লীলাবালি🌺 #পর্ব_৬৮

0
614

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৮
আফনান লারা
.
মৃদুল যে এতদূর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে সে ভাবতেই পারেনি।কপালে হাত দিয়ে মায়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো সে।
ওপাশ থেকে কাড়ি কাড়ি বকাঝকার ঢল আসতে শুরু হয়ে গেছে একের পর এক।জুথি মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে, মৃদুল মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছিল।দীর্ঘ দশ মিনিট ধরে বকাবকি করার পর সে চুপ হলো।জুথি এবার সোজা হয়ে বসে উত্তর দিচ্ছে
‘আমি এখানে এসেছি সব কিছু থেকে দূরে থাকতে।আমাকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিত আপনার।তা না করে পাগলামো শুরু করে দিয়েছেন’

‘পাগলামো?আমাকে কি তোমার ভাল মানুষ মনে হয়?আমি আগেও পাগল ছিলাম আর এখনও পাগল আছি।না বেড়েছে আর না কমেছে।এই আর নতুন কি’

‘আমি বোঝাতে চেয়েছি….’

‘ব্যস।আবার সেই ডায়ালগ!আমাকে একা থাকতে দেন দেন মৃদুল ভাইয়া!আমি আপনাকে ভালবাসিনা।হ্যানত্যান।
আমার প্রতি তোমার কি পরিমাণ অনুভূতি কাজ করে সেটা প্রকাশ পাবে একদিন পর’

‘কি হবে একদিন পর?’

‘আমি একটা মেয়েকে ধরে বিয়ে করবো।হোক সে ৩০+, হোক সে অশিক্ষিত,হোক সে ১৬+,হোক সে বোকা।বিয়ে করবোই করবো।জানো আমি ওরে পেয়েও গেছি।তার নাম হইলো মৌটুসি।
হ্যাঁ ভাই কার্ডটা সুন্দর করে ছাপাইয়েন,এটার মত করে।কাল গায়ে হলুদ।আজকের মধ্যেই লাগবে’

‘কিহ!আপনি সিরিয়াস?’

‘তা নয়ত কি!ভিডিও কল দাও।কার্ড ছাপানো দেখাই।তুমি তো আমায় বিশ্বাস করবেনা।কল কাটো।
মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়ে তোমায় প্রমাণ দিচ্ছি।’

জুথি কল কাটার আগেই মৃদুল কেটে দিয়েছে।এরপর ওকে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল ও দিছে।
জুথি নড়েচড়ে বসে রিসিভ করলো।মৃদুল সত্যি সত্যি ছাপাখানায়।
একটা কার্ড তুলে ওকে কার্ডের উপরে মৃদুল নাম ও দেখালো,সাথে মৌটুসী নাম।জুথি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।

”হুহ!বাই।আমি এখন খুব ব্যস্ত। বউকে সময় দিতে হবে।বিয়ের আগে হালকা পাতলা সময় দিতে হয়।যেমন ধরো বাবু খাইছো ঐ টাইপ আর কি।টাটা’

মৃদুল লাইন কেটে দিছে।জুথি ফোন রেখে ভাবছে এটা সত্যি নাকি মিথ্যে।হঠাৎ নোটিফিকেশান আসলো ফেসবুকের।সে ফোন হাতে নিয়ে চেক করে দেখলো মৃদুল ফেসবুকে পোস্ট দিছে” গট এঙ্গেজড্।”
তার মানে সব সত্যি??
প্রথমে বিশ্বাস না হলেও যতই সব দেখে ততই বিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে।
—-
মৃদুল মেসে ফিরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।ফেসবুকে সবার রিপ্লাই দিচ্ছে।
তমাল এক পা, এক পা করে এগোচ্ছিল ওর দিকে।ওর একদম কাছে এসে খাটের স্ট্যান্ডটা ধরে ক্ষীণ গলায় বললো,’এই মৃদুল ভাই।তোমার নাকি বিয়ে?’

মৃদুল শুরুতে ভয় পেয়ে গেছিলো।পরে বুকে থুথু দিয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,’এ কথা তুই জিজ্ঞেস করছিস নাকি জুথি তোকে দিয়ে জিজ্ঞেস করাচ্ছে?’

‘জুথি আপুর সাথে আমার যোগাযোগ হবে কি করে?উনার বিদেশী নাম্বারই তো নেই আমার কাছে।আর ফেসবুকে উনাকে মজা করে একটা কমেন্ট করেছি বলে ব্লক মেরেছিল সেই কবেই।তুমি কি কথা ঘুরাতে চাইতেছো?’

‘ওহ।তার মানে তুই নিজ থেকে জানতে চাস আমার বিয়ে কিনা।
তাহলে শোন,বিয়ে হচ্ছেনা।সব ভং’

তমাল ব্রু কুঁচকে বললো,’তাহলে ওমন ঢাক ঢোল পেটাচ্ছো কেন?তোমার স্টেটাসের জন্য ফেসবুকে ঢুকতে পারছিনা।তোমার শত শত মেয়ে ফ্যানস মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে ফেসবুকের ওয়ালে।তা কি জানো?’

‘তাই তো ট্যাগ করা অপশান বন্ধ করতেছিলাম বসে বসে।আচ্ছা জুথিকে কি কমেন্ট করছিলি যে ব্লক দিলো?’

‘দিনে একটা করে পোস্ট দেবে তাও বিচ্ছেদের।তাই কমেন্ট করছিলাম”দুনিয়াতে মনে হয় তুমিই ছ্যাঁকা খেয়েছো আপু’

ব্যস দিলো ব্লক।ভাবো আমার কি দোষ?’

মৃদুল শোয়া থেকে উঠে ওর গায়ে ধুরুম করে কিল একটা মেরে বললো,’আমার বউ হয় সে।সুন্দর কমেন্ট করবি, তা না করে এসব কি কমেন্ট করেছিস।বেশ হয়েছে ও তোকে ব্লক মেরেছে’

‘তোমার কেমন বউ সে?? বিদেশ কেন থাকে তাহলে?’

“যা ভাগ’
—-
কুসুম ঘুমায়।খাবার খেয়েই ঘুমায়।রাত বারোটা চব্বিশ বাজে এখন।আজ কুসুমের ঘুমের দৃশ্যটা দেখার মতন।কারণ সে অর্ণবের বাম হাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।অর্ণব এর কারণে ঠিকমত নড়তেও পারছিলনা তাও সে মুগ্ধ নয়নে ওকেই দেখে যাচ্ছে সেই এগারোটা থেকে।
নিজের জীবনসঙ্গী পাশে শুয়ে থাকলে সেটার অনুভূতি কতটা মধুর রুপ ধারণ করে তা অর্ণব বেশ করে টের পাচ্ছে।
মেয়েটাকে সহ্য করতে পারতোনা আর এতদিনে তার সঙ্গ ওকে কতটা বদলে দিলো তা সে নিজেও খেয়াল করেছে।কুসুমের নরম ঠোঁটজোড়া ওর কুনুইয়ের সাথে লাগছিল বারবার।
সুড়সুড়ি লাগলেও মনের ভেতর ভাললাগা কাজ করছিল।গভীর রাত,রাতের হালকা বাতাস এসে জানালার পর্দাটাকে হাওয়ায় দোল খাওয়ায়।জঙ্গল থেকে ছোট বড় পোকার একসাথে মিশে হয়ে যাওয়া আওয়াজ ভেসে আসে কানে।তখন ইচ্ছে করে কাঁথার নিচে মিশে যেতে।ছোটকালে তো ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরা হতো।আর এখন!
কুসুম নড়ছিল হঠাৎ।অর্ণব টের পেয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।দেখার অপেক্ষায় আছে সে ঠিক কি করে।হঠাৎ কুসুম উঠে ছুট লাগালো ওয়াশরুমের দিকে।অর্ণব ভাবেনি সে উঠে এমন দ্রুত চলে যাবে।মনে ভয় হওয়ায় সেও পিছু পিছু গেলো দেখতে।
কিছুক্ষণ পর কুুসম বমি করে বের হতেই ওকে সামনে দেখে পা বাড়ালোনা আর।

‘আমাকে ডাকলেনা কেন?’

“এই আর নতুন কি।আমি তো প্রতি রাতেই এ সময়ে বমি করি।আপনি ঘুমে থাকেন।আজ ঘুমাননি?’

‘প্রতি রাতে?আর আমি টেরই পায়না।আজ জেগে না থাকলে হয়ত জানতাম ও না।শরীর খারাপ লাগে এখন?’

“নাহ।বমি হওয়ায় শান্তি লাগছে।এবার শান্তির ঘুম এসে যাবে।’

কথাটা বলে কুসুম সোজা বিছানায় উঠে কিণারায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে।অর্ণবের মাথায় হাজারও চিন্তা বাসা বাঁধছে।
এরকম অসুস্থতা কেন হলো ওর।একটু ভাল জীবন কি সে পেতে পারেনা।এমন ব্যবহার করছে আজকাল যেন ওর অভ্যাস হয়ে গেছে সবকিছু।
বিছানায় ফিরে অর্ণব বসে থেকে ওকে দেখছে মনযোগে।ঘটনাক্রমে কুসুম বিয়ের পর থেকে যা যা করত তার সব এখন অর্ণব করে।আর অর্ণব যেমন ব্যবহার করত সে সব ব্যবহার এখন কুসুম করে।
আশ্চর্য ট্রান্সফরমেশন ঘটেছে।অর্ণব ঝিমুতে ঝিমুতে কুসুমের খুব কাছে মাথা গুজে শুয়ে পড়ে।ওর শোয়ার আবাস পেয়ে কুসুম পেছনে তাকিয়ে দেখলো অর্ণব ওর খুব কাছে এসে শুয়েছে।এদিকে দেয়ালের এপারে বাড়তি জায়গা নেই সরার।
কুসুম চওড়া হয়ে শুলো তাই।
উনার এমন ব্যবহারে সে অবশ্যই খুশি।এতদিন অভিনয় মনে হলেও এখন সত্যি লাগে।কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় তার মনে এখনও মিননয়ি আপু রয়ে গেছেন।তার স্থান হয়ত আমি কখনও পাব না।পেতে চাই ও না।আচ্ছা এই মানুষটা কি সে রকম অনুভব করে যেমন আমি করি?

হাত বাড়িয়ে ওর কপাল ছুঁলো সে।চোখ বুজে বসে থাকলে এরপর।
সবসময় মনে হয় এই সুখ বেশিদিন থাকার নয়।
সুখ হলো শুকনো পাতার মতন।গাছে সবসময় সবুজ তাজা পাতা থাকে।শুকনো দু একটা পাতা নিচে ঝরে পড়ে।
ঝাঁক ঝাঁক শুকনো পাতার সময় কেবল বসন্তে আসে।বসন্ত যাবার সময় গাছের ঢালে ঢালে নতুন পাতার কলি রেখে যায়।
ঠিক সেরকম মানুষের জীবনে সুখের সময়কাল খুবই অল্প।তবে ঐ সময়টুকু দারুণ আনন্দের হয়।বসন্তে প্রকৃতি যেমন নতুন করে সাজে তেমনই আমরা মানুষেরা সুখে আলাদা আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকি।এরপর দুঃখের সময়ে মলিন মুখের আগমন।’

‘আমার জ্বর নেই’

অর্ণবের কথা শুনে কুসুম চট করে তার হাত সরিয়ে নিলো ওর কপালের উপর থেকে।অর্ণব মাথা তুলে বললো,’আমার কপালে হাত দিয়ে কি দেখছিলে?’

“কিছুনা।ঐ মশা মনে হলো’

‘তেজপাতা ফ্লেভারের কয়েল জ্বালিয়েছি। মশা থাকার কথানা।অন্য বাহানা বলো’

কুুসুম মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েছে।অর্ণব আবার বললো,’কথায় না পারলে পারো শুধু মুখ ঘুরিয়ে নিতে।শেয়াল দেখবে?’

কুসুম কাঁথা টেনে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে।ঠিক সেসময়ে শেয়াল দুটো একসাথে ডাক দিয়ে উঠলো।কুসুমের ভয়ের লিমিট চলে গেছে শেষ পর্যায়ে।ভয় পেয়ে উঠে বসে জানালা থেকে সরতে সরতে অর্ণবের সাথে ঘেঁষে বসে পড়েছে সে।অর্ণব শুয়ে থেকে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে।

‘আপনার ভয় করছেনা?’

“শেয়াল জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকবে?জানালা তো বন্ধ’

“ওহ হ্যাঁ তাই তো।না তাই তো না।বাতাসে পর্দা নড়ছে।জানালা তো দেখি খোলা!’
কথাটা বলে কুসুম পাশে চেয়ে অর্ণবকে দেখলোনা।জানালা খোলা শুনে সে ফুলের টব নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here