#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০
আকাশে সূর্য আর দেখা যাচ্ছে না। আবারও প্রকৃতি নিজেকে ঢেকে ফেলছে অন্ধকারের মাধ্যমে। আশেপাশে ঘন জঙ্গল থাকায় শোনা যাচ্ছে পেঁচার ডাক। নামাজ পড়ে থুঁতনিতে হাত দিয়ে জানালার পাশে বসে আছে মাধুর্য। তার মুক্ত ঝরা হাসি নেই। তার একটি বিশেষ কারণ আছে। তা হলো অনুভব। মানুষটা তাকে কখনোই শান্তি দেয় না। আজ সারাদিনের জন্য একবারও দেখা হয়নি তার মাধুর্যের সঙ্গে। যা ফলে সব কিছুই পানসে লাগছে মাধুর্যের। নিজে নিজেই মাধুর্য অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে….
–“আচ্ছা! অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ বুঝলাম। অন্তত কল করলে নিশ্চয় জাত যেত না। আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি সেটার খবর তো নিতে পারত!”
কথাটা শেষ হতে না হতেই টংটং করে ঘড়ির ঘন্টা বাজে। ঘড়ির ছোট কাটা সাত-এ ঠেকেছে। ঘড়ির ঘন্টার আওয়াজ ভূতূড়ে! প্রথম যেদিন আওয়াজ বেজেছিল সেদিন একপ্রকার চমকে উঠেছিল মাধুর্য।
সে যাই হোক, আজ মাধুর্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনুভবকে তার মনের কথা জানাবে। মানুষটাকে ছাড়া তার পুরো জীবন যেন রঙহীন! এই রঙহীন জীবন নিয়ে বাঁচা সম্ভব নয়। জীবনে রঙ নিয়ে আসতেও তার অনুভবকে চাই। মাধুর্য এটাও ভাবল, নিজের মনের কথা জানাবার সঙ্গে অনুভবকে কয়েকটা ঝাড়িও দিয়ে দেবে মনমতো। লোকটা তাকে ভালোবাসে অথচ পুরুষ হয়েও মনের কথা জানাতে পারছে না? ভারি অদ্ভুত! বিরবির করতে করতে কোল থেকে বালিশ নামিয়ে উঠে পড়ে মাধুর্য। চোখমুখে পানির ঝাপ্টা লাগিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুছতেই অনুভবের দেওয়া শপিং ব্যাগটা তার চোখে পড়ে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে একটা বেগুনি রঙের গাউন আবিষ্কার করে মাধুর্য। হতভম্ব হয়ে যায় সে কিছুক্ষণের জন্য। ব্যাগটা উপুড় করতেই ব্যাগ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে একটা ছোট কাগজ। তা হাতে নিয়ে কাজের ভাঁজ খুলে ছোট ছোট গোছানো লিখা চোখে ভেসে ওঠে মাধুর্যের। মুগ্ধ হয়ে পড়তে থাকে লিখাগুলো।
‘পছন্দের ব্যাপার স্যাপারে আমি অতি দুর্বল। তাই যা পেরেছি পছন্দ করেছি তোমার জন্য। জানি না নীল রঙের ছোঁয়াতে তোমায় কেমন লাগবে! তবে কল্পনা করে দেখলাম ইউ লুকিং গর্জিয়াস। পার্টিতে ড্রেস টা পড়লে আমার ভালো লাগবে। জীবনে বোধহয় একটা পছন্দই সবথেকে বেস্ট। তা হলো মাধুর্য চৌধুরী।’
মাধুর্যের মনে মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়। হাসিও পায় আবার শিহরণে শরীর কেঁপেও ওঠে শেষ কথা শুনে। মুখে হাত দিয়ে হেঁসে বলে….
–“নীল রঙ? আমি বোধহয় আসলেই একজন পাগলকে ভালোবেসেছি। যে কি না ঠিকঠাক রঙও চিনে না।”
অন্য হাতে বেগুনি রঙের গাউনটা নেয় সে। উল্টেপাল্টে বলে….
–“বেগুনি রঙ কে নীল রঙ বানিয়েছেন উনি। কি অদ্ভুত! শুনেছি প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন পুরুষ রঙ চিনতে ভুল করে। আজকে প্রমাণ টুকুও পেলাম।”
আর কথা বাড়ায় না মাধুর্য। রেডি হতে শুরু করে নিজের মতো। গাউনটা গায়ে জড়িয়ে বাঁকা করে খোঁপা করে সে। খোঁপায় লাগিয়ে দেয় একটা কৃত্রিম বেগুনি রঙের ফুলের মালা। গলায় চিকন একটা স্টোনের হার পড়ে নেয়। বেগুনি রঙের ছোঁয়া বাড়িয়ে তোলে মাধুর্যের মাধুরি। রেডি হয়ে একপলক নিজেকে দেখে নেয় সে। গলায় জড়িয়ে নেয় বেগুনি স্কার্ফ। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘটে এলিনার আগমন।
–“মাধুর্য, বাইরে একটা গাড়ি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। তুমি তৈরি হয়ে গিয়েছো?”
–“হ্যাঁ, আমি তৈরি।”
এলিনা আলতো হেসে মাধুর্যকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। আনমনেই বলে ফেলে….
–“প্রতিবারই সৃষ্টিকর্তা তোমাকে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দান করেন।”
প্রথমে বুঝতে না পারলেও কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সংকোচ নিয়ে তাকায় মাধুর্য।
–“প্রতিবারই মানে?”
নিজের ওপরই হতভম্ব হয়ে বিষম খায় এলিনা। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবতে থাকে কোন বাহানা দেওয়া যায়। তখনই বেজে ওঠে গাড়ির হর্ন। বিষয়টা চেপে যাওয়ার জন্য এলিনা দ্রুততার সঙ্গে বলে ওঠে….
–“দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি এসো নয়ত অনুভব রাগ করবে।”
এলিনা যেন চোরের মতো পালিয়ে যায়। থম মেরে কয়েক সেকেন্ড সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে মাধুর্য। অতঃপর হাঁটা দেয় বাহিরের দিকে।
আজকের পার্টি রাখার কারণ একমাত্র কারণ হলো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য আগের মতো ফিরে পেয়েছে সবাই। কাল থেকে শুরু হবে সব ভ্যাম্পায়ারের নিজের রাজ্যে জীবনযাপন। তবে বাকিদের কাছে পার্টির কারণ হচ্ছে, তারা কোম্পানির বড় ডিল পেয়েছে। প্রলয় সিনহা আজ বেশ খুশি। সব আগের মতো লাগছে উনার। আজকের পার্টি রাখার আরেকটি গোপন কারণ রয়েছে। যা শুধু প্রলয় সিনহা এবং তার ছোট ভাইসহ ছোট ভাইয়ের বউ জানে। কারণটা কিছুক্ষণের মাঝেই প্রকাশিত হবে। আশেপাশে হালকা লাইটে সবাই নিজে নিজেদের মতো ব্যস্ত। পার্টিটা সিনহা বাড়ির টেরিসে আয়োজন করা হয়েছে। একপাশ থেকে লো মিউজিক ভেসে আসছে যা পরিবেশটাকে রোমাঞ্চকর করতে বাধ্য। ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে আশেপাশে ঘুরে ঘুরে অনুভবকে খুঁজতে থাকেন প্রলয়। ঘড়িতে সময় দেখেন উনি। প্রলয়ের একটা ছেলে থাকলেও তার বয়স আন্দাজ করা বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। কারণ ভ্যাম্পায়ারদের বয়সের সঙ্গে চেহারায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না সহজে। তবুও বয়স্ক দেখাতে মোটা ফেমের চশমা পড়ে ঘোরেন উনি।
–“ছেলেটা তো এতো দেরি করে না। আজকে হঠাৎ কি হলো?”
বিরবির করে বলে ওঠেন প্রলয়। সামনে রায়মা কে দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে বলেন….
–“রায়মা, অনুভবের ঘরে গিয়েছিলে? ও রেডি হয়নি?”
–“আমি তো ওর ঘরের সামনে গেছিলাম প্রলয় ভাই। ছেলেটাকে তো চেনেন। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। একবার ডেকেছিলাম। ও বলল রেডি হয়ে নিচে আসছে।”
প্রলয় ছোট্ট করে “ওহ” বলে সরে আসেন। একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মূহুর্তেই। ক্লায়েন্ট প্রশ্ন করে ওঠেন…
–“হোয়ার ইজ ইউর সন মি. সিনহা?”
প্রলয় কিছু একটা উত্তর দেওয়া আগে অনুভবকে উঠে আসতে দেখে ইশারা করে বলেন….
–“দেয়ার হি ইজ…!!”
–“ওহ হো! দিস হ্যান্ডসাম গাই। লাইক ইউ।”
প্রলয় শব্দ করে হাসেন।
মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পার্টিতে এসে উপস্থিত হয় অনুভব। নিজের কোটের হাতা ঠিক করতে করতে তার পকেটে হাত দেয়। পকেট থেকে একটা চিকন এবং চকচকে সুন্দর রিং বের করে অনুভব। মুখে স্নিদ্ধমাখা হাসি ফুটে ওঠে ওর। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আজকে মাধুর্যকে নিজের মনের কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। সেই সঙ্গে করছে তার ভয়। এতোদিন ভয়ের মুখোমুখি না হলেও হুট করেই ভয় করছে তার। এরপর যদি একবারের জন্যও মাধুর্যের আগের কথা মনে পড়ে যায় তবে সবটা শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যাবে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রিং টা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে আসে মানুষের ভীড়ের দিকে।
দাঁড়িয়ে এক কোণায় কথা বলতে মগ্ন হয়ে পড়ে একটি মানুষের সঙ্গে। বেশ কিছুক্ষণ হেসে হেসে কথা বলার পর ওর চোখ যায় একজোড়া পায়ের ওপর। এগিয়ে আসছে সেই পা-জোড়া। চোখ ওপরে তুলতেই হৃৎস্পন্দনের গতি দশগুণ বেড়ে যায়। চোখে আঁটকে যায় তার প্রেয়সী। কোনোরকমে বলে ওঠে….
–“এক্সকিউজ মি!”
তার সামনে থাকা ব্যক্তিটির থেকে চলে আসে অনুভব। একটু একটু করে অনুভব ও মাধুর্য দুজনেই এগিয়ে আসে। একসময় থেমে যায় মাধুর্য। অনুভব অনেকটা কাছে চলে আসে।
চোখ নামিয়ে রেখেছে মাধুর্য। অনুভব অস্ফুটস্বরে বলে….
–“বিউটিফুল।”
মাধুর্য লাজুক হাসি হাসে মাথা নিচু করে। হাসি বজায় রেখেই বলে….
–“কিন্তু, এটা নীল নয় বেগুনি রঙ। এতো বড় হয়েছেন তাও রঙ চিনতে শিখেন নি?”
–“একসময় জীবনের সব রঙ হারিয়ে গিয়েছিল তো তাই কোনটা কোন রঙ ভুলেই গিয়েছি বোধহয়। নো প্রবলেম, তুমি এসেছো তো। সব রঙ চিনতে শেখাবে।”
প্রথম কথাগুলো রহস্যময় লাগলেও শেষ কথাটুকুতে নেচে ওঠে মাধুর্যের মন। চোখ তুলে অনুভবের দিকে তাকায় সে। নীল চোখজোড়ার এই অদ্ভুত চাহনি যেন তাকেই নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে। মূহুর্তেই নামিয়ে নেয় চোখ। বলতে সাহস পায় না নিজের মনের কথা। কতক্ষণ চাপা রাখতে পারবে তা জানা নেই মাধুর্যের। এভাবে অনুভবের সামনে থাকতে পারছে না সে। হৃদপিণ্ডের ধুকপুক আওয়াজটা বেরেই চলেছে। তাই আস্তে আস্তে পেছন মুড়ে এলিনাকে খুঁজতে লাগে তার দুই চোখ। আসার সঙ্গে সঙ্গে কোথায় হারিয়ে গেল মেয়েটা?
এলিনাকে না দেখতে পেয়ে ধীর গতিতে হাঁটতে শুরু করে মাধুর্য দুই হাতে গাউন ধরে। ও খেয়াল করে অনুভবও তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে। ইশশ…যার থেকে সে পালাতে চাইছে সেই মানুষটাই যদি পেছনে থাকে তবে তো পালিয়ে লাভ নেই। ভ্রু কুঁচকে বলে….
–“আমার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছেন কেন?”
–“নয়ত তুমিই বিপদে পড়বে।”
–“আমি?” (ঘাড় ঘুড়িয়ে)
অনুভব মাথা নাড়িয়ে হালকা নিচু হয়ে বলে….
–“ইয়েস তুমি। জানো তো, প্রথম দিন তোমাকে ঠিকই ধরেছিলাম। তুমি প্রচন্ড খামখেয়ালি।”
চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাধুর্য। লোকটা তাকে আবারও অপমান করতে চাইছে। মুখ বেলুনের মতো ফুলিয়ে বলে…..
–“দেখুন আপনি কিন্তু…. ”
–“ড্রেস টা যে পড়েছেন তা ভালোভাবে পড়তে পারতেন তো। আপনার পিঠের একটু ওপরে যেই ড্রেসের ফিতা সেটা বাঁধতে ভুলে গেছেন।”
মাধুর্যের কথা থেমে যায়। রেগেমেগে বলে….
–“কি সব আজেবাজে কথা!”
গটগট করে হাঁটতে শুরু করে মাধুর্য। তবুও পিছু ছাড়ে না অনুভব। হাঁটতে হাঁটতে স্বাভাবিক হয়েই বলে….
–“আপনার পিঠের ওপরে তিলটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে মিস. মাধুর্য।”
ঢক গিলে থেমে যায় মাধুর্য। লজ্জায় কাঁপুনি দিয়ে ওঠে সে। আশেপাশে লুকানোর মতো জায়গা না দেখে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় অনুভবের দিকে। অনুভব ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। এখানে চেনাজানা বলতে এলিনা ছাড়া তেমন কেউ নেই। আর যারা আছে সবাই তাদের অফিসের। এলিনাও যে কোন ভীড়ের অতলে তলিয়ে গেছে কে জানে! এমন সময় অনুভব কানে ফিসফিস করে বলে….
–“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি তোমার হেল্প করতে পারি।”
সঙ্গে সঙ্গে মাধুর্য এমন ভাবে তাকায় যেন অনুভব বিশাল বড় অপরাধ করে ফেলেছে। অনুভব চোখ বড় বড় করে বলে….
–“এই না না। আমি ভালো ছেলে। এখন তুমি তাহলে কাকে খুঁজে নেবে নাও।”
বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে যেতে নেয় অনুভব। মাধুর্য তাড়াতাড়ি ওর হাত দিয়ে অনুভবের হাত ধরে। অনুভব জানতো এমনটাই হবে।
–“আমাকে হেল্প করুন না প্লিজ!”
অনুভব আশেপাশে তাকায়। তারপর আঙ্গুল দিয়ে নিজের দিকে তাক করে বলে….
–“কে আমি?”
মাধুর্য ঠোঁট উল্টে মাথা দুলায়।
অনুভব কিছুক্ষণ মাধুর্যের অসহায় চেহারা উপভোগ করতে থাকে। তারপর হো হো করে হেসে দেয়। বোকা বনে যায় মাধুর্য। কোনোমতে অনুভব হাসি থামিয়ে বলে….
–“ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমিও ওতো টাও খারাপ নই। আমি এলিনাকে ডেকে আনছি।”
অনুভবের হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে মাধুর্য। সরু ঠোঁটে বলে ওঠে…..
–“আপনি যাবেন না। চুল খোলা নেই পেছনে। খোলা পিঠ…. ”
বাকিটুকু বলতে পারে না মাধুর্য। সে এলিনাকে ফোন করেও পায় না। অনুভব উপায় না পেয়ে মাধুর্যকে তার ঘরে নিয়ে আসে। তাকে থাকতে বলে অনুভব।
–“আমি এলিনাকে ডেকে নিয়ে আসছি।”
–“তাড়াতাড়ি আসবেন।”
অনুভব ঠাস করে চোখ টিপ দিয়ে বলে….
–“এই গেলাম আর এই এলাম।”
সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে হাওয়া হয়ে যায় অনুভব।
মিনিট পাঁচেক পর দেখা মিলে তার। সঙ্গে এলিনাও আছে। এলিনাকে ভেতরে ঢুকতে ইশারা করে অনুভব বলে….
–“ওর তোমাকে দরকার। যাও। ফাস্ট।”
এলিনা বাধ্যমতো মাথা নাড়িয়ে ভেতরে ঢোকে। বাইরেই কাঁচের রেলিংয়ে ভর করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অনুভব। ও আজ সবার সামনে মাধুর্যকে ভালোবাসার কথা বলতে চায়। সবাই জানবে সে এখনো তার প্রেয়সীকে ভালোবাসে। চিনতে পেরে গেছে তার ভাবনাকে। চেহারা বদলে তার কিছু যায় আসেনি। ভালোবাসার অনুভূতি তাকে বলে দিয়েছে, সে-ই তার ভাবনা।
কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে আসে মাধুর্য। অনুভব কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। মাধুর্য মিষ্টি করে ডেকে ওঠে….
–“শুনছেন?”
নড়েচড়ে উঠে তাকায় অনুভব। মাধুর্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে….
–“কিছু বলার ছিল আপনাকে।”
অনুভবের উত্তরের আগেই ওরা শুনতে পায় অনুভবের নাম ধরে ডাকছে তার বাবা। ওপরে প্রলয় সিনহা মাইক নিয়ে অনুভবকে ডেকে চলেছেন। মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে অনুভব ভরাট গলায় বলে…
–“আগে ওপরে যাই? তারপর কথা বলি?”
মাধুর্য মাথা ঝাঁকায়। তারা দুজন ওপরে উঠে আসে।
–“আজকের দিনটা বিশেষ দিন। কারণ শুধু বড় ডিল পাওয়ার জন্য নয়। আরেকটা কারণও রয়েছে। যেটা আমি এখুনি বলতে চাই। অনুভব মাই সন! কাম হেয়ার।”
বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকে অনুভব। রায়মা এসে তার উদ্দেশ্যে বলে….
–“অনুভব বাবা! তোমার বাবা ডাকছে যাও।”
–“বাবা কেন হঠাৎ আমাকে ডাকছে মণিমা? কি এমন কারণ রয়েছে?”
রায়মা থতমত খায়। আসল কারণ জানতে পারলে অনুভবের রিয়েকশন কি হবে তা নিয়ে সেও চিন্তিত। হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে….
–“তা তো গেলেই জানতে পারবে।”
অনুভব এক পলক মাধুর্যের হাসিমাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রলয় সিনহার কাছে যায়। প্রলয় হেসে বলেন….
–“আমার একমাত্র ছেলে। অনুভব সিনহা। যার বিয়ে দিতে চলেছি খুব তাড়াতাড়ি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে আমরা মেয়েও ঠিক করে রেখেছি।”
সবাই খুশিতে হাত তালি দিতে শুরু করে। সেখানে উপস্থিত অনুভবের বন্ধুরা সিটি বাজাতে লাগে। আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে যেন। এই আনন্দ যেন একজনের জীবনে হয়ে আসে দুঃখ হিসেবে। মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায় মাধুর্যের। এলিনা এসে মাধুর্যের পাশে দাঁড়ায়। এলিনা নিজেও অবাক। অনুভব তাকে বলেছিল মাধুর্যের ব্যাপারে। মাধুর্যের চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। চোখে পানি টলটল করছে তার। বুকের মাঝে ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। যেই ঝড়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে মাধুর্যের মন। এলিনা তার কাঁধে হাত রাখতেই চোখের পানি লুকিয়ে ফেলে সে। হাসতে চাইছে মাধুর্য। কিন্তু হাসি আসছে না। চোখের সামনে অনুভবকে নিয়ে সাজানো স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
–“মাধুর্য, ঠিক আছো?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাধুর্য থেমে থেমে বলল….
–“এজন্যই বোধহয় বলে জানো তো? জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। ভেঙে গেলে খুব কষ্ট হয়।”
কষ্টে ভার হয়ে আসে মাধুর্যের নিশ্বাস। তাহলে কি ভুল ছিল অনুভবের সঙ্গে কাটানো মূহুর্তগুলো? এলোমেলো পায়ের ধাপ ফেলে আস্তেধীরে বেরিয়ে আসে মাধুর্য।
চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. প্রথমেই দুঃখিত। গতকাল গল্প দিতে পারিনি বলে। রোজা থাকার পর গতকাল একটু বেশিই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। সেই সঙ্গে ছিল মাথাব্যাথা। তাই গল্প দেওয়া হয়ে ওঠেনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করবেন না।