#শেষটা_সুন্দর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব___০৮
নির্ঝর একহাতে তরীকে জড়িয়ে বলল,
‘আর একটু চিকন হওয়া উচিত ছিল তোমার। তাহলে প্রথম ঝাঁকুনি খেয়েই সরাসরি বুকে এসে পড়তে! কয়েক সেকেন্ড কষ্ট কম হতো আমার!’
নির্ঝরের নিচুস্বরের কথাগুলো কানে যেতে তরীর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হলো। লজ্জায় কুঁকড়ে
দ্রুত মাথা নিচু করে পাঞ্জাবির কলার ছেড়ে দিল। তারপর হুড়মুড় করে নির্ঝরের হাত ঠেলে সিটে বসলো। মাঝে অনেকখানি দূরত্ব রেখে জানালার সাথে সেঁটে গেল সে!
বাসের ঝাঁকুনি থেমে গেছে অনেক আগে।নির্ঝর আবার হাত পা ছড়িয়ে দিল।তরীর দিকে চেয়ে অগোছালো ভাবে বলল,
‘তরী, পানির বোতল এগিয়ে দাও তো! বোতলের মুখ খুলে দিবে। তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার সব শক্তি কর্পূরের মতো উবে গেছে।’
তরী সিটের পাশ থেকে দ্রুত বোতল হাতে নিল। বোতলে অর্ধেক পানি। বাকি অর্ধেক সে বাসে উঠার আগে শেষ করেছে। বোতলের মুখ খুলে সে নির্ঝরের দিকে বাড়িয়ে দিল।
বোতল নেওয়ার সময় নির্ঝর হালকা ভাবে তার হাত ছুঁয়ে দিল। ইচ্ছেকৃত ভাবে কি না তরী বুঝতে পারলো না। তবে বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো। হাতটা গুটিয়ে নিয়ে নির্ঝরের স্পর্শ করা জায়গায় বাম হাত রাখতে মনে পড়লো নির্ঝরের হাত অনেক গরম ছিল।জ্বর আসেনি তো?
সে ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে এলো। সটান নির্ঝরের কপালে হাত ছুঁইয়ে চিন্তিত মুখে চেয়ে রইলো। আস্তে আস্তে তার কপাল কুঁচকে গেল। স্পষ্ট সুর তুলে বলল,
‘আপনার জ্বর এসেছে নির্ঝর ভাই। শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।’
অবাক হলেও খচ করে ‘ভাই’ শব্দটা নির্ঝরের বুকে গিয়ে বিঁধলো। সে মাথাটা সামান্য কাত করে তরীর স্পর্শের বাইরে চলে গেল। কাঠ কাঠ গলায় বলল,
‘পুড়ছে পুড়ুক! তোমাকে এত দরদ দেখাতে বলেছে কে?’
‘আপনার কথা পেঁচিয়ে যাচ্ছে নির্ঝর ভাই। চুপচাপ থাকুন।’
‘কথা পেঁচিয়ে যাচ্ছে, আরো যাবে! তাতে তোমার কি? ক্রেজি স্টুপিড! ছয় কবুল বলে দুই বার বিয়ে করে এখন ভাই বলে ডাকা হচ্ছে? ঢাকা গিয়ে আবার তোমায় বিয়ে করবো। প্রয়োজনে হাজার বার বিয়ে করবো! তবুও দেখে ছাড়বো, তুমি কতদিন ভাই বলে ডাকো!’
নির্ঝরের দূর্বল কন্ঠের সব কথা তরীর কান অবধি পৌঁছাল না। সে চিন্তিত মুখে সামনে তাকাল। বাসের সবাই চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকে! অনেকে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করছে! তার জার্নিতে কখনো ঘুম হয় না। চলন্ত গাড়িতে মনে হয় যখন তখন দূর্ঘটনা ঘটে যাবে।
নির্ঝরের দিকে পুনরায় মনোযোগ দিল তরী। কেমন নেতিয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। জোরপূর্বক খুলে রাখা চোখ দুটো পিট পিট করে তার দিকে চেয়ে আছে। আধ খোলা চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তরী দ্বিতীয় বার চিন্তা না করে নির্ঝরের মাথাটা কাঁধের উপর রাখতে চাইলো। মাথায় হাত রেখে সামান্য এলিয়ে দিতে নির্ঝর তার কাঁধ পেরিয়ে গুটিশুটি হয়ে তার কোলে শুয়ে পড়লো। প্রথমে তরী চমকালেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। ব্যাগ হাতড়ে লম্বা ওড়না বের করে তার এক অংশ ভিজিয়ে নিল। নির্ঝরের মুখটা মুছে দিয়ে কপালে ভেজা অংশ চেপে ধরে রাখলো।
আরেক হাতে সাবধানে মাথার সেলাইয়ের জায়গা বাদ রেখে চুলে হাত ছোঁয়াল। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। সেন্স আছে কি না তা নিয়ে তরী চিন্তিত। সে কানের কাছে মুখ নিয়ে বার কয়েক ডাকলো,
‘নির্ঝর ভাই, নির্ঝর ভাই!’
নির্ঝর দূর্বলভাবে একটা হাত উঁচু করে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করলো। বিড়বিড় করে অস্পষ্ট ভাবে কিছু একটা বললো যা তরীর কান অবধি পৌঁছাল না। সে পুনরায় ওড়না ভিজিয়ে নির্ঝরের কপালে চেপে ধরলো।
______________
নির্ঝরের ঘুম ভাঙলো ক্রমাগত বাজতে থাকা গাড়ির হর্ণের শব্দে। কপাল কুঁচকে এলো তার! চোখ না খুলে বিরক্তি প্রকাশ করলো সে। শব্দটা ধীরে ধীরে আরো প্রকট হচ্ছে। বুকের উপরও কিছু একটা অনুভব করছে সে। এতক্ষণে চোখ খোলার প্রয়োজন বোধ করলো।
চোখের পাতা খুলতে এক হাত সামনে তরীর ঘুমন্ত মুখটা স্পষ্ট হলো। তরীর মুখের কিছু অংশে সূর্যের হলদেটে রোদ এসে পড়েছে। উজ্জ্বল শ্যামলা মসৃণ ত্বকে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। জানালা দিয়ে আসা হালকা ঝিরিঝিরি বাতাসে কানের দুপাশের অল্প কিছু চুল উড়ছে।দীর্ঘক্ষণ মুগ্ধ হয়ে ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইলো সে।
হুশ ফিরতে চোখ সরিয়ে নিল। অনেকক্ষণ হলো তরীর কোলে এভাবে শুয়ে আছে। নিশ্চয়ই পা ব্যথা হয়ে গেছে মেয়েটার। ধুর! কোথায় সে তরীকে আগলে রাখবে, তা নয়! নিজেই পরে পরে ঘুমিয়েছে। তরীর ঘুম যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য নির্ঝর অতি সতর্কতার সহিত উঠার চেষ্টা করলো। মাথা সামান্য উঁচু করতে বুঝতে পারলো তরী ডান হাতে তার বুকের কাছের পাঞ্জাবির অংশ শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে আছে।দিনের শুরুর প্রথম হাসিটা তার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো।
সে বেশ বুঝতে পারছে আজকের সকাল থেকে তার নব্য জীবনের সূচনা হলো। আজ থেকে এই মেয়েটা প্রতিনিয়ত তার তার হাসির কারণ হবে। হাজার বার তার প্রেমে পরতে বাধ্য করবে। তার স্বযত্নে আগলে রাখা সবটুকু ভালোবাসার সাক্ষী হবে।
তরীর হাতটা সাবধানে ছাড়িয়ে নির্ঝর উঠে পড়লো। তরী যৎসামান্য নড়েচড়ে আবার ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল। নির্ঝর আড়মোড়া ভেঙে যুতসই বসলো। নিজেকে অনেক ঝরঝরে লাগছে! জ্বর নেই। যদিও পেটের কোণায় ক্ষুধার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে, তবুও ঘুমটা প্রচুর কাজে দিয়েছে।
বাস চলছে মাঝারি গতিতে। নির্ঝর তরীর মাথাটা কাঁধে চেপে এক হাতে হালকা করে আগলে রাখলো। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখলো। অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে আর বেশি দেরি নেই।
বাস থামার মিনিট দুই আগে নির্ঝর ক্ষীণ স্বরে তরীকে ডাকলো। দু বার ডাকতেই তরী ধড়ফড় করে উঠে পড়লো। সচকিত হয়ে চারিদিক তাকাল।নির্ঝর তাকে আশ্যস্ত করে বলল,
‘রিলাক্স তরী! আমরা পৌঁছে গেছি।’
‘কোথায় পৌঁছে গেছি? ‘
‘আপাতত তোমার সেকেন্ড হাসবেন্ডের বাসার কাছাকাছি।’
তরী নিজের মাঝে ফিরলো। কোনো উত্তর না দিয়ে সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। কয়েক সেকেন্ড যেতেই সে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
‘আপনার জ্বর? জ্বর কমেছে?’
নির্ঝর মাথাটা তরীর মুখের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমায় জিজ্ঞেস করছো কেন? আমি কি ডক্টর? নিজে পরীক্ষা করে দেখো।’
তরী কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ নির্ঝরের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ডান হাতটা বাড়িয়ে হালকা করে নির্ঝরের কপাল ছুঁয়ে দিল। ছোট শ্বাস ফেলে বলল,
‘এখন জ্বর নেই। রাতের বেলা তাপমাত্রা এতটা বেশি ছিল যে ভয় পেয়ে গেছিলাম।’
‘আবার বিধবা হয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল!তাই তো?’
‘আপনি সবসময় মজা করার মুডে থাকেন কেন? খবরদার!বাড়াবাড়ি করবেন না।’
‘করলে কি করবে?’
নির্ঝরের নির্বিকার একগুঁয়েমিতে তরীর রাগ তরতর করে বেড়ে গেল। এই মিষ্টি সকালে মনটা ধীরে ধীরে বিষিয়ে যাচ্ছে যেন। সে ডান হাতর একটা আঙুল তুলে আবার গুটিয়ে নিল। এই ছেলের সাথে যত কথা কম বলবে তত মঙ্গল! মুখ ঘুরিয়ে আবার জানালার ওপাশে তাকালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাস থামলো!
_________
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো নির্ঝর। গলায় ঝুলানো টাওয়াল দিয়ে হাত-মুখ মুছে দেখলো তরী রুমে নেই। এগিয়ে গিয়ে বিশালাকৃতির লম্বা বেলকনির এ মাথা থেকে ও মাথা দৃষ্টি বুলিয়ে দেখলো তরী সেখানেও নেই। তার কপাল কুঁচকে গেল। তবে কি ওয়াশরুম থেকে এখনো বের হয়নি?
সে গলা উঁচু করে ডাকলো,
‘তরী? এই তরী?’
কোনো প্রতিত্তর আসলো না। সে আর ডাকলো না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরেফিরে মাথার ব্যান্ডেজগুলো পরখ করলো। তরীর থেকে পাওয়া প্রথম উপহার তার! ভালোবাসার আঘাত।মুচকি হেসে সে রুম থেকে বের হলো।
ড্রয়িং রুমে চোখ পরতে নির্ঝরের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। তরী এখনো ফ্রেশ হয়নি। অথচ সে বেশ কয়েকবার তাকে ড্রয়িং রুমের সাথের লাগোয়া ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে বলেছে।অপরিষ্কার জিনিস যেমন তার পছন্দ নয়, তেমনি অপরিষ্কার মানুষও! কিন্তু তার অবচেতন মন কু ডাক গাইছে। বার বার বলছে, এতগুলো বছর ধরে যে মেয়েটা তার রাত জাগার একমাত্র কারণ, তার একলা রাজ্যের একমাত্র রাণী, তার কল্পনার শহরের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা এই মেয়েটি কিছুটা অপরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে।
সে এগিয়ে গিয়ে তরীর পেছনে দাঁড়াল। তরী তার দিকে পিঠ রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। আসার পথে নির্ঝর কয়েক ব্যাগ খাবার কিনে নিয়ে এসেছিল। সে তরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘তুমি এখনো শাওয়ার নাওনি?’
তরীর হাত থেমে গেল। এক পলক নির্ঝরের দিকে চেয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। এক লোকমা বিরিয়ানি মুখে পুড়ে মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল। অর্থাৎ সে শাওয়ার নেয়নি!
নির্ঝর চেয়ার টেনে তার পাশে বসে বলল,
‘কেন? এত ঘন্টার জার্নি শেষে শাওয়ার নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে না? আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে গলা পর্যন্ত পানি দিয়ে ভেজালাম আর তুমি?’
তরী চোখ উল্টে একবার নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝরকে ভোরের শিশিরভেজা ঘাসের মতো স্নিগ্ধ লাগছে।ঝকঝকে, তকতকে! ইতোমধ্যে সে ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে। পরণে সাদা কালোর কম্বিনেশনের ট্রাউজার আর ফুলস্লিভ ব্ল্যাক টিশার্ট। সে চোখ সরিয়ে মুখের খাবার টুকু গিলে ফেলল। আহ! যা ক্ষুধা লেগেছিল না! তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল,
‘বাবা-মা ফোন দিচ্ছে না কেন? মানে আমান বাবা-মা, ফুপি এরা তো কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। আপনার মুখের কথা সবাই বিশ্বাস করে নিল?’
নির্ঝর নিজের প্লেটে খাবার ঢেলে বলল,
‘ও নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। বড় মায়ের সাথে কথা বলে নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার রাতেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেজন্য সবাই
এত নিশ্চিন্তে রয়েছে!’
‘বুঝলাম।’
তরী প্লেটে হাত ধুয়ে কয়েক ঢোক পানি খেল। তারপর উঠে চেয়ার ছেড়ে কয়েক পা গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘন ঘন হাই তুলে বলল,
‘এ বাসায় তো অনেকগুলো রুম দেখছি। কোনটাতে আমি ঘুমাব? প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। রাতে এক ছটাক ঘুমাইনি।’
‘ইম্পসিবল! এখনি ঘুমাবে মানে? আমার, স্যরি আমার আর তোমার অর্থাৎ আমাদের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিবে। তারপর বিছানায় ঘুমিয়ে পরবে।’
‘আমি বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিবো। ‘
তরী এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না। ড্রয়িং রুমের লম্বা সোফায় পা ভাঁজ করে শুয়ে পড়লো। চোখ জোড়া বন্ধ করতে হাতে হ্যাচকা টান অনুভব করলো। কপাল কুঁচকে তাকাতে নির্ঝর তাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিল।সে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলল,
‘আপনি একটা ছাগল!মানসিক ছাগল। ছাড়ুন আমায়! নিচে নামান।’
নির্ঝর কোনো বাক্যব্যয় করলো না। নির্বিকার হেঁটে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। শাওয়ারের নিচে তরীকে দাঁড় করিয়ে বলল,
‘নো ছোড়াছুড়ি! আমার ফুটো মাথায় পানি গেলে কিন্তু আবার বিধবা হয়ে যাবে তুমি। একবার বিধবা হলে আমার মতো মহানুভবেরা বিয়ে করে। দ্বিতীয় বার বিধবা হলে কেউ বিয়ে করবে না।’
তরীকে এক হাতে চেপে ধরে শাওয়ার অন করলো সে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তরী আধভেজা হয়ে গেল। সে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘আপনি এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছেন না কেন?’
নির্ঝর শাওয়ার বন্ধ করে নিচু মাথা উঁচু করে তরীর মুখের দিকে তাকালো। তরী ভ্রু কুঁচকে তার দিকে চেয়ে আছে। চুল বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে।
ভেজা ঠোঁটযুগল তিরতির করে কাঁপছে। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে তরীর হাত ছেড়ে দিল। এক পা পিছিয়ে যেতে তার চোখ আটকে গেল তরীর উন্মুক্ত ঘাড়ে! যেখানে আঙুলের নখের আঁচড়। অনেকটা গভীর!
নির্ঝর কপালের খাদ গভীর করে কিছু একটা চিন্তা করলো। পরক্ষণে মুখে এসে ভর করলো চিন্তার ছাপ। গতকালের কথা স্মরণ হলো তার। তরীর ঘাড়ের আঁচড়ের দাগগুলো তো তার সৃষ্ট। মনে মনে নিজেকে গালিগালাজ করলো সে। ভেতরে সৃষ্ট অপরাধবোধ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কিনা জানা নেই তার! সে অতি আশ্চর্য একটা কাজ করে বসলো। আচমকা এগিয়ে গিয়ে তরীকে দু হাতে জড়িয়ে ঘাড়ের ক্ষতের উপর ঘনঘন কতগুলো চুমু খেল। ব্যাপারটা ঘটলো কয়েক সেকেন্ডে। সংবিৎ ফিরে পেতে সে ঝড়ের গতিতে তরীকে ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেল।
(চলবে)…….