#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭০
আফনান লারা
.
‘অর্ণব ঠিক বলেছিল।তোমার মতন চালাক একটা মেয়েকে আমি ফাঁদে ফেলতে পারবোনা উল্টে নিজেই ফাঁদে পড়ে গেলাম।হায়রে আমার ছিদ্র কপাল!”
‘আমার অগোচরে মিঃঅর্ণব আমায় নিয়ে আলোচনা করে?’
‘আলোচনা নয়।তবে সে তোমার স্বভাবের সাথে পরিচিত।আমাকে সাবধান করে দিলো আর কি’
‘পরিচিত হয়ে আর কি লাভ হলো।যাই হোক,রাখছি।আমার কাজ আছে’
জুথি লাইন কেটে দেওয়ার পর মৃদুল গিয়ে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্টেটাসটা ডিলেট করে দিলো চুপিসারে।ভেবেছিল এরকম একটা চালে জুথি পাগলের মতন ছুটে এসে বলবে,’মৃদুল ভাইয়া আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি।কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টা সব হয়ে গেলো।
আমি বোকা নাকি আমার করা কাজটা বোকামি ছিল বুঝতে পারিনা।শক্তপোক্ত চাল চেলেও হেরে যেতে হলো।এখন যে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম সবাই তো সত্যি ধরে নিয়েছে।এখন শুরু হবে সবার এক ডায়ালগ,’ট্রিট দে’
—-
খুব সকালে কুসুম উঠেছিল আজ।অর্ণব ঘুমে,মোট কথা বাড়ির সবাই ঘুমে এখন।
সুলতান শাহ, মিজুয়ানা নামাজ পড়ে পুনরায় ঘুমোতে যান।তাই এ সময়টাতে তারাও নিদ্রায় তলিত।
কুসুম একা একা দরজা খুলে বাগানে এসে জবা ফুল গাছটার তলায় বসে আছে।সবুজ ঘাসের উপর।সকালের শিশির জমে ঘাসগুলোর তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে।
ছুঁলেই শীত শীত করে খুব।আঁচল টেনে দু কাঁধ ঢেকে সে নিজের চির চেনা গানটা গাইতে গাইতে ঘাসে হাত বুলাচ্ছিল।নিচে পড়ে আছে জবা ফুলের শুকনো রুপ।যেগুলো শুকিয়ে যায় সেগুলো বাতাসের সাথে যুদ্ধে হেরে বোটা থেকে নিচে পড়ে যায়।
ডায়রিতে ফুল রাখলে মাসের পর মাস শেষ হবার পর যে হাল হয় ঠিক সেই হালে ফুলগুলো নিচে পড়ে আছে।
কুুসুম ফুলগুলোর দিকে চেয়ে ছিল গান গাওয়ার সময়।
মমর পাশের রুমটা মৃদুলের।সেহেতু জবা ফুলগাছটার পাশেই মৃদুলের বারান্দা।কুসুমের মৃদু আওয়াজের গান তার কানে পৌঁছাতেই জেগে গিয়েছিল সে।
উঠে এসেছিল পর্দা টেনে দিতে।কারণ সে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিল।আজ সারাদিন বালিশ চেপে ধরে ঘুম দেবে।এত ভোরে ওঠার প্রশ্নই জাগেনা।বারান্দার কাছে এসে সামনের দরজার পর্দা টানবার সময় তার চোখ গেলো শুরুতে তার কাছে মনে হওয়া সেই সুন্দরী রমনির এক জোড়া চোখের দিকে।ঘাসের দৃশ্য একসাথ সেগুলোর রুপ যেন বেয়ে বেয়ে পড়ছিল।অর্ণব যদি এখন এই দৃশ্য দেখতো, নির্ঘাত প্রেমে পড়ে যেতো।আমার তো নেহাত মনে জুথি গেঁথে আছে তা নাহলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়ে যেতাম।’
এতসব ভেবে চোখ নামিয়ে নিলো সে।তারপর আবার কি ভেবে পর্দাটা আর টেনে দিলোনা।কুসুমের গানের গলার সুর আসুক।
এমন মিষ্টি সুর শুনলে দিনটা খুব ভাল যাবে।
অর্ণব বাম পাশে হাত দিয়ে খালি বিছানা টের পেয়ে হকচকিয়ে গেছে।উঠে বসেই কুসুমের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বিছানা ছাড়লো সে।
শীতল ফ্লোরে পা রেখে চোখদুটোকে ব্যস্ত করে তুললো কুসুমকে খুঁজতে গিয়ে।
এ রুম,সেরুম করে বারান্দার দিকে চলে এসেছে।সে ভাবলো ওকে আর কোথাও পাওয়া না গেলেও এই জায়গায় নিশ্চয় পাওয়া যাবে।ধারণা সম্পূর্ণ না মিললেও একেবারে বেঠিক হয়নি।বারান্দার নিচেই কুসুমের দেখা মিললো।ঘাসে হাত রেখে কিসব বিড়বিড় করছিল।অর্ণব একটা জবা ছিঁড়ে ওর গায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে লুকিয়ে পড়েছে।কুসুমের গায়ে গিয়ে ফুলটা পড়তেই সে মাথা তুলে উপরে তাকিয়েছে।কোথাও কাউকে না দেখে পুনরায় গণনায় মন দিলো।
অর্ণব এবার কোমড়ে হাত রেখে ভাবছে এরপর কি করা যায়।অনেক ভেবে গাছটাকে ধরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে আবার লুকিয়ে পড়েছে সে।
কুসুমের গায়ে সমস্ত শিশির এসে বৃষ্টির পানির মতন ঝরে পড়েছে।
সে এবার উঠে দাঁড়িয়ে ভাল করে দোতোলার বারান্দা দেখে নিলো।এটা অর্ণবের কাজ হতে পারতো কিন্তু ওর তো দেখা মিললোনা কোথাও।কেমন ভূতুড়ে কারবার মনে হলো তার কাছে।তাজা ফুলটা তুলে কানে দিয়ে উপরে চলে আসলো সে।অর্ণব দৌড়ে গিয়ে ঘুমানের ভান ধরে শুয়ে পড়েছে।কুসুম আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজাটা লাগালো।অর্ণবকে শুয়ে থাকতে দেখে সে ধরে নিলো এতক্ষণের জ্বালাতনে অর্ণব জড়িত নেই।
তাই সে রান্নাঘরে এসে হাঁড়ি পাতিল ধোয়া শুরু করেছে সকালের নাস্তা বানানোর জন্য।অর্ণবের কানে আওয়াজ আসতেই এবার সে আর শুয়ে থাকতে পারলোনা।এদিকে এসে ওকে কাজ করতে মানা করেছে।
‘আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন?’
‘হুম উঠলাম এখন।এসব ছাড়ো,আমি করবো।’
‘অনেকদিন হাত লাগাইনা।আমি পারবো,আপনি আরেকটু ঘুমান।এখনও অনেক দেরি পুরোপুরি সকাল হতে’
“তুমি সরবে নাকি শেয়াল ডেকে আনবো?’
কুসুম পাতিল রেখে গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে আসলো ওখান থেকে।
অর্ণব গালে হাত দিয়ে ভাবছিল ঠিক কি রান্না করা যায়।
সেসময়ে কলিংবেল বাজার আওয়াজ পেয়ে কুসুম গিয়ে দরজা খুলে দেখলো মৃদুল বালিশ নিয়ে এসে হাজির।
কুুসুমকে পেরিয়ে নিচে বেছানো তোষকে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে।অর্ণব রান্নাঘর থেকে এসে বললো,”কিরে?তুই এখানে?ওখানে শুয়েছিস কেন,খালি রুম পড়ে আছে কত’
‘আর বলিস না বাবা উদ্ভট নাস্তার ব্যবস্থা করেছে।ভয়ের চোটে চলে এলাম।একটু শান্তি চাই’
‘কিসের উদ্ভট নাস্তা?’
‘তুলসি পাতার চা দিয়ে পাউরুটি’
‘হাহাহাহা!’
কুসুম হাসলোনা।বরং বললো,’তাতে কি?তুলসি চা তো অনেক ভালো স্বাস্থ্যের জন্য’
‘তুমি খাও।আমার নিজের শরীরকে এত অত্যাচার করার সাহস নাই মনে।’
অর্ণব নিচে বসে বললো,’তুই এসেছিস না?জাহানকে দিয়ে এবার তুলসি চা পাউরুটি আমাদের তিনজনের জন্য একসাথে পাঠাবে তোর বাবা।’
তথাকথিত জাহান ট্রে হাতে হাজির হয়েছে তখনই।কুসুমের হাতে ট্রে দিয়ে সে বললো,’এই পাউরুটিটা আর চা উনারে দিয়েন।আর এগুলা আপনারা খাবেন ‘
অর্ণব ট্রেটা দেখে বললো,’সব তো সেমই দিছে।আলাদা করে বলার কি আছে?’
মৃদুল বালিশ দিয়ে মুখ ঢাকতে ঢাকতে বললো,’আমার পাউরুটিতে কালোজিরার গুড়ি আর লবঙ্গ দিছে। এই অখাদ্য তোরা খেতে পারবিনা তাই তোদের নরমাল পাউরুটি দিয়েছে’
অর্ণবের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।তার পক্ষে আর হাসা যাচ্ছেনা।কুসুম ট্রে নিচে রেখে চলে গেছে রান্নাঘরের দিকে।মৃদুলের জন্য দুটো রুটি,ডিম বানিয়ে দেবে।অর্ণব ওকে হেল্প করতে সেও চলে এসেছে।
কুসুম হাত লাগানোর আগেই অর্ণব আটায় হাত দিয়ে বললো,’রুটি আমি বানাবো’
জোর করে কাজ সে নিজে করতে চাইছে তা বুঝতে পেরে কুসুম আর বাড়াবাড়ি করেনি।সে তার মত করে বাকি কাজটা সারছিল।মৃদুল জুথিকে এক্টিভ দেখে ভিডিও কল দিয়ে বসেছে।জুথি সে সময়ে ঘুমাচ্ছিলনা।গোটা একদিন অনেক ঘুমিয়ে এখন আর তার কোনো ঘুম নেই।
কল দেখে রিসিভ করেছে সে।
মৃদুল শুয়ে থেকে বললো,’জানো আমি কোথায়?’
‘মেস তো মনে হচ্ছেনা’
‘রাইট।আমি আমার বাসায় আছি।’
—
অর্ণব দেয়ালের কিণারায় দাঁড়িয়ে মৃদুলকে দেখছিল এতক্ষণ।ফিসফিস করে বললো,’এই দেখে যাও,মৃদুল প্রেম করছে’
কুসুম পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললো,’মিননয়ি আপুর সাথে’
অর্ণব চট করে ওখান থেকে সরে এসে রুটি বেলায় মন দিলো আবার।
‘মাঝে মাঝে কুসুমের কিছু কথায় বেশ ভয় লাগে।যেন সে ওয়াইফ টাইপ ব্যবহার করে।
স্বামীর অতীত তার ওছন্দ না,সেই অতীত বর্তমানে ঘোরাফেরা করছে তাও ওর পছন্দ না।নরমাল ভাবে কথা বললেও গায়ে কাঁটা দেয়।মনে হয় সে রেগে আছে।
আচ্ছা কুসুম একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’
‘হুম’
‘মৃন্ময়ীকে নিয়ে আমার সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?’
‘এবার আমি একটা প্রশ্ন করি?’
‘আমারটার উত্তর তো পেলাম না’
‘আগে আমার প্রশ্ন শুনে নেন তারপর।আপনি আমাকে খোলসা করে বলে দিয়েছেন আপনার সাথে মিননয়ি আপুর কোনো সম্পর্ক নেই।আমিও তা মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছি।তাহলে আপনার কেন মনে হয় আমি এখনও আপনাদের নিয়ে ভাবি?’
‘না তা নয়।আমি চাইনা তুমি আমাকে নিয়ে ভুল ধারণা মনে পোষাও’
কুসুম ঘুরে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে বললো,’আমি যাই ভাবিনা কেন, আপনি মনে মনে সংকোচ কেন ধরে রাখবেন?আমার ভাবনাতে আপনার কি বা যায় আসে?’
অর্ণব আর কিছু বলেনি।কুসুম তার মুখ থেকে কি শুনতে চায় তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে।
‘মেয়েটার চাওয়া বৈধ তবে আমার মনে এখনও ঐ অনুভূতি আসেনি।ভালবাসতে পারিনি এখনও।
যদি কোনোদিন বাসিও তবে আমি নিশ্চয় সেটা প্রকাশ করবো।সময় হোক।’
কুসুম মাথা নিচু করে নিজের কাজ করছিল।অর্ণব কি বুঝতে পেরেছে যে সে কি শুনতে চায় ওর থেকে।
এটা ভেবে জিভে কামড় দিল সে।লজ্জা লাগলো খুব।চোখ বন্ধ করে মরিচ, নুন আর পেঁয়াজ কচলাতে কচলাতে মুচকি হাসছিল অনবরত।অর্ণব এমন দৃশ্য দেখে নিজেও হাসছে।কাউকে লজ্জা পেতে দেখার মূহুর্তটা ঠিক কতটা সুন্দর এবং আবেগপূর্ণ তা বুঝতে পারে যে লজ্জা দেয় একমাত্র সে।
অর্ণবের হয়েছে তাই।কুসুমের লজ্জা পাবার দৃশ্যটা সে প্রাণভরে উপভোগ করছে এখন।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://facebook.com/groups/676436250036874/