লীলাবালি🌺 #পর্ব_৬৩

0
648

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৩
আফনান লারা
.
‘আর ইউ সিরিয়াস মৃদুল?জুথি?মানে মৃন্ময়ী জুথি?’

মৃদুল মাথা চুলকে অন্যদিকে ফিরে ওয়ালের দিকে গম্ভীর ভাব নিয়ে চেয়ে আছে।অর্ণবের প্রশ্নের জবাব দেওয়া জরুরি মনে করলোনা।রাতে অতিরিক্ত মদ সেবন করায় মাথা ব্যাথা আর শরীর দূর্বল ফিলের কারণে তার এখন কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।অর্ণব পানির বোতল একটা কিনে এনে ওর সামনের চেয়ারে রেখে বসলো পাশে।তারপর হালকা হেসে বললো,’মৃন্ময়ী খারাপ না,ভালোই।তোর পছন্দ বরাবরই সুন্দর।কিন্তু জুথি এখন যে মনমানসিকতা বয়ে বিদেশ চলে গেলো তাতে কি তোর মনে হয় সে তোকে আপন করে নেবে?’

মৃদুল পানি খাচ্ছে চুপচাপ। তমাল ভেংচি মেরে কুসুমকে দেখতে চলে গেলো।
অর্ণব ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো,’তোর ভাগ্যে থাকলে ফিরে আসবে।চিন্তা করিস না।চাকরির পরীক্ষা দিতে নাম এবার।চাকরি না করলে করিম স্যার তার সুন্দরী মডার্ন মেয়ে তোর হাতে দেবেনা রে’

মৃদুল এবার অর্ণবের দিকে ফিরে বসলো।ওর চোখে চোখ রেখে বললো,’জানিস আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে জুথি আমায় ভালবাসে কিনা।কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পজিটিভ ইশারা করেনি।জাস্ট একবার জানতে চাই সে কি আমাকে ঘৃনা করে নাকি সত্যি তার ফিলিংস আছে আমার প্রতি’

‘কল করেছে একবারও?’

‘নাহ!ওর নাম্বার পাবো কই?সিঙ্গাপুরে ওর পরিবারের নাম্বার তো দেয়নি।কথাও বলতে পারছিনা’

‘ফেসবুকে নক দে’

‘তুই তো ওর খবর রাখিসনা।এক মাস হলো আইডি অফ করে রেখেছে।তাছাড়া আমাকে আগেই ব্লক করছিল।ফেক আইডি দিয়ে চেক করতাম।
এখন সব কনট্যাক্ট বন্ধ।আমি কি শুধু শুধু পাগল হইলাম?’

অর্ণব মৃদুলের মাথা মুছে দিয়ে বললো শান্ত হতে।জুথি নিশ্চয় ফোন দেবে ওকে।হয়ত ফেসবুকে নক দেবে’

‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’

‘তুই কবে থেকে এসবে পারমিশন নেওয়া শুরু করলি?’

‘মৃন্ময়ী যদি আমার হয় তোর খারাপ লাগবে না?’

‘মৃন্ময়ী ডিজার্ভ সামওয়ান বেটার দ্যান মি।আর আমার মনে হয় সে সেটা পেয়ে গেছে।তুই ওর যোগ্য।আমি জানি তুই ওকে অনেক ভাল রাখবি’
—–
সাদা পোশাকের নার্স দরজার কাছে ঘেঁষে ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল।ডাক্তার যা যা বলে দিচ্ছিল সেসব সে খাতায় নোট করছে।কুসুম শুয়ে শুয়ে দেখছিল সেটা।হাতের ব্যাথায় হাতটা যেমন আছে তেমনই রাখতে হচ্ছে।নড়াচড়া করা যাচ্ছেনা।নার্স সেসময়ে রুমের ভেতরে চলে এসে কাগজগুলো এক পাশে গুছিয়ে রেখে কুসুমের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।

কুসুম ওর হাসি দেখে বললো,’আচ্ছা আপনার নাম কি?’

‘ রামিসা’

‘ওহ।জানেন আমার কি হয়েছে?’

‘ব্রেইন টিউমার’

‘সেটা কি?’

‘মাথার অসুখ।ভাল হয়ে যাবে।টেনসন নিওনা কেমন?’

কথাটা বলে রামিসা চলে গেলো।কুসুম এবার ওঠার চেষ্টা করছে নিজে নিজে।।
অর্ণব যে কোথায় গেলো।অনেকক্ষণ তার মুখ দেখা হয়না।
‘আচ্ছা একা ফেলে চলে যাননি তো আবার?
নাহ!তা কেন করবেন।পানি খাবো!গলা শুকিয়ে এসেছে’

হাত বাড়িয়ে পাশের টেবিলে থাকা পানির বোতলটা নিলো সে।ক্যানোলা লাগানো হাতে বোতলের ছিপি খুলে মুখে দেওয়া ধরতেই অর্ণব এসে ওর হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,’পানি খেতে পারবেনা।দেখছোনা তোমায় ঔষুধ দিয়েছে?এটা খোলা ছাড়া খেতে পারবেনা’

‘কিন্তু আমার তো তৃষ্টা পেয়েছে’

‘কিছু হবেনা তাতে।খাওয়া নিষেধ’

‘আপনি কই ছিলেন?’

‘মৃদুল এসেছিল।শুয়ে থাকো।উঠবেনা’

কথা শেষ করে অর্ণব চলে যাওয়া ধরতেই কুসুম ওর হাত ধরে ফেললো।গলার স্বর আস্তে করে বললো,’একটু বসবেন?আমার একা একা ভাল লাগেনা একটুও’

অর্ণব তাই করলো।এক পাশে বসে থাকলো।বিকাল হতে চললো কুসুমের শরীরে দেওয়া ঔষুধের কাজ এখনও লেগে আছে তাদের দাপটে।
কুসুম এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছিল।ও একবারও তাকালোনা দেখে মুখ ফিরিয়ে পাশের জানালাটার দিকে চেয়ে রইলো সে।অর্ণব এবার তাকিয়েছে।কুসুমের ওমন সুন্দর চেহারায় সারাদিনের উপোসের ছাপ যেন ছিঁটে আকারে পড়ে আছে।ঠোঁট শুকিয়ে গেছে পানি না খাওয়ায়।এমন বিষন্ন মুখ দেখে অর্ণবের ইচ্ছে করে সব যান্ত্রিকতা সরিয়ে ওকে নিয়ে একটা মনোমুগ্ধকর জায়গায় চলে যেতে।যেখানের বাতাস ওকে আবার আগের জীবন ফিরিয়ে দেবে।ওর কোনো অসুখ থাকবেনা সেখানে।
ইশ যদি ভাবনাটা সত্যি হয়ে যেতো!
কুসুম?’

‘হুম’

‘খিধে পেয়েছে?’

‘নাহ।তৃষ্ণা পেয়েছে।পানি খাওয়াবেন?’

‘সম্ভব হলে খাওয়াতাম।’

মৃদুল গালে হাত রেখে ফেসবুকের নিউজ ফিডে হাল চাষ করছিল।
তার আইডি তে সব কৃষি বিজ্ঞানী।ছাদে কৃষি কাজ করে আর সারাদিন ছবি ছাড়ে,কৃষি ব্লগার।
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই টমেটো ট্রি*
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই বেনগান ট্রি*
*হ্যালো গাইজ দিস ইজ মাই চিলি ট্রি*
মাঝে মাঝে তার নিজেকে কৃষক মনে হয়।
জুথির আইডি এই নিয়ে দশবার চেক করা শেষ।
‘মেয়েটা কি সত্যি সত্যি ভুলে গেলো?
এতটাও স্বার্থপর হয় কেউ?আমার ভালবাসা আর অর্ণবের ভালবাসা কি তার কাছে এক হয়ে গেলো?
আমাকে সে বোঝেনি এতদিন?
আসলে একজন ঠিক বলেছিল।
“যে প্রেমে একবার ছ্যাঁকা খায় সে এরপরে আরও একটা ছ্যাঁকা খায়।শতাধিক নিশ্চিত সত্য কথা! ‘দুবার বেকুব হতেই হয়’

হঠাৎ মেসেঞ্জারের মিষ্টি আওয়াজে মৃদুলের চোখ গেলো নোটিফিকেশান বারের দিকে।ওমা জুথির প্রোফাইলের মতন একদম সেম দেখতে একটা প্রোফাইল থেকে মেসেজ আসলো।
মৃদুল প্রথমে ভেবেছে এটা অন্য কেউ।কিন্তু মেসেজে গিয়ে দেখলো এটা জুথি।
জুথি লিখেছে-কেমন আছেন ভাইয়া?’

‘ভাইয়া?যাই হোক ওটা নিয়ে পরে ধরবো।আগে বলো তোমার আম্মুর কাছে পোঁছে গেছো?’

‘হুম।কেমম আছেন আপনি?’

‘যেমন রেখে গেছিলে সে অবস্থার অবনতি ঘটে আমি এখন পথিক।’

‘পথিক কি বাসার ঠিকানা ভুলে গেছে?’

‘গেছিল তবে এখন সে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে।তুমি আসবে কবে?’

‘আজ আসলাম সিঙ্গাপুর।এখন জিজ্ঞেস করছেন কবে আসবো?আমি আর আসছিনা।’

মৃদুল রাগ করে ডাটা অফ করে দিয়েছে।এরকম ঘাঁড়ত্যাড়া মেয়ে কেন ও??
একটু নরম মনের হতে পারেনা?এতটা তুচ্ছজ্ঞান কেন করে!।বেশ করেছে অর্ণব ওকে ছ্যাঁকা দিয়েছে!’

তমাল ওর পাশে বসে বললো,’বেশ করেছে অনামিকা তোমায় ছ্যাঁকা দিয়েছে’

‘ওর অবস্থা কেমন দেখছেন?’

ডাক্তার আসাদুজ্জামান কুসুমের হাতের ক্যানোলা খুলতে খুলতে বললেন,’আপনার ওয়াইফের তো অনেক আগে থেকে এই অসুখ!উনি রিভিল করলেন এই দিনে।আপনি জানেন আজ সকালে যে ঔষুধ আমরা প্রয়োগ করেছিলাম তার কোনো রিয়েকশানই তার শরীরে দেখা গেলোনা?’

অর্ণবের মাথায় যেন বাজ পড়লো।বুকের ভেতরে অনবরত ডিপডিপ করছে ভয়ে।তাও সাহস করে বললো,’তাহলে এখন?’

‘আমি আরও দুজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করবো এ ব্যাপারে।আজকের জন্য উনাকে বাসায় নিয়ে যান।
ঐ দুজন ডাক্তার আজ রাতেই ফিরবেন।তাদের সাথে আলাপ করে চিকিৎসা শুরু করবো।ততক্ষণ উনার বাড়িতে সেবা চালু রাখবেন।’

‘ঔষুধ শরীরে কাজ না করা তো ভাল লক্ষণ না।আমার ভয় করছে।খারাপ কিছু হবেনা তো?’

‘আগে জানতে হবে উনার এই অসুখটা কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।আমি আমার ধারণা মতে ভেবেছিলাম এক বছর হয়েছে কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল।এক বছর হলে আজকে যে ঔষুধ আমরা তার শরীরে দিয়েছিলাম সে ঔষুধে কাজ শুরু হয়ে যেতো অথচ এখন পর্যন্ত তার শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা গেলো না।’

‘পানি খেতে পারবে?’

‘হুম এখন পারবে।স্ট্রেস মুক্ত রাখবেন ওনাকে।এখন বাড়ি নিয়ে যান।আর আপনিও চিন্তা মুক্ত থাকুন।উনার সেবা করতে আপনাকে স্ট্রং থাকবে হবে।

উনাদের দুজনের কথা সব শুনে কুসুম বললো,’আমি কি মরে যাব?ঐ যে ডাক্তাররা বলে আর এক মাস বাঁচবে।আমি কতদিন বাঁচবো?’

‘কুসুম!আন্দাজে কথা বলবেনা।চুপ থাকো’
———
সিএনজিতে ওঠার পর থেকে অর্ণব বারবার পাঞ্জাবি টেনে ধরে বুকে ফু দিচ্ছিল।কপাল মুছতেছিল।কুসুম সব খেয়াল করেছে।
অর্ণব যখন অনেক টেনসন করে তখন তার গরম লাগে।গা বেয়ে ঘামে ভরে যায়।
কোনোকিছু বলতেও ভয় করে আজকাল।তাও সাহস জুগিয়ে ও বললো,’আমার কি কঠিন রোগ?’

‘তুমি রোগ নিয়ে আর একটা কথাও বলবেনা’

‘বাহ রে!আমার রোগ আর আমি বলবোনা?’

‘না বলবেনা।হুটহাট অলক্ষুণে কথা কেন বলবে তুমি?আমার একদম ভাল্লাগেনা এসব।সবসময় ভাল কিছু বলবে’

‘ভাল বললে যে সবসময় খারাপটাই হয়’

অর্ণব ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।কুসুমের বলা প্রতিটা কথা আজকাল অনেক দামি মনে ঠেকে।ইচ্ছে হয় রেকর্ড করে রাখতে।পরে মনকে বিশাল সান্ত্বনা দিয়ে বলে নাহ!কুুসুমের কিছু হবেনা, সে আজীবন বেঁচে থাকবে,পাশে থাকবে তার।
এরপরই একবার এক দুঃসংবাদে ফোন বের করে হাজার খানেক ফটো তুলে রাখতে ইচ্ছে হয়।হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়।বুক খালি খালি হয়ে আসে।অথচ মানুষটা এখনও সামনে!!চোখের পলক ফেলে,হাত নাড়ে,মুখ বাঁকায়,কপাল কুঁচকায়,রাগ করে!অভিমান দেখায়।এসব থেকে যাবে তো?’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here