#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৪৬ পর্ব
নিশাল বাসায় ঢুকতেই বুকে জড়িয়ে কাঁদলেন খুব জান্নাত আজমী। অন্যদিন এরকম পরিস্থিতিতে নওশাদ হাসাহাসি করে বুবুর ইমোশন নিয়ে, আজ নিজেই বোনের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ছলছল করছে। হেরা বুবুকে স্বান্তনা দিচ্ছে পাশে বসে।
লাগেজ গুলো নিজের ঘরে ঢুকিয়ে নওশাদ নিশালকে রুমে নিয়ে গেল । বাম হাতে এখনো প্লাস্টার বাঁধা নিশালের, নওশাদের ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে সাহায্য করতে হচ্ছে। নিশাল একা করতে নিলেই কিছু নওশাদ ছুটে এসে ধরে।
ডান হাত দিয়ে একাই খেতে পারে নিশাল তারপরও নওশাদ ছেলেকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।
ওরা খুব সকালে এসে বুবুর বাসায় পৌঁছেছে।
নওশাদ নিশালকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে দিতে চাইতেই নিশাল বলল, পাপা আমি পারব।
ঠিক আছে কিন্তু তারপর শুয়ে রেস্ট নিবে ,নওশাদ বলল।
তুমি টেনশন করা বন্ধ করো পাপা।
আমি টেনশন করছি না নিশাল আমি তোমার কেয়ার করছি ।
ওকে পাপা বলে নিশাল চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে ঢুকলো। সে জানে একটু পর তার পাপা এসে দেখে যাবে সে ঘুমিয়েছে কিনা। এক্সিডেন্টের পর থেকে পাপা এত বেশি খেয়াল রাখছে ওর কিছুটা অসহ্য লাগছে কিন্তু কিছু বললে পাপা কষ্ট পাবে সে জানে। এমনিতেই তার জন্য তার পাপা আজ প্রায় পঁচিশ দিন হবে হাসতে ভুলে গেছে। এত কাঁদতে পাপাকে মাম্মা মারা যাওয়ার সময়ও দেখেনি যতটা ওর জন্য পাপা কেঁদেছে।
এমনকি মামনি পর্যন্ত এই শরীর নিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। সেদিন সে বোকামি করেছে রিসানের বন্ধু সাফির বাইকে উঠে । এতটা রাফ বাইক চালায় ছেলেটা সে বুঝতেই পারেনি।
এক্সিডেন্ট টা কিভাবে হয়েছিল এরপর তার সঙ্গে কি হয়েছে সে বলতেই পারে না । মনেই নেই। শুধু মনে আছে একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখে ওর মাথার কাছে বসে পাপা মামনিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মামনি স্বান্তনা দিচ্ছে পাপাকে, আপনি এভাবে কাঁদছেন নিশাল দেখলে কষ্ট পাবে ও ঠিক হয়ে যাবে । আপনার সঙ্গে কথা বলেছে। সবার দিকে তাকিয়ে হেসেছে আল্লাহ বিপদ কাটিয়ে দিয়েছে আমাদের ছেলের।
আগে কি করেছে , আইসিইউতে ছিল কখন ওসব কিছুই মনে নেই তার।
এর পরের ঘটনা মনে আছে তার। পাপা আর মামনি সারাক্ষণ ওর পাশে বসে থাকে। ও একটু উঁহু করে উঠার সঙ্গে সঙ্গে পাপা ডাক্তারদের ডেকে হুলুস্থুল লাগিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ওর চোখের আড়ালে কান্নাকাটি যে সারাক্ষণ করেছে তার পাপা সে পাপার চোখ দেখেই বুঝতো।
সারারাত পাপা জেগে থেকেছে। মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়েছে ওর কপালে চুমু খাচ্ছে সব নিশালের মনে আছে।
হসপিটালে এক রাতে পাপা ওর মাথার কাছে বসে মাম্মাকে উদ্দেশ্য করে কান্নাকাটি করেছে সেটাও তার মনে আছে। পাপা জানে না সে তখন জেগেই ছিলো সব কথাই সে শুনেছে। মাম্মা কে বারবার পাপা বলেছে, সে কেয়ারলেস বাবা ছেলের খেয়াল রাখতে পারেনি । বারবার মাম্মা কে সরি বলছিল পাপা।
নিশালের এত খারাপ লেগেছে কথা গুলো। ওর জন্য পাপা এত কষ্ট পাচ্ছে দেখে, ওর খুব অনুশোচনা হচ্ছে কেন বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে উঠতে গেল সে। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে সাফির অবস্থা তো খুব খারাপ ছিল, অনেকদিন আইসিইউতে ছিল। এখন এসেছে বাসায় ওর পা ভেঙ্গেছে সেটারও অপারেশন করতে হবে নাকি ।
খুট করে দরজায় শব্দ হতেই নিশাল চোখ বন্ধ করলো নির্ঘাত পাপা এসেছে দেখতে।
ও না মামনি, তাও সে চুপচাপ ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো।
হেরা নিশালের মাথায় হাত বুলিয়ে গায়ে একটা চাদর টেনে দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
নিশাল পেছন ডেকে উঠলো , মামনি।
হেরা অবাক হয়ে পিছনে তাকালো , ঘুমাওনি তুমি ?
হেরা নিশালের পাশে এসে দাঁড়ালো। নিশাল ডান হাতটা বাড়িয়ে হেরার হাত ধরলো।
কিছু বলবে খারাপ লাগছে ?
মামনি আমার খুব খারাপ লাগছে !
তোমার পাপাকে ডাকবো হেরা অস্থির হয়ে তাকালো ।
আমার খারাপ লাগছে তোমাকে, পাপাকে আজ এত দিন ধরে হাসতে দেখছি না । ঢাকাতেও সারাক্ষণ সবাই চিন্তায় অস্থির ছিলে এখানেও তাই। আমার খুব খারাপ লাগছে ব্যাপার টা। আমি সবাইকে এত কষ্ট দিচ্ছি সবাই হাসতেই ভুলে গেছে!
তুমি কষ্ট পাচ্ছো আমরা কিভাবে হাসব বলো নিশাল ?
মামনি আমি এখন ঠিক আছি খুব ভালো আছি তুমি পাপাকে গিয়ে বলবে নেক্সট টাইম আমার সামনে আগের পাপা হয়ে আসতে টেনশানে অস্থির, কান্না কান্না চোখে পাপাকে দেখতে আমার ভালো লাগছে না।
হেরা ছেলের মাথায় হাত রেখে বলল ঠিক আছে। এখন তুমি ঘুমাও অনেক লম্বা জার্নি ছিল রেস্ট নাও।
তুমিও তো পুরো জার্নি টাইম জেগে ছিলে তুমি রেস্ট নিচ্ছো না কেন মামনি ?
ওরে আমার পন্ডিত ছেলে যাচ্চি আমাকে আর ধমক দিতে হবে না বলেই হেরা হেসে দিলো।
এই তো কত সুন্দর লাগছে তোমাকে হাসতে দেখে মামনি !
নওশাদ ওদের কথা শুনে রুমের ভিতর এসে ঢুকলো। কি ব্যাপার তোমরা গল্প করছো দুজনকেই বললাম রেস্ট নিতে।
দেখুন না নিশাল আমাকে শাসন করছে ,বলছে রেস্ট কেন নিচ্ছি না, কেন হাসছি না আমি আর আপনি ।
পাপা মামনি যেভাবে সারাক্ষণ আমার জন্য মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার ভাইবোন তো গোমড়া মুখো হবে তারপরে তোমাকেও দেখছে মুখ ভার টেনশন করছো।
নওশাদ বলল, ভাইবোন গোমড়া মুখো হবে কেন ?
কারণ আমরা হাসতে ভুলে গেছি পাপা । তুমি আর মামনি আজ কতদিন মুখে হাসি নেই কেমন একটা চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াও তাই বলছি ।
নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করো হেরা নিশাল ঠিক কথাই বলেছে ।
পাপা তুমি সারাক্ষন এভাবে মন খারাপ করে থাকলে মামনি হাসিখুশি থাকবে কিভাবে ? নিশাল নওশাদের হাত ধরে বলল, সরি পাপা আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি, টেনশন দিচ্ছি আমি তোমাকে প্রমিজ করছি এরকম কখনো আর রিস্ক নিব না।
নওশাদ নিশালের কপালে চুমু খেলো সরি বলতে হবে না আমার তোমাকে কষ্ট পেতে দেখে খারাপ লাগছে তাই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আমি ঠিক আছি পাপা তুমি আছো তো আমার পাশে, শুধু তোমার মনটা খারাপ দেখে খারাপ লাগছে। ফুপিও দেখো কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে আসার পর কান্নাকাটি করছে আমার ভালো লাগছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে আমরা কেউ আর মন খারাপ করে থাকবো না, হ্যাপি বাচ্চা।
হ্যাপি পাপা। এখন ঘুমাও তোমার অনেক রেস্ট দরকার বাবা।
নওশাদ ছেলের ঘর থেকে বের হয়ে এলো সঙ্গে হেরা।
বুবুর বাসার পিছনে বেকইয়ার্ডে গাছের নিচে চেয়ার রাখা আছে নওশাদ সেই চেয়ারে গিয়ে বসলো। আকাশে সুন্দর একটা ঝলমলে রোদ আজ । বুবু আর হেরা কিছুক্ষণ পর ওর পাশে এসে বসলো।
বাবু তোর মন খারাপ দেখে ছেলের কিন্তু মন খারাপ তুই আর এমন মুখ নিয়ে ওর সামনে যাবি না।
বুবু ছেলেটাকে দেখলেই আমার কষ্ট হচ্ছে মাথায় চুল ফেলে দিতে হয়েছে ওর মাথার কাটা দাগটা চোখে পড়তেই আমার কলিজায় মোচড় দেয়।
আমি বুঝতে পারছি ভাই সন্তানের কষ্ট দেখতে কোন বাবা মায়ের ই ভালো লাগে না। তারপরে চেষ্টা কর মন ভালো রাখার।
বুবু বিশ্বাস করবে না আইসিইউতে যখন নিশালকে মাথায় ব্যান্ডেজ করা, অক্সিজেন লাগানো দেখেছি আমার মনে হয়েছে আমার আত্মাটা কেউ কেড়ে নিচ্ছে কথা বলতে বলতেই নওশাদের চোখ ভিজে উঠেছে আবার।
বুবু উঠে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল, আল্লাহ আমাদের উপর অনেক রহমত করেছে নিশালের তেমন কিছু হয়নি এখন আর তুই মন খারাপ করিস না। তুই আর হেরা কাঁদতে কাঁদতে কি অবস্থা করেছিস চেহারার দেখেছিস। হেরার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
সে জন্য তোমার কাছে নিয়ে এলাম, ওদের দুজনকে তুমি খেয়াল রেখো বুবু ।
আমার তো মনে হচ্ছে সবার আগে তোর সেবা যত্ন দরকার চেহারা কি হয়েছে দেখেছিস আয়নায় !
আমার চেহারা দেখার দরকার নেই ওদের চেহারা ঠিকঠাক থাকলেই আমি খুশি।
নিশালের হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ডাক্তার হাতের জন্য কিছু এক্সেরসাইজ দেখিয়ে দিয়েছে। হাত ঠিক হয়ে যাচ্ছে। নওশাদ তাকে আগের মতো ছুটোছুটি করতে দেয়না ব্রেনের অপারেশন হয়েছে বলেই ভয় পাচ্ছে সে। কিন্তু নিশাল তার পাপাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে ঠিক আছে।
নওশাদের দেশে ফিরে যেতে হবে । যাওয়ার দুই দিন আগে একটা আনন্দময় খবর পুরো ফ্যামিলিকে আলোড়িত করে দিলো।
ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বলল হেরার মেয়ে হবে। এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে নওশাদের বুবু। তিনি হেরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।
হেরা বিশ্বাস করবে না আমি খুব খুব দোয়া করেছি তোমার যেন মেয়ে হয় একটা। এই ফ্যামিলিতে ছেলে দেখতে দেখতে চোখ পচে গেল। আরে মেয়ে বাচ্চা হলো ঘরের রহমত আর আমার একটা ভাইয়ের মেয়ে নাই এমনকি আমার ছেলেদের ও ছেলে । কি যে শান্তি লাগছে খবরটা শুনে। এখন শুধু ভালোয় ভালোয় হোক বাচ্চাটা ।
নিশাল তার ফুপির মতো এত উচ্ছাস দেখাচ্ছে না কিন্তু সেও খুব খুশি বোন হবে শুনে।
পাপার কাছে বলল, আমি জানতাম বোনই হবে পাপা।
কিভাবে জানতে ?
মন বলছিল আমার।
রাতের বেলায় হেরা নওশাদকে জড়িয়ে ধরে বলল, আপনি খুশি হননি মেয়ে হবে শুনে?
নওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার মন খারাপ ?
আপনি তো কিছুই বলছেন না আমাকে, সবাই কত খুশি কিন্তু আপনি চুপচাপ বসে আছেন !
হেরা আমার মনটা সত্যিই খুব খারাপ কারণ আমি তোমাদের রেখে দেশে চলে যাচ্ছি তাই। তোমাকে রেখে যেতে কষ্ট হচ্ছে খুব। হেরার ঠোঁটের নিচের ছোট্ট তিল টাতে চুমু খেতে খেতে নওশাদ বলল, ভেবেছিলাম তোমাদের এখানে রেখে আমি খুব নিশ্চিন্তে থাকতে পারব ঢাকায়। কিন্তু এখনই মনে হচ্ছে আমি তোমাদের রেখে থাকতে পারব না। তোমাকে বলিনি আমি নিজেও চেয়েছি একটা মেয়ে হোক তোমার মত যার ধুসর দুটো চোখ থাকবে । সুন্দর পাতলা খাঁড়া নাক। আমি সারাক্ষন ওকে বুকে জড়িয়ে রাখব।
আপনি না গেলে হয় না , হেরার গলায় কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠলো।
অনেক কাজ আছে হেরা । আমার জন্য কত কিছু আটকে আছে। তুমি চিন্তা করো না আমি আগামী মাসের শেষে সুইডেন যাব তখন একবার আসব তোমাদের দেখতে। আমার রাজপুত্র আর রাজকন্যা এখন তোমার কাছে ওদের দেখতে উড়ে চলে আসব আমি। নওশাদ হেরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
নওশাদ ঢাকায় ফিরে আসার পর কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে গেল। কিন্তু যতই কাজে ব্যস্ত থাকুক দিন শেষে খালি বাড়িটাতে তার দম বন্ধ লাগে। ফিরতে ইচ্ছে করে না। বাসায় ফিরে হেরার সঙ্গে নিশালের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে কিন্তু তারপরেও ওর মন পরে থাকে ওদের কাছে।
ভেবেছিল সুইডেন গেলে সেখান থেকে একবার যাবে ওদের দেখতে কিন্তু সুইডেন যাওয়া হয়নি তার। শেষ মুহূর্তে সেই কাজটা বাতিল করতে হলো। হেরা খুব অভিমান করেছে খুব আশা করে ছিল নওশাদ আসবে।
নিশালের রেজাল্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ও চলে এসেছে দেশে তার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে এতদিন নিতে পারেনি তাই আর সে থাকতে পারলো না চলে এসেছে।
নিশাল ও আফসোস করছে বোন হওয়ার সময় সে থাকতে পারবে না তার পরীক্ষা থাকবে।
এর মধ্যে নওশাদ যাওয়ার প্ল্যান করলো সব ঠিকঠাক হঠাৎ তার আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে গেল। এত খারাপ অবস্থা আব্বাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হলো।
নানান সমস্যা দেখা দিলো ফরহাদ আজমীর শরীরে। শ্বাস কষ্ট, বুকে কফ, খেতে পারছেন না , খেলে হজমের সমস্যা।
হঠাৎ করেই একেবারে বিছানায় পড়ে গেলেন।
আব্বাকে এই অবস্থায় রেখে নওশাদ যেতে পারছে না। যদিও দুই ভাই বারবার বলছে যেতে নওশাদ কখনোই পারবে না আব্বাকে মৃত্যু শয্যায় রেখে দেশের বাহিরে যেতে। যেখানে ফরহাদ আজমী একমাত্র নওশাদ ছাড়া কাউকেই চিনতে পারছে না। নওশাদকে দেখেই শুধু বলে , আমার বাবু ।
এবারের মতো এত খারাপ অবস্থা আগে কখনো হয়নি ফরহাদ আজমীর। নওশাদ অফিস, হসপিটাল করে করে দিন পার করছে।
ওর মনে আশঙ্কা হচ্ছে হেরার ডেলিভারির সময় ও কি যেতে পারব ?
প্রথম সন্তান জন্ম দিবে যখন হেরা তখন ওর সঙ্গে থাকতে পারব না !
এমনিতেই হেরা মুখে কিছু না বললেও নওশাদ বুঝতে পারছে ওর শারীরিক কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় হাঁপাতে থাকে। চোখ মুখটা এত বিষন্ন হয়ে গেছে হেরার । নওশাদের ইচ্ছে করে সব ফেলে ছুটে চলে যেতে ওর কাছে।
ফরহাদ আজমী প্রায় দেড় মাস হসপিটালে কাটিয়ে বাসায় ফিরেছেন। শরীর একদম ভেঙে গেছে। সারাক্ষণ শুয়ে থাকে উঠতে পারে না। নওশাদ দুইজন নার্স রেখেছে এরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পালাক্রমে তার আব্বার সেবায় থাকে। রাজু ,আনারের মা তো আছেই। নিজে সারাক্ষণ পাশে না থাকলেও নওশাদ ঘন্টা দুয়েক পর পর খবর নেয়। ফারহান , আরমান প্রতিদিন এসে আব্বার সঙ্গে দেখা করে যায়। ওদের কোনদিন চিনে কোনদিন চিনে না তাদের আব্বা।
নওশাদকে অস্পষ্ট স্বরে কি কি বলে নওশাদ কখনো বুঝে কখনো বুঝে না। এর মধ্যে একদিন হেরার কথা মনে করলো । হেরাকে ডাকতে বলল নওশাদকে।
নিশালকে চিনেছে ।
নওশাদকে বলল, বাবু নিশাল দাদু ভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দে তাড়াতাড়ি আমি কবে মরে যাই নাতির বউ দেখে যাই তোর আম্মা জিজ্ঞেস করবে আমাকে।
নওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আব্বার কথা শুনে।
কি বললাম বাবু শুনেছিস?
তুমি বউ দেখেই যাবে আব্বা চিন্তা করো না তার আগে আমার একটা মেয়ে হবে দেখবে না ।
দেখব সব দেখব ইনশাআল্লাহ।
নওশাদ আব্বার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় পরম মমতায়।
হেরার শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনও খুব খারাপ। কয়েক মাস আগে তাকে দেখলে কেউ বলতো না বাচ্চা হবে সেও এটা নিয়ে চিন্তিত ছিল কিন্তু এখন সে আবার খুব লজ্জায় থাকে তার স্ফীত শারীরিক গঠন নিয়ে।
আজ বিকেলে রোমানা ভাবি এসে বলল, আমি এত সুন্দর হবু মা সত্যিই দেখিনি কখনো হেরা! মাসাআল্লাহ তোমাকে দেখলেই শান্তি লাগছে।
হেরা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল।
কবে আসবে নওশাদ ভাই ,রোমানা বলল ?
জানিনা আব্বার শরীর খুব খারাপ । বাসায় এসেছে হসপিটাল থেকে কিন্তু ভালো না।
বড় ভাবিরও খুব মন খারাপ দেখলাম।
হ্যাঁ বুবু আমাকে রেখে আব্বাকে দেখতে যেতে পারছে না । আমারও খারাপ লাগছে ভাবী।
চিন্তা করোনা হেরা সব ঠিক হয়ে যাবে , দেখবে নওশাদ ভাই তাড়াতাড়ি চলে আসবে এখানে।
হেরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
আজকাল হেরার খুব অস্থির লাগে রাতে ঘুম আসে না। দম বন্ধ লাগে। এলিন, নাহিন ওকে ভিডিও কল দিয়ে অনেক সাহস দিচ্ছে। ওরা নিশালের এক্সিডেন্ট এর সময় হেরার সঙ্গে রাতে থাকতো ওকে সাহস দিতো এখনও হাজার মাইল দূরে থেকেও স্বান্তনা দেয় , ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়। হেরা ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করে।
হেরা ঠিক করেছে নওশাদ আসলে অনেক রাগ করে থাকবে কেন তাকে এখানে পাঠালো ঢাকায় থাকলে খুব কি ক্ষতি হতো? দেশে মানুষের বাচ্চা হচ্ছে না। দূরে পাঠিয়ে এখন নিজেও কষ্ট পাচ্ছে হেরাকেও কষ্ট দিচ্ছে।
হেরা খুব কষ্ট নিয়ে একদিন নওশাদকে মেসেজ লিখলো, আমার মাঝে আপনার রাজকন্যা যখন নড়াচড়া করে আমার খুব ইচ্ছে করে সেই মুহুর্ত টা আমার মতো আপনাকে অনুভব করাতে। আমি ইদানিং একা থাকলেই আমাদের রাজকন্যার সঙ্গে কথা বলি জানিনা ও শুনে কিনা কিন্তু এখানের ডাক্তার বলল, বাচ্চা রা সব শুনে সব অনুভব করে এটা শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের রাজকন্যা ওর পাপার কথা শুনতে পাচ্ছেনা ওর পাপাকে আশেপাশে অনুভব করতে পারছেনা। এটা যখনই ভাবি আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় আপনার কাছে উড়ে চলে আসি।
নওশাদ হেরার মেসেজ পড়ে অস্থির হয়ে গেল হেরার কাছে যাওয়ার জন্য। দশদিন পর এক দুপুরে নওশাদ আগে থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বুবুর বাসার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। দরজা খুলে দিয়ে বুবু তো অবাক !
কেমন আছো তোমরা ?
জানিস বাবু তুই এভাবে বিনা নোটিশে আসবি আমার মন বলছিল ।
সেজন্যই চলে আসছি বুবু । হেরা কোথায়?
বাসার পিছনে বসে আছে । যা ওখানে চলে যা খুব খুশি হবে তোকে দেখে।
নওশাদ পিছনের দরজা খুলে বেকইয়ার্ডে এসে দাঁড়িয়ে দেখে দূরে গাছের নিচে হেরা বসে আছে। নওশাদ দূর থেকেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। হেরা কিছু একটা নেয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে তারপর টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢালছে । সাদা ঢোলা প্যান্ট আর একটা আকাশী রঙের গেঞ্জি পড়া হেরা । নওশাদ এই প্রথম এই শারীরিক অবয়বে হেরাকে দেখছে। এতদিন কখনো হেরার সঙ্গে কথা হলেও চেহারা ছাড়া পুরো হেরাকে দেখা হয়নি তার।
নওশাদ তাকিয়ে দেখছে কি সুন্দর লাগছে হেরাকে। মাতৃত্ব যেন ওর রূপকে আরো পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে ।
দূর থেকে নাম ধরে ডাক দিতেই হেরা তাকালো পাশ ফিরে। নওশাদ ঘাসের উপর এসে দাঁড়ালো।
ওকে দেখে হেরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ! কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে রইল, হয়তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না নিজের চোখকে!
তারপর কোন কিছু চিন্তা না করে দৌড়ে আসছে নওশাদের দিকে।
নওশাদ চিৎকার করে বলল, না হেরা না দৌড়ায় না আমি আসছি তোমার কাছে পড়ে যাবে তুমি।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। হেরা ছুটে এসে নওশাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। অনেক রাগ করে থাকবে সে ঠিক করে ছিল। কিন্তু নওশাদকে দেখে হেরা খুশিতে পাগল হয়ে গেল। নওশাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে সে।
আপনি অনেক খারাপ , অনেক খারাপ! অনেক পাষান টাইপের একটা মানুষ! আসছেন কেন আপনি না আসলেও পারতেন?
হেরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নওশাদ বলল, ঠিক বলেছো আসলেই আমি অনেক নিষ্ঠুর একটা মানুষ ! তোমার মেসেজ পড়ে থাকতে পারেনি এই পাষান মানুষটা তাই পাগল হয়ে তার কাঠবিড়ালী আর রাজকন্যার কাছে চলে এসেছে।
নওশাদ হাসছে হেরার কান্না দেখে।
নওশাদ হেরার ডেলিভারি ডেটের কিছুদিন আগেই চলে এসেছে। একটা সময় মনে হয়েছিল সে আসতেই পারবে না। আব্বার শারীরিক অবস্থা, অফিসের ঝামেলা সব মিলিয়ে নওশাদ একদম দিশেহারা অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল।
হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পরেও খারাপ হয়েছে কয়েকবার ফরহাদ আজমীর শরীর। এখন অনেক ভালো আছে। ফারহান আর আরমান এক রকম জোর করলো, তুমি যাও ভাইয়া ।
ফারহান বলল, ভাবির এখন তোমাকে দরকার।
ওদের ভরসায় আব্বা আর নিশালকে রেখে এসেছে সে।
নওশাদ আসার পর হেরা খেয়াল করেছে সে সারাক্ষণ হেরার দিকে তাকিয়ে আছে । হেরা যখনই তাকায় দেখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
একবার জিজ্ঞেসই করে ফেলল, কি ব্যাপার কি দেখেন ?
তোমাকে দেখছি, তুমি কি জানো তোমার চেহারার মধ্যে অন্যরকম একটা মায়া চলে এসেছে। এই মায়াটা সব মেয়ের মা হওয়ার পর আসে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে আগেই চলে এসেছে।
হেরা হাসলো নওশাদের কথা শুনে। ওর এখন সারাক্ষণ নওশাদের কথা শুনতেই ভালো লাগে। কতদিন পর এভাবে সামনাসামনি বসে কথা শুনছে।
বিকেলে দুজন মিলে হাঁটতে যায় বীচের কাছে। দুজন যখন হাত ধরে হাঁটে সে ভালা লাগায় ভেসে যায় তখন।
দুই দিন ধরে নওশাদ আর হেরা বাসায় একা। বুবুর ছেলে ইরফানের একমাত্র শালার বিয়ে জর্জিয়ায়। বাসার সবাই সেখানে গেছে। বুবু যেতে চায়নি হেরার শরীরের কথা চিন্তা করে, নওশাদই ঠেলেঠুলে পাঠালো।
এখনো অনেক সময় আছে হেরার হাতে তুমি যাও , না যাওয়াটা খারাপ দেখায় বুবু।
নওশাদের কথায়ই জান্নাত আজমী জর্জিয়া গেলেন ফ্যামিলির সঙ্গে, হেরা আর নওশাদকে একা বাসায় রেখে। প্রথম দিন হেরার দারুন কাটলো।
নওশাদ ওর জন্য খাবার গরম করে দিচ্ছে , ঘর গুছিয়ে দিচ্ছে। রাতে ঘুরতে নিয়ে গেছে। অনেক রাত পর্যন্ত শপিং মলে ঘুরে ঘুরে শপিং করলো দুজন।
কিন্তু পরদিন থেকে হঠাৎ ফ্লোরিডার ওয়েদার খারাপ হওয়া শুরু করলো এতটাই ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি যে ঘরের বাহিরে আসা যাচ্ছে না।
বুবু খুব টেনশন করছে বারবার ফোন দিচ্ছে জর্জিয়া থেকে।
নওশাদ বলল, এত টেনশন করছো কেন আমরা তো বাসার ভেতরেই আছি কোথাও বের হচ্ছি না!
কিন্তু জান্নাত আজমী তাও ওদের জন্য টেনশন কমাতে পারছে না।
আগের দিন শপিং করার সময় নওশাদ ছবি আঁকার সরঞ্জাম কিনেছে আজ সারাদিন ঘরে বসে তাই দিয়ে হেরার একটা ছবি মোটামুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছে সে।
রাতে ডিনার শেষে সেই ছবিটাতে তুলির আঁচড় লাগাচ্ছে নওশাদ, হেরা আরাম করে আধ শোয়া হয়ে তাই দেখছে। ওর খুব ভালো লাগছে নওশাদের ছবি আঁকার স্টাইল টা দেখে। কিছুক্ষণ পর পর হেরার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে আর ছবি আঁকে।
হেরা কয়েকবার প্রশ্ন করলো, হাসছেন কেন?
এমনি তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকো হেরা।
আপনার দিকেই তাকিয়ে আছি।
বাহিরে তখন টর্নেডোর তোলপাড় চলছে।
নওশাদের জীবনের সঙ্গে নাটকীয় ব্যাপার গুলো কিভাবে কিভাবে যেন জড়িয়ে যায়, সে জন্যই হয়তো কিছুক্ষণ পর হেরা খেয়াল করলো সে যেখানে শুয়ে আছে বিছানার সেই অংশটুকু ভিজে গেছে। হেরা বুঝতেই পারিনি তাদের রাজকন্যা পৃথিবীতে আসার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে নিয়েছে যখন তখন ফ্লোরিডা জুড়ে টর্নেডো আঘাত আনতে যাচ্ছে।
হেরা অবাক হয়ে নওশাদের দিকে তাকালো , পানি আসলো কোথা থেকে বিছানায়? ভিজেই গেলাম আমি।
বৃষ্টির পানি তোমাকে ভিজাবে বলে চলে এসেছে হয়তো হেরা , নওশাদ ক্যানভাস থেকে চোখ না তুলেই বলল।
হেরা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো!
পানি ভেঙে গেছে! আমার পানি ভেঙে গেছে।
মানে ?
মানে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যান এক্ষুনি হেরা চিৎকার করা শুরু করলো।
নওশাদের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে হেরার কথা শুনে । বাহিরে এই খারাপ ওয়েদার সবচেয়ে বড় কথা বুবু নেই একা কিভাবে কি করবে সে!
হেরা আমার মনে হয় পানি পড়ে আগেই ওখানে ভেজা ছিল তোমার তো এখনো দুই সপ্তাহ দেরি আছে তাই না!
চুপ করেন তাড়াতাড়ি হসপিটালে ফোন দেন এখানে নাম্বার আছে বলে হেরা ওর ডাক্তারের নাম্বার এগিয়ে দিলো নওশাদের দিকে। কথা বলেন ।
নওশাদ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন বুকটা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলল , ডাক্তার অবস্থা শুনে বলল হসপিটালে আসতে। নওশাদ এম্বুলেন্স ডাকলো ।
নওশাদ জানালার পর্দা সরিয়ে বাহিরের পরিস্থিতি যা দেখছে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। বুবুকে ফোন দিতে গিয়েও দিলো না শুধু শুধু টেনশন করবে বুবু আসতে পারবে না যখন তখন আর টেনশন দিয়ে কি লাভ।
হেরাকে দেখে নওশাদ অবাক হয়ে গেল, ওর মাথা এই পরিস্থিতিতে ঠান্ডা ! সে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করেছে , একটা গোলাপী রঙের কার্টুন আঁকা ব্যাগে হাবিজাবি জিনিস ঢুকিয়ে সে হসপিটালে যাওয়ার জন্য তৈরি !
তুমি রেডি ?
হ্যাঁ।
আমার ভয় করছে হেরা !
ভয় তো আমার পাওয়ার কথা আপনি পাচ্ছেন কেন ?
এই খারাপ আবহাওয়ায় কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না ?
আপনি চিন্তা করবেন না বুবুর কাছ থেকে সব জেনে রেখেছি কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে। আমি হসপিটালে গেলেই সব দ্বায়িত্ব ওদের আপনাকে আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
তোমার পেইন হচ্ছে হেরা ?
এখনও না।
ওরা হসপিটালে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর হেরার উথালপাথাল লেবার পেইন শুরু হয়ে গেল। নওশাদ হেরার চিৎকার শুনে ছটফট করছে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হেরার কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। একবার নার্স এসে জিজ্ঞেস করলো, সে লেবার রুমে থাকতে চায় কিনা? নওশাদ বলল, আমি আমার প্রিয়জনদের কষ্ট সহ্য করতে পারিনা সিস্টার ।
কিছুক্ষণ পর নওশাদ হেরার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
হেরা নওশাদের হাত ধরে বলল, আপনি এখান থেকে চলে যান আপনার অনেক কষ্ট হবে।
নওশাদ হেরার কপালে চুমু খেয়ে লেবাররুমের বাহিরে এসে দাঁড়ালো। ওর শরীর কাঁপছে।
ওর পাশে একটা সাদা চামড়ার লোক দাঁড়িয়ে আছে বয়স বোঝা যাচ্ছে না সঙ্গে থাকা মহিলাটি মনে হয় তার মা। লোকটির স্ত্রী ও অন্য একটি লেবার রুমে চিৎকার করছে।
লোকটি নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, এরকম ওয়েদারের মধ্যে কি বাচ্চা জন্ম হওয়া উচিত বলো ?
নওশাদ কিছু বলার আগেই তার মা তাকে ধমক দিয়ে বলল, সাটআপ বব আজকের এই ওয়েদারে বাচ্চা জন্ম নেয়ার সেই কাজটা কি বন্ধ আছে সবার , তাহলে এত কথা বলছো কেন তুমি?
নওশাদের হাসি চলে এসেছিল কথাটা শুনে কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো সে। ভাবছে লেবার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে ফেলাটা ভালো দেখাবে না যখন আমাদের দুজনের স্ত্রী ই লেবার রুমে যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
দশ মিনিট পর নার্স ওকে ডেকে নিয়ে গেল পাশের রুমে সেখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল ওর আর হেরার রাজকন্যা নিহাদ আজমী।
ওর ভাই ওর নাম ঠিক করে পাঠিয়েছে পাপার সঙ্গে।
নওশাদের কোলে নার্স তুলে দিলো একটা পুতুলের মত বাচ্চা যার সাদা ধবধবে মুখে ঠোঁট গুলো গোলাপী, আর চোখ গুলো তার মায়ের মতো ধুসর, মাথা ভর্তি ঘন কালো লম্বা চুল ! বড় বড় চোখ করে সে তাকিয়ে আছে তার পাপার দিকে।
নওশাদ তার মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে কেঁদে ফেলল খুশিতে।
তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল ধনসম্পদ এই মুহূর্তে ওর কোলে। ও পৃথিবীর সবচেয়ে ধনবান মানুষ।
( চলবে )