#তবু_সুর_ফিরে_আসে
২২তম পর্ব
নওশাদ কিছুক্ষণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নিশাল আর হেরার সাইকেল চালানো দেখলো ! দুজন হেসে হেসে সাইকেল চালাচ্ছে!
ওরা দুজন বাসার গেটে ঢুকে যাওয়ার পর সে নিজেও দ্রুত গেটের ভিতরে ঢুকলো ! বাসার সব কাজের লোকজন এতক্ষণ মজা করে হেরা আর নিশালের সাইকেল চালানো দেখছিল স্যার কে দেখে দ্রুত সরে গেল সবাই !
হেরার সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে হঠাৎ উঠে বসলো নওশাদ ! হেরা এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে গেল সাইকেল নিয়ে বেসামাল হয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে লনের ঘাসের উপর পড়ে গেল ! নিশাল পাপাকে দেখে অবাক হয়ে গেল !
হেরা পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঘাসের উপর পড়ে আছে!
পাপা তুমি তো আন্টিকে ব্যথা দিয়ে ফেললে !
সরি হেরা , নওশাদ হেরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ! ব্যথা পেয়েছো ! দেখি !
হেরা কে হাত ধরে টেনে তুলল নওশাদ ! হেরা পা ফেলতে পারছে না !
নওশাদ ঘাবড়ে গেল ! দেখি পা ঝাঁকি দাও ! নিশাল এসে হেরাকে ধরলো !
পাপা তুমি এটা কি করলে ? হঠাৎ করে এভাবে কেউ পিছনে উঠে, আন্টি ব্যথা পেয়ে গেল তো !
আরে আমি তো দেখলাম তোমার আন্টি খুব ভালো সাইকেল চালাচ্ছে তাই ভাবলাম আমাকে নিয়েও চালাতে পারবে !
হেরা নওশাদের হাত ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে ! নিশাল এসে ওকে পাশ থেকে ধরলো ! দেখি বেশি ব্যথা পেয়েছো তুমি ?
হেরা নিশালের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল !
নিশাল বুঝে গেল আসলে তেমন কিছু হয়নি পাপাকে নার্ভাস করার জন্য আন্টি অভিনয় করছে !
নওশাদ হেরাকে লনে রাখা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল ! আনারের মা দৌড়ে বরফ নিয়ে এসেছে!
কোথায় লেগেছে দেখি , বেশি ব্যথা পেয়ে গেছো ? আমি বুঝতেই পারিনি এতটা ব্যথা পেয়ে যাবে ! নওশাদ অপ্রস্তুত হয়ে বলল।
হাঁটুতে লেগেছে হেরা ?
হুম!
একটু পা টা ঝাকি দাও !
পারছি না নাড়াতে ,কাতর হয়ে হেরা বলল!
নিশাল মিটমিট করে হাসছে ! আন্টি ভালোই অভিনয় করে পাপাকে নার্ভাস করে দিচ্ছে ! ওর খুব মজা লাগছে!
সরি হেরা ! নওশাদ হেরার পায়ে হাত দিতেই হাত সরিয়ে দিল হেরা !
আরে না ধরলে ঠিক করে বুঝবো কিভাবে কোথায়, কতটুকু ব্যথা পেয়েছো ?
না না পায়ে হাত দিবেন না আপনি !
আরে বোকা মেয়ে দেখি !
হেরা দাঁড়িয়ে গেল ! নিশাল হো হো করে হাসছে !
কি হলো ? নওশাদ ছেলে আর হেরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
পাপা আন্টি কোন ব্যথা পায়নি তোমার সঙ্গে মজা করছিল !
কি সত্যি ! তুমি ও জানতে ?
হুম , আন্টি আমাকে ইশারা করেছে আগেই !
ভালোই তো দুজন দল বেঁধে আমাকে বোকা বানালে !
হেরা লজ্জা পেয়ে গেল !
পাপা তুমি রাগ করোনি তো আন্টি সাইকেল চালাচ্ছিল দেখে ?
অবশ্যই রাগ করেছি , এটা কেমন কথা বাড়ির বউ সাইকেল চালাচ্ছে !
নওশাদের কথা শুনে হেরা ঘাবড়ে গেল !
পাপা সরি আন্টি কে বকো না প্লিজ !
নওশাদ নিশাল আর হেরা কে পাশ কাটিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল !
হেরার ভয় করছে নওশাদ রেগে গেছে ! নিশাল হেরার পাশে দাঁড়ালো , তুমি টেনশন করছো কেন পাপা কারো উপর রাগ করে না কখনো !
কিন্তু মন খারাপ করে আছেন তো !
চলো দেখি !
ওরা দুজন এসে দেখে নওশাদ স্যুট টা খুলে সোফায় বসে পেপার পড়ছে !
নিশাল পাপার পাশে বসলো , পাপা প্লিজ আন্টি ভয় পাচ্ছে তোমাকে !
নওশাদ তাকিয়ে দেখে হেরা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ! যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবে!
হেরা লজ্জায় মরে যাচ্ছে!
নিশাল তোমার আন্টিকে বলো আমাকে পিছনে নিয়ে সাইকেল চালালেই সে ক্ষমা পাবে !
নিশাল হেসে দিল , আমি বলেছিলাম না আন্টি পাপা রাগ করে নেই !
তোমরা দুজন অভিনয় করতে পারো আমি দেখলাম আমিও পারি কিনা ! নওশাদ হাসছে! আর হেরা তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলে আমি তো ভেবেছিলাম না জানি কত ব্যথা পেয়েছো!
ঘাসের উপর পড়েছি তাই ব্যথা পাইনি , রাস্তায় পড়লে ব্যথা পেতাম!
ভালোই তো দুজন সাইকেল চালাচ্ছিলে আমার খুব মজা লাগছিল দেখে !
অনেক বছর পর চালালাম আমি , হেরা বলল!
সাইকেল চালানো , সাঁতার কাটা একবার শিখলে কেউ ভুলে না বুঝলে !
আমাকে সাইকেল চালানো , সুইমিং পাপা শিখিয়েছিলে তাই না পাপা ?
হুম ! তখন তুমি ছয় বছর হবে !
হুম।
নওশাদের খুব ভালো লাগছে নিশাল অনেক দিন পর এভাবে ওর সঙ্গে গল্প করছে । হেরার সঙ্গে কত সহজ হয়ে গেছে ও ! দুজন সাইকেল চালাচ্ছে এমন ঘটনা ঘটবে সে কল্পনাও করেনি !
আনারের মা চা এনে দিলো !
এই চা খাব না আমাকে এই সময় তোমার আম্মার চা বানিয়ে দেয়ার কথা আনারের মা !
আমি দিচ্ছি বলে হেরা উঠে দাঁড়ালো !
এখন না আগে ফ্রেশ হব তারপর খাব ! নিশাল তুমিও খাও আমার সঙ্গে চা ?
ঠিক আছে !
হেরা উঠে গেল কিচেনের দিকে !
ওদের কথার মাঝখানে কেয়ারটেকার রিয়াজ নিশালের দুই ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলো ড্রয়িং রুমে !
নিশাল বন্ধুদের দেখে উঠে গেল !
নওশাদ ছেলের বন্ধুদের দিকে আগ্রহী চোখে তাকাচ্ছে ! খুব কমই ছেলের বন্ধুদের দেখা পায় সে !
পাপা ওরা আমার ফ্রেন্ড দাইয়ান আর মেহরাব কলেজে দেখেছো ওদের !
আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল !
ওয়ালাইকুমুস সালাম ! কেমন আছো তোমরা ? ওয়াও তোমাদের সঙ্গে দেখি গিটার আছে !
জ্বি আংকেল শেহজাদ টিউন করে দিবে তাই নিয়ে এলাম !
এসো এসো বসো তোমরা!
নিশাল বাবা তুমি কিন্তু কখনো আমাকে শোনাও না বাজিয়ে !
আংকেল শেহজাদ অনেক ভালো বাজায় কিন্তু !
ওরা বেশি বেশি বলছে , পাপা যে কত ভালো গিটার বাজাতে পারে তোরা জানিসই না !
অনেক অনেক বছর আগে টুকটাক বাজাতাম এখন আর সেই ক্ষমতা নেই !
প্লিজ আংকেল দেখুন না চেষ্টা করে আবার !
আরে না না !
প্লিজ পাপা প্লিজ দারুন হবে ! তুমি গতবছর ই তো রেজোয়ান আংকেল আর সুমনা আন্টির এনিভার্সারি পার্টিতে তোমার ফ্রেন্ড দের গিটার বাজিয়ে শুনিয়েছিলে আমি কিন্তু ছিলাম সেখানে!
নওশাদ ছেলের মুখের দিকে তাকালো , মনে মনে ভাবছে এই তো সুযোগ ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক টা সহজ করার ! যা সে এত গুলো বছর থেকে চাইছে !
ঠিক আছে দাও দেখি গিটার ,কি হয় অবস্থা দেখাই যাক !
এক সেকেন্ড পাপা আমার গিটার টা নিয়ে আসছি ,বলেই নিশাল নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিল !
নওশাদ নিশালের সঙ্গ টা উপভোগ করছে ! একটা মাত্র সন্তান তার , তার সঙ্গে দূরত্ব সহ্য করতে কষ্ট হয় খুব ! এবার ছুটিতে এসে নিশাল অনেক কাছে এসেছে ! আগে তো এসেই বীথির বাসায় চলে যেতো যখন তখন ! আর নয়তো পড়ছে , নয়তো বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেছে এবার ওর কাছে আসছে নিশাল, এটা অনেক বড় পাওয়া তার জন্য!
নিশাল ছুটে এলো তার গিটার নিয়ে ! পাপা এটা দিয়ে বাজাও !
নওশাদ ছেলের হাত থেকে গিটার নিয়ে কিছুক্ষণ টুং টাং করলো তার প্রিয় ‘ আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে ‘ গানটার কয়েক লাইন বাজালো এবং গাইলো !
নিশাল বন্ধুদের সামনে পাপার গান গাওয়াটা খুব উপভোগ করছে ! মেহরাবের গিটার টা নিয়ে সেও পাপার সঙ্গে একটু বাজানোর চেষ্টা করছে!
নওশাদ বলল,নিশাল কর্ড হবে সি মেজর, এ মাইনর, এফ মেজর জি মেজর ঠিক আছে ওকে স্টার্ট !
ওকে পাপা !
বাবা আর ছেলে গিটার বাজাচ্ছে খুব মনোযোগ দিয়ে !
নওশাদের মনে হচ্ছে কাউকে দিয়ে যদি ভিডিও করে রাখতে পারতো এই মুহুর্ত টা ! কিন্তু কিছু ইচ্ছে পূরন করা সম্ভব হয়ে উঠে না সব সময় ! এরকম একটা সন্ধ্যা হঠাৎ এই বাসায় এসেছে ভাবতেই নওশাদের ভালো লাগছে !
হেরা কিচেন থেকে বের হয়ে ডাইনিং এ বসে দেখছে বাবা আর ছেলে গিটার বাজাচ্ছে ! মানুষটা এত সুন্দর করে গিটার বাজায় ! যদিও সে গিটারের কিছুই বুঝে না কিন্তু তবুও তার কাছে মনে হচ্ছে কি অদ্ভুত সুন্দর হচ্ছে বাজানো ! কত কি পারে উনি ! সবচেয়ে ভালো লাগছে নিশাল ওর বাবার সঙ্গে খুব আনন্দ নিয়ে বাজাচ্ছে ! হেরা দূর থেকে উপভোগ করছে ,থাক ওরা কিছুটা সময় নিজেদের মতো !
হেরা আনারের মা কে দিয়ে ডাইনিং এ নাস্তা সাজিয়ে উপরে উঠে এলো বুবু তাকে ডাকছে সেই খবর পেয়ে !
গেস্ট রুমের দরজা খোলাই ছিল ! সামনে দাড়াতেই বুবু হাত ইশারায় ভেতরে ডাকলো !
কিসের শব্দ পাচ্ছি ?
বুবু নিচে এসে দেখেন আপনার ভাই কি করছে ?
কি ?
ছেলের সঙ্গে গিটার বাজাচ্ছে !
তাই ! বাজাক , ছেলেটাকে খুব ফীল করে বাবু !
জ্বি বুবু ! চা বানানো হয়েছে বুবু নিচে আসেন সবার সঙ্গে চা খাবেন চলুন ! দুলাভাই কোথায় ?
তোমার দুলাভাই বন্ধুর বাসায় গিয়েছে আসেনি এখনো ! আমি শুয়ে থাকব রাতে ঘুমাতে পাড়িনি এখন শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে !
খারাপ লাগছে বুবু ?
না জেট লেগ কাটেনি এখনো !
চা রুমে নিয়ে আসি ?
কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও চা !
ঠিক আছে বলে হেরা ঘর থেকে বের হয়ে গেল!
নিচে নওশাদ ছেলে আর তার বন্ধুদের সঙ্গে তখনও কথা বলছে ! গিটার বাজানো এখন বন্ধ !
হেরা কে দেখে নওশাদ বলে উঠলো ,
হেরা তোমার চা কি রেডি ?
জ্বি আসুন সবাই !
চলো বাবারা তোমাদের আন্টি চা নিয়ে অপেক্ষা করছে বাকি গল্প চা খেতে খেতে করা যাবে চলো !
জ্বি আংকেল !
হেরা কে দেখে ওরা সালাম দিলো !
নিশাল বলল, ওরা আমার কলেজের ফ্রেন্ড আন্টি !
ভালো আছো ,বসো তোমরা !
হেরা নিজে সবাই কে চা নাস্তা তুলে দিলো !
তুমি খাবে না হেরা ?
আন্টি তুমিও বসো এখানে!
এখন ইচ্ছে করছে না ,পরে খাব !
নওশাদ শুধু চা খেয়ে উঠে পড়ল ! বাবারা তোমরা গল্প করো আমি উঠলাম !
জ্বি আংকেল !
নিশাল কিছু লাগলে পারুল কে বলো !
ঠিক আছে !
হেরাও নওশাদের পিছনে পিছনে উপরে উঠে গেলো !
ওরা চলে যেতেই নিশালের বন্ধুরা ওকে ধরলো !
তুই বলিস নাই কেন আংকেল এত সুন্দর গিটার বাজায় ?
বললে কি হতো?
পাপা অনেক কিছু পারে কিন্তু সেসব এখন আর প্রেকটিস করে না, এখন শুধু বিজনেস আর টাকা নিয়ে ব্যস্ত !
সবাই একটা সময় টাকা নিয়ে ই ব্যস্ত থাকে । তুই আমিও এই বয়সে তাই করব !
তবে শেহজাদ, আন্টি কিন্তু খুব প্রিটি দেখতে !
হুম, ভালোও খুব ! একটু সহজ সরল টাইপের বুঝে কম !
কম বোঝাই ভালো ! অনেক সময় স্টেপ মম রা অনেক ঝামেলা বাজ থাকে সেরকম না হলেই হয় ?
না রে দাইয়ান সেরকম না ! আমার কেয়ার করে খুব !
তাহলে তো তুই লাকি শেহজাদ!
আচ্ছা আন্টি ডাকিস বুঝি ?
তাহলে কি ডাকবো , এত কম বয়সী একজন কে কি আম্মু , আম্মা ডাকা যায় নাকি ! আমি আর কাউকে মাম্মা ডাকতে পারব না কখনো !
মাম্মা না ডাক অন্য কিছু ডাক ! কিন্তু আন্টি ডাকা টা কেমন দেখায় ! পাপা আর আন্টি কেমন শোনায় শেহজাদ !
বাদ দে আমার রুমে চল!
না উঠতে হবে ! মা চিন্তা করছে বাসায় !
ফোন দিয়ে বল আসবি আধা ঘন্টা পরে !
আজ থাক আরেক দিন আসব !
ঠিক আছে চল এগিয়ে দিয়ে আসি তোদের ! আর গিটার টা থাক পরে পাঠিয়ে দিব আমি !
ঠিক আছে !
বন্ধুদের নিয়ে নিশাল গেটের দিকে এগিয়ে গেল!
নওশাদ ফ্রেশ হয়ে এসে ইজি চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে! হেরা নওশাদের কাছে এসে দাঁড়ালো !
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে বুঝলে !
তাই ? কখন থেকে, ওষুধ দিব?
দুপুরের পর থেকেই করছে !
আপনি তো বলেননি ! রুমে এসে রেস্ট করা উচিত ছিল !
না হেরা , আজ আমার মনটা খুব ভালো ! আজ কোন শারীরিক কষ্ট আমার কাছে কিছু না , আমার ছেলে আজ কত আনন্দ নিয়ে আমার সঙ্গে সময় কাটিয়েছে । এরকম মুহূর্তের জন্য আমি বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি !
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই ?
দাও !
হেরা নওশাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে !
হেরা আজ নিশালের সঙ্গে কাটানো সময় টা আমার লাইফের একটা কাঙ্ক্ষিত সময় ! কি যে ভালো লাগছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না!
আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছিলাম ! আপনাকে সরি বলতে চাইছি !
কেন ?
আমি সাইকেল চালিয়েছি আর কখনো এমন করব না !
আমি রাগ করেছি তোমাকে কে বলল বোকা ! আমি সত্যিই খুব মজা পাচ্ছিলাম তোমাদের দুজনকে দেখে ! নিশাল আর তুমি হেসে হেসে সাইকেল চালাচ্ছো আমার তো খুব ভালো লেগেছে! তোমাদের সঙ্গে চালাতে ইচ্ছে করছিল!
ও ভয় পাচ্ছিলো আমি পড়ে যাই যদি !
আমার ছেলেটা বুকে অনেক অভিমান নিয়ে আছে হয়তো আমার জন্য, আমার খুব কষ্ট হয় জানো এটা ভাবলেই !
আপনি ভুল জানেন ! আপনার ছেলে আপনাকে অনেক ভালোবাসে ! আজ আমাকে কি বলল জানেন ?
নওশাদ হেরার হাত ধরে হেরা কে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো ! বলো কি বলেছে নিশাল ?
আমাকে বলল, আন্টি পাপার কি হয়েছে ? পাপা মাম্মা কে খুব মিস করছে ! আমার রুমে এসে মন খারাপ করে বসে থাকে ।
এই কথা বলেছে ? নওশাদ অবাক হয়ে বলল!
আরো বলল পাপার খেয়াল রেখো , মন খারাপ থাকলে পাপা অসুস্থ হয়ে যায় !
তোমাকে আমার খেয়াল রাখতে বলেছে ?
হুম !
নওশাদের চোখ আনন্দে ছলছল করছে !
হেরা আমি তো পারি না তুমি নিশাল কে সময় দিও প্লিজ !
হেরা নওশাদের চোখের পানি টা মুছিয়ে দিল !
আপনি কেন পারেন না ? কয়টা দিন থাকে ছেলেটা সেই সময় একটু চেষ্টা করবেন ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকার !
কত কাজ আমার হেরা !
কিসের কাজ ? ছেলের চেয়েও বেশি ?
না আমার ছেলের চেয়ে বেশি আর কিছুই না ! ছেলেটা আমার জান হেরা !
তাহলে ?
তুমি ঠিক কথাই বলেছো আমি ওর সঙ্গে বেশি সময় কাটাবো !
বুবু কি বলেছেন আমাকে জানেন ?
কি ?
আপনার ছেলে মানে আমার ছেলে !
তাই ?
হুম ! আর এই চেইন কেন দিয়েছে সেটাও বলেছে ! হেরা লজ্জায় লাল হয়ে বলল !
কেন হেরা ?
আপনি তো জানেন !
তাও শুনি তোমার কাছ থেকে !
থাক শুনতে হবে না !
নওশাদ হাসছে !
শুনি না !
আপনার মেয়ে হলে তাকে দিতে বলেছে !
বুবুর ইচ্ছা গুলো কেমন বুঝলে তো ! মাথা নষ্ট টাইপের।
হেরা তোমাকে নিজের পড়াশোনা করতে হবে এখন ! বুবুর কথা শোনার অনেক সময় পড়ে আছে সামনে !
জ্বি !
আচ্ছা আপনি এত ভালো গিটার বাজাতে পারেন !
এটাকে ভালো বলে না বুঝলে ! ক্যাডেট কলেজে যখন পড়তাম তখন বন্ধুদের সঙ্গে শিখেছিলাম তারপর বুয়েটে পড়ার সময় টুকটাক বাজাতাম। ও বয়সে সব ছেলেরাই গিটার , কীবোর্ড শিখে যতটুকু ততটুকুই !
আমাকে একদিন শোনাবেন !
আচ্ছা ঠিক আছে শোনাব যাও !
আনারের মা দরজায় নক করছে ! হেরা গিয়ে দরজা খুলে দিল!
আম্মা স্যার কই ?
এসো ভেতরে !
আনারের মায়ের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার চাপ ! কি হয়েছে আনারের মা ?
স্যার রিয়াজ ভাই বলল, ভাইয়া বন্ধুদের বিদায় দিতে বাসার বাহিরে গেছে এখনো আসে নাই !
কি ! কতক্ষণ হয়েছে ?
আধা ঘন্টা !
ওর মোবাইল এ ফোন দিচ্ছি দাঁড়াও !
স্যার মোবাইল খাওয়ার টেবিলের উপর রাইখা গেছে !
কি বলছো এসব ! নওশাদ উঠে দাঁড়ালো ! রিয়াজ কোথায় ? দারোয়ান দেখেছে কোন দিকে গেছে ? নওশাদ ছুটে ঘর থেকে বের হলো ! পিছনে পিছনে হেরা ও আসছে !
নিচে নেমে দেখে রিয়াজ উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে !
নওশাদ রিয়াজেকে দেখে বলল,কতক্ষণ হয়েছে বাহিরে গেছে ?
স্যার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল দারোয়ান বলল, একটু পর দেখে ভাইয়া নাই আবার বাসায় ও ঢুকে নাই !
আমি না তোমাকে বলেছি একজন কাউকে ওর সঙ্গে সারাক্ষণ রাখতে !
স্যার সবুজ থাকে বাসার বাহিরে গেলে ! এখন তো ভাইয়া বাসায়ই ছিল !
এখন সময় নষ্ট না করে লোকজন কে পাঠাও আশেপাশে দেখার জন্য !
জ্বি স্যার ! রিয়াজ ছুটে গেল !
নওশাদ টেনশন করছে ! হেরা ওর বন্ধুদের সঙ্গে চলে যায়নি তো নিশাল ?
না মনে হয় ওদের সঙ্গে গেলে বলে যেত, গাড়ি নিয়ে যেত !
সেটাই তো !
বুবু এসে ঢুকলো ড্রয়িং রুমে কি হয়েছে ?
নিশাল বন্ধুদের বিদায় দিতে বাসার বাহিরে গিয়েছিল এখনও ফিরে আসেনি , হেরা বলল!
টেনশন করিস না বাবু আশেপাশেই আছে হয়তো !
বুবু তুমি জানো না কেন টেনশন করি !
নওশাদ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য পোর্চের নিচে এসে দাঁড়াতেই দেখে নিশাল একটা কুকুরের বাচ্চা সহ বাসায় ঢুকছে ওর পিছনে পিছনে রিয়াজ আর তার লোকজন !
নওশাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ! ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে!
পাপা দেখো কি পেয়েছি ? নিশাল খুব এক্সাইটেড!
কোথায় ছিলে বাবা , আমরা সবাই টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম !
সরি পাপা ! আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে বাসায় ঢুকব দেখি এই কুকুরের বাচ্চা টা আমার পায়ের কাছে ! আমি ভাবলাম কার বাসার কুকুর, ওমা সে আমার পায়ের কাছে বসে আছে যায় না ! আশেপাশে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েই দেরি হয়ে গেল !
কার কুকুর ?
জানি না পাপা ! সব বাসায় বলে এসেছি কারো হলে নিয়ে যাবে !
এটা কি কুকুর পাপা ?
মনে হচ্ছে লেব্রাডর !
ওয়াও কারো না হলে আমি রেখে দিব ওকে !
কুকুর বাসায় রাখা নিষেধ বাবা ! ধর্মীয় নিষেধ আছে, তোমাকে তো মানতেই হবে!
বাসায় ঢুকাবো না , প্লিজ পাপা !
তোমার মাম্মা কুকুর পছন্দ করতো না কিন্তু !
আমার খুব ইচ্ছা করছে পাপা প্লিজ না বলো না ! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
আচ্ছা ঠিক আছে, আগে দেখো কার কুকুর ?
থ্যাঙ্কস পাপা ! আন্টি কোলে নিবে ?
না বাবা আমি কুকুর ভয় পাই ! হেরা পিছিয়ে গেল !
আরে আসো আমার সঙ্গে, খুব ছোট ও কিছু করবে না তোমাকে !
না না আমার ভয় লাগে ! হেরা লাফিয়ে উঠলো!
নিশাল হেরার কাছে এসে কুকুর টা কোলে দিতে চাচ্ছে ! হেরা খুব ভয় পাচ্ছে !
প্লিজ আন্টি !
প্লিজ নিশাল না !
হেরা নওশাদের পিছনে লুকিয়ে গেল !
নওশাদ ওদের দেখে মজা পাচ্ছে!
সবাই হেরা আর নিশালের দিকে তাকিয়ে হাসছে !
বীথি ঠিক তখনই নিশালের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় এসে হাজির হয়েছে !
গাড়ি থেকে নেমে নিশাল আর হেরার হাসাহাসি দুষ্টামি দেখে পুরো স্তম্ভিত সে !
কেমন আছো বিথী ?
জ্বি দুলাভাই ভালো আছি ! হেরা তুমি কেমন আছো ?
জ্বি আপু ভালো আছি ! বাচ্চা রা কেমন আছে আপু?
ভালো ! বুবু আসছে শুনলাম !
নওশাদ বলল,হুম ! যাও উপরেই আছে বুবু দেখা করে এসো !
যাব আগে নিশালের সঙ্গে দেখা করে নেই!
কোথা থেকে একটা কুকুরের বাচ্চা নিয়ে এসেছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত সে !
আপনার ছেলে এবার এত ব্যস্ত দুইদিন হয়েছে এসেছে আমার কাছে আসেনি !
সেরকম কিছু না বুবু এসেছে আর ওর স্যার এসেছিল কালকে তাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে যেতে সময় পায়নি ! তুমি কথা বলো নিশালের সঙ্গে আমি রুমে গেলাম ডিনার করে যেও আমাদের সঙ্গে !
না দুলাভাই চলে যেতে হবে বাচ্চাদের বাসায় রেখে এসেছি !
ঠিক আছে ! হেরা একটু উপরে আসো তো বুবুর ঘরে ! নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে উপরে উঠে গেল!
আপু আগে চা খান , হেরা বীথির দিকে চা এগিয়ে দিল !
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বীথি বলল,নিশাল কোথায় গেল ?
কুকুর ধরেছে ড্রেস চেঞ্জ করে হাত ধুয়ে আসছে !
আমি ওর রুমে যাচ্ছি !
জ্বি আপু !
হেরাও বিথীর সঙ্গে উপরে উঠে এলো ! বিথী নিশালের ঘরে গিয়ে ঢুকলো !
নিশাল হাত মুখ ধুয়ে ,গেঞ্জি চেন্জ করছে ! তখনই বীথি ঢুকলো ওর ঘরে !
কি ব্যাপার নিশু আমার কাছে এখনো যাওয়ার সময় হলো না তোমার ?
খালামনি সরি রাগ করো না ! আসার পরদিন ফুপি আসলো আর রুমী ভাইয়া এসেছিল পড়াতে আর আজ ভাবছিলাম যাব কিন্তু তুমি ই তো চলে এলে !
হুম ঐ মেয়ের সঙ্গে সাইকেল চালাচ্ছো আমার সঙ্গে দেখা করার সময় কোথায় ?
আন্টি খুব ভালো সাইকেল চালায় জানো দুজন খুব এনজয় করেছি ! পাপা আসার পর কি হয়েছে শুনলে হাসবে তুমি !
চুপ করো ! বীথি ধমক দিলো ! ঢং । মেয়ের দেখি কান্ড জ্ঞান নাই সাইকেল চালায় !
সাইকেল চালালে কি সমস্যা ?
তুমি বুঝবে না নিশু !
পাপা তো খুব মজা পেয়েছে !
তোমার পাপা তো কচি বউ পেয়ে সে যাই করে তাতেই মজা পাচ্ছে , আহ্লাদ করছে !
ছিঃ খালামনি এসব কি বলছো !
ভুল কিছু বলছি না !
প্লিজ পাপাকে নিয়ে আমার সামনে কিছু বলবে না ! নিশাল কঠিন মুখে বীথির দিকে তাকালো !
কেন ? তোমার পাপা কিভাবে পারলো এই বয়সে এরকম একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে ? গ্রাম্য একটা মেয়ে ! অসহ্য !
খালামনি পাপার রাইট আছে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ! আর আমি মনে করি পাপা ভুল কিছু করেনি ! মাম্মা তো কখনো আর ফিরে আসবে না , পাপা সারাজীবন একা কিভাবে বাঁচবে ?
একা কোথায় তুমি আছো , বাড়ি ভর্তি লোকজন আছে !
আমিই তো থাকি না আর কাজের লোকজন কি মাম্মার অভাব পূরণ করতে পারবে ? পাপা ছয়টা বছর একা কাটিয়েছে , অনেক কষ্ট হয়েছে ! অসুস্থ হলে কেউ দুই মিনিট পাশে বসে থাকে না !পাপার বুঝি কষ্ট হয় না ! বুড়ো হবে যখন তখন কে দেখবে পাপাকে ?
তুমি দেখতে !
দাদা ভাই কে কি পাপা সারাক্ষণ দেখতে পারে ? সেই রাজু ভাই আর আনারের মা দেখে !
তুমি তোমার পাপার বিয়ে তে খুব খুশি নিশু ?বীথি কঠিন মুখে নিশালকে প্রশ্ন করলো!
খুব !
বাহ্ ! দারুন তো !
খালামনি এত রিয়েক্ট করার কিছু নেই ! পাপার লাইফে একটা মানুষ লাগে যাকে নির্দ্বিধায় সব পাপা বলতে পারবে আর সেটা ওয়াইফ ছাড়া আর কেউ হতে পারবে না !
তুমি তো খুব আপন হয়ে গেছো সেই মেয়ের !
জানি না কিন্তু আমার উনাকে পছন্দ হয়েছে ! সারাক্ষণ বাসায় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ! পাপার , আমার আর দাদাভাইয়ের কত যত্ন করছে ! পাপাকে হ্যাপি দেখে আমারও ভালো লাগছে !
হয়েছে আর শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার ! নিশাল বাচ্চা আমার তুমি বুঝতে পারছো না ঐ মেয়েকে, তুমি যত কিছুই বলো ঐ মেয়ে কখনো তোমার ভালো চাইবে না দেখো !
কি এসব বলো খালামনি ?
হ্যাঁ , এখন তোমার পাপা কে দেখানোর জন্য ভালো সাজছে । কয়দিন পর নিজের একটা ছেলে মেয়ে হলেই তোমার সঙ্গে কি ব্যবহার করে দেখবে !
পাপার একটা বেবি হলে ভালই হবে কি বলো খালামনি ? আমার ফ্রেন্ড দের সবার ভাই বোন আছে আমার ই কেউ নেই দারুন হবে তখন! নিশাল হাসতে হাসতে বলল।
গাধা ছেলে তুই এত অবুঝ কেন ? তোমার আরো ভাই বোন হলে তোমার বাবার এসব সম্পত্তি সব ভাগ হবে তুমি কি পাবে তখন ?
মাম্মা আর পাপার যদি আরো ছেলে মেয়ে থাকতো তখনও তুমি এই কথা বলতে খালামনি ?
সেই ভাই বোন আর হেরার বাচ্চা কি এক হলো ?
আমার কাছে সবাই আমার ভাইবোন ই ! প্লিজ খালামনি আগ বাড়িয়ে এত কথা বলো না তো ! পাপা কিংবা আন্টি শুনলে কষ্ট পাবে !
নিশাল আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাকে দেখে ! দুই দিনে এই মেয়ে তোমাকে জাদু করেছে বুঝি !
ধুর খালামনি !
না গ্রামের মেয়ে রা এসব জাদু টোনা জানে ! আমার তো খুব ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে !
চলো খালামনি ফুপির ঘরে যাই !
আমার কথা শুনো ! কালকে আমার বাসায় দুপুরে খাবে তোমার সঙ্গে কথা আছে আমার !
আচ্ছা ঠিক আছে ! এখন চলো ওদিকে যাই !
রাগে গজগজ করতে করতে বীথি রুম থেকে বের হয়ে নওশাদের বোনের রুমে ঢুকলো ! সে পারুলের কাছ থেকে আগেই শুনেছে হেরা নওশাদের রুমে থাকছে কালকে থেকে!
নওশাদ , হেরা সবাই ওখানে বসে গল্প করছে !
বুবু কেমন আছেন ?
আমি ভালো আছি বীথি ! তোমার কি খবর ?
ভালো ! অনেক দিন পর এলেন !
হ্যাঁ ! এবার এসেছি হেরাকে দেখতে ! বাবু এত দিন পর নিজের বলে কাউকে এ বাড়িতে এনেছে তাই দেখার জন্য চলে এলাম !
আপনার ভাই বুবু পাকা বিজনেস ম্যান আমার বোন সমবয়সী ছিল হঠাৎ মাঝপথে ছেড়ে চলে গেছে বলে এবার কম বয়সী বিয়ে করেছে লং লাস্টিং হয় যেন ! নিজের কথায় বীথি নিজেই হাসছে ! নওশাদ তাকিয়ে আছে বীথির দিকে ! হেরা চুপ করে আছে! কিন্তু নিশাল খুব বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল রুম থেকে !
জান্নাত আজমী বললেন,বীথি দোয়া করো ওদের জন্য তাহলেই হবে !
জ্বি বুবু!
নওশাদের ফোনে ড্রাইভার বাহারের ফোন এলো তখন !
হ্যালো বাহার !
স্যার একটু আসবেন নিচে জরুরি কথা ছিল !
কি কথা ?
স্যার একটু আসেন স্যার !
অপেক্ষা করো !
নওশাদ বুবুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আসছি বুবু তোমরা কথা বলো !
নিচে নামতেই বাহারের সঙ্গে দেখা ।
কি ব্যাপার বাহার কি সমস্যা ? গাড়ি ঠিক আছে ?
স্যার গাড়ি ঠিক আছে !
তাহলে ?
বাহার চোখ মুখ শুকনো করে বলল, স্যার ঐদিন কুষ্টিয়ায় আম্মাদের এলাকার চেয়ারম্যান আমার নাম্বার রাখছিল আসার সময় ! আমি না বুইঝা তারে নাম্বার টা দিয়া দিসি !
এখন কি হয়েছে সেটা বলো ?
এই মাত্র চেয়ারম্যান সাব ফোন দিসে আমারে ! আম্মার নানার অবস্থা খুব খারাপ !
তাই ! উনার নাম্বারে কল দাও তো , আমি কথা বলব !
স্যার !
বাহার চেয়ারম্যান এর নাম্বারে ডায়াল করলো ! ওপাশে ধরতেই ,
চেয়ারম্যান সাব আমার স্যার কথা বলব আপনার সঙ্গে নেন কথা বলেন !
জ্বি চেয়ারম্যান সাহেব নওশাদ আজমী বলছি , কি হয়েছে সাইফুল ইসলাম স্যারের ?
স্যার আপনি ভালো আছেন?
জ্বি আমি ভালো আছি !
সাইফুল স্যার কয়েকদিন থেকেই খুব অসুস্থ ছিলেন আজ খুব বাড়াবাড়ি অবস্থা ,আমি শুনে দেখতে এসে দেখি খুব খারাপ অবস্থা !
নওশাদ বলল,চেয়ারম্যান সাহেব আপনি কষ্ট করে একটা কাজ করবেন আমার জন্য?
প্লিজ একজন লোক দিয়ে স্যার কে এম্বুলেন্স এ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবেন ! আমি স্যারের চিকিৎসা করাতে চাই ! এটা আমার দ্বায়িত্ব !
স্যার উনার অবস্থা এতটাই খারাপ, মনে হয় না ঢাকায় পাঠানো যাবে !
তারপরও আপনি একটু দেখবেন কিছু করা যায় কিনা ! কুষ্টিয়ায় চিকিৎসা করানো তো যাবে অন্তত । আপনি সেই ব্যবস্থা করেন আপনি টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না । আমি টাকা পাঠাচ্ছি আপনার কাছে !
আপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমি উনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি !
নওশাদ বলল,আর একটা কথা আপনি কি এখন উনার কাছে ?
জ্বি স্যার উনার বাড়ির সামনে !
আমি দুই মিনিট পর ফোন দিচ্ছি আপনাকে আপনি উনার সঙ্গে আমার ওয়াইফের কথা বলিয়ে দিবেন আপনার ফোনে !
জ্বি স্যার !
নওশাদ দৌড়ে দোতলায় উঠে এলো ! বুবুর ঘরে ঢুকে দেখে হেরা সবার সঙ্গে গল্প করছে !
নওশাদ হেরার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টান দিলো , এসো আমার সঙ্গে !
জ্বি ! হেরা অবাক হয়ে গেল !
আসো তো আমার সঙ্গে কাজ আছে ! হেরা সবার সামনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে ! নওশাদ ওকে টেনে ওদের রুমে নিয়ে গেল !
বীথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে !
জান্নাত আজমী বলল, জরুরি কিছু হবে হয়তো ! তুমি বসো বীথি !
বীথি মনে বলল, অসহ্য ঢং !
নওশাদ হেরা কে রুমে নিয়ে চেয়ারম্যান এর নাম্বার এ ফোন দিল ! তারপর হেরার দিকে মোবাইল টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কথা বলো !
কে ?
দেখো কে ?
হেরা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশে খুব ক্ষীণ একটা গলা শুধু বলল, হেরা !
হেরা চিৎকার দিয়ে উঠলো, নানা ভাই !
( চলবে )