শেষটা_সুন্দর #অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম) #পর্ব____৩৪

0
421

#শেষটা_সুন্দর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব____৩৪

দু হাত কোলের উপর নিয়ে নির্ঝরের বাড়িয়ে রাখা গ্লাসে চুমুক দিল তরী। কয়েক চুমুক খেতেই কপাল কুঁচকে এলো তার। মুখ সরিয়ে সে বলল,

‘আর খাব না।’

নির্ঝর চোখ দিয়ে ইশারা করে আর একটু খেতে বলল। তরী পূর্বের ন্যায় মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাতে সে অনুরোধের স্বরে বলল,

‘আর একটু প্লিজ! এত অল্প নয়।’

‘না খাব না। আপনি কিছু খান তো। ওখান থেকে ড্রাই কিছু নিয়ে আসুন।’

‘আমার ক্ষুধা নেই।’

‘আপনি খাবেন কি না সেটা বলুন।’

তরীর কন্ঠের জোরের কাছে হার মেনে মৃদু হাসলো নির্ঝর। তরীর দিকে দৃষ্টি রেখেই তার আধ খাওয়া গ্লাসের জুসে চুমুক দিল। কয়েক চুমুকে শেষ করে গ্লাসটা নিচে নামিয়ে রাখলো। হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট মুছে বলল,

‘এবার খুশি?’

তরী দুষ্ট হেসে বলল,

‘উঁহু!’

‘মহারানীকে খুশি করার জন্য আর কি করতে হবে?’

‘যা বলবো তাই করবেন?’

‘কোনো সন্দেহ?’

তরী দুষ্ট একটা কথা বলতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিল। নির্ঝরের চোখ মুখ শুকনো। মাথার চুল উষ্কখুষ্ক। চোখের নিচে ছোপ ছোপ কালির রেখা, স্বচ্ছ চোখের মণি দুটো কেমন ঘোলাটে হয়ে গেছে। বুকের ভেতর পুড়ে উঠলো তার। নির্ঝরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ঠিক মতো ঘুমায় না। শরীরে বিশ্রামের অভাব। সে নরম হাতে নির্ঝরের হাত স্পর্শ করলো। কাতর স্বরে বলল,

‘আমরা বাসা থেকে কত দূরে আছি?’

‘বেশি দূরে নয়? কেন? কাউকে দেখবে? ডাকবো?’

‘না, না! বলছিলাম কি, আপনি বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম নিন।’

‘তোমাকে একা রেখে?’

‘একা কোথায়? কিছুক্ষণ পর বড় মা, মা সবাই এসে পড়বে তো। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে চলে আসবেন আবার।’

‘তোমার মনে হয় আমি তোমাকে এখানে রেখে বাসায় গিয়ে ঘুমাব? এতদিনে আমায় এই চিনলে?’

তরী হাল ছেড়ে দিল। নির্ঝর যে তাকে রেখে এক পা নড়বে না তা বুঝতে বাকি রইলো না। কিন্তু মানুষটা তো নিজেই অসুস্থ। এভাবে রাত জাগলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে অনুরোধ করে বলল,

‘আপনি একটু বিশ্রাম নিন প্লিজ। না হলে কিন্তু…… ‘

নির্ঝর তরীর কথা কানে তুলল না। মুখে আঙুল দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দিল। একটুপর নিজে ঘুরে তরীর পায়ের কাছে এলো। চাদর সরিয়ে সেলাই দেওয়া জায়গাটা পরখ করে বলল,

‘তরী তোমার নিজের বিশ্রামের প্রয়োজন। চুপচাপ শুয়ে পড়ো। আমি তোমার পাশে বসে দিব্যি বিশ্রাম নিতে পারবো।’

তরী পুনরায় মুখ খুললেও তাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না নির্ঝর। কাঁধ চেপে ধরে তাকে সাবধানে শুইয়ে দিল। মাথার চুলগুলো বালিশে রেখে বুক পর্যন্ত চাদর টেনে দিল। তরী তার মুখপানে তাকিয়ে রয়েছে। নির্ঝর মুচকি হেসে তার চোখে আঙুল স্পর্শ করে বন্ধ করে দিল। তরীর পাশে বসে পড়তে তরী তার হাতটা দু হাতের মুঠোয় পুড়ে নিল। পেটের উপর নিয়ে প্রশান্তিতে চোখ বুজলো।

_______________

মাঝরাতের দিকে তরী তলপেটে চাপ অনুভব করে। ঘন্টা খানেক সময় হলো সে জেগে রয়েছে। কিন্তু ঘুমানোর ভান ধরেছে যাতে নির্ঝর বা ফুপি কারো কষ্ট না হয়। ভেতরে ভেতরে কেমন অস্থিরতা অনুভব করছে সে। বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করছে। কিছুক্ষণ ইতিউতি করে অবশেষে চোখ খুলল। ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হবে। সে মাথাটা সাবধানে তুলে আধ শোয়া হয়ে বসে পড়লো। তার ডান পাশে ফ্লোরে নির্ঝরের জন্য বিছানা করা হয়েছে। সে সেখানেই হাত পা টান করে শুয়ে আছে। আগের থেকে একটু সুস্থ দেখাচ্ছে তাকে। তরী চোখ ঘুরিয়ে নিল।

তার বাম পাশে শিয়রের কাছে ফুপি টুলে বসে আছে। হালকা ঘুমে সে। মাথাটা এলিয়ে বিছানার উপর দিয়েছে। তরীর বড্ড মায়া হলো। সারা রাত এভাবে থেকেছে হয়তো। এতগুলো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য মনে মনে ভীষণ অনুতপ্ত হলো সে।

ফুপিকে পাশ কাটিয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ পা টা নিচে নামাল সে। সাহসে কুলচ্ছে না। এতখানি পথ হেঁটে ওয়াশরুমে যাবে কি করে? আবার নির্ঝর, ফুপি দু’জনে একটু ঘুমিয়েছে সবেমাত্র। সে তাদের কাঁচা ঘুম ভাঙাতে চাইছে না। ফুপির থেকে চোখ সরিয়ে সুস্থ পায়ে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই নির্ঝর এসে তাকে চেপে ধরলো। তরী ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিমূঢ় হয়ে গেল। হুশ ফিরতে চমকে বলল,

‘আপনি ঘুমাননি?’

নির্ঝর ঘুমজড়ানো কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,

‘আস্তে কথা বলো। বড় মায়ের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। উনার ঘুম যেন ভেঙে না যায়।’

‘হুঁ!’

তরী মাথা নেড়ে হুঁ বলতে নির্ঝর হঠাৎ চিবিয়ে চিবিয়ে ধমকের সুরে বলল,

‘তোমাকে না বলেছি কোনো প্রয়োজন হলে আমায় ডেকে দিবে? তাহলে একা একা কি করতে চাচ্ছিলে? এত অসুস্থ হয়েও শখ মেটেনি? আরো বেশি করে অসুস্থ হতে চাও? তোমার পায়ের টেনশনে আমার ঘুম উড়ে গেছে। আর তুমি এই পা নিয়ে হাঁটতে চাচ্ছো? তরী তো…..’

তরী তাকে আর বলতে দিল না। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল,

‘ওয়াশরুমে যাব আমি!’

বলেই তরী হাত সরিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করলো। নির্ঝরও কিছুটা লজ্জা পেল। মাথা চুলকে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ তাকালো। তারপর হুট করে তরীকে কোলে তুলে নিল। তরী চমকে গেলেও কোনো প্রতিত্তর করলো না। ঠোঁট চেপে হেসে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরলো।

ওয়াশরুম থেকে ফিরে বিছানায় শুয়েই তরী পানি চাইলো। নির্ঝর বোতলের ছিপি খুলে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। এক চুমুক খেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। ভেতরে কেমন হাঁসফাঁস লাগছে তার। গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। কিন্তু পানির তৃষ্ণা নয়। সে পুনরায় বোতল উঁচু করে ঢকঢক করে সম্পূর্ণ বোতল খালি করলো। নির্ঝর চিন্তিত মুখে বলল,

‘তরী তুমি ঠিক আছো? কোথাও কষ্ট হচ্ছে?’

তরী যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষা করছিল। সে বুকের কাছে নিজের হাত চেপে ধরে বলল,

‘আমার ভেতরে কেমন যেন করছে। হাঁসফাঁস লাগছে। খালি খালি লাগছে। বুকের ভেতর জ্বলে যাচ্ছে। কি যেন নাই নাই মনে হচ্ছে। কেমন পিপাসা লাগছে যা পানি খেলেও কমছে না। পাগল পাগল লাগছে আমার! পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি নির্ঝর।’

তরী যে প্রথমবারের মতো তাকে শুধু নির্ঝর বলে ডাকছে, তা এই মুহুর্তে নির্ঝরের কানে ঢুকলো না। সে অস্থির হয়ে তরীর নিকটে এলো। এক হাতে তার হাত চেপে ধরলো। আরেক হাত ক্রমাগত মাথায় বুলিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,

‘এমন কেন হচ্ছে? ডাক্তার ডাকবো তরী? দেখি আমার চোখের দিকে তাকাও। তরী একটু শুয়ে পড়ো। ঘুমানোর চেষ্টা করো৷ আমি মাথার চুল নেড়ে দিচ্ছি।’

তরীর মধ্যে ঘুমানোর কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। সে আরো বেশি করে উতলা হয়ে উঠলো। নির্ঝর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, ক্রমেই তরীর চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করছে। হাত দুটো শক্ত হয়ে আসছে। ছটফটানি বেড়ে যাচ্ছে। নির্ঝরের ভেতরটা ভেঙে চূড়ে যেতে লাগলো। সে জোরপূর্বক তরীর দু কাঁধ চেপে ধরে শুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। তাতে হিতে বিপরীত হলো। তরী এক ধাক্কায় তাকে সরিয়ে দিল।

তরীর ধাক্কাটা আচমকা হওয়ায় নির্ঝর ছিটকে পিছিয়ে গেল। একটা পা অসুস্থ হওয়ায় সে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেল। আঘাত পাওয়া পায়ের গোড়ালিতে পুনরায় ব্যথা পেয়ে অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠলো। তার সেই শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলো মমতাজ বেগম। চোখ খুলে দেখলো তরী বিছানায় বসে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে আছে। আর নির্ঝর পা চেপে ধরে ফ্লোরে পড়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড লাগলো নিজেকে ধাতস্থ করতে। তারপর দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নির্ঝরের টেনে তোলার চেষ্টা করলেন তিনি। নির্ঝর তড়িঘড়ি করে বলল,

‘বড় মা আমি ঠিক আছি। আপনি তরীকে সামলান। ও কেমন যেন করছে! আমি ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসি।’

মমতাজ বেগম দ্রুত তরীর কাছে এগিয়ে এলেন। তরী যেন হিতাহিত বোধ শূন্য হয়ে গেছে। নিজের মাথার চুল নিজে টানছে। হাতে আঁচড় দিচ্ছে। সে যেন অন্য ভুবনে আছে। চারপাশের কোনো কিছু, কোনো কথা তার কানে ঢুকছে না। মমতাজ বেগম তরীর হাত দুটো শক্ত হাতে চেপে ধরে তাকে সামলানোর চেষ্টা করলেন।

নির্ঝর বিছানা ধরে উঠে দাঁড়ালো। তরীর বর্তমান অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো মেয়েটার হাতের, গলার খামচির দাগগুলো তার নিজের সৃষ্ট। ভেতরে নতুন জ্বলুনি অনুভব করলো সে। তরীর এসব অবস্থা সে একেবারেই নিতে পারছে না। তরীর দিকে এক পা এগিয়ে থেমে গেল সে। তার প্রাণপ্রিয়ার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাকে সামলাতে হবে। সে দ্রুত ঘুরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো। উদ্দেশ্য সুব্রত কুমার বাবুর চেম্বার। অথবা নাইট ডিউটিরত যে কোন ডাক্তার।

ডাক্তার নিয়ে ফিরতে নির্ঝরের কিছুটা সময় লাগলো। ইমার্জেন্সি ডাক্তার অন্য রোগীর শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা দিচ্ছিল। নির্ঝর গিয়ে তাকে অনুরোধ করে তরীর রুমে নিয়ে আসলো৷ এসে দেখলো তরীর অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। তার ছটফটিানি ভাব দ্বিগুন বেড়ে গেছে। বড় মা তাকে সামলাতে পারছে না। তরীর এই উদ্ভ্রান্ত অবস্থা দেখে নির্ঝরের যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।

কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তার এক নজর দেখে সব বুঝলেন। নির্ঝরকে তাগাদা দিয়ে বললেন,

‘আপনি পুরুষ মানুষ। শক্ত করে চেপে ধরুন পেশেন্টকে। ইনজেকশন দিতে হবে।’

তরীর অবস্থা দেখে নির্ঝর নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। মহিলা ডাক্তারের কথা তার কানে ঢুকলো না যেন। তার সংবিৎ ফিরে মমতাজ বেগমের ডাকে। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তরীকে সামলানোর চেষ্টা করে।

তরীর গায়ে অসুরের শক্তি ভর করেছে। এই মুহুর্তে সে কাউকে চিনছে না৷ নির্ঝর তাকে জাপটে ধরতে সে নখের আঁচড় দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। নির্ঝর ছাড়লো না। তার বুকে পিঠে তরীর নখের খামচি গুলো বেড়ে যেতে সে এক হাতে তরীর হাত দুটো চেপে ধরলো। তরী এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নির্ঝরের হাত পুনরায় খামচে ধরলো। নির্ঝর দাঁত চেপে তার সব আঘাত সহ্য করে গেল।

ডাক্তার ইনজেকশন ঠিক করে তরীর বাম হাতে পুশ করলো। নির্ঝরকে বলল,

‘ছাড়বেন না এখনি। কয়েক মিনিট লাগবে ঘুমিয়ে পড়তে।’

বলে তিনি চলে গেলেন। মমতাজ বেগমের চোখে মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ। তাঁর হাত পা এখনো কাঁপছে ভয়ে। কয়েক মিনিট ধস্তাধস্তির পর তরীর শক্তি ফুরিয়ে এলো। নির্ঝরের বুকে গুটিশুটি হয়ে ঢলে পড়তে সে হাত ঢিলে করলো। দু হাতে আগলে নিয়ে সে সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিল। মমতাজ বেগম মাথার নিচে বালিশ দিয়ে গলা পর্যন্ত চাদর টেনে দিলেন। কুন্ঠিত হয়ে বললেন,

‘আমার মনে হয়, মাঝরাতে ওকে ড্রাগ দিতো। আজ দেওয়া হয়নি, সেজন্য এমন করছে। তুই একটু বিশ্রাম নে নির্ঝর। ঠিক হয়ে যাবে সব।’

নির্ঝর ঝাপসা চোখে তরীর মুখ পানে চেয়ে আছে। কি নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো লাগছে এখন। অথচ একটু আগে কতটা ভায়োলেন্ট হয়ে গেছিল। সে হাত মুঠ করে উঠে দাঁড়ালো। ফ্লোরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ক্ষীণ স্বরে বলল,

‘আমি একটু করিডোর থেকে হেঁটে আসছি বড় মা! আপনি কিছুক্ষণ পর একটু ঘুমিয়ে নিন।’

মমতাজ বেগম সহসা কিছু বললেন না। ভাগ্যিস তরীর এই অবস্থা বেশি মানুষ দেখেননি। সবাই আরো কষ্ট পেত।তরীর বাবা-মা রাত দশটার দিকে হসপিটালে এসে পৌঁছেছিল। অনেক কান্নাকাটি করছিল। সবাই রাত থাকতে চেয়েছিল। তিনি থাকতে দেননি। এতদূর থেকে এসে এমনিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা। সেজন্য জোর করে নির্ঝরের বাসায় পাঠিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে তিনি ভালো কাজ করেছেন। চোখ তুলে নির্ঝরের দিকে তাকালেন তিনি। নির্ঝরের মুখের দিকে চেয়ে কষ্ট পেলেন। ছেলেটার মনের অবস্থা সম্পূর্ণ বুঝতে পারছেন। ওর কিছুক্ষণ একা থাকা প্রয়োজন। বুক চিঁড়ে বের হওয়া দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে তিনি বললেন,

‘আচ্ছা যা। আমি তরীকে দেখছি।’

নির্ঝর এক নজর তরীর দিকে তাকালো। পরক্ষণে এলোমেলো ভাবে পা ফেলে রুম থেকে বের হলো। লম্বা করিডোর ধরে হেঁটে সে দক্ষিণ প্রান্তে গেল। করিডোর ফাঁকা, সুনশান! লাইটের আলোয় দিনের মতো পরিষ্কার সব। সে এগিয়ে গিয়ে দেয়াল ঘেঁষে চেয়ারে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ ফ্লোরের দিকে চেয়ে থেকে দু হাতে মুখ ঢাকলো সে। বুকের ভেতর হু হু করছে৷ তরী কবে সুস্থ হবে? কবে সে সেই সুস্থ, সেই আগের ঝলমলে আর লাজুক তরীরানীকে ফিরে পাবে?

নির্ঝরের গায়ে হাফহাতা টিশার্ট। টিশার্টের পেটের দিক থেকে এক অংশ উঠিয়ে সে মুখ মুছল, চোখ মুছলো। তারপর উন্মুক্ত হাত দুটোর দিকে তাকালো। ফর্সা হাতে বহু জায়গা আঁচড়ের দাগ। কিছু কিছু জায়গা থেকে বিন্দু সদৃশ রক্ত বের হয়েছে। ঝাপসা চোখে সে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের আঁচড়ের উপর আলতো স্পর্শ করলো।

(চলবে)……..

আসসালামু আলাইকুম। এতদিন গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখীত। বেশ কিছুদিন হলো বাবা একটু অসুস্থ ছিল। হঠাৎ করে অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিল। গতকাল পর্যন্ত স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে গতরাত থেকে একটু সুস্থ। ইদের আগে গল্পটা শেষ করার কথা ভেবে রেখেছিলাম। সামনের দিনগুলো রেগুলার দুই পার্ট করে দিয়ে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু কত পর্বে গল্প শেষ হবে ধারণা নেই! পরিশেষে, আজ রাতে আরেক পার্ট আসছে ইনশাআল্লাহ। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here