরিয়াস মুখো ভঙ্গিতে তরী জল তরঙ্গের ন্যায় খিলখিল করে হেসে উঠলো। বলল,
‘আরো বেশি করে ডাকবো। নির্ঝর, নির্ঝর, নির্ঝর, নি……….’
তরী আর উচ্চারণ করতে পারলো না। নির্ঝর মুখ নিচু করে তরীর অধর স্পর্শ করলো। তরী চোখ বন্ধ করে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম নির্ঝরের ভেতর কোনো আড়ষ্টতা দেখা গেল না। সরে আসার প্রবণতা দেখা গেল না। তিন সেকেন্ডের চুমুর ব্যাপারটা মাথায় রইলো না। সে আরো গভীর ভাবে তরীর মাঝে হারিয়ে গেল।
_____________
বিকেল হতে না হতে নির্ঝর অফিস থেকে ফিরলো। ডোরবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করলো দরজা খোলার জন্য। দরজা খুললো নিনাদ। নির্ঝর কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলো। সে ভেবেই নিয়েছিল দরজা খুলবে তরী। ভেতরে ঢুকে জুতা খুলে সোজা হলো সে। নিনাদের মাথায় টোকা মেরে বলল,
‘বাকি সবাই কই?’
নিনাদ পিঞ্চ মেরে বলল,
‘বাকি সবাই কই নাকি শুধু ভাবী কই? কোনটা মিন করছো ভাইয়া?’
‘এক চড় খাবি নিনাদ!’
নিনাদ হাসতে হাসতে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো। নির্ঝর আড়চোখে পুরো ড্রয়িং রুম পরখ করলো। মাকে চোখে পড়লো না। তরীও নেই! সে রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিল। নাহিদা বেগম গ্লাসে পানি ঢালছিলেন। নির্ঝরকে দেখে প্রশ্ন করলেন,
‘কখন এলি?’
‘মাত্র! কি করো তুমি মা?’
‘কিছু না। পানি খেলাম!’
নির্ঝর এগিয়ে এসে মায়ের হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেল। তারপর পকেট থেকে নতুন ফ্রেমের চশমাটা বের করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিল। বলল,
‘এটা বাবার জন্য। বাবা কি ফিরেছে মা?’
‘ফেরেনি। তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’
‘হুঁ!’
নির্ঝর সোজা নিজের রুমে ঢুকলো। ড্রয়িং রুমে তরীকে চোখে পড়েনি বলে সে ধরেই নিয়েছিল তরী রুমে আছে। কিন্তু এবারও ভুল প্রমাণিত হলো সে। তরী রুমে নেই। সে চিন্তায় পড়ে গেল। কাল রাতের ঘটনার পর থেকে তরী তার মুখোমুখি হয়নি। ভোরবেলা সে ঘুম থেকে উঠার আগেই তরী লাপাত্তা। তার রুমে থাকাকালীন সময় টুকু সে আর রুমে আসেনি। নাস্তা করার সময় ডাইনিং এ দেখেছিল। সে অনেক বার চোখ দিয়ে ইশারা করে রুমে আসার কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তরী সুনিপুণ ভাবে তার আই কন্ট্যাক্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। অগত্যা সে অফিস চলে গিয়েছিল। দুপুরবেলা ফ্রি টাইমে সে কল করেছে, মেসেজ করেছে। তরী কোনো প্রতিত্তর করেনি। সকাল বেলা ভেবেছিল তরী হয়তো লজ্জায় তার মুখোমুখি হয়নি। কিন্তু এখন তার চিন্তা হচ্ছে।
শাওয়ার শেষে নিজে নিজেই হালকা নাস্তা করে নিল নির্ঝর। নিনাদের রুমে উঁকি দিল। তরী নেই! মায়ের রুমে উঁকি দিতেই তরীর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নজরে এলো। মায়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। দুজন খোশগল্পে মেতে আছে। আড়াল থেকে নির্ঝর হাসলো। বুঝতে সক্ষম হলো যে তরী শুধু তাকে ইগনোর করছে। সে বাইরে থেকে গলা উঁচিয়ে বলল,
‘মা আমি ঘুমাতে গেলাম।’
ভেতর থেকে কোনো প্রতিত্তর আসলো না। ঘুমাতে গেলাম বলেও নির্ঝর ঘুমাতে গেল না। আড়ালে দাঁড়িয়ে তরীর অপেক্ষায় রইলো। মিনিট দশেক পর তরী মায়ের রুম থেকে বের হলো। আশপাশে উঁকিঝুঁকি দিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিতে নির্ঝর পেছন থেকে তার মুখ চেপে ধরলো। তরী প্রতিক্রিয়া করার আগেই পাঁজাকোল করে তাকে নিয়ে রুমে ঢুকলো।
(চলবে)