লীলাবালি🌺 #পর্ব_৩৫

0
655

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৫
আফনান লারা
.
কুসুম আর কিছু বললোনা।অর্ণবকে ওর চোখে কি পরিমাণ মিষ্টি লাগছে তা প্রকাশ করার মতন না।মুখে হাসি ফুটিয়ে শুধু চেয়ে রইলো সে।ওকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব সরে গেলো।
কুসুম এবার অর্ণবের পিঠের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।অর্ণব চেয়েছিল গামছা রোদে দিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাবে।বসে রইবে,ফুল ধরবে,রেলিং ধরে নিচে তাকাবে কিন্তু কুসুমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সব শখ মিটে গেছে।চলে গেলো ছাদ থেকে।
কুসুম আস্তে আস্তে ওর পিছু পিছু নেমে গেলো।অর্ণব তার রুমে যাবার সময় শুনতে পেলো কুসুমকে মা ডেকে বলছেন সে সকালের নাস্তা এখনও করেনি কেন।কুসুম জবাবে সেই আগের উত্তর দিলো।”বমি আসে”

তখনই অর্ণবকে মা থামিয়ে বললেন ওকে নিয়ে সময় করে একবার ডাক্তারের কাছে যেতে।যেটাই খেতে যায়,বলে বমি বসে।আঁতের সমস্যা হলো কিনা ডাক্তার ভাল বলতে পারবে।
অর্ণব বললো সে কাল সকালে চলে যাবে।ডাক্তারের কাছে যেতে হলে কুসুম যেন এখনই তৈরি হয়ে নেয়।
কুসুম ছুটে গিয়ে একটা নতুন বোরকা পরে নিলো।এই বোরকাটা ওকে অর্ণবের মা কিনে দিয়েছিলেন।
ওকে প্রথমে বোরকায় দেখে অর্ণব কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল।অন্যরকম লাগলো অনেকটা।যেন অন্য একটা কুসুম।
অর্ণব সামনে সামনে হাঁটছে আর কুসুম পিছু পিছু।মা জোর গলায় বলে দিলেন যেন কুসুমকে একটু ঘুরিয়ে আনে।
অর্ণব কথাতে মন দিলোনা।মেইন রোডে এসে একটা রিকশা নিলো।
দুজনে একসাথে বসেছে রিকশায়।বিশ্বরোড দিয়ে যাচ্ছিলো বলে কুসুম অর্ণবের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো।অর্ণব রিয়েক্ট করেনি তাতে।
হসপিটালে এসে একজন ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে বসে রইলো দুজন।কুসুম মাথা ঘুরিয়ে হসপিটালটা দেখে অর্ণবকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো সুই ফুটাবে কিনা।অর্ণব দুষ্টুমি করে বললো হ্যাঁ ফুটাবে।
ব্যস হয়ে গেলো।কুসুম কপালের ঘাম মুছতে মুছতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
হাঁপাচ্ছে।অর্ণব ওর এমন অবস্থা দেখে বললো,’পানি খাবে?’

সাথে সাথে জবাব দিলো সে পানি খাবে।তাই ও পানি আনতে চলে গেলো সামনের একটা ফিল্টার থেকে।
এদিকে কুসুমের পাশে একজন ভদ্র মহিলা এসে বসলেন সেসময়ে।কুসুমকে তিনি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন ওর কি সমস্যার কারণে ডাক্তার দেখাতে এসেছে।

-“আমার খালি বমি পায়।কিছু খেতে পারিনা’

-“ঐ ছেলেটা তোমার বর?’

-“হুম’

-“তাহলে ডাক্তারের কাছে আসার কি দরকার ছিল?তোমার তো বাচ্চা হবে।তুমি গর্ভবতী।এটা বোঝোনা?হেহে।আমি তো বুঝে গেছি’

কুসুম চোখ বড় করে তাকালো।তারপর এক ছুটে অর্ণবের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।অর্ণব পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো,’কি হয়েছে?’

-‘আমার নাকি বাচ্চা হবে’

-“কিহহ!কে বললো এটা?’

-“ঐ খালা বলেছেন’

অর্ণব কুসুমের হাত ধরে অন্য সিটে এনে বসিয়ে দিলো।তারপর চোখ বড় করে ঐ আন্টিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো।আন্টির কথাগুলো যদি এখন জুথি শুনতো নির্ঘাত মারামারি বাঁধিয়ে দিতো।
কুসুম পেটে হাত দিয়ে বললো,’আচ্ছা সত্যি বাচ্চা হবেনা তো?’

অর্ণব ওকে একটা ধমক মেরে বললো,’তোমার কিসের বাচ্চা হবে তুমি তে নিজেই একটা বাচ্চা।আর আমি তোমারে ছুঁইছি এখনও যে তোমার বাচ্চা হবে?’

কুসুম ফিসফিস করে বললো,”ছুঁয়েছেন তো”

অর্ণব কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কবে!

-“কবে মানে!আমার হাত কতবার ধরছেন মনে আছে আপনার!’

অর্ণবের মনটা চাইলো মাটি খুঁড়ে তার ভেতর ঢুকে যেতে।এই মেয়ে কয় কি!হাত ধরলে বাচ্চা হয় কেমনে?
শোনো! তোমার কোনো বাচ্চা-টাচ্চা হবেনা।এটা জাস্ট একটা অসুখের কারণে বমি বমি ভাব ফিল হয়।ব্যস এই টুকুই।

১০/১৫মিনিট পর কুসুমের সিরিয়াল নাম্বার আসলো।অর্ণব ও সাথে ঢুকলো রুমে।
ডাক্তার প্রশ্ন করলেন কুসুমের কি কি সমস্যা।

সে বললো তার খেতে বসলেই বমি পায়।

-‘প্রেগন্যান্সি টেস্ট দিব?আপনি কি বিবাহিত?কদিন ধরে বমি বমি ভাব হচ্ছে??’

অর্ণব চমকে বললো, আরে না না।ওই টেস্ট লাগবেনা।আমরা বিবাহিত ঠিক তবে এখন ওসব নিয়ে ভাবছিনা।শুধু শুধু টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই।

-‘হুম।উনাকে দেখে মনেও হয় না প্রেগন্যান্ট। সিওর হতেই জিজ্ঞেস করলাম।অনেক সময় কিছু কিছু ডিসিএসের লক্ষণ আর প্রেগন্যান্সির লক্ষণ একই হয়’

ডাক্তার রুচির ট্যাবলেট আর বমি ভাব বন্ধের ঔষুধ লিখে দিলেন আর নতুন করে খাবারের রুটিন ও লিখে দিয়েছেন।এরপর আবারও জিজ্ঞেস করলেন আর কোনো সমস্যা আছে কিনা

-“হ্যাঁ।মনে পড়েছে,আমার কয়েক মাস ধরে সকাল হলেই অনেক মাথা ব্যাথা করে।একদম রাত পর্যন্ত মাথা ব্যাথা থাকে’

ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে বললেন কেন সে আগে কথাটা বলেনি।তারপর কয়েকটা টেস্ট করাতে দিলেন উনি।রিপোর্ট কাল আসবে।
তাই টেস্ট গুলো করিয়ে অর্ণব কুসুমকে নিয়ে বাড়ির দিকে চললো।
ঐ পথে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে।কুসুম ওগুলো দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

অর্ণব বললো,’খাবে?’

-“এটা খায়?’

-“হ্যাঁ।’

অর্ণব দুইটা কিনে দিলো ওকে।কিন্তু আফসোস। মুখে দিতেই বমি এসে গেলো ওর।কিন্তু এবার অর্ণব ওকে আগলে রেখেছে।সকাল থেকে কিছু খায়নি বলে এতটাই দূর্বল ছিল সে যে মাটিতে বসে পড়েছিল।
অর্ণবের খুব চিন্তা হলো।কি এমন রোগ হতে পারে ওর??কিছু না খেতে পারলে তো আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।

চিন্তা করতে করতে একটা ফার্মেসীর দোকান থেকে অমিডন নামের একটা ঔষুধ কিনলো সে।অন্তত এটা খেলে বমি ভাবটা যাবে।
রিকশায় কুসুম হাওয়াই মিঠাই জোর করে খাচ্ছিলো।খুব ইচ্ছে করছিল খেতে।বমি ভাবকে তোয়াক্কা না করে খেয়ে যাচ্ছে সে।
বাড়ি ফিরার পর অর্ণব তার রুমে চলে গিয়েছিল।কুসুম মায়ের কাজে সাহায্য করতে তার কাছে এসেছে।টেবিলে খাবারের প্লেট সাজিয়ে দেবার পর বাবা সবাইকে ডেকে নিজেও বসলেন।কুসুম খেতে চায়না।অর্ণব খেতে বসে সবাইকে খেতে দেখলেও ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বারবার তাকাচ্ছিল।বাবা সেটা দেখে ওকেও বসতে বললেন কিন্তু সে রাজিনা।তার নাকি খিধে নেই।
ঠিক ঐ সময়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অর্ণব আজ একটা ধমক দিলো কুসুমকে।তাও খেতে বসার জন্য।বাবা মনে মনে খুশি হলেন কুসুমের প্রতি ওর এত রক্ষণশীলতা দেখে।কুসুম বসলো মায়ের পাশে।অর্ণবের ভয়ে মুখে লোকমাও তুললো।
বাবা অর্ণবের কাছে জানতে চাইলেন রিপোর্টে কি এসেছে।

-“রিপোর্ট কাল আসবে বাবা।বাসায় এসে দিয়ে যেতে বলেছি।আমি তো চলে যাব।কে যেতো রিপোর্টের জন্য তাই বলেছি যেন বাড়ি দিয়ে যায়।এক্সট্রা চার্জ ও নিয়েছে’

-“ভালে করেছিস’
—-
দুপুরের খাবার খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই যে যার রুমে চলে গিয়েছে।কুসুম সেই আবারও অসহায়ের মতন ঘুরঘুর করছিল বাড়ির বাহিরে।একটা হাওয়াই মিঠাই তখন খেয়েছিল এখন বাকিটা খাবে।তাই হাতে নিয়ে ঘুরছে বাড়ির সামনে।অর্ণব বারান্দায় এসে রকিং চেয়ারে বসার আগে ওকে বাহিরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আবার রুমে চলে এসেছে।সে খুব ভালে করে জানে কুসুম ওকে দেখলে কাছে এসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইতো।
—–
জুথির শরীর অনেক খারাপ।খারাপ বলতে তার কারণেই খারাপ হয়েছে।
গোপনে ড্রিংক করা জুথির পুরোনে অভ্যাস।বিদেশে খেয়ে নেশা ধরিয়েছিল।
এখন সেই মদের অনেক দরকার ছিল তার।যার কারণে অনেকগুলো বোতল কালেক্ট করে খাটের তলায় জমিয়েছে।বাবা বাসা থেকে বের হলেই দরজা বন্ধ করে একটা করে বোতলের মদ শেষ দিতো আর অচেতন হয়ে পড়ে থাকতো।কদিন ধরে দুটো বোতল শেষ দিতে গিয়ে তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে।এতটাই খারাপ হয়েছে যে বাবা ডাক্তার বাসায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।ডাক্তার ওর বাবার সামনে জিজ্ঞেস করে বসলন সে মদ খায় কিনা।
সে জবাব দিলো খায়।
বাবা আশ্চর্য হলেননা।কারণ এর আগেও জুথিকে তিনি মদ খেতে ধরেছিলেন।বকাঝকার পর ভাবলেন হয়ত ছেড়ে দেবে।কিন্তু নাহ!তার অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেলো।
ডাক্তার মদ খেতে কড়া নিষেধ করে কিছু ঔষুদের নাম লিখে চলে গেছেন।জুথি শোয়া থেকে উঠে বসে খিলখিল করে হাসছে।হাসতে হাসতে বললো,’আরও খাবো।কষ্ট দূর করার উপায় মনে পড়ে গেছে।আর মৃন্ময়ী অর্ণবনের কথা ভাববেনা।মৃন্ময়ী ভাল থাকার উপায় পেয়ে গেছ।সে আর কাঁদবেনা।শুধু ঘুমাবে।শুধু ঘুম…’

কথাটা বলতে বলতে বাবার কোলে শুয়ে পড়লো সে।বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।এ কদিন ধরে জুথির যে হাল হচ্ছে তা আর সহ্য করতে পারছেননা তিনি।অর্ণব কি এমন করেছে যে তার একমাত্র মেয়ের এমন অবস্থা হলো।
-‘আহারে কি হাসিখুশি ছিল আমার মেয়েটা।আর এখন তার মুখে হাসিই পাইনা আমি।কেন এমন হলো?অর্ণবকে একবার ডেকে আনতে হবে।জুথি হয়ত ওকে দেখলে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।নাহলে আমার মেয়েটাকে যে বাঁচাতে পারবোনা’

-‘আমার ওকে চাইনা বাবা।ও আমার না,অন্য কারোর।তুমি ওরে ডাকবানা।আম্মুর কাছে চলে যাব।ব্যবস্থা করো।আমি আর এখানে থাকতে চাইনা বাবা।জীবনের প্রথম প্রেম এত কষ্ট দেয় জানলে আমি এই ভুলটা করতাম না।পরিচয় অল্প সময়ের অথচ আমি তারে ভুলতে পারছিনা।কেন পারিনা বাবা!লোকে কেন বলে আবেগ??আবেগ হলে এত কষ্ট কেন হয় আমার?
সে তো আমায় ভালোবাসেনা।একটিবার ফোন ও করেনা।খবর নেওয়া তো দূরে থাক।
আচ্ছা একটা দিনে মানুষ এত বদলে যেতে পারে?তাহলে আমি বদলে যেতে পারছিনা কেন?’
চলবে ♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here