তবু_সুর_ফিরে_আসে ৩৩ পর্ব

0
918

#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৩৩ পর্ব

হেরা খুব আবদার করেছে ন‌ওশাদ যেন তাকে প্রথম দিন ক্লাসে নিয়ে যায়। ন‌ওশাদ ওর একা যাওয়ার পক্ষেই যুক্তি দেখাচ্ছে।
আপনি সঙ্গে গেলে আমি সাহস পাব।
হেরা আমার যেতে তো কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমি চাই তুমি নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাও। তোমার জন্য ওটাই সবচেয়ে বেশি দরকার।
প্রথম দিন আপনি যাবেন বলেন প্লিজ, প্লিজ। হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরলো।
ন‌ওশাদ হাত টা শক্ত করে ধরলো হেরা আমি চাইছি তুমি নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হবে, তুমি পারবে অবশ্যই ।
আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমার সব আত্মবিশ্বাস, মানসিক শক্তি আপনি। আপনি সঙ্গে থাকলে আমি পারব।
আর আমি সঙ্গে না থাকলে ?
আপনি সঙ্গে থাকবেন না কেন ?
ধরো আমি নেই তোমার আশেপাশে তখন কি করবে ?
আমি জানি আপনি সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। আমাকে একা ছাড়বেন না। আপনি কথা দিয়েছেন আমাকে কোথাও একা যেতে দিবেন না।‌
আমার জান , সেটা নিশ্চয়ই তোমার ভার্সিটি নয় ? প্রতিদিন তোমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসব বুঝি ?
প্রতিদিন দিয়ে আসতে কে বলেছে , বিড়বিড় করে বলল হেরা?
আপনি যাবেন না তাই তো ?
না তুমি সেলফ ডিপেন্ডেবল হবে এটা হবে তার ফাস্ট স্টেপ।
হেরা অভিমানে উঠে দাঁড়ালো থাক আর কিছু বলতে হবে না । মুখ ঘুরিয়ে হেরা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
ন‌ওশাদ‌ও উঠে দাঁড়ালো হেরার ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলল, তোমার ইচ্ছে করে না সেলফ ডিপেন্ডেবল হতে ?
আমার আপনার উপর ডিপেন্ড হয়ে থাকতে ভালো লাগে। আপনার ছায়ার নিচে।
উহু এসব বললে হবে না আমি চাই তুমি এতটাই শক্তিশালী হ‌ও মানসিক শক্তি নিজেই নিজেকে দিবে।
হয়েছে থাক আর কিছু বলতে হবে না। হেরা গাল ফুলিয়ে ফেলল। সেই থেকে অভিমান করে আছে ন‌ওশাদের উপর।
ন‌ওশাদ খুব মজা পাচ্ছে এত দিন পর কেউ তার উপর অভিমান করে আছে। বাচ্চারা যেরকম অভিমান করে হেরাও ঠিক তাই করছে, কথাবার্তা বলছে কিন্তু সব ভাব বাচ্যে ।
ন‌ওশাদের এত মজা লাগছে। হেরার কান্ড কারখানায় হাসি পাচ্ছে খুব।
এই যেমন সেদিন সন্ধ্যায় ন‌ওশাদ অফিস থেকে এসে দেখে লিভিং রুমে বসে আনারের মা ওর মাথায় তেল ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। ন‌ওশাদ কে দেখেই হেরা আনারের মা কে বলল, বুঝলে আনারের মা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে‌। তুমি যদি তেল লাগাতে না আসতে তাহলে আমি একাই লাগাতাম। আড় চোখে ন‌ওশাদের দিকে তাকালো।
আম্মা এইডা কি কন আপনে ক‌ইবেন আর আমি তেল দিমু না সব কাম ফালায় রাখব তাও দিয়া দিব !
তোমার মত আর কেউ তো আমার কথা ভাবে না গো আনারের মা।
ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে রুমে ঢুকে গেল।
একটু পর রুমে এসে ঢুকলো হেরা, ন‌ওশাদ ফ্রেশ হয়ে বেডে কাত হয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে হেরা‌ ওকে দেখে কিছু বললো না চুপচাপ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বেনী করছে ।
ন‌ওশাদ নিজে নিজেই গেয়ে উঠলো, যদি কেউ কথা না কয়/ ওরে ওরে ও অভাগা কেউ কথা না কয়/ যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়। ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
তারপর নিজে নিজেই বলল,
থাকুক সবাই অভিমান করে আমি একা একাই কথা বলব।কি আর করা অফিস থেকে আসলাম না দেখতে পেলাম একটা হাসি মুখ, না পেলাম এক কাপ চা।
হেরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে ন‌ওশাদকে। কাছে এসে বেড সাইড ড্রয়ার খুলে মোবাইল চার্জার বের করলো ন‌ওশাদ হাত ধরে টান দিয়ে বেডে বসালো।
এত অভিমান ?
আমি কোন অভিমান করিনি । আর করলে কি লাভ ? আমার অভিমানের কি দাম আছে ?
ওমা এত বড় কথা !
নয়তো কি ?
ঠিক আছে আমি হার মানলাম নিয়ে যাব তোমাকে প্রথম দিন ক্লাসে। হলো তো এখন মুড ঠিক করো।
হুম।
হুম বললে হবে না হাসো । ন‌ওশাদ বালিশের পাশ থেকে এক গোছা বেলী ফুলের মালা বের করলো । এটা পড়িয়ে দেই?
কি সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ !
আমার খুব পছন্দ বেলী ফুল ন‌ওশাদ বলল।
কোথায় পেলেন ?
আসার পথে সিগন্যাল এ একটা বাচ্চা বিক্রি করছিল ভাবলাম ব‌উ অভিমান করে বসে আছে নিয়ে যাই যদি মনের বরফ গলে ।
আপনি যেহেতু বলেছেন আমার সঙ্গে ভার্সিটিতে যাবেন তাহলে মন খারাপ কেন থাকবে আর ।
হুম বুঝলাম। দুটো দিন খুব পানিশমেন্ট দিলে হেরা।‌সুন্দর করে কথা বলো নি , কাছে আসোনি রাতে অন্য পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলে আমি বাবা এসব খুব ভয় পাই তাই ভাবলাম থাক শুধু শুধু ব‌উ এর অভিমান বাড়িয়ে লাভ নেই। যার হাসি মুখটা দেখতে এতো ভালো লাগে তার অভিমানে গাল ফোলানো মুখটা দেখতে কি ভালো লাগে বলো ?

হেরা ওর নার্ভাসনেস এর কথা এলিন নাহিনের কাছে বলল।
এত নার্ভাস হ‌ওয়ার কি আছে বৌমনি?
এলিন আমার তো তিন টা বছর পড়াশোনার গ্যাপ গিয়েছে যাদের সঙ্গে পড়ব ওরা বয়সে ছোট এটার জন্য অস্বস্তি লাগছে। আবার এত গুলো ছেলে থাকবে কিছু কারণে আমি ছেলেদের এড়িয়ে চলি।‌
শোন বৌমনি তোমাকে একটা বুদ্ধি দেই নিজেকে স্ট্রং ভাবো তাহলেই দেখবে তুমি নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠেছো।
তুমি যে সুন্দরী, ক্লাসমেট থেকে শুরু করে সিনিয়র সব ছেলে তোমার সঙ্গে ভাব জমাতে চাইবে এড়িয়ে যাবে কিভাবে ছেলেদের?
আর একটা কথা তোমরা সেদিন আমাকে বৌমনি বলো নি এটা কেমন কথা?
জনে জনে জানানোর কি আছে তুমি আমাদের বৌমনি ?
নাহিন আমার নার্ভাস লাগছে এই কারণেও, আমি ছেলেদের সঙ্গে কমফোর্টেবল হতে পারি না।
জানি বৌমনি তুমি তো শোয়েব মামার সঙ্গেও কথা বলো না !
হেরা একটু চুপ করে গেল । আসলে উনার সঙ্গে খুব একটা দেখা হয় না তাছাড়া কি কথা বলব সেটাও একটা ফেক্ট।
এলিন নাহিনের সঙ্গে কথা বলে হেরা শ্বশুরের রুমে ঢুকলো। আজকে উনাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাবে মেঝ ছেলে। ন‌ওশাদ প্রতি বার নেয়ার কথা বললেই বাঁধা দেয় । কিন্তু আরমান কিংবা ফারহান বুবুকে বলে , তাই ন‌ওশাদকে বুবুর কথা মেনে আব্বা কে ভাইদের বাসায় পাঠাতে হয়।
আব্বা কি করেন ?
এসো বড় বৌমা । আমি একটা হিসাব করছি ।
কিসের হিসাব আব্বা হেরা অবাক হলো !
তোমার আম্মা কতদিন থেকে জান্নাতে র কাছে ফ্লোরিডা তে সেটাই ।
ও আচ্ছা ।
আপনি কখন যাচ্ছেন আব্বা ?
কোথায় ?
আজ না আপনি আরমান ভাইয়ার বাসায় যাবেন।
না না আমি কোথাও যাব না !
আব্বা আপনার মেঝ ছেলে মন খারাপ করবে ।
না কোন মন খারাপ করবে না । তুমি ফোন দাও বাবুকে বলো, ও ধমক দিলেই ওরা ভয় পাবে । আমি যাব না বৌমা বাবুকে রেখে যেতে আমার ভালো লাগে না।
আব্বা দুই দিন থাকেন তারপর আমি আর আপনার বাবু গিয়ে নিয়ে আসব আপনাকে।
বৌমা তোমার ছেলে কোথায় ? ওকে আসতে বলো !
আব্বা ও তো ক্যাডেট কলেজে ।
আমার নিশাল দাদু ভাই কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ।
আব্বা ওর পরীক্ষা চলছে শেষ হলেই চলে আসবে আর মাত্র কয়দিন ।
বৌমা তুমি বাবুকে রেখে বাবার বাড়ি যাবে না ছেলেটা একা থাকলে আমার কষ্ট হয় খুব।
আব্বা আমি কোথাও যাবো না আপনার ছেলে কে রেখে আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার ছেলে ছাড়া আমার কেউ নেই আব্বা । এই বাড়িই আমার সব।
হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে বৃদ্ধ বাবা সবকিছু ভুলে গেলেও ছেলের কষ্ট টা খুব মনে রাখেন । বড় ছেলের জন্য কত ভালোবাসা উনার বুকে ।
মনটা খারাপ করে সে নিজের ঘরে বসে আছে। তার খারাপ লাগছে ন‌ওশাদ মানুষ টা তাকে কতটা মানসিক শক্তি দেয়, নিরাপত্তা দেয় কিন্তু কতটা একা ছিল মানুষটা। হেরা আসার পর এখন নিশ্চয়ই তিনি আর একা নন। নাকি এখনো বুকের ভেতরে একাকিত্ব নিয়ে ঘুরেন জানেনা হেরা।

সন্ধ্যায় ন‌ওশাদ বাসায় ফিরে দেখে হেরার মন খারাপ।
কি হয়েছে তোমার?
কিছু না খারাপ লাগছে ।
কেন?
হেরা ন‌ওশাদের পাশে বসে ছিল ওর হাত টা জড়িয়ে ধরলো। একটা কথা বলবেন আমাকে ?
কি কথা ?
আপনি এত বছর একা ছিলেন আচ্ছা আপনার একাকিত্ব টা দূর হয়েছে এখন ?
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকালো । হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন ?
কথাটা মনে হতেই খারাপ লাগছিল ।
ন‌ওশাদ হেরা কে বুকের কাছে টেনে নিলো । আমি তোমাকে বলেছি আমি ভালো আছি হেরা তুমি যখন আছো আমার সঙ্গে একা ফীল করার তো কোন প্রশ্নই আসে না আর।
সত্যিই তো ?
সত্যি। হঠাৎ এই কথা কেন আসলো মনে ?
আব্বা বলছিল আমি যেন আপনাকে রেখে কোথাও না যাই আপনি একা হয়ে যাবেন। আব্বা আপনাকে খুব ভালোবাসেন।
গীতি যাওয়ার পর আব্বা আমাকে দেখেই অসুস্থ হয়ে গেল বেশি। তখন আব্বার এলজাইমার টা ছিল না। খুব কান্নাকাটি করতো নিশাল আর আমার জন্য। কয়েক বার অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়েছে। এলজাইমার হয়ে ভালো হয়েছে ভুলে যায় সব কিছু। কষ্ট গুলো ও সেই সঙ্গে ভুলে থাকে।
তাহলে তো সব মানুষের এই রোগ কম বেশি থাকা ভালো সব কষ্ট ও ভুলে থাকা যাবে।
তোমার কিসের কষ্ট হেরা ?
আমি আছি তোমার কাছে তারপরেও কষ্ট !
না আমার কোন কষ্ট নেই ।
না মনে হচ্ছে আছে কষ্ট । দেখি কোথায় কষ্ট বুকের ভেতরে কষ্ট হেরা ? দেখি দেখি ।
না না কষ্ট নেই বললাম তো । ন‌ওশাদ হেরার সঙ্গে দুষ্টামিতে মেতে উঠলো। হেরা কিছুক্ষণ হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে পালালো ।
পেছন থেকে ন‌ওশাদ বলে উঠলো রেডি হ‌ও চলো তোমাকে নিয়ে এলোমেলো ড্রাইভে যাব খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে বাহিরে।

আজ প্রথম ভার্সিটিতে যাবে হেরা। ন‌ওশাদ ডাইনিং টেবিল এ ব্রেকফাস্ট করছে আব্বার সঙ্গে বসে। হেরা সেই তখন থেকে রেডি হচ্ছে।
আনারের মা তোমার আম্মাকে ডাকো দেরি হয়ে যাবে।
যাইতাছি স্যার বলে আনারের মা দৌড়ে উপরে উঠে গেল।
মামা আমাদের আজ গাজীপুর যাওয়ার কথা , শোয়েব বলল।
মনে আছে শোয়েব ,হেরাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে যাব। সবুজ কে বলো পুরো সময়টা যেন গাড়ি নিয়ে ভার্সিটিতে ই থাকে কোথাও যেন না যায়।
জ্বি মামা আমি বলে দিচ্ছি বলে শোয়েব খাওয়া শেষ করে উঠে গেল।
বাবু ।
ন‌ওশাদ আব্বার দিকে তাকালো ।
বলো আব্বা ।
আমি এ বাসা ছেড়ে আর কোথাও যাব না ।
কি হয়েছে আব্বা ?
ওদের বাসায় আমার ভালো লাগে না । নিজের ঘরে থাকতেই ভালো লাগে।
ঠিক আছে আর যেতে দিব না তোমাকে ।
আমাকে একবার জান্নাতের বাসায় নিয়ে যাবি ?
প্লেনে এত লম্বা জার্নি করতে পারবে তুমি আব্বা‌?
পারব।
আচ্ছা নিয়ে যাব তোমাকে ।
আমার বাবুই সবচেয়ে ভালো কোন কিছুতেই না করে না । আরমান আর ফারহান শুধু না করে আব্বা এটা করো না এটা খাওয়া যাবে না। সেদিন আইসক্রিম খাচ্ছি আরমান না করলো । দুই বাটি আইসক্রিম খেলে কি হয় ?
আব্বা গতবছর নিউমোনিয়া হয়ে হসপিটালে ভর্তি ছিলে ভুলে গেলে তুমি । তোমার কি কষ্ট হলো তখন ।
বড় বৌমা কে বললাম কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আইসক্রিম কিনে এনে মুখে তুলে খাইয়ে দিল আমাকে ।
তোমার বড় বৌমা তো জানে না কি অবস্থা হয়েছিল তোমার।
দুই বাটি আইসক্রিম খেলে কিছু হয় না বাবু। তুই যখন বুড়ো হয়ে যাবি নিশাল দাদু ভাই আইসক্রিম খেতে না করলে দেখবি কত কষ্ট লাগে ।
ন‌ওশাদ আব্বার কথা শুনে হো হো করে হাসছে।
হেরা রেডি হয়ে উড়তে উড়তে নিচে নেমে এলো।
তাড়াতাড়ি করো হেরা তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে ফ্যাক্টরি তে যেতে হবে ।
আমি রেডি চলেন ।
না খেয়ে যাবে ?
খেতে ইচ্ছে করছে না।
কিছু একটা খেয়ে নাও ।
হেরা ন‌ওশাদের কাপ থেকে চা নিয়ে চুমুক দিলো । হয়েছে।
এটা কি কথা। ঠিক ভাবে ব্রেকফাস্ট করো।
দেরি হয়ে যাবে আমার নার্ভাস লাগছে কালকে থেকে খেতে পারব না । নিশাল কালকে ফোন দিয়েছিল আমাকে উইস করেছে।
সাজগোজ করতেই এত সময় লাগালে তুমি।
হেরা শ্বাশুরের কাছে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।
কোথায় যাচ্ছো বাবার বাড়ি যাচ্ছো না তো ?
আব্বা হেরা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে আজকে প্রথম দিন তাই তোমাকে সালাম করছে।
ও আচ্ছা অনেক দোয়া করি ।
আসি আব্বা ?
যাও বৌমা সাবধানে থেকো।
হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরে টানলো । এদিকে আসুন তো একটু ।
চলো বের হ‌ই ।
আগে আসুন আমার সঙ্গে।
হেরা ন‌ওশাদ কে ড্রয়িং রুমের দিকে নিয়ে গেল। তারপর ন‌ওশাদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।
ন‌ওশাদ অবাক হয়ে গেল!
আমাকে কেন ?
আপনার দোয়া টা সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ আমার জন্য।
ন‌ওশাদ হেরার কপালে চুমু খেলো। কনফিডেন্ট নিয়ে চলাফেরা করবে সব সময়। যেকোনো সমস্যায় পড়লে প্রথমে ই আমাকে ফোন দিবে। আমি কিন্তু টেনশনে থাকি । ড্রাইভার থাকবে সারাক্ষণ পার্কিং এ ওর‌ নাম্বার টা সেইভ করে রেখো।
ঠিক আছে। হেরা জড়িয়ে ধরলো ন‌ওশাদ কে আমার এত ভয় লাগছে কেন ?
তুমি বোকা মেয়ে তাই তোমার ভয় লাগছে।
ভয়ের কিছু নেই হেরা সবাই তোমার ক্লাসমেট। ওদের বন্ধু ভাববে দেখবে সব সহজ হয়ে গেছে।
হুম।
এখন চলো।
শোয়েব ড্রয়িং রুমের দিকে ঢুকতেই মামা মামিকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল । আসতে করে সরে গেল সে।

গাড়িতে বসে হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরে রাখলো। জানেন কুষ্টিয়াতে যখন ভর্তি হয়েছিলাম তখন নানা ভাই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল প্রথম দিন। সেদিনও আমার খুব ভয় লাগছিল। নানা ভাইয়ের হাত ধরে ছিলাম। নানা ভাইও আপনার মত আমাকে সাহস দিচ্ছিল। হেরার চোখ ভিজে উঠলো।
তোমাকে একটা কথা বলব হেরা , আমি যেদিন ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম তোমার নানা ভাই আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। আমিও স্যারের হাত ধরে ছিলাম এরকম। স্যার বারবার বলছিলেন , ভয়ের কিছু নেই রে বেটা ।
হেরা মানুষের জীবন টা একটা বৃত্তের মত । বৃত্তের যেমন শেষ নেই শুধু ই চক্রের মত ঘুরে জীবনটাও সেরকম ঘুরছে। আমাদের সেই চক্রের ভেতরেই ভালো থাকতে হবে, কখনো খারাপ সময়ের সঙ্গে লড়াই করতে হবে কিন্তু আশাহত হ‌ওয়া যাবে না। মনে রাখবে যেখানেই সমস্যার শুরু সমাধান তার আশেপাশেই আছে । ভয় পাবে না । মানুষ কে পরিস্থিতি কাবু করতে পারে না । মানুষকে হারিয়ে দেয় তার ভেতরের ভয়।
হেরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ন‌ওশাদের কথা গুলো তাকে সাহস দিচ্ছে তারপরও সে নার্ভাসনেস টা কাটাতে পারছে না।
ন‌ওশাদের হাত ধরে চার মাস আগে যে পরিবর্তন এসেছে তার জীবনে, আজকে সেই জীবনের আরেক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আবারও। ন‌ওশাদ তার জীবনটাকে আলোয় যেভাবে ভরে দিচ্ছে সে সেই আলোয় আলোকিত হয়ে যাচ্ছে। ন‌ওশাদের প্রতি ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞতায় সে বারবার নুয়ে যায়।
চোখের পানি কেন হেরা ?
এমনি ।
ন‌ওশাদ টিস্যু এগিয়ে দিল ।
গাড়ি থেকে নামতেই এলিন, নাহিন এগিয়ে এলো হেরার কাছে। ওদের সকালে ক্লাস ছিল তাই আগেই চলে এসেছিল।
ন‌ওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো । আমার কি আর‌ও যেতে হবে তোমার সঙ্গী সাথী তো চলে এসেছে ?
থাক আর লাগবেনা ।
নার্ভাস লাগছে এখনও হেরা ?
একটু ।
ন‌ওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো অনেক দোয়া আর শুভকামনা রইল তোমার জন্য, যাও ভেতরে গেলেই দেখবে সব নার্ভাসনেস গায়ের হয়ে যাবে । আজ তোমাদের জন্য কত আয়োজন থাকবে। ভালো লাগবে তোমার।
হেরা তাকিয়ে আছে ন‌ওশাদের দিকে। যে মুখাটা দেখলে সে ভেতর থেকে সাহস পায়, অন্যরকম একটা শক্তি পায় ।
চলো বৌমনি , এলিন এসে হেরার হাত ধরলো ।
হেরা ন‌ওশাদের দিকে আবার তাকালো । ন‌ওশাদ সানগ্লাস টা খুলে হেরার চোখের দিকে তাকিয়ে পলক ফেলল।
হেরা এতেই অনেক ভরসা পেলো।যা তার এগিয়ে যাওয়াতে অনেক শক্তি জুগিয়ে দিলো।
ন‌ওশাদ তাকিয়ে দেখছে হেরা এগিয়ে যাচ্ছে। একটু পর পর পিছন ফিরে দেখছে ওকে। ন‌ওশাদ হাত তুলে নাড়লো দুই বার।
ন‌ওশাদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে হেরা কে ভীড়ু ভীড়ু পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here