#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৭
আফনান লারা
.
-‘নাকি ভয় হয়?মৃদুলের প্রেমে পড়ে যাবার?নিজের প্রতি বিশ্বাস নেই?আচ্ছা মৃদুল নাহয় তোমাকে প্রেমে পড়তে দেবেনা।ধরে ফেলবে।যাবে এখন?’
জুথি কপাল কুঁচকে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।মৃদুল পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে দেখলো অর্ণবের কতগুলো মিসড্ কল।কল ব্যাক পরে করবে ভেবে ফোনটা পকেটে ভরে জুথির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অনেকদূর চলে গেছে তাই এক ছুট লাগালো মৃদুল।
জুথি ওকে ছুটে আসতে দেখে থামলো।মৃদুল কাছে এসে বললো,’আমাকে ছেড়ে পথ চলতে বলিনি’
-“কারোর সাথে মিট হলে ফোন ইউস করতে হয়না।খারাপ স্বভাব।’
-“আমি সরি’
জুথি মাথা নাড়িয়ে আবারও হাঁটা ধরলো।মৃদুল মুচকি হেসে যেতে যেতে বললো,’ রোজার ঈদে তোমার মাকে নিয়ে আসবে দেশে?’
-“আমাকে দেখার এত তাড়া?’
-‘না তা নয়।এমনি বললাম।আসলে আসবা না আসলে নেই।একান্তই তোমার ব্যাপার’
জুথি চুপ করে শুধু হাঁটছে।মৃদুল ঝালমুড়ির দোকানের সামনে এসে ঝালুমড়ির অর্ডারটা দিয়ে জুথির দিকে তাকালো।জুথির মুখটা বিষণ্ণতায় ভরা।কোথাও কোনো হাসি নেই।এমন মলীন মুখ দেখতে কেউই আশা করেনা।
জুথি মৃদুলের দিকে ফিরে হঠাৎ মুচকি হেসে দিলো।মৃদুল ও হাসলো।তারপর আবার দুজনের মুখ মলীন।
ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে জুথি বললো,’লেবুর খোসা কুচি করে দেওয়ায় আলাদা একটা দারুণ ঘ্রান এসেছে।বিদেশ গেলে স্ট্রিট ফুড অনেক বেশি মিস করবো।’
মৃদুল খুশি হয়ে বললো,’তাহলে না গেলেই হয়।’
জুথি হাঁটতে হাঁটতে বললো,’নাহ।অনেকদিন আম্মুকে দেখা হয়না।
তাছাড়া এখন এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।আপনি প্লিজ আর মানা করবেননা।কোথাও যাবার সময় কেউ এভাবে মানা করলে যাত্রা অশুভ হয়।’
—
কুসুম একটা শাড়ী হাতে গোসল করতে চলে গেছে।অর্ণব রুমগুলোর দেয়ালে দেয়ালে হাত রেখে ভাবছে কি করে এত হবুহু মিলে যেতে পারে।জবা গাছটাই যত ভয় দেখানোর দেখালো।
-‘না না। ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে আমি কখনও ছুঁবোনা।আরেহ!এত সবের মাঝে জুথির কথাই তো ভুলে গেলাম।একবার খবর নিতে হবে।’
ফোন বের করে অর্ণব জুথির নাম্বারে কল করলো।ও তখন রিকশা দিয়ে বাসায় ফিরছিল।অর্ণবের কল দেখে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলেও ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে কানে ধরলো ফোনটাকে।
-‘কেমন আছেন জুথি ম্যাডাম?’
-“ভালো।আপনি?’
-“আমি আছি কোনোরকম।শরীর ভালো আছে?ক্লাসে গিয়েছিলেন?’
-“হুম।’
অর্ণবের মনে হলো জুথি কথা বলতে চাইছেনা।তাই সে রেখে দিলো।জুথি ও চাইছিলনা কথা বলতে।শুধু শুধু কষ্ট হবে ভেবে নিজ থেকে কিছুই বলেনি।শুধু জবাব দিয়ে গেছে।
অর্ণব ফোন রেখে পেছনে তাকাতেই দেখলো কুসুম মাথায় গামছা বেঁধে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
গোসলের পানির শুদ্ধতা যেন ওর সাড়া অঙ্গে ভাসছে ঝলঝল করে।কোঁকড়া চুলগুলো ভিজে কেমন যেন হয়ে আছে।গামছার ফাঁকা অনেকখানি চুল দেখা গেলো।হলুদ শাড়ীতে যেন এক বিস্তর সরষে ফুলের ঝলক উড়ছে চোখের সামনে।
অর্ণবকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কুসুম হাত নাড়িয়ে বললো,’আপনি গোসল করবেন?’
-“নাহ।আমার তো তোয়ালে,জামা নেই।ব্যাগ আনা ছাড়া করবো কি করে?’
-‘কাল কি হোটেলে খাবেন নাকি হাঁড়ি পাতিল কিনে আনবেন?’
-‘রান্না করার শখ হইছে তোমার?পারো রাঁধতে?’
কুসুম থতমত খেয়ে জবাব দিলো পারে।তার থতমত খাওয়া দেখে অর্ণবের সন্দেহ হলো কিছুটা।তাও ভাবলো মেস থেকে ফেরার সময় ওর কথা মতন পাতিল কিনে আনবে সাথে বাজার।এগুলো ভেবে মানিব্যাগটা বের করে বিছানায় গিয়ে বসলো।কুসুম চৌকাঠ ধরে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’চামচ ও আনিয়েন।বড় চামচ।’
অর্ণব টাকা গুনছে শব্দ করে।কুসুম ছুটে ওর সামনে এসে বসে বললো, ‘আমাকে গোনা শিখিয়ে দেবেন?’
অর্ণব ব্রু কুঁচকে বললো,’পড়ালেখা শিখে কার মন জয় করবে?বিয়ে তো হয়েই গেছে।’
-‘আপনার মন জয় করবো’
-‘আমার মন জয় করলেও কি আর না করলেও কি।বিয়ের বন্ধনে তো আটকা পড়ে গেলাম’
-“আটকা পড়লেও মন তো পেলাম না।সংসার জীবন দিয়ে কি হবে যদি মূলহোতাই পছন্দ না করতে পারে?’
-‘শেখানো সহজ কথানা।অনেক সময় দিতে হবে।যেটা আমার হাতে নেই।আগামী মাসে আমার রেসাল্ট দিবে।এরপর আমি ভালো চাকরি খুঁজতে চলে যাবো’
-‘প্রতিদিন ভোরে ফজর নামাজের পর পারবেননা?’
অর্ণব আর কিছু বললোনা।টাকা গুছিয়ে পকেটে পুরে উঠে চলে গেলো।
কুসুম বিড়বিড় করে বললো,’এক দুই,তিন তারপর কি যেন!’
—
দুপুর দুইটার সময় কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেলো।কুসুম রেলিংয়ের সাথে লেগে জবা ফুলগাছটাকে মনযোগ সহকারে দেখছিল।আর অর্ণব ছিল তার রুমে।কলিংবেলের আওয়াজ শুনে কুসুম ছুটে এসে দরজা খুলেছে।ওপাশে জাহান দাঁড়িয়ে।
মুচকি হেসে বললো,’খালু কইছিল আজ আপনাদের দুপুরের খাবারের জন্য দাওয়াত দিতে।কিন্তু আমি না কাজল দিতে গিয়ে ভুলে গেছিলাম।আপনারা কি দুপুরের খাবার খেয়ে নিছেন?’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে বললো,’না খাইনি’
-“তো চলেন।রান্না সব শেষ।একেবারে পোলাও,কোর্মা,ইলিশ ভাজা কিছু আর বাকি নাই।সব আমি রাঁধছি।খালা শুধু মসলা দেখিয়ে দিছে।খাইলে পাগল হই হাসপাতালে ভর্তি হইবেন।এত মজার খাবার।হাহাহাহা!’
কুসুম দাঁত কেলিয়ে বললো,’আচ্ছা’
জাহান চলে যাবার পর সে দরজাটা লাগিয়ে আবারও জবা ফুলগাছটার কাছে এসে উশখুশ করছিল কি করে একটা ফুল নিয়ে কানে গুজবে।অর্ণবের ধমকের ভয়ে সেটা আর হয়ে উঠছেনা।গাছটা ভর্তি জবা ফুল।মন চাইছে গিয়ে শুয়ে থাকতে।
অর্ণব রুম থেকে বের হয়ে দেখলো কুসুম বারান্দাতে দাঁড়িয়ে বারবার জবা ফুলগাছটা ধরে ধরে দেখছে।
-‘নিশ্চয় ফুল ছিঁড়তে চায় কিন্তু আমার ভয়ে ছিঁড়তে পারছেনা।’
কুসুম শেষে একটা ফুল ছিঁড়েই নিলো।অর্ণব তো তার রুমে।সে কি করে দেখবে?কানে দিয়ে আউশ মিটিয়ে আবার লুকিয়ে ফেলা যাবে।কানে গুজে দাঁত কেলিয়ে কুসুম শাড়ীর আঁচল ধরে ঘুরতে লাগলো।ঘুরতে যেইনা পেছনে তাকালো দেখলো অর্ণব তাকিয়ে আছে।হঠাৎ ওকে ওখানে দেখে কুসুম পিছলিয়ে পড়ে যাওয়া ধরতেই অর্ণব হাত ধরে ফেললো ওর।
কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফুলটা কান থেকে সরিয়ে ফেললো কুুসুম।
-‘আমি না থাকলে ফুল নিয়ে যা খুশি তাই করো সমস্যা নেই’
-‘আচ্ছা এই ফুলটা আপনি অপছন্দ করেন কেন?ফুল তো অপছন্দ করার মতন না’
-” সুন্দর সবসময় পছন্দ হতে হবে?
আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি যেটা ছিল দুঃস্বপ্ন।আর সেটাতে এই ফুল ছিল যার জন্য আমি এটা দেখলে আমার অস্বস্তি বোধ হয়।আশা করি তুমি আর আমায় অস্বস্তিতে ফেলবেনা?’
কুসুম মাথা নাড়ালো।অর্ণব ওকে নিয়ে নিচ তলায় এসেছে।ভেতরে মৃদুলের বাবা চেয়ারে বসে ছিলেন ওদের অপেক্ষায়।মিজুয়ানা বেগম রান্নাঘরে।
তারা দুজন গিয়ে দুটো চেয়ারে বসলো চুপচাপ।টেবিল সম্পূর্ণ সাজানো খাবার দাবারে।
সুলতান শাহ টুপি খুলে এক পাশে রেখে বললেন,’ভেবেছিলাম আজ মোঘলদের মেনু আমাদের দুপুরের মেনু বানাবো।ঘন করে ঝোল হবে।আহা!!
কিন্তু জাহান এগুলো পারেনা।সে পারে শুধু তরকারিকে ডালের মতন বানাতে।এত পানি মানুষ দেয়?মিজুয়ানা চোখে ঝাপসা দেখে বলে তাকে রান্নাঘরে যেতে মানা করেছি আমি।আর এখন জাহানের তরকারি নামক ডাল খেতে হয় রোজ।
মাঝে মাঝে তরকারিতে শীমের বিচি খুঁজতে আমার চশমা ধরে রাখা লাগে।এত এত ঝোল।তো মোঘলরা আবার মিষ্টি জাতীয় জিনিস অনেক খেতো বুঝলে।যেমন ধরো হালুয়া,কুলফি,কালোজাম।তো আমি আজ হালুয়ার ব্যবস্থা করেছি।কেমন একটা মোঘলীয় ভাব আসবে।তোমরা ভেবোনা।আজ মিজুয়ানা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রান্না দেখিয়ে দিয়েছে।পানি পানি ঝোল হবেনা।’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/