#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১৭
আফনান লারা
.
দুইদিন পরেই চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।এই দুইদিন ক্লাস করতে যাবেনা অর্ণব।গেস্ট টিচার হিসেবে মৃদুল যাবে।দুইদিন ধরে পড়াতে মন দিতে গিয়ে বাকিসব ভুলে বসেছে সে।পরীক্ষাটা কবে শেষ হবে আর কবে ঈদে বাড়ি যাওয়া হবে।এবার বাড়ি যেতে কোনো ভয় হবেনা।কারণ যেটার ভয়ে এতটা বছর সে বাড়ি যেতে চায়নি সে কারণটা ধামাচাপা হয়ে গেছে।
জুথি ক্লাসে অর্ণবকে খুঁজেছিল।লোকটাকে অপছন্দ করতে করতে কেমন যেন চেনাপরিচিতর কাতারে নিয়ে এসেছে সে।এখন তাকে না দেখলে মনে হয় দেখা উচিত ছিল।
মন খারাপ করে লাইব্রেরীতে ঢুকেছে জুথি।একটা উপন্যাস নিয়ে পড়বে ভেবে।মনটা ভালো হোক এটাই উদ্দেশ্য।
সেখানে দেখা হয়ে গেলো অর্ণবের সঙ্গে।অর্ণব একটা বই রাখতে এসেছিল।লাইব্রেরী থেকে কল করেছিল ফেরত দেবার জন্য তাই বাহিরে বের হয়ে ট্রেনিং সেন্টার ঘুরে এসে শেষে এদিকে আসলো।দূরে একটা বই নিয়ে চশমা ঠিক করে মনযোগ সহকারে পড়ছিল সে।জুথি প্রথমে ভাবলো গিয়ে কথা বলবে।পরে কি ভেবে আর গেলোনা।পছন্দের একটা উপন্যাস নিলো”কপালকুণ্ডলা ‘
সেটা নিয়ে এক কোণায় পড়তে বসে পড়েছে।অর্ণব ঘুরে দাঁড়ানোর পর জুথিকে দেখতে পেলো।কাল শিক্ষার অভাব কথাটা বলা ঠিক হয়নি।সরি বলা উচিত বলে সে এগিয়ে এসে জুথির সামনে চেয়ার টেনে বসলো।আন এক্সপেক্টেড ছিল একেবারে।জুথি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।অর্ণব বইয়ের পাতা উল্টে হাত দিয়ে পৃষ্ঠা মিহিন করে বললো,’সরি।কাল ঐ কথাটা বলা উচিত হইনি আমার’
জুথি ভাবেওনি অর্ণব নিজ থেকে সরি বলবে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,’সমস্যা নেই’
অর্ণব জুথির চোখে পানি দেখলো হঠাৎ।পানিটা চোখ ছেড়ে নিচে নামেনি অথচ ঝলঝল করছে।আসলেই কথাটা ব্যাথা দেওয়ার মতন ছিল।এটা বুঝতে ওর একদিন লেগে গেলো।মন খারাপ হলো জুথির চোখে পানি দেখে।তাই বইটা বন্ধ করে দিয়ে বললো,’আমার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের পাশে যে ক্যানটিন আছে সেটায় অনেক ভালো কফি পাওয়া যায়।
বিগ ফ্যান আমি।আপনি চাইলে আমার থেকে বিনাকারণের একটা ট্রিট নিয়ে নিতে পারেন’
জুথি একের পর এক অবাক হচ্ছে।নড়েচড়ে বললো,’সত্যি?’
-‘হুম।তবে যদি আপনার রাগ কমে তবে।জোরজবরদস্তি নাই।’
জুথি রাজি হলো।লাইব্রেরী থেকে বের হবার পর অর্ণব।সোজা হাঁটা ধরেছে।জুথিও ওর সাথে আসতে আসতে বললো,’যখন বিয়ে করবেন তখনও কি বউকে হাঁটিয়ে ঘুরাবেন?’
-‘সেটা নির্ভর করে আমার বউ হাঁটতে ভালোবাসে নাকি অসহ্য বোধ করে।সে যদি এটার সাথে সহজবোধ না হয় তাহলে আমি কেন মিছে তাকে কষ্ট দিতে যাবো?রিকশা নেবো তখন।’
-‘আমি যদি এখন বলি আমার পায়ে ব্যাথা করছে?’
-‘তাহলে আপনি আপনার টাকা দিয়ে রিকশা নিতে পারেন।প্রথমত, আপনি আমার বউ না।সে সূত্রে আপনার খরচ আমি বহন করবো না। দ্বিতীয়ত, আপনার কাছে টাকা আছে।’
জুথি মিটমিট করে হাসতে হাসতে চললো।অর্ণবের কথায় শুধু হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
দশ মিনিট হেঁটে এসে কফি হাউজে ঢুকে একটা সুন্দর মনোরম জায়গাট সিট দেখে বসলো দুজন।অর্ণব অর্ডার দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আসলে আমি একটা বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম যার কারণে মেজাজ গরম ছিল।তাই আপনাকে উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছি।আমার আপনাকে হার্ট করার কোনো ইনটেনশন ছিলনা’
-‘কোন বিষয়ে জানতে পারি?’
-‘ফ্যামিলি প্রবলেম।আপনার জানার প্রয়োজন নেই।আমিও চাইনা কেউ আমার দুঃখে দুঃখী হোক।’
জুথি হেলান দিয়ে বসে বললো,’আমাকে বললে আমি দুঃখী হই বা না হই অন্তত আপনার দুঃখ কিছু হলেও কমবে।বলতে পারেন।আমি শুনি।কথা বললে সময় কাটে।’
অর্ণব টেবিলের উপর থেকে একটা প্লাস্টিকের ফুল নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,’আগে একটা প্রশ্ন করি।ধরুন আপনি একজনকে পছন্দ করেননা।তার কোনো দোষ নেই কিন্তু আপনার ওকে ভালই লাগেনা।বিয়ের কথা ভাবতেই পারেননা তার সাথে।কিন্তু আপনার বাবা মা ঐ মানুষটার সঙ্গেই আপনার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।এক প্রকার সারপ্রাইজ দিয়ে বসেছে আপনাকে।এখন এই বিষয়ে তারা জোর করছে রীতিমত।কল করলেই বিয়ের কথা।বোঝেন তো?
তখন আপনি সেই সিচুয়েশনে কি করবেন বলুন?’
জুথি সোজা হয়ে বসে মুখ এগিয়ে এনে বললো,’আপনি বরং আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যান।আপনার আব্বু আম্মুকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেন।সারপ্রাইজে সারপ্রাইজে কাটাকাটি হয়ে যাবে।ব্যাপারটা মারাত্নক না?’
অর্ণব কপালে হাত দিয়ে টিপতে টিপতে বললো,’হুমমম।একদম! আচ্ছা আপনি মজা ছাড়া আর কিছু জানেননা?কোনোকিছুতে আপনার সিরিয়াস হতে কত বছর লাগবে?’
জুথি আবারও দুষ্টুমি করে বললো,’কেন?আমায় বিয়ে করবেন সে বয়সে?’
-“আপনার যে বয়স তাতে এখন বাচ্চা কোলে থাকার কথা।যাউ হোক, আপনাকে যে বিয়ে করবে তার কপালে শনি,বুধ, বৃহস্পতি সব আছে শুধু মঙ্গল থাকবেনা’
ওয়েটার কফি দিয়ে গেছে।জুথি কফির মগটা দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে মুচকি হাসলো তারপর বললো,’আমার বাবাও এই কথা বলে।’
অর্ণবও এবার একটু দুষ্টুমি করে বললো,’আমাকে বিয়ে করবার ইচ্ছা হয় আপনার?জাস্ট তার একটা কারণ দেখান’
জুথি কফিতে চুমুক দিয়ে চুপ করে আছে।অর্ণব ওর চোখে চোখ রেখে উত্তরের অপেক্ষায় সে নিজেও চুপ।জুথি হেসে দিয়ে বললো,’আমি দুষ্টুমি করি অনেক।আপনাকে জ্বালানোর বাহিরে আমি আর কিছু ভাবিনা আপনাকে নিয়ে।
বিয়ে করার তো প্রশ্নই আসেনা।দুষ্টুমি করি বলে হয়ত অনেকেই আমায় পছন্দ করেনা।কিন্তু আপনাকে ব্যাতিক্রম দেখলাম।আমি এত জ্বালানোর পরেও আপনি আমায় কফি খাওয়াতে নিয়ে আসলেন।বেশ ভালো,আমাকে খুব কম সংখ্যার মানুষ এমন বোঝে।’
-‘উত্তর দিলেন না।আমার কি করা উচিত?’
-“দুইটা বুদ্ধি দিতে পারি।আগে বলুন আপনি কাউকে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন?’
-‘আপাতত নাহ’
-‘তবে শুনুন।আপনি যদি বাবা মায়ের বাধ্য হয়ে থাকেন তাহলে বিয়েটা করে ফেলুন।তারা অনেক আশা নিয়ে আছে।আর যদি নিজের জীবনটাকে গুরুত্ব দিতে চান তবে সময় নিন।’
অর্ণব চোখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো জুথি হলে কি করতো।জুথি কফির খালি মগটা রেখে বললো,’আমি হলে চুটিয়ে একটা প্রেম করতাম।তারপর তাকে বিয়ে করতাম।একদিন না একদিন তো পরিবার মানবেই।
শুধু শুধু কেন তাদের বাধ্য হতে গিয়ে নিজের জীবন নিয়ে কম্প্রোমাইজ করতে যাবো?বিয়ে কি ছেলেখেলা নাকি?’
অর্ণব হেসে বললো,’এটাই শুনতে চেয়েছিলাম।ধন্যবাদ। সুন্দর একটা মূহুর্ত উপহার দেবার জন্য।আজ আসি’
——
অর্ণবের মা আসতে দেরি করছিলেন আর কুসুম অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে ছিল।কলি চুপিচুপি এসে উনার ফোনটার গ্যালারিতে গিয়ে অর্ণব আর তার ভাই সাগরের ছবি পেলো।মাথা চুলকে ভাবতে লাগলো কোনটা অর্ণব হতে পারে।দুজনের চেহারাই একি রকম।দুজনকেই জোয়ান লাগে।ফোন রেখে চোখ বড় বড় করে দেখতে দেখতে কলি বললো,’আচ্ছা অর্ণব ভাইয়ার কি নাক চিকন?’
কুসুম মাথা নাড়ালো।কলি আবার বললো,’উনি কি লম্বা?’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে উঠে বসে দেখলো কলি ছবি দেখতে দেখতে প্রশ্ন করছে।থাবা দিয়ে ফোনটা নিয়ে সে বললো,’চাচি দেখলে রাগ করবেন।’
-‘আহা দেখতে দাওনা!ওমন করো কেন?আমিও দেখি কোন ছেলের এত সাহস আমার বোনকে বিয়ে করতে মানা করে’
-“দেখে কি হবে?তার চেহারায় কি বোঝা যায় তিনি আমায় পছন্দ করেন না?মানুষের চেহারা বলে এক কথা আর মন বলে অন্য কথা।উনার হয়েছে তাই বুঝলি?’
কলি মুচকি হেসে চিমটি কেটে বললো,’ভাইয়া কি সুন্দর!তুমি সামনে থেকে দেখেছিলা?একদম এমন ছিল?’
-‘হুম।
এরকম পাঞ্জাবি পরা ছিল।উনি সবসময় পাঞ্জাবি পরেন।মাথা উঁচু করে তাকাতে হয় এমন লম্বা উনি।থাক ওসব ভেবে আমার কাজ নেই।ধর ফোনটা চাচিকে দিয়ে আয়।আর ধরবিনা বলে দিলাম।
আর একটা কথা,আমার সামনে কখনও উনার নাম নিবিনা।তুই যে একদিন নদীতে তোর শখের কানের দুল হারিয়ে ফেলেছিলি তারপর আমাদের সবাইকে মানা করে দিয়েছিলি আর যেন ঐ দুলের নাম না নিই।মনে পেলে কষ্ট হবে তাই
এটাও সেরকম।আমাকে উনার কথা কখনও মনে করিয়ে দিবিনা’
কলি মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,’কিন্তু বোন,মনে করিয়ে দেবো কি!তুমি তো সবসময় উনার কথাই ভাবো।আমার তো ঘটা করে মনে করিয়ে দিতে হবেনা’
কুসুমের মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।কলি সত্যি কথাই বলেছে।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/