শ্রেয়সী #লেখাঃKhyrunNesa Ripa #পর্বঃ২০

0
395

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrunNesa Ripa
#পর্বঃ২০

নতুন বউয়ের আগমনে শিশিরদের বাড়ি পুরো হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো। রিদির তো খুশির অন্ত নেই নতুন ভাবি এসেছে বলে কথা। পাড়া-প্রতিবেশিরা সবাই একে একে এসে দেখে যাচ্ছে। সবাই নতুন বউয়ের সুন্দরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একে তো প্রচণ্ড রকম গরম তারউপর এত মানুষের সমাগম সব মিলিয়ে মাথাটা পুরো ছিঁড়ে যাচ্ছে বিন্দুর। গা গুলোচ্ছে খুব। বমি বমিও পাচ্ছে। কিন্তু কাউকে যে বলবে সেই রকম কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না। আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। বিধু যদি সঙ্গে আসতো অনায়াসেই নিজের সমস্যার কথা বিধুকে বলতে পারতো। কিন্তু এত বড় মেয়েকে বিয়ে বাড়িতে দিতে রাজি হলেন না সাহেদ আলী। চোখ-মুখ ছোট করে বসে আছে মাঝখানের ঘরের খাটের ওপর। সবাই আসছে দেখছে কেউ কেউ আবার মন্তব্যও করছে। কেউ কেউ আবার চিকন বলেও কথা শুনাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কারো কথাই গায়ে লাগছে না বিন্দুর। এখন শুধু একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মনটা অস্থির অস্থির করছে। শিশির বন্ধুদেরকে বিদায় দিয়েই রিদিকে ডাকলো।
–হ্যাঁ ভাইয়া, বল।”
–বিন্দুর মনে হয় অস্বস্তি হচ্ছে। ওকে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যা।”
–উঁহু তা হচ্ছে না। বাসর ঘরটা কাঁচা ফুল দিয়ে সাজিয়েছি আগে টাকা দিবা তারপর তোমার বউ রুমে জায়গা পাবে তার আগে নয়।”
শিশির পাঞ্জাবির পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে সেখান থেকে পাঁচটা পাঁচ হাজার টাকার নোট বের করে রিদির হাতে দিয়ে বললো,
–এবার তো খুশি?”
–হু।”
–তাহলে বিন্দুকে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যা। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। আর শোন ওকে রুমে দিয়ে কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস দুধ গরম করে দিয়ে দিস।”
–বাব্বাহ ভাইয়া তুই এত বউ পাগলা।”
–চুপ বেশি পেকেছিস তাড়াতাড়ি যা।”
কথা শেষ করেই খাটের মাঝখানে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা বিন্দুর দিকে এক পলক তাকাতেই বুঝে ফেললো বিন্দুর খুব কষ্ট হচ্ছে।
রিদি এসে শিশিরের রুমে নিয়ে গেল বিন্দুকে। বিন্দু এক পলক রুমের চারদিকে চোখটা বুলিয়ে নিলো। রুমের ভেতর একটা খাট বাহারি ফুলে সাজানো। সবগুলো ফুল কাঁচা। তার মধ্যে বেশির ভাগই লাল গোলাপ। বিন্দুর লালা গোলাপ খুবই পছন্দের। খাটের মাঝ বরাবর একটা জানালাও আছে যেটা ফুলের কারণে চোখে পরছে না। খাটের পাশে একটা ছোট্ট টেবিল সেখানে একটা ল্যাম্পসেট। খাটের উত্তর পাশে একটা আলমারী আর দক্ষিণ দিকে একটা দরজা মনে হয় ব্যালকনির দরজা। এছাড়া একটা টেবিল রয়েছে এক পাশে যার ওপর একটা ল্যাপটপ রাখা। আরও একটা দরজা দেখা যাচ্ছে রুমের মধ্যে সেটা নিশ্চই ওয়াশরুম হবে। তবুও বিন্দু একরকম অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো ওয়াশরুম কোথায়? রিদি ওয়াশরুম দেখিয়ে দিতেই দৌঁড়ে গিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। বমি করার শব্দ পেতেই রিদি গিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো। বিন্দু চোখে-মুখে পানির ছিটা দিয়ে বেরিয়ে আসলো।
–তোমার এত খারাপ লাগছিল বলোনি কেন? আমাকে বললেই তো হতো। ভাগ্যিস ভাইয়া খেয়াল করেছে নয়তো তো বুঝতেই পারতাম না।”
–রিদি শাড়িটা চেঞ্জ করতে হবে একটা থ্রি-পিচ বের করে দাও কষ্ট করে খুব মাথাব্যথা করছে আমার।”
রিদি লাগেজ থেকে একটা সুতির ছাই রঙা থ্রি-পিচ বের করে দিতেই বিন্দু ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। শাড়িটা তাড়াতাড়ি খুলে নিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো। কিন্তু মাথাব্যথা কোনোভাবেই কমার নাম নিচ্ছে না।
–মাশআল্লাহ ভাবি তোমাকে তো থ্রি-পিচটায় খুব মানিয়েছে।”
বিন্দু একটু ম্লান হেসে বললো,
–এত বাড়িয়ে বলো না। আমি মোটেও সুন্দর না।”
–হুম তুমি সুন্দর না হলে কী আমার ভাইটা এত পাগল হয়েছে তোমার জন্য?”
হঠাৎ করেই শিহাবের কথা মনে হতেই বুকটা খালি খালি লাগতে শুরু করলো। নিজের কষ্টের মাঝে থাকার কারণে শিহাবকে কিছুক্ষণের জন্য এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল সে। এতটা স্বার্থপর কী করে সে হতে পারলো। নিজের মনকে নিজেই ধিক্কার জানালো বিন্দু। শিহাবের কথা মনে পড়তেই চোখে পানি চলে আসলো। কোনোরকমে চোখের পানি আড়াল করলো ।
–ভাবি তুমি বসো আমি আসছি।”

রিদি বেরিয়ে যেতেই শিশির রুমে ঢুকলো। পাঞ্জাবিটা খুলে আলমারীর মধ্যে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রেখেই এসে বিন্দুর পাশে বসলো। বিন্দু সাজানো খাটের পাশেই পা দুলিয়ে বসে ছিল তার পাশেই শিশির বসলো। সুক্ষ্ম গলায় বললো,
–এখন কেমন লাগছে?”
–ভালো।”
–মাথাব্যথা করছে? ”
–জানি না।”
শিশির আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই ওয়াশরুমে চলে গেল। হাত মুখ ধুয়ে এসে একটা টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো। পাঞ্জাবির পাজামা খুলে লুঙ্গি পরে নিলো। সবসময় লুঙ্গি পরেই ঘুমাতে অভ্যস্ত শিশির। প্যান্ট পরে কখনোই ঘুমাতে পারে না। এর মধ্যেই রিদি দুধের গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকলো। খাটের পাশের ছোট টেবিলটার ওপর গ্লাসটা রেখে বিন্দুর উদ্দেশ্যে বললো,
–ভাবি দুধটুকু খেয়ে নাও।”
–আবার এসব আনতে গেলে কেন?”
–বমি করে সব ফেলে দিয়েছো। না খেয়ে থাকবে নাকি?”
রিদির কথা শুনেই শিশির জিজ্ঞেস করলো,
–বিন্দু বমি করেছে?”
–হু। রুমে আসা মাত্রই বমি করেছে। ভাবির নাকি খুব মাথা ব্যথা করছে।”
–তুই ভাত নিয়ে আয়।”
বিন্দু উত্তেজিত হয়ে বললো,
–প্লজি না। এখন একদম খেতে পারবো না।”
শিশির আর জোর করলো না। রিদি চলে যেতেই দরজা লক করে দিলো শিশির। বিন্দুর দিকে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
–চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও।”
–উফ একদম জোর করবেন না তো। আমার ভাল্লাগে না ”
–না ভাল্লাগলেও খেতে হবে।”
–প্লিজ। ”
–উঁহু লাভ হবে না ”
কথাটা শেষ করেই বিন্দুর মুখটা ধরে নিজের হাতে দুধটুকু খাইয়ে দিলো।
–এবার চুপচাপ শুয়ে পরো।”
–আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”
–খাটে। কেন?”
–নাহ্ এমনি।”
কথাটা বললেও বিন্দুর মুখটা যে মলিন হয়ে গেছে কথাটা শুনে সেটা শিশিরের চোখ এড়ালো না।
–এই ফুলগুলো…!
–খুব অসহ্য লাগছে তোমার?”
বিন্দু মাথাকে দু’দিকে নাড়িয়ে না বললো।
–তাহলে থাকুক। বেশ ভালোই লাগছে। কাঁচাফুলের মাঝে রাত্রি-যাপন।”
বিন্দু কিছু না বলেই চুপচাপ শুয়ে পরলো। শিশির লাইট অফ করে ডিম লাইট দিয়ে ফ্যানের ভোল্টেজ বাড়িয়ে চুপচাপ বিন্দুর পাশে শুয়ে পরলো। দু’জনের মাঝে এক হাত দূরত্ব। কিন্তু মনের দূরুত্ব যে আরও বেশি। শিশিরের চোখে ঘুম আসছে না শুধু চিন্তারা এসে ভিড় জমাচ্ছে। সবসময় কী পারবে বিন্দুকে সাপোর্ট দিতে, কখনো আবার বিন্দুকে কষ্ট দিয়ে ফেলবে না তো সব কিছু মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া কী আধেও সম্ভব? ভাবনার মাঝেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো শিশিরের। ফোন হাতে নিয়েই দেখলো সাজেদা বেগমের ফোন নাম্বার। শিশির কল কেটে দিয়ে নিজেই ব্যাক করলো।
–আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই।”
–ওয়ালাইকুম সালাম শ্যালিকা।”
–আপু কোথায়?”
–এই তো শুয়ে আছে। কথা বলবে?”
–মা একটু কথা বলবে।”
শিশির বিন্দুর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো। সাজেদা বেগমের সাথে কথা শেষ করেই বিন্দু ফোনটা শিশিরের দিকে এগিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর বিন্দু কথা বললো,
–ঘুমিয়েছেন?”
–উঁহু।”
–কিছু কথা ছিল।”
–বলো?”
–আপনার আমার পাশে ঘুমাতে ঘৃণা করছে না?”
শিশির বিন্দুর কথা শুনেই এক চোখ ছোট করে বিন্দুর দিকে তাকালো বিন্দু সোজা হয়েই শুয়ে ছিল।
–ঘৃণার কী আছে?”
–অনেক কিছু আছে। আমি একটা অপবিত্র মেয়ে। এর থেকে আর কী বড় কোনো কারণ লাগে ঘৃণা করার জন্য?”
–ফালতু কথা না বলে ঘুমাও।”
–আজকে তো বলুন তাহলে কেন আমায় বিয়ে করেছেন?”
–ভালো মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরো। আর কোন কথা নয়।”
বিন্দু রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
–এড়িয়ে যাচ্ছেন?”
–তোমাকে এড়ানোর মতো কিছু নেই বিন্দু। এখন আমার সবই তোমার। আর আমার কোনো কিছুই তোমার অজানা থাকবে না। সত্য তো বেশিদিন চাপা থাকে না।”
–তাহলে নিশ্চয়ই করুণা করেছেন।”
–করুণারর সাথে পরিচিত আমি নই।”
–তাহলে কেন?”
–তোমার শরীরটা ভালো নেই। ঘুমিয়ে পরো।”
–এত কেয়ার,সম্মান আধেও কী আমি ডিজার্ভ করি?”
–এত কথা বলছো কেন? পাপ তো সবাই করে। আমিও কী পাপী নই?”
–উঁহু আপনি পাপী হতে পারেন না।”
–কেন? আমি কী মহামানব?”
–উঁহু তার থেকেও উর্ধ্বে। ”
শিশির একটু জোরেই হেসে ফেললো।
–হাসছেন যে? রসিকতা মনে হচ্ছে তাই না?”
–নাহ্। এমন কথা কেউ কখনো বলেনি। তাই।”
–হয়তো আপনার গুণগুলো তাদের চোখে পরেনি।”
–তোমারও তো কত গুণ আছে সেগুলোও তো তোমার চোখে পরে না। তাহলে?”
–আমার গুণের থেকে দোষটাই যে বেশি।”
–তাহলে নিজেকে শুধরে নাও। যেটা তোনার কাছে ফল্ট মনে হয় সেটাকে শুধরে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাও।”
–থাকতে পারবেন সবসময় আমার পাশে?”
–না পরলে তো আর হাতটা ধরতে চাইতাম না।”
কথা বলেই অপরপাশ ফিরে শুয়ে পরলো শিশির। কিন্তু বিন্দু কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। শিহাবের সাথে কাটানো সুখের মুহূর্তগুলো মনে পরতেই কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথা ব্যথাটাও দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। শিশির ওপাশ থেকেই বিন্দুর মৃদু আর্তনাদ শুনতে পেলো। পাশ ফিরেই দেখলো বিন্দুর চোখ দিয়ে মৃদু গতিতে জল গড়িয়ে পরছে। নিজের দু’হাত দিয়ে মাথার চুল টানছে।
–বিন্দু মাথাব্যথা করছে?”
বিন্দু কাঁদো কাঁদো গলায় জবাব দিলো,
–হু।”
শিশির নিজের বালিশটা আরও একটু এগিয়ে নিয়ে গেল নিজের হাতের আঙুল চালিয়ে দিলো বিন্দুর চুলের ভাজে। বিন্দু সরে যেতে নিলেই শিশির আরও এক হাত দিয়ে ঝাপটে ধরলো বিন্দুকে। বাঁধা দিতে গিয়েও বিন্দু চুপ করে থাকলো৷ এখন একদম জোড়াজুড়ি করতে ভালো লাগছে না। শরীর আর মন এখন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলো। শিশির আলতো হাতে বিন্দুর মাথার চুলগুলো টেনে দিতে লাগলো। বেশ আরাম পাচ্ছে বিন্দু। মুহূর্তেই চোখ জোড়াতে ঘুম নেমে এলো। শিশিরের আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে আরও একটু এগিয়ে গেল বিন্দুর দিকে। একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। চারদিকে গোলাপ ফুলে সুসজ্জিত আর খাটের ওপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। সেই পাঁপড়ি মাঝেই আরও একটু ফুল নিস্পাপ শুয়ে আছে। বেশ ভাল্লাগছে শিশিরের ঘুমন্ত এই ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে । কিছুক্ষণ পর আলতো করে বিন্দুর কপালে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিলো শিশির। যেই ছোঁয়াতে নেই কোন পাপ, নেই কোনো অবৈধতা৷ এই ছোঁয়ার মাঝে রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট পূর্ণতা আর বৈধতা। শিশির খেয়াল করলো বিন্দু ওড়নাটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তাই ওড়নাটা আস্তে করে ছাড়িয়ে পাশে রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর বিন্দু নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরলো শিশিরকে। মুখ গুঁজলো শিশিরের বুকে। অস্পষ্ট স্বরে বললো,
–প্লিজ শিহাব কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না তাহলে আমি মরে যাব।”
শিশির একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো বিন্দুকে। মনে মনে বললো,
–কখনো তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দেব না।”

গল্প গল্পর করে মাথা খারাপ করতে পারে। অথচ কোনো সাড়া পাই না। তখন মেজাজটা গরম লাগে😒😒😒

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here