#ডার্ক_সাইড_অফ_এ_বিউটিফুল_লেডি
#পর্ব_4
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা
– তোমার বাবাকে তুমি খুন করেছিলে, তাই তো?
ওর চেহেরাটা মোটেও কোন পরিবর্তন হলো না। মনে হচ্ছে ও যেন চাচ্ছিলো আমার চিন্তা ভাবনা সেদিকে ডাইভার্ট হোক। কিংবা ও আমাকে নিয়ে খেলতে চাইছে। কিংবা সে নিজের ইমোশন ভেতরে রাখতে জানে যেভাবে মেডিটেশনে শেখানো হয়। ও লম্বা সময় ধরেই মেডিটেশন করে বলে মনে হচ্ছে।
– আপনার কেন মনে হলো আমি বাবার সাথে এমন কিছু করেছি?
আমি উঠে হাই তুলতে তুলতে কফির মেশিনে দুইটা মগ বসিয়ে হাতে নিয়ে ফিরে এলাম টেবিলে। ফ্লোরে আমার হিলের কট কট আওয়াজ যেন অদ্ভুত নির্জনতার প্রকাশ করছে।
ওর দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললাম,
– কারণ তুমি অধরাকে তুহিনের কাছে দিতেও ভয় পেতে। মায়েরা আর যত ভয় করুক না কেন বাবার কাছে মেয়ে রাখতে ভয় পাওয়ার কথা না যদি না সে নিজে এমন কিছুর অভিজ্ঞতা না করে থাকে।
চোখ বন্ধ করে কফির মগে চুমুক লাগালো। দুইহাতে ধরে আছে মগটা এখন। হাত দুটো চেয়ারে দুই হাতলে রেখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
– কিন্তু বাবার মৃত্যুর জন্য আমাকে কেউ কখনো সন্দেহ করে নি। আমি সে খুনের আসামী নয়।
আমিও কফির মগ টা টেবিলে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-তাই তো তুমি নিজেকে অনেক বুদ্ধিমতি ভাবতে শুরু করেছো। অধরা মৃত্যুর জন্যেও তোমাকে দোষী ভাবা হয়েছিলো প্রায় ছয় মাস পর। তোমাকে তখন প্রথম জেলে দেওয়া হয়। তাই তো?
-হ্যাঁ। আমাকে তখন প্রথম জেলে দেওয়া হয়, তবে কোন কিছুই প্রমাণ করা যায় নি।
-তুমি অধরার সাথে কথা বলতে তা কি কেউ শুনে ফেলেছিলো?
ও এক দৃষ্টিতে দেওয়ালের পাশ ঘেঁষে রাখা বড় কালো সোফাটার দিকে তাকিয়ে আছে। গত কাল এক বাচ্চা কে নিয়ে এসেছিল তার বাবা মা। তার ফেলে যাওয়া বাদামী টেডি বিয়ার এখনো সোফায় পরে আছে বাঁকা হয়ে। মুখ টা নিচের দিকে থেবরে আছে৷ ওটার দিকে তাকিয়ে আছে ও। আমিও তাকালাম। কারণ ওর দৃষ্টিটা টেডির উপর নয়, টেডির পাশে।
-তোমার কি অধরা খুন করার জন্য কোন আক্ষেপ নেই?
হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো ময়ূরাক্ষী,
-না,
ওর চিৎকারে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। তাও শান্ত গলায় বলায় বললাম,
-কেন?
– আমি ওকে নিজের করে পেয়েছি এখন । আমার মতো করে ওকে বড় করছি। এই দুনিয়ার সব নোংরা থেকে আলাদা ভাবে।
– এতে কি ও খুশি আছে? হয়ত ওর জীবন টা তোমার চিন্তার মতো নাও হতো। সুন্দর হতো।
ওর দৃষ্টিটা এখন বার বার সড়ে যাচ্ছে। ও এখন রেগে যাচ্ছে। আমি যেটা চাচ্ছিলাম।
তবে আর বাড়ালাম না। কথা অন্য দিকে ফেরানো জন্য বললাম,
-কে তোমাকে প্রথম অধরার খুনী ভেবেছিলো, তুহিন?
ও এতক্ষনের মুখোশ টা খুলে যাচ্ছে, বেড়িয়ে আসছে ওর অস্থিরতা। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
– আমি অধরার সাথে কথা বলতাম, ও আমার কাছে এসে হাটু গেড়ে বসে কান্না করতো। আমি ওকে বলতাম, ওর ভালোর জন্য আমি ওকে খুন করেছি। এইটা শুনেছিলো তুহিনের বাবা। উনিই কাজের মেয়েকে টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি করিয়েছিলো। মেয়েটা আমাকে অধরার মৃত্যুর দিন তুহিনের মায়ের রুম থেকে বের হতে দেখেছিলো, যেখানে অধরার বালতিতে ডুবে ছিলো।
-তারপর?
– পুলিশে দেওয়া হলো, তবে কাজের মেয়েটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি তাই কোন কিছু প্রমাণ হয় নি। আবার বাড়ি নিয়ে আসা হলো।
-তুমি ফিরে আসার সাত দিনের মাথায় তুহিনের বাবার আচমকা মৃত্যু হলো। কিন্তু কীভাবে? উনার খাবারের বা ওষুধে কি তুমি এমন কিছু দিয়েছিলে যার কারণে উনার মৃত্যু হলো?
– পোস্টমার্টমে তেমন কিছু পাওয়া যায় নি।
-তাহলেও কেন তোমাকে সে খুনেরও আসামী করা হলো?
– সন্দেহ করে। আর কিছুই নেই।
-তুমি কি খুন টা কর নি?
– না, অধরা করেছিলো।
এইবার আমি হাসলাম, কারণ আমি জানতাম ও আমাকে সেদিকে ডাইভার্ট করতে চাইবে।তাও বললাম-
-মানলাম অধরা করেছে। তবে উনার হার্ট অ্যাটাক হয় নি কিংবা কোন প্যানিক অ্যাটাক। যেটা তোমার বাবার হয়েছিলো কোন কিছু দেখে ভয় পেয়ে।
আবার কিছুক্ষণ নীরবতা৷ অস্থির স্বরে ও বলল-
– মা মারা যাওয়ার পর যখন সবাই চলে যায় তখন প্রায়শ বাবা আমাকে রুমে এসে দেখে যেতো। আমার ভয় লাগতো। জেগে থাকতাম যেন –
একটু থামলো ও, তারপর দুই হাতকে সমানে চেপে চেপে ধরছে ও, বলল-
– আমার বাবাকে ঘৃণা করতাম প্রতি স্পর্শ আমার কাছে জঘন্য ছিলো। মা মারা যাওয়ার কষ্ট আর এইভাবে রাতের পর রাত জেগে থাকার কারণে আমি নিজেকে আনসেইফ ভাবতে শুরু করি, তাই সেদিন বাবা যখন রুমে ঘুমাতে যায় আমি মায়ের নূপুর পরে মায়ের শাড়ি পরে বাবার রুমে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে বসতেই বাবা আঁতকে উঠে, আবছা আলোতে আমার চেহেরাটা বাবার কাছে মায়ের মতো মনে হলো,
বাবা চাপা স্বরে বলেছিলো, তুমি?
আমি হ্যাঁ বলে উঠে দাঁড়াতেই বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়। আর-
– তোমার কেন মনে হলো তুমি মায়ের মতো সাজলে তোমার বাবা ভয় পাবে। তুমি যতই বুদ্ধিমতি হও না কেন? বুদ্ধির পরিপক্কতা আসতে সময় লাগে। যেমন ছোট রা খেলনা দিয়ে আক্রমণ করে, এর একটু বড় রা কলম দিয়ে, এরপর যে যত যে জিনিস টা আশেপাশে থাকবে সে তা দিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। অত ছোট বয়েসে তোমার মাথায় এইটা কীভাবে এলো?
আমার এই প্রশ্নে ও থমকে গেল৷ অন্য গল্পের মতো এইখানেও যে মিথ্যা আছে আমি ধরে ফেলেছি তাই। ওর গল্পে বাধা পড়লো। ওকে দ্রুত চিন্তা করতে হচ্ছে কি বলবে?
ওকে চিন্তা করার সময় না দিয়ে আমি বললাম,
– তুমি মায়ের মতো সেজেছিলে কারণ তুমি বাবার কাছে যেতে চাইছিলে, ভয় লাগাতে নয়। তবে তোমার বাবা ভয় পেয়ে গেল কারণ তুমি দেখতে একেবারেই তোমার মায়ের মতো।
ওর অস্থিরতা আবার বেড়ে গেল। বিড়বিড় করে বলল-
– মিথ্যা কথা, আমার এমন চিন্তা ছিলো না।
-তুমি মিথ্যা কথা বলছো, যতোই কাছাকাছি রুম হোক এক রুমে শব্দ অন্য রুমে শোনা যাওয়ার কথা না। তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে বাবা মাকে অত্যাচার করছে। তোমার তখন কিশোরী বয়স, তাই-
টেবিলে চাপড় দিয়ে ও উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ওকে এখন অগ্নিমূর্তির মতো দেখাচ্ছে। আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখ তুলে তাকালাম, হেসে বললাম,
– তুমি তো সে খুনের আসামী নও, এত রাগার কোন কারণ নেই। শান্ত হয়ে বসো, ওটা ভুল বশত খুন ছিলো। পরের গুলোও কীভাবে করলে?
ও আবার শান্ত হলো, ওর ভেতরে সত্ত্বা হয়ত ওকে জানান দিচ্ছে আমি ওকে রাগাতেই চাইছি।
ও চেয়ারে বসে পড়তেই আমি আবার বললাম,তুহিনের বাবাকে কীভাবে খুন করলে, এত নিখুত ভাবে? কারণ কাজের মেয়েকে উনি হয়ত বানান নি সত্যিই কাজের মেয়েটা তোমাকে দেখেছিলো।
তুহিনের মৃত্যুও হয়েছিলো অজনা কারণে। হার্ট অ্যাটাক ও নয় কোন বিষ ও নয়। তুমি কি এমন করেছিলে যে তুহিন কে ও কোন প্রমাণ ছাড়া খুন করতে পেরেছিলে?
ও চুপ করে রইলো।
আমি আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঘড়িতে দশটা বেজে উঠলো। দুইজন মহিলা পুলিশ ঢুকে বলল,
-সময় শেষ ,
আমি আরো রাখতে বললাম ওকে৷ কিন্তু ও নিজেই বসতে চাইলো না। বলল,
-অপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল, জেলার ম্যাম কে আবার আমাকে পাঠাতে বলবেন যাতে আবার দেখা হয় আপনার সাথে। বাকি খুনের গল্প ও শোনাবো।
ও বের হয়ে যাচ্ছিলো। আমি ভীষণ রকম অস্থির হয়ে উঠলাম, কারণ ওর সাথে খেলতে আমারো ভালো লাগছিলো,
ও উঠে দাঁড়িয়ে, যাওয়ার আগে পানি গ্লাস টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
– পানির অনেক রূপ জানেন তো? তার একটা রূপ দিয়ে তুহিন কে খুন করেছিলাম। আর আরেক টা ওর বাবাকে। এখন আপনি বের করুন কীভাবে?
-চলবে