#তবু_সুর_ফিরে_আসে
১৫তম পর্ব
নওশাদ হেরার দিকে ঝুঁকে তাকালো ,
তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ? এখন নিঃশ্বাস নিতে পারছো ঠিক মত ? হেরা তাকাও আমার দিকে?
হেরা চোখ খুলে তাকালো ! খুব খারাপ লাগছে ?
খুব ধীরে হেরা বলল, দম
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ?
হেরা চোখের পলক ঝাকালো শুরু !
নওশাদ ফারহান কে কল করলো ! ওপাশে ফারহান ফোন ধরেই বলল,
হ্যালো ভাইয়া !
ফারহান তুই কি চেম্বারে ?
এই তো বের হলাম মাত্র !
একটু বাসায় আয় তো !
আব্বা ঠিক আছে ভাইয়া ?
আব্বা ঠিক আছে ! হেরা একটু অসুস্থ !
আচ্ছা ভাইয়া আমি আসছি !
ফোন নামিয়ে রেখে নওশাদ হেরার দিকে তাকালো ! তারপর পানির গ্লাস টা মুখের সামনে ধরলো ! পানি খাও হেরা ভালো লাগবে ! হেরা কে ধরে বসালো , তারপর নিজে হাতে পানি খাইয়ে দিল !
তোমার যে ক্লাস্টোফোবিয়া আছে তুমি কি জানো ?
না , হেরা মাথা দুই পাশে নাড়লো !
ক্লাস্টোফোবিয়া কি জানো ?
এবার ও হেরা না ইশারা করলো !
বদ্ধ কোন ঘরে কিছুক্ষণ থাকলে তোমার ভয় লাগে , দম বন্ধ হয়ে আসে ?
হুম !
এটাকেই বলে ক্লাস্টোফোবিয়া ! বাথরুমের দরজা যখন খুলতে পারছো না তখনই তুমি ভয় পেয়ে গেলে এবং নিজেকে বন্দী ভাবা শুরু করলে , তারপর তোমার দম বন্ধ লাগা শুরু করলে !
হুম !
বোকা মেয়ে এত বড় বাথরুমে তোমার দম বন্ধ হবে কেন ! নওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো !
আমি তো বেহুঁশ হয়ে গেছো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম কি হলো ! তারপর এলিন যখন বলল, তুমি বাথরুমে আটকে গিয়েছিলে তখনই বুঝেছি ক্লাস্টোফোবিয়া র জন্যে ই তুমি এতটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছো !
সরি !
সরি বলছো কেন ? তুমি আয়নায় গিয়ে দেখো তোমার চেহারার কি অবস্থা হয়েছে পুরো মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে !
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল !
এখন?
মনে হচ্ছে এখনো হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে কিছুটা খারাপ লাগছে !
ফারহান আসছে ও দেখুক !
উনাকে আসতে বললেন কেন কষ্ট করে ? এমনি ঠিক হয়ে যাবে !
শ্বাস কষ্ট নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক হবে না!
আপনি ডিনার করেছেন , ঔষধ খেয়েছেন ? অনেক রাত হয়ে গেছে তাই না ?
তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না! আমি সব খাব আগে তুমি নরমাল হও !
কি কান্ড দেখুন তো বাসার সব মানুষ অস্থির হয়ে গেছে !
তা তো সবাই হয়েছে ! কিন্তু আনারের মায়ের কান্ড দেখো সে এটা জানতো তাও পাত্তা দেয়নি ! এমনকি তুমি এতদিন ধরে এই ঘরে থাকো তোমাকেও বলেনি !
হেরা বলল,পুরো বাসার দ্বায়িত্ব ওর ঘাড়ে ভুলে গেছে হয়তো !
এলিন কে স্প্যাশল থ্যাঙ্কস দিতে হবে ও তোমার ঘরে তখন না আসলে তুমি আর কতক্ষন এভাবে আটকে থাকতে আল্লাহ জানে !
ঠিক বলেছেন ।
আনারের মা দরজার বাহির থেকে ডাকছে,
স্যার!
বলো আনারের মা !
ফারহান স্যার আসছে !
হেরা উঠে দাঁড়াতে নিলো ! নওশাদ বাঁধা দিয়ে বলল, তুমি বসো !
হ্যাঁ এসো ভেতরে !
আনারের মা ঘরের ভেতরে ঢুকলো ! ওর একটু পিছনে নওশাদের ডাক্তার ছোট ভাই ফারহান দাঁড়িয়ে আছে !
আয় ফারহান ভেতরে চলে আয় !
কি অবস্থা ভাইয়া ?
আর বলিস না বাথরুমের দরজা লক হয়ে গিয়েছিল হেরা ভেতরে আটকে আছে কেউ টের পায়নি ! ওর ক্লাস্টোফোবিয়া আছে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না সেন্সলেস হয়ে কি একটা অবস্থা যে হলো !
এখন কেমন লাগছে ভাবি ? ফারহান হেরার দিকে তাকিয়ে বলল !
মনে হচ্ছে হার্টবিট বেড়ে গেছে আর দম ফেলার সময় একটু অস্বস্তি হচ্ছে !
ফারহান টেথোস্কোপ বের করে হেরার চেকআপ করা শুরু করলো ! তারপর পালস চেক করলো !
নওশাদ পাশেই বসে আছে ! কি অবস্থা ফারহান ?
একটু বেশি মনে হচ্ছে হার্টবিট ! খারাপ কিছু না বেশি ভয় পেয়ে গেছে তাই এই অবস্থা ! তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া!
ভাবি তোমার কি আগেও এমন হয়েছে ?
বদ্ধ কোথাও থাকলে একটু খারাপ লাগে !
যেখানে এরকম খারাপ লাগবে এড়িয়ে যাবে সে সব জায়গা ! ভয় পেয়ে যাবে না , মনোযোগ অন্য দিকে দিবে তাহলে ঐ রকম পরিস্থিতিতে ভয় টা লাগবে না ! কারো কারো এই ফোবিয়া থাকে ! এক কাজ করো ভালো করে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে আসো ! রুমে না বসে থেকে খোলা জায়গায় গিয়ে বসো দেখবে ভালো লাগবে !
নওশাদ উঠে দাঁড়ালো ! হেরা যাও চোখে মুখে পানি দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও । তোমার ড্রেস ও ভেজা ঠান্ডা লেগে যাবে ! তারপর লিভিং রুমে আসো আমরা ওখানেই আছি ! চল ফারহান আমরা ওদিকে যাই !
নওশাদ আর ফারহান রুম থেকে বের হয়ে গেল ! হেরা চোখে মুখে পানি দিতে উঠে গেল !
ফারহান একটু অবাক হচ্ছে ভাইয়া ভাবীকে নিজের রুমে রাখে নাই ! স্ট্রেন্জ !
ফারহান নওশাদের সঙ্গে লিভিং রুমে গিয়ে বসলো!
সবারই কম বেশি ফোবিয়া জিনিসটা থাকে ভাইয়া চিন্তা করো না!
নওশাদ বলল, আমি যখন ছোট ছিলাম বুঝলি কুকুর ভিষন ভয় পেতাম !
তবে ভাইয়া খেয়াল রেখো যাদের পেনিক অ্যাটাক হয় তাদের এই ক্লাস্টোফোবিয়া তে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যায় !
হুম সেটাই !
তোমার পায়ের ব্যথা এবার এখনো ভালো হয়নি ? ভালো হয়ে গিয়েছিল অলমোস্ট ,আজ আমি নিশাল কে দেখতে গিয়েছিলাম জার্নি টাইম টা অনেকক্ষন পা নামিয়ে ছিলাম ব্যথা চলে এসেছে!
ক্রেচ নিয়ে ভালো করেছো কতবার তোমাকে বলেছিলাম ক্রেচ এ ভর দিয়ে চলাফেরা করলে কষ্ট কিছুটা কমে !
এই যে আজ শেষ পর্যন্ত কিনলাম !
নিশাল কেমন আছে ভাইয়া ?
ওর জ্বর ছিল, সকালে ফোন দিয়ে বললো ! খারাপ লাগছিল তাই চলে গেলাম !
ভালো করেছো ! এখন কেমন আছে ?
জ্বর নেই আজ !
ওদের দুই ভাই কে দূর থেকে দেখে ফরহাদ আজমী লিভিং রুমে আসছে ওয়াকারে ভর দিয়ে !
ফারহান উঠে গিয়ে ধরে নিয়ে এলো ! আব্বা শরীর কেমন তোমার ?
আমি ভালো আছি ! তোর আম্মার কান্ড দেখেছিস ফারহান , তোর বুবুর বাসায় গিয়ে বসে আছে, এই বাসার কোন খবর রাখে না সে ! মেয়ের বাড়িতে এত দিন থাকার কি আছে বুঝলাম না ! তোদের কলেজ থাকে তার কোন হুঁশ নেই !
ফারহান সোফায় বাবাকে বসিয়ে দিল , আব্বা তুমি চিন্তা করো না !
তুই কালকে গিয়ে নিয়ে আসবি !
ঠিক আছে নিয়ে আসব !
তারপর নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল ফরহাদ আজমী,বাবু তোর পায়ে ব্যথা কিভাবে পেলি ফুটবল খেলে তাই না ?
নওশাদ চুপ করে আছে কি উত্তর দিবে আব্বার কথার চিন্তা করছে!
আব্বা রাতে খেয়েছো ? ফারহান বলল!
হ্যাঁ খেয়েছি !
এসো তোমার প্রেসার টা মেপে দেখি ?
ফারহান প্রেসার মাপার মেশিন বের করলো !
তোর এসব দেখলে কি মনে হয় জানিস ফারহান তুই ডাক্তার হয়ে গেছিস ! ভালো করে পড়াশোনা কর তাহলে ডাক্তার হতে পারবি তা না হলে এসব দিয়ে সারা জীবন খেলেই যাবি !
ফারহান প্রেসার চেক করে বলল , আব্বা তোমার প্রেসার ঠিক আছে ! ঘুমিয়ে যাও রাত হয়ে যাচ্ছে ! আমি দিয়ে আসি রুমে চলো !
এখন ঘুমাব না আমি টিভিতে খবর দেখে তারপর ঘুমাই !
ঠিক আছে !
বাবু তোর সঙ্গে কথা আছে আমার !
হ্যাঁ আব্বা বলো নওশাদ তার আব্বার দিকে ফিরে তাকালো !
শোন আমাকে সমুদ্রের কাছে নিয়ে যাবি একদিন ? খুব ইচ্ছে করছে সমুদ্রের পাড়ে বসতে !
কবে যেতে চাও বলো আব্বা ?
তোদের পরীক্ষা শেষ হোক তারপর যাব ! তোর আম্মা কে নিব না ! সে আমাদের খবর রাখে না আমরা চারজন যাব । তোরা তিন ভাই আর আমি । আচ্ছা বড় বৌমা কে নিব ! ও প্রতিদিন আমাকে পেপার পড়ে শোনায় ! বাচ্চা বয়সী মেয়ে আমার খোঁজ নিচ্ছে কি খাচ্ছি কি না খাচ্ছি আর তোর আম্মা শুধু ঘুরে বেড়ায় ! তুই আগে আগে বিয়ে করে ভালো করেছিস বাবু নয়তো এই সংসার ভেসে যেত!
আচ্ছা আব্বা নিয়ে যাব ! আম্মা কে নিব না যাও !
ফারহান হাত ধরে রুমে নিয়ে যাচ্ছে আব্বাকে ! যেতে যেতে ফরহাদ আজমী ছেলে কে বলছে,
তুই কোন কলেজে পড়িস রে ফারহান ?
আব্বা আমার পড়া শেষ আমি তো কবেই ডাক্তারি পাশ করে ফেলেছি !
কি বলিস আমার ছেলে ডাক্তার হয়ে গেছে আমিই জানি না ! তোর আম্মা কিছুই বলল না ! চিন্তা কর আমি দেখে সংসার করে গেলাম এই মহিলার সঙ্গে ! তোর জন্য বউ আমি খুঁজব বুঝলি তোর আম্মার হাতে ছেড়ে দিলে নিজের মত একটা মেয়ে খুঁজে আনবে ! মেয়ে আনব বড় বৌমা র মত ! দেখতে যেমন সুন্দর , কি শান্ত ব্যবহার ! আজ সকালে বাবু হাঁটতে পারছে না হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে দিল আমি আমার দরজা থেকে দেখলাম ! খুব শান্তি পেলাম !
আচ্ছা আব্বা চিন্তা করো না তোমার কথা মত হবে সব ! তুমি খবর দেখো শুরু হয়ে গেছে !
সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে যা !
ফারহান খবরের চ্যানেল দিয়ে ফরহাদ আজমী কে শান্ত করে বসিয়ে দিয়ে এলো !
তারপর নওশাদের কাছে এসে বলল,ভাইয়া আমি তাহলে আসি ?
ডিনার করে যা আমার সঙ্গে !
না ভাইয়া রাতে তেমন কিছু খাই না !
আমিও রুটি খাই আজ হুলুস্থুল এ দেরি হয়ে গেল!
ফারহান নওশাদ আর হেরার সঙ্গে ডিনার করে বাসায় চলে গেল!
নওশাদ টিভি দেখছে লিভিং রুমে বসে ! ফারহান এর সঙ্গে গল্প করে মনটা ভালো লাগছে ! হেরা এসে নওশাদের কাছে বসলো !
এখন ঠিক আছো ?
হুম ঠিক আছি !
তোমার সঙ্গী সাথীদের দেখছি না যে কোথায় ওরা ?
এলিন নাহিন ওরা ওদের রুমে !
পড়ছে ?
না পড়াশোনার চেয়ে বেশি গল্প চলে ওদের ! হেরা হাসছে!
তুমি গেলে না ?
না !
কেন ,তাহলে ওদের আসতে বলো ?
আপনি বাসায় থাকলে ওরা আমার সঙ্গে গল্প করতে চায় না !
কেন?
ওদের মামা বলেছে আপনি বাসায় থাকলে আড্ডাবাজি বন্ধ !
শোয়েব বলেছে এই কথা ? কেন আমি আড্ডা অপছন্দ করি না তো ?
হেরা মুখ নিচু করে বলল, ওরা দুজন ও আপনি বাসায় থাকলে বলবে যাও যাও কিছু লাগবে কিনা দেখো , কাছে যাও পরে তোমাকে দরকারে সময় না পেলে আমাদের উপর বিরক্ত হবে ভাইয়া !
হেরার কথা শুনে নওশাদ হো হো করে হেসে দিলো !
ওরা আমাকে মনে হয় হেডস্যার টাইপ মানুষ ভাবছে ! যাও ওদের ডেকে আনো গল্প করি তাহলেই বুঝবে আমি কতটা আড্ডাবাজ মানুষ !
আজ থাক অনেক রাত হয়ে গেছে কালকে গল্প করবেন !
ও তাইতো আমি ঘড়ির দিকে খেয়াল ই করিনি !
হেরা বলল,আচ্ছা সুমনা ভাবির কি খবর ?
ওরা ওদের কোন আত্মীয়ের বিয়েতে ঢাকার বাহিরে গেছে ! আজকাল কিসব ডেস্টিনেশন ওয়েডিং কালচার শুরু হয়েছে ওদের পুরো ফ্যামিলি মিলে ঢাকার বাহিরে কোন রিসোর্টে আজ তিন দিন থেকে !
তাই বলি আপনি অসুস্থ শুনে রেজোয়ান ভাই আসলেন না কেন ?
ফোনে আমার সঙ্গে কথা হচ্ছে !
উনারা আসলে আমার খুব ভালো লাগে !
আমারো প্রিয় মানুষ দুইজন !
রাতের ওষুধ খেয়েছেন ?
রুমে গিয়ে খাব ! কালকে অফিসে যাব আমি ঘুমাতে যাচ্ছি হেরা তুমি রাতে বাথরুমে র দরজা লক করো না !
আরো ! আমার অনেক শিক্ষা হয়েছে হেরা হেসে বলল !
হেরার কথা শুনে নওশাদ হো হো করে হাসছে ! হেরা নওশাদের হাসি সব সময় মুগ্ধ হয়ে দেখে ! এখনও তাকিয়ে দেখছে !
শোয়েব আগে সব সময় সকালের ব্রেকফাস্ট নওশাদের সঙ্গে করতো ! কিন্তু ইদানিং করে না ! নওশাদ হেরার সঙ্গে করতে পছন্দ করে। যদিও সব দিন হেরা ঘুম থেকে উঠতে পারে না ! রাতে সে বই পড়ে তাই সকালে উঠতে দেরি করে ! নওশাদ সাড়ে আটটার দিকে ব্রেকফাস্ট করে ! হেরা আর নওশাদ এর সঙ্গে খেতে তার অস্বস্তি লাগে ! উনাদের কত কথা থাকতে পারে সেই চিন্তা করে সে !আর হেরা এখনো তার সঙ্গে কথা বলতে কোন এক কারনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না ! দেখলেই কেমন চুপসে যায় ! কথা বলে কম ! মেয়েটার কাজ কর্ম তার অবাক লাগে ! এক মাস হয়েছে এই বাড়িতে এসেছে বাড়ির সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে রান্না করছে , শ্বশুরের সঙ্গে বসে গল্প করছে, পেপার পড়ে শোনাচ্ছে কাজের লোকদের পরিচালনা করছে শোয়েবের ভাগ্নি দের সঙ্গে দারুণ ভাব তার । শুধু নওশাদ মামা আর তিনি দুই রুমে থাকে কেন বুঝতে পারছে না শোয়েব! বিয়ে করা বউ উনার তাহলে এই অস্বাভাবিকতা টা কেন দুজনের সম্পর্কে সে চিন্তা করে বের করতে পারছে না !
শোয়েব রেডি হয়ে ডাইনিং এর কাছে এসে দেখে নওশাদ একাই ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছে ! শোয়েবের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার খাওয়া শেষ ?
জ্বি মামা !
নওশাদ এর পায়ের ব্যথা ভালো হয়ে গেছে । চারদিন অফিস যায়নি ! এর পর যেদিন থেকে অফিস যাচ্ছে অফিসে খুব ব্যস্তায় কাটছে ! একটা প্রোজেক্টের অনেক দিন থেকেই জমি মামলায় ঝুলে ছিল কিছুদিন আগে মামলা টা সম্পূর্ণ তাদের পক্ষে চলে আসে গতকাল রায় হয়েছে ওরাই জিতেছে ! নওশাদ অনেক রিল্যাক্স ফিল করছে ! রেজোয়ান বলল, হেরা তো ভালো লাকি হয়ে এলো তোর জন্য !
কিভাবে?
এই যে এত বছর থেকে ঝুলে থাকা মামলায় জিতে গেলি ! শুনলাম সিরামিকস এর বিরাট এক অর্ডার পেয়েছিস মিডিল ইস্ট থেকে ! আবার গার্মেন্টস এর কোন শিপমেন্ট টাইমের আগেই রেডি হয়ে গেছে কোন ঝামেলা ছাড়া এগুলো কি কম বড় খবর ! আর সব কিছু হেরা তোর জীবনে আসার পর হলো !
নওশাদ হেসে দিল ! বন্ধু আমার আর আমার কম্পানির লোকজনের পরিশ্রম দেখলি না হেরার কেরামতি মনে হচ্ছে তোর ?
তোরা তো বছর জুড়েই পরিশ্রম করে যাচ্ছিস কিন্তু এতগুলো ভালো খবর একসঙ্গে হেরা তোর লাইফে আসার পর হলো তাই বললাম !
ও আচ্ছা !
কক্সবাজার কবে যাবি বল ?
রেজোয়ান এখন কক্সবাজারে আমি না গেলে হয় না ?
না নওশাদ সব এগিয়ে যাচ্ছে ইন্টোরিওর এর কাজ দেখতে একবার ও আমরা দু’জনের কেউ যাই নাই ! যাওয়া দরকার ! কোন চেন্জ থাকলে এখনই করতে হবে পরে ঝামেলা বাড়বে !
নওশাদ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল , ঠিক আছে !
কবে যেতে হবে রেজোয়ান?
আমি তো বলি চল কালকেই যাই !
কালকে ?
হুম! বৃহস্পতিবার দুই দিন গিয়ে থেকে আসা হবে আমাদের !
আচ্ছা ! কিন্তু রেজোয়ান একা যাব না আব্বা কে নিতে হবে ! আমি যখন এবার অসুস্থ ছিলাম তখন আব্বা হঠাৎ করে বলল, বাবু আমাকে সমুদ্রের কাছে নিয়ে যা তো ! কি মনে করে বলেছে কে জানে ! অসুস্থ থাকে হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে আমার সারাজীবন আফসোস থাকবে !
তাহলে এক কাজ করি চল সুমনা , হেরা সবাই কে নিয়ে ই যাই ফ্যামিলি উইকেন্ড প্লাস অফিস দুই কাজ ই হলো !
নওশাদ বলে উঠলো,খারাপ বলিসনি !
আমি কখনো ই খারাপ কথা বলি না নওশাদ ! তবে তোর আর হেরার হানিমুন টা তে আমরা সবাই কাবাবে হাড্ডি হয়ে থাকব এটা কেমন কথা বলতো ?
এই যে খারাপ কথা বলা শুরু তোর ! যাচ্ছি কাজে এটাকে হানিমুন বলছিস তুই ! তাহলে কিন্তু ওদের নিব না !
আচ্ছা বলব না যাহ্ ! রেজোয়ান হাসছে !
এলিন আর নাহিনের মাথায় এক অদ্ভুত খেয়াল এসেছে আজ ! হেরা বুঝতে পারছে না কিছু ! দুইবোন ভার্সিটি থেকে এসে লাঞ্চ করেই কখন থেকে সাজগোজ শুরু করেছে ! গত ঘন্টা দুই এক থেকে সব মেকআপ এর জিনিস নিয়ে সাজছে কিন্তু তাদের সাজ আর শেষ হয় না ! হেরা পাশে বসে দেখছে শুধু!
আচ্ছা তোমরা বলছো সেজে কোথাও যাবে না তাহলে এই সাজ কেন বলোতো?
বৌমনি একটু অপেক্ষা করো দেখবে! এলিন হেসে বলল!
আমরা ফটোশুট করব !
সেটা কি নাহিন ?
তোমাদের এত সুন্দর বাসা টা এখানে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের ছবি তুলব বৌমনি তারপর ফেসবুকে আপলোড করব ! তোমাকে ও তুলে দিব একটু অপেক্ষা করো !
এলিন নিজের সাজ শেষ করে হেরাকে সাজানো শুরু করলো!
শোন তোমাদের মত এত সাজাবে না কিন্তু প্লিজ!
আরে দেখোই না কি সুন্দর করে সাজাই তোমাকে !
এলিন খুব সুন্দর করে হেরাকে সাজিয়ে দিলো !
তারপর দুই বোন পুরো বাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলছে ! হেরা ওদের মত অঙ্গ ভঙ্গিতে ছবি তুলতে পারে না ! ওদের ছবি তোলা দেখতেই ওর মজা লাগছে ! দুই বোন ছবি তুলেই কেমন হয়েছে সেই ছবি সেটা দেখার জন্য টানাটানি করে একজনের একটা ছবি পছন্দ হলে আর দশটাই ডিলিট করে দিচ্ছে ! একটুক্ষনের ভেতরে আবার ড্রেস চেঞ্জ করেও চলে আসে ! হেরাকে প্রথমে শাড়ি পড়িয়েছে ও ওটা পড়েই কয়েকটা ছবি তুলেছে ! গ্রীন জমিনে মেজেন্ডা পাড়ের শাড়িতে ওকে খুব সুন্দর লাগছে দুইবোন বারবার বলছে তোমার ছবিই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বৌমনি !
হেরা জানে ওদের মত স্মার্ট, এতটা চটপটে হওয়া ওর জন্য অসম্ভব !
সন্ধ্যায় নওশাদ বাসায় আসার পর হেরা যখন নওশাদের জন্য চা বানিয়ে রুমে ঢুকলো হেরা কে দেখে নওশাদ মুগ্ধ হয়ে গেল ! কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর বলল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ! এত সাজ কেন ?
ওরা দুই বোন সাজিয়ে দিল !
নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল,তুমি সমুদ্র দেখেছো হেরা ?
না !
চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে নওশাদ বলল,
আগামীকাল বিকেলে আমরা সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি !
হেরা অবিশ্বাস্য চোখে নওশাদের দিকে তাকালো !
বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার ?
হঠাৎ !
হঠাৎ করেই আব্বা ,তুমি আমি যাব ! তোমার সঙ্গী সাথী রা কি যেতে চায় জেনে আসো যাও !
আপনি সত্যি বলছেন ? হেরা খুব এক্সাইটেড !
আমি মিথ্যে বলি না ! আরো দারুন খবর আছে সুমনা আর রেজোয়ান ও যাচ্ছে !
আমি ওদের বলে আসি ?
যাও !
হেরা দৌড় দিল এলিন নাহিনের ঘরের দিকে ! একটু পরে চুপচাপ হয়ে ফেরত এলো !
নওশাদ ওর চুপসে যাওয়া চেহারা দেখে বলল,
কি ব্যাপার মুখের এ হাল কেন ?
ওরা দুজন যাবে না !
এক্সাম আছে ?
না ফ্রেন্ডের বিয়ে পরশু দিন !
ও তুমি মন খারাপ করছো কেন ! আরেকবার যেও ওদের সঙ্গে !
আমি ভেবেছিলাম আমি কখনো সমুদ্র দেখিনি ওদের সঙ্গে নামব সমুদ্রে !
তাহলে তো মন খারাপ হওয়ার ই কথা ! আচ্ছা হেরা আমি যদি নামি তোমার সঙ্গে তাহলে হবে না ?
হেরার মুখ দ্বিগুণ আনন্দে ঝলমল করে উঠল ! আপনি সত্যি সত্যি নামবেন তো ?
নামতেও পারি !
তাহলে দারুন হবে ! আমি কিন্তু ভালো সাঁতার জানি !
নওশাদ হাসতে হাসতে বলল ঠিক আছে দেখব!
আমি কোন দিন সমুদ্র দেখিনি তো চিন্তা করেই দারুন লাগছে আমার ! আপনি তো অনেক দেশের সমুদ্র দেখেছেন তাই না ?
মোটামুটি অনেক দেশের সমুদ্র দেখেছি !
সবচেয়ে সুন্দর কোন টা লেগেছে আপনার কাছে !
এটা তো এক কথায় বলা যাবে না একেকটা একেক রকম সুন্দর ! তবে কক্সবাজার এর সমুদ্রের ঢেউ খুব সুন্দর !
তাই ?
হুম!
পরদিন সকাল থেকে হেরা খুব এক্সাইটেড ! এলিন নাহিন ওকে কখন কি পড়বে দেখাচ্ছে !
ওরা শাড়ি, থ্রি পিস , চুড়ি, কানের দুল ,কসমেটিকস এসব ভরে বিশাল এক সুটকেস সাজিয়ে দিল ! হেরা অবাক হচ্ছে!
আচ্ছা তোমারা এত কিছু ভরে দিচ্ছ কেন ? কখন পড়ব এসব ? আমি কি শুধু ড্রেস চেঞ্জ এর মধ্যে থাকব নাকি ?
হুম বৌমনি ! তুমি সমুদ্রের পাড়ে যখন ভাইয়ার হাত ধরে হাঁটতে বের হবে তখন শাড়ি পড়বে ! রাতে ডিনারের সময় থ্রি পিস বা শাড়ি একটা পড়লেই হলো !
কি যে বলো না তোমরা , মাথা খারাপ !
বরের হাত ধরে হাঁটবে এতে মাথা খারাপের কি হলো ! বলতে পারো এটা তোমাদের হানিমুন! নাহিন বলেই কথাটা হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়লো!
প্লিজ তোমরা এসব কথা বলো না উনি শুনলে আমি লজ্জায় সামনে যেতে পারব না !
বৌমনি অনেক অনেক ছবি তুলবে !
কে ছবি তুলে দিবে আমার ?
ভাইয়া তুলে দিবে !
নাহিন উনার আর খেয়ে কাজ নেই !
বলবে তুমি !
জীবনেও না !
তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না বৌমনি ! এলিন হতাশ হয়ে বলল!
বিকেলে ওরা যখন এয়ার পোর্টে বসে আছে ! সুমনার সঙ্গে গল্প করার এক ফাঁকে সে নওশাদ এর কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,
আমার খুব ভয় লাগছে !
নওশাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কেন ?
প্লেনে উঠতে ভয় লাগছে !
ভয়ের কিছু নেই মজা পাবে দেখো !
আপনি আমার পাশে থাকবেন তো ?
নওশাদ হাসি মুখে বলল হুম !
তাহলে ঠিক আছে!
নওশাদ চিন্তা করছে তার আব্বা কে নিয়ে ! বয়স্ক মানুষ ওখানে গিয়ে অসুস্থ না হয়ে যায় ! আব্বার দেখাশোনা করে যে ছেলেটা সেই রাজু কে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছে যদিও ! তারপর ও খুব খেয়াল রাখতে হবে ।
প্লেনে উঠে হেরা একটু অস্বস্তি বোধ করছে ! জীবনের প্রথম প্লেন জার্নি সে এক্সাইটেড হওয়ার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে !
নওশাদ ওর পাশে বসে আছে তবুও কেমন ভয় ভয় লাগছে বলেই চুপ করে আছে ও !
ওর সীট বেল্ট টা নওশাদ লাগিয়ে দিল !
প্লেন যখন রানওয়েতে ছুটে যাচ্ছে টেক অফের জন্য ভয়ে হেরা চোখ বন্ধ করে ফেলল ! নওশাদ হেরার হাত টা ধরলো ! হেরাও শক্ত করে নওশাদের হাত টা ধরে আছে ! চোখ বন্ধ করে ফেলল হেরা !
নওশাদ কানে কানে বলল,
ভয়ের কিছু নেই হেরা ! তাকাও দেখো আমরা আকাশে উঠে গেছি !
হেরা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে নিচে ঢাকা শহর ! তার ভয়টা তবুও কাটছে না! সে নওশাদের হাত টা ধরে রেখেছে!
প্লেন যখন মেঘের আরো উপরে উঠে গেল হেরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে মেঘ আর মেঘ ! তুলোর মত মেঘ ভেসে যাচ্ছে!
নওশাদ কানে কানে বলল , ভয় কমেছে ?
একটু কমেছে !
নওশাদ তবুও একটা হাত দিয়ে ধরে রাখলো হেরার নরম হাত টা ! হেরা যদিও এখন আর ভয় পাচ্ছে না কিন্তু নওশাদের হাতটা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না তার ! জার্নি টাইম এক ঘন্টা না হয়ে আরো বেশি হলে মনে হয় ভালো হতো সে নওশাদ এর হাত টা আরো বেশি সময় ধরে বসে থাকতে পারতো !
ভাবনা টা আসতেই হেসে দিল সে !
সঙ্গে সঙ্গে নওশাদ বলল, হাসছো কেন ?
কিছু না !
শুনি না কেন ?
না তেমন কিছু না !
বলো প্লিজ , বিনা কারণে পাগল হাসে তুমি তো সুস্থ মানুষ! ঠিক আছে পরে শুনব কিন্তু বলতে হবে হেরা !
হেরা মনে মনে নিজেকে বকলো ইস কেন যে হাসলাম !
নওশাদ হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখে রেজোয়ান তাকিয়ে আছে ওদের দিকে !
নওশাদ একটু লজ্জা পেল ! তারপর রেজোয়ান কে বলল, ভয় পাচ্ছে হেরা !
রেজোয়ান একটু কাছে এগিয়ে এসে বলল, আমি কিছু বলেছি নাকি , তুই তোর বউয়ের হাত ধরতেই পারিস !
নওশাদ বলল রেজোয়ান তুই ঠিক হবি না , তাই না ?
না বন্ধু !
দুই বন্ধু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসছে !
( চলবে )