#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৪র্থ পর্ব
নিজের ইচ্ছে টাকে শাসন করে নওশাদ কাজের মাঝে ডুবে রইল । পাঁচ দিনের জন্য দেশের বাহিরে যাবে ওর জন্য যেসব কাজ পরে থাকবে সব ক্লিয়ার করে দিচ্ছে। অন্য দিন এই সময়ে অনেক এমপ্লোয়ি চলে যায়, আজ অফিসে লোকজনে ভরা !
কাজ করা ওর নেশা যখন থেকে ব্যবসায় নেমেছে! কোন দিন শর্টকাট এ উপরে উঠে যাবে সেই চিন্তা সে করেনি! আন্তাজে কোন ব্যবসায় ঝাঁপ দিয়ে পড়েনি সে । নিজের যোগ্যতা আছে কিনা সেই ব্যবসা করার আগে সেটা যাচাই বাছাই করে তারপর ইনভেস্ট করে। ইদানিং শিপিং বিজনেস আর কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসায় ঢুকেছে সে ! আগামী মাসে তার দুটো শীপ হ্যান্ডওভার করবে কম্পানি আর হোটেল ও প্রস্তুত কয়েক মাসের মধ্যে চালু হবে!
এই পথ পাড়ি দিতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে! কিন্তু তারপরও মনের ভিতরে আজীবন এক কষ্ট থেকেই যাবে , এত টাকা এত ক্ষমতা গীতির জন্য কিছুই কাজে দেয়নি !
গীতি হঠাৎ চলে গেল ! কোন চিকিৎসা সেবাই দিতে পারেনি গীতিকে।
সন্ধ্যায় হঠাৎ শরীর খারাপ লাগছে শুধু আনারের মা কে বলল। তারপরও নিশাল কে নিয়ে পড়তে বসালো ! কিছুক্ষণ পর শরীর বেশি খারাপ লাগাতে ফারহান কে ফোন দিল গীতি নিজেই ! তাকে ফোন দেয়নি ! সেদিন ও নওশাদ এরকম অফিসের কাজে দেশের বাহিরে যাবে সেই জন্য খুব ব্যস্ত ছিল !
ফারহান বাসায় গিয়ে দেখে গীতির প্রেসার অনেক বেশি ওষুধ খাইয়ে দিল ! কি মনে করে গীতিকে জোর করে ফারহান নিজের গাড়িতে করে হসপিটালে নিয়ে রওনা হলো । গাড়িতে বসেই নওশাদ কে জানালো ফারহান । নওশাদ হসপিটালে পৌঁছে দেখে গীতি ততক্ষণে ওকে ছেড়ে চলে গেছে !
যাওয়ার আগে একটা কথাও বলে যায়নি নওশাদ এর সঙ্গে !
সেই রাতটা নওশাদ ভুলে থাকতে চায় । ভুলে থাকতে চায় গীতি তার পাশে নেই !
ছোটভাই আরমান দরজায় নক করলো !
: ভাইয়া ?
: হুম ! তুই এখনো যাসনি?
না, তোমার কি শরীর খারাপ , চোখ বন্ধ করে আছো যে ?
: না শরীর ঠিক আছে । কিছু বলবি ?
চেয়ারে বসতে বসতে আরমান বলল, বুবু ফোন দিয়েছিল দুপুরে তোমাকে পাচ্ছিল না ফোনে !
: কথা হয়েছে আমার সঙ্গে !
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরমান বলল,ভাইয়া একটা কথা বলব ?
: বল , ডেক্সটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই নওশাদ বলল?
: তুমি কোন অস্বস্তি ফীল করো না আমরা সবাই খুব খুশি তুমি বিয়ে করাতে । হঠাৎ কেন করলে, কাকে করলে, কোথায় করলে এসব আমাদের মাথা ব্যথা না । যাকে বিয়ে করেছো সে এখন থেকে আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার। তোমার স্ত্রী ই তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ! আমরা তো দেখেছি ভাবি যাওয়ার পর তুমি কতটা একা জীবন পার করছিলে। আজ আমাদের তোমাকে নিয়ে চিন্তা নেই আর ! ফারহানের সঙ্গে কথা হয়েছে ও খুব খুশি ।
নওশাদ চোখ তুলে তাকালো ছোট ভাই আরমানের দিকে , থ্যাঙ্কস আরমান !
: তুমি নিশাল কে নিয়ে টেনশন করো না ও সব বুঝবে দেখো !
: হুম !
নওশাদ বলল, বীথি আর যুথী খুব কষ্ট পেয়েছে !
: তুমি ওসব নিয়ে টেনশন করো না ভাইয়া !
: আরমান আমি আসি বাহির থেকে তারপর সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব হেরা কে ততদিন পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করবে আশাকরি !
: ঠিক আছে ভাইয়া ভাবিকে আমরা তখনই দেখতে আসব !
আরমান বের হয়ে গেল ।
নওশাদের গাড়ি বাসায় ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজ এসে দরজা খুলে দেয় সব সময় !
গাড়ি থেকে নেমে নওশাদ বলল,
: রিয়াজ আমার লাগেজ গোছানো হয়েছে?
: স্যার শোয়েব স্যার নিজেই করে সব আমাকে বলছে আমি সব রেডি করে রাখছি !
: ঠিক আছে!
নওশাদ উপরে উঠে এলো !
আব্বার রুম থেকে টিভির সাউন্ড শোনা যাচ্ছে ! নওশাদ বাবার রুমে গিয়ে ঢুকলো !
টিভিতে তার বাবা কার্টুন দেখে হাসছে , টম এন্ড জেরি !
ওকে দেখে কাছে আসতে হাতে ইশারা করলো !
সাউন্ড কমা বলে রিমোট হাতে তুলে দিল !
নওশাদ সাউন্ড কমিয়ে দিল !
: বাবু আজকে কাকে দেখলাম বাসায় জানিস !
কাকে আব্বা?
বড় বৌমা কে! তুই কি ঝগড়া করেছিস ওর সঙ্গে ? তাহলে এত দিন ধরে বাপের বাড়িতে কি করে !
: কখন দেখলে ?
: সন্ধ্যায় আমার ঘরের সামনে ! মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ,ডাকার আগেই কোথায় যেন চলে গেল !
: বকুল কে বললাম খবর দিতে বড় বউমা কে , এখন ওর ই খবর নাই !
: তোমার শরীর ভালো আছে আব্বা ?
: তুই যা বড় বউমা কে আসতে বল আমার কাছে , আমি বলব এভাবে বাপের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতে হয় না বউ দের !
: ঠিক আছে আমি বলে দিব !
: এখন টিভির সাউন্ড দে আমি টমি আর জিমি দেখতেছি ! নিশাল দাদুভাই কে পাঠা ও খুব পছন্দ করে !
: টম এন্ড জেরি আব্বা !
: ঐ হলো আমার নাম মনে থাকে না !
নওশাদ বাবার রুম থেকে বের হয়ে চিন্তা করছে ,আব্বা কাকে দেখে গীতি ভাবছে ! বীথি কিংবা যুথী কেউ এসেছিল নাকি ?
মনে মনে নওশাদ ভাবছে, ওদের সাথে কথা বলতে হবে । খুব আপসেট হয়ে আছে ওরা !
এশার নামাজ পড়ে নওশাদ বেড রুম লাগোয়া বিশাল বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। এই বাড়ি তার ডিজাইন করা। গীতির খুব পছন্দ ছিল নিজের ঘরের সঙ্গে বাগান থাকবে তাই সে তাদের বেড রুমের সঙ্গে বড় ছাদ বারান্দা রেখেছে যার ছাদে র নিচে এক তলার সঙ্গে আছে ছোট্ট একটা সুইমিং পুল ! সব ছিল গীতির পছন্দ অনুযায়ী। তাই বাড়ির নাম দিয়েছে নওশাদ , ” গীতিময়” । সব কিছু এখানে গীতিময় কিন্তু গীতিই শুধু নেই ! দীর্ঘ শ্বাস ফেলল নওশাদ। প্রতিটি কোণায় গীতির পছন্দ করা জিনিস !
ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকালো । এখানে বসে কত পূর্ণিমার রাতে সে আর গীতি গল্প করতো !
গীতির খুব ইচ্ছে ছিল নিশালের আরো ভাই বোন থাকবে কিন্তু গীতির কিছু কমপ্লিকেসি থাকাতে ,
নওশাদেরই আর ইচ্ছে ছিল না বাচ্চা নিতে । কত আফসোস করতো গীতির সেজন্য !
এত বড় একটা বাড়ি শুধু কাজের লোকজনে ভর্তি মানুষ মাত্র সে আর তার বৃদ্ধ বাবা । ছেলেটা যদি থাকতো তাহলেও হতো !
হঠাৎ গেস্ট রুমের বারান্দার দিকে নওশাদের চোখ আটকে গেল ! হেরা দাঁড়িয়ে আছে !
নওশাদ অন্ধকারে বসে আছে বলেই হয়তো ওকে দেখতে পাচ্ছে না হেরা ! মেয়েটা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
এখন বুঝলো নওশাদ হেরাকে দেখেই হয়তো আব্বা ভেবেছে গীতি !
মোবাইল এ ভাইব্রেশন হচ্ছে তাকিয়ে দেখে রেজোয়ান এর কল!
: হ্যালো দোস্ত !
: ডিস্টার্ব করলাম না তো বন্ধু ?
: আমি এত তাড়াতাড়ি ঘুমাই না তো সবে তো রাত সাড়ে নয়টা ! ডিনার ও করিনি আজ!
: না ভাবলাম নতুন বউ এর সঙ্গে গল্প করছিস !
: রেজোয়ান ,কি বলতে ফোন দিয়েছিস সেটা বল !
: জীনাত এর শপিং পছন্দ হয়েছে তোর, কেমন লাগছে ?
: ও আচ্ছা তুই যখন ডাইরেকশন দিচ্ছিস ভালোই হবে হয়তো । আমার সঙ্গে দেখা হয়নি এখনও মেয়েটির !
: এ কেমন কথা দোস্ত , এটা ঠিক হচ্ছে না আফটার অল শী ইজ ইওর ওয়াইফ নাও ! তুই কালকে দেশের বাহিরে চলে যাবি তোর তো উচিত উনার সঙ্গে সময় কাটানো !
: ওয়াইফ বিষয় টা আমি আগে হজম করে নেই তারপর বাকি সব চিন্তা করব !
: তাড়াতাড়ি হজম কর বোকা ! শোন ইয়োলো, সেইলর , স্টাইলসেল থেকে বেস্ট ড্রেস গুলো কিনেছে জীনাত তোর বউ এর জন্য । আমি জীনাতের সঙ্গে পার্লারেও পাঠিয়েছি কিছু আপডেট করে দিয়েছে আশাকরি তোর ভালো লাগবে । সুমনা কে বলেছি সে তো খুব এক্সাইটেড । এখনি বউ দেখতে চলে যায় সে অনেক কষ্টে আটকে রেখেছি । আমি আর সুমনাও তোর বউয়ের জন্য শপিং করলাম।
: এত পাগলামী র কি দরকার ছিল !
: নওশাদ পাগলামী র কিছু নেই , তুই বিয়ে করেছিস এটা আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু !
: থ্যাঙ্কস বন্ধু !
: রাখছি ভালো থাকিস !
: হুম!
ফোন রেখে নওশাদ রুমের ভেতরে এসে ঢুকলো । আগামীকাল কয়েকদিনের জন্য দেশের বাহিরে যাবে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা দরকার ! একা থাকবে বাসায় !
আনারের মা দরজায় নক করে ঘরে ঢুকলো !
: কিছু বলবে ?
: স্যার ডিনার দিসি !
: একটু পরে খাব , তুমি গেস্ট রুমে যিনি আছেন উনাকে ডেকে নিয়ে আসো তো !
: নতুন আম্মা কে , আনতেছি বলে আনারের মা চলে গেল!
নওশাদ মোবাইল টা হাতে নিয়ে শোয়েব কে ফোন দিবে ভাবছে তখনই আনারের মা আবার এসে ঢুকলো ! ওর পিছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি !
নওশাদ বলল, আসুন ভেতরে !
আনারের মায়ের দিকে তাকাতেই সে বের হয়ে গেল এবং যাওয়ার সময় দরজা টা বন্ধ করে দিল !
মেয়েটি দরজার পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে !
ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ভেতরে আসুন ! নওশাদ লক্ষ্য করলো মেয়েটি ভয় পাচ্ছে ! গোলাপি রঙের কাপড়ে আকাশী সুতার এমব্রয়ডারি একটা কটনের থ্রি পিস পড়েছে। ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়েছে, শরীর ঢেকে রেখেছে ! আজ চুল ছেড়ে রেখেছে। নওশাদ অবাক হয়ে গেল মেয়েটির চুল দেখে হাঁটুর নিচ অব্দি লম্বা চুল !
ফর্সা মুখে আজ হালকা প্রসাধনী র ছোঁয়া পড়েছে ! বড় ফোলা ফোলা চোখ গুলো তে কাজল লাগানো আরো মায়া লাগছে দেখে ! পাতলা পাতলা ঠোঁট!
বেশ লম্বা শুকনা এতে বয়স আরও কম মনে হচ্ছে । খেয়াল করলো মেয়েটির চোখের মণি একটু ধুসর এবং বড়। গীতির চোখ ও হালকা ধুসর ছিল। কিন্তু এতটাও না।
নওশাদ বলল,এক কাজ করি আমরা ছাদ বারান্দায় গিয়ে বসি আসুন !
নওশাদ বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল ! মেয়েটি ধীর পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো !
ছাদের চেয়ারে বসতে বসতে নওশাদ তাকিয়ে দেখে মেয়েটি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল ওর সামনে আসছে না !
দাড়িয়ে আছেন কেন চেয়ারে বসুন !
আপনার নামটা খুব সুন্দর হেরা ! এই নাম আগে কোন মানুষের শুনিনি !
মেয়েটি তবুও দাঁড়িয়ে রইল !
নওশাদ বলল,আপনার কি বসতে অস্বস্তি হচ্ছে ?
মেয়েটি সামনে রাখা চেয়ারের কোনায় বসলো !
একটা কথা জিজ্ঞাসা করব আপনি আমার নাম জানেন ?
মেয়েটি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল ! আজকে ঐ আপুটা বলেছে !
ও আচ্ছা জীনাত !
হেরা আপনি পড়াশোনা কি করেছেন ?
আপনি প্লিজ আমাকে তুমি করে বলবেন !
তাই তো আমি বোকার মত আপনি আপনি করছি ! হাসলো নওশাদ !
মেয়েটির সামনে তার অস্বস্তি লাগছে খুব ! মনে হচ্ছে কথা বেশি বলছে সে !
আমি কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি তে ইংলিশ এ অর্নাস ভর্তি হয়েছিলাম ! তিন মাস ক্লাসও করেছিলাম, তারপর !
নওশাদ বলল,তারপর কি হলো ?
হেরা চুপ করে আছে !
নুরুল এর দলবল সেখানে গিয়েও বিরক্ত করা শুরু করে তাই আর পড়তে দেয়নি মামারা !
ও আচ্ছা !
নওশাদ বলল, থাক ওসব কথা পরে শুনব এখন শুনতে ইচ্ছে করছে না !
হেরা এই বাড়িতে তোমার সমস্যা হচ্ছে না তো কিছুর ?
জ্বি না !
যা লাগবে আনারের মা কে বলবে ! এখানে আমার আত্মীয় স্বজন কেউ তোমাকে খুব পছন্দ করবে আবার কেউ প্রথম প্রথম তোমাকে মেনে নিতে সময় নিবে তুমি বুঝতেই তো পারছো হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেলেছি সবাই সেই ধাক্কা টা কাটাতে সময় নিবে !
জ্বি !
একটা কথা বলার ছিল তোমাকে , তুমি এই হঠাৎ বিয়েটার জন্য প্রস্তুত ছিলে না জানি, আমার মত বয়স্ক একজন মানুষ এভাবে সেদিন তোমাকে বিয়ে করে ফেলল । আসলে বিশ্বাস করো তোমাকে ঐ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে আমি অন্য সব চেষ্টা করেছি কিন্তু কি যে অবস্থা ছিল তখন তুমি তো দেখেছো ! তখন বিয়ে ছাড়া আর কোন পথ ই আমার মাথায় আসেনি ! আমি জানতাম না তোমার বয়স এত কম ! এখন মনে হচ্ছে তোমার ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলেছি !
তুমি চাইলে যে কোন সময় আমি তোমাকে ডিভোর্স ..
নওশাদ কথাটা শেষ করার আগেই হেরা হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পড়লো আপনি ঐ দিন না আসলে ওরা আমাকে মেরে ফেলতো ! আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন ! আমি গত সাত আট বছর আল্লাহর কাছে শুধু কেঁদেছি আল্লাহ তুমি কাউকে পাঠাও আমাকে রক্ষা করার জন্য !
হেরা কাঁদছে !
নওশাদ অবাক হয়ে মেয়েটির কষ্ট ভরা মুখটা দেখছে !
গ্রামের সবাই জানে নুরুল এর দল আমাকে তুলে নিয়ে নষ্ট করেছে কিন্তু আসল সত্যটা কাউকে বলতেই পারলাম না নুরুল কিছু করার আগেই আল্লাহ একটা সাপ পাঠিয়েছে ঐ সাপ ওকে ছোবল মেরেছে। ওরা কিছু করতে পারেনি বলেই আরো ক্ষেপে গিয়েছিল তাই ঐ দিন রাতে আমাকে আবার তুলে নিতে ঘরে ঢুকে পরে কি করব বলুন দা দিয়ে কোপ না মারলে ঐ দিন ও তুলে নিয়ে যেত আমাকে !
আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ আমি আপনার বাড়িতে কাজের মানুষ হয়ে পরে থাকব, তাও কোথাও যেতে বলবেন না ! নুরুল এর লোকজন এখানেও চলে আসতে পারে ! ওরা আমাকে খুজছে অবশ্যই ! আমার স্ত্রী র অধিকারের দরকার নেই আপনার কাজের মানুষ হয়ে থাকব তবু আপনার কাছে রাখুন । আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছে ! আমার জন্য আপনি একজন ফেরেশতা।
হেরা দুই হাত জোড় করে কেঁদে ই যাচ্ছে ! ওর মাথার ঘোমটা খুলে পড়ে গেছে ! নওশাদ ওর কান্না ভেজা মুখটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ! এত কষ্ট এই বাচ্চা বয়সী মেয়েটার মধ্যে !
নওশাদ হাত বাড়িয়ে হেরাকে নিচ থেকে টেনে তুলে চেয়ারে বসালো !
এই প্রথম সে হেরা কে স্পর্শ করলো ! থরথর করে কাঁপছে মেয়েটি !
মনে মনে বলল ,শোন হেরা তোমাকে এখানে কাজের মানুষের মত থাকতে হবে কেন । মনে রাখবে তুমি নওশাদ আজমীর স্ত্রী তুমি তোমার অধিকার নিয়েই এখানে থাকবে !
মুখে বলল, তোমার কোন ভয় নেই এই ঢাকা শহরে কারো সাধ্য নেই তোমার ক্ষতি করার ! কাজের লোক হয়ে থাকবে কেন এই বাড়িতে, তোমার যা পরিচয় তাই নিয়ে থাকবে !
এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো ! হেরা আমি আগামীকাল দেশের বাহিরে যাব কয়েক দিনের জন্য এখানে তোমার কোন সমস্যা হবে না, যখন যা লাগবে আনারের মা কে বলবে সে এনে দিবে !
আজ তোমার ড্রেস পছন্দ হয়েছে ?
:
হেরা চোখ মুছতে মুছতে বলল জ্বি এত কিছুর দরকার ছিল না !
: তুমি কি বোরকা পড়ো সব সময় ? তাহলে বোরকা তো কেনা হয়নি তাইনা ?
: আমি সেই ছোটবেলা থেকে বোরকা পড়ি ! আমার একটুও ইচ্ছে করত না ! নিজেকে আড়াল করে রাখতে পড়তে হতো কিন্তু কোন লাভ হয়নি ! একটা কথা কি জানেন গরীবের ঘরের মেয়েদের সুন্দর হতে হয় না ! সৌন্দর্য তাদের জন্য অভিশাপ ! আজ যদি সুন্দর না হতাম তা হলে এত ঝামেলা হতো না ! এটা আমার মামিরা বলতো ! কথা টা ঠিকই বলে !
মেয়েটির চোখে অবিরাম পানি ঝড়ছে ! তবুও সেই চোখ গুলো কি সুন্দর লাগছে । নওশাদ তাকিয়ে দেখছে !
মোবাইলে র শব্দে তাকালো নওশাদ ! রেজোয়ান এর ফোন !
: হ্যালো রেজোয়ান !
: বন্ধু সরি কোন ভাবেই সুমনা কে আটকাতে পারলাম না, আমরা তোর বাসার সামনে নতুন মানুষ কে দেখতে চলে এসেছি ! কিছু মনে করলি না তো ?
: নওশাদ হেসে ফেললো , আয় বাসায় আয় !
হেরা আমার খুব কাছের দুজন মানুষ এসেছে তোমাকে দেখতে । আমার বন্ধু আবার বিজনেস পার্টনার আর তার ওয়াইফ সুমনা সে ও আমার বন্ধু !
চোখের পানি মুছো চলো নিচে যাই ! তোমার ভালো লাগবে ওদের সঙ্গে কথা বলে !
হেরা চোখের পানি ওড়নার কোনা দিয়ে মুছলো !
এসো আমার সঙ্গে !
নওশাদ এগিয়ে যাচ্ছে ওর পিছনে পিছনে হেরা আসছে !
নওশাদ চিন্তা করছে ওদের দুজনকে দেখে সবাই হাসবে না তো ! একটা বাচ্চা বয়সী মেয়ের সঙ্গে মধ্যবয়সী লোক !
( চলবে )