#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১০
আফনান লারা
.
কুসুমের বাবাকে খবর দিতেই তিনি আর দেরি না করে চলে এসেছেন ওকে নিয়ে যেতে।অর্ণবের বাবা অপমানিত হয়েছেন অর্ণবের এমন ব্যবহারে।লজ্জায় মাথা নত করে বসে ছিলেন কুসুমের বাবার সামনে।কুসুমের বাবা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন,’ভাইসাব এভাবে থাকবেন না।আমরা গরীব মানুষ।আপনাদের বড় ঘর হতে মেয়ের জন্য প্রস্তাব আসছে এই অনেক।বললেই তো বিয়ে হয়ে যায়না।দুজনের মত লাগে।যে সারাজীবন সংসার করবে তার মতামত সবচাইতে জরুরি।তাছাড়া অর্ণব বাবা উচ্চশিক্ষিত। তার পছন্দ কি টিনেরঘরের অশিক্ষিত কুসুম হবে?
তার জন্য শিক্ষিত মেয়ে আছে।তাকেই সে বিয়ে করবে।যাক যা হয় ভালোর জন্য হয়।সে ভালো থাকলে আমরাই বা আর কি করবো?
তবে সে যদি জানতো কেন আমরা আমাদের এমন মেয়েকে পড়াশুনো করাইনি তাহলে সে হয়ত কখনও তার পড়াশুনা নিয়ে বিয়ের ভাঙ্গার কারণ দেখতোনা, বয়স বাদই দিলাম।বয়স কোনো কারণ হতে পারেনা।মেয়েটাকে আমার বাড়িতেও মনে হয় আর রাখতে পারবোনা আবার ভারতে পাঠিয়ে দিতে হবে।আচ্ছা ভালো থাকবেন।আমার কুসুমের জন্য মাঝে মাঝে মনে পড়লে একটু দোয়া করিয়েন।মেয়েটার সামনে অনেক বিপদ।জানিনা অর্ণব বাবার মতন ভাল ঘরের কাউকে পাবো কিনা।না পেলে উপায় নাই, রক্ষেও নাই’
কুসুম অর্ণবের রুম থেকে ওর ছবিটা নিয়ে ব্যাগে পুরেছে।এটা চুরি।হয়ত চাচিকে বললে তিনি হেসে বলবেন নিয়ে যেতে।
কিন্তু লজ্জার কারণে চাচিকে বলা হয়ে উঠবেনা বলে কাউকে না বলেই সে ছবিটা নিয়ে নিয়েছে।
বাবার হাত ধরে চলে যাবার সময় বারবার করে অর্ণবদের এক তলা বাড়িটা সে দেখছিল পেছনে তাকিয়ে।
হলুদ রঙের দালানটা যতদূর দেখা গেলো দেখেছে সে।একটুও মন চাইলোনা বাবার সঙ্গে ফিরে যেতে।মন বলছে আর একটু থাকি।কেন এই বাড়ি আমার হলোনা!
——
অর্ণব মেসে ফিরে এসে বইয়ে চোখ বুলাচ্ছে সেই আধঘন্টা ধরে।মৃদুল গামছা পরে ‘জাবসে তেরে নে না’ গানটা গাইছে ঘুরে ঘুরে।সেদিকে ওর খেয়াল নেই।বইতেও নেই।মনে মনে কষ্ট লাগছে কুসুমের জন্য।তাকে যে আজ সে আঘাত দিয়েছে এটা সে ঠিক করেনি।তবে নিরুপায় হয়ে এমনটা করতে হয়েছিল।
কুসুমের চেহারা ভাল করে দেখা হয়নি তার।বাবা মায়ের কাছে তার রুপের বর্ণনা শুনে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম চোখে চোখ রাখবোনা।শুনলাম রুপসী নারীদের চোখে চোখ রাখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হতে হয়।তাদের চোখের ঝলকে নেশা মেশানো থাকে এই ভয়ে তার চেহারার কি কি দেখেছি মনে করতে পারছিনা।মনে হয় ঘাম বেয়ে পড়ে থুঁতনিতে গেছিল ঐটুকুই দেখেছিলাম।আর কিছু দেখা হয়নি। তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ,আমার চলে আসা মিলে সময় ছিল পাঁচ -ছয় ঘন্টা।
ঈদে আবার যাব।আর কোনো ধরা বাঁধা নেই।এতদিনে বাবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার কথা মাথা থেকে নামিয়েছে।আমি এবার শান্তিতে পরীক্ষা দিয়ে তারপর বাড়ি যাব।
ওয়াইফাই অন করা ছিল বলে যতজন মেসেজ করছে টুংটাং আওয়াজ আসছে।শেষে বই রেখে অর্ণব ফোন হাতে নিলো।ফার্স্ট ইয়ারের কটা মেয়ের মেসেজ।ইগনর করে ফোন রাখতে যেয়ে হঠাৎ দেখলো জুথির ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে।ওর রিকুয়েস্ট না নিয়ে উল্টে কেনসেল করে দিলো সে।ওমা সাথে সাথে আবার রিকুয়েস্ট দিলো।শুধু তাই নয় এবার মেসেজ ও দিয়েছে।
-‘কি সমস্যা? আমার রিকুয়েস্ট নিচ্ছেন না কেন?একদম হাহা মেরে দিব’
-“আমি ব্লক দিয়ে দিব’
জুথি হাসির ইমুজি পাঠিয়ে লিখলো,’পারবেননা।আনব্লক করার ৪৮ঘন্টা হওয়া ছাড়া পুনরায় ব্লক দেওয়া যায়না।হিহি’
অর্ণব মেসেঞ্জারে ব্লক মেরে ফোন রাখলো তারপর মনে পড়লো জুথি তো গিয়ে আইডিতে হাহা রিয়েক্টের ঝড় তুলবে তাই আবার আনব্লক করে দিলো।জুথি চুপ।সেও চুপ।
কিছুক্ষণ পর জুথি লিখলো,’এত ভাব ভালোনা’
অর্ণব মেসেজটাকে সিন করে রেখে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ব্যাগ খুলেছে।মেসে তার যে জামাকাপড় ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল বাড়িতে।আজ আসার সময় সব সাথে করে নিয়ে এসেছে সে।এখন গোসল করে একটা পরবে।ব্যাগের চেইন খুলতে যেতেই চেইনে লাগানো একটা দড়ি দেখে সেটা হাতে ছুটিয়ে নিলো।দড়ির মতন দেখতে ছিল তবে এটা একটা ঝিনুকের মালা।ঘুরিয়ে দেখে অর্ণব ভাবলো তার ব্যাগে আটকানো এই মালাটা কে রাখলো?
মালাটাকে ভাল করে দেখে ওয়ালে পেরেক লাগানো ছিল সেটাতে ঝুলিয়ে দিতেই এক ঝলক মনে আসলো এই মালা তো সে কুসুমের গলায় দেখেছিল।মালাটা সে কখন দিলো?
টেরই তো পেলাম না।
মৃদুল মালাটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’কক্সবাজার গেলি কবে?’
-‘আমিও তাই ভাবছি।কুসুম কি কখনও কক্সবাজার গিয়েছিল?’
-“মানেহ!ঐ মেয়েটার সঙ্গে তোর দেখা হয়েছে নাকি?’
-“হুমম।তার গলায় এই মালা দেখেছিলাম।ওহ মনে পড়েছে ওদের বাড়ির সামনে তো নদী।সেখানে মেলা বসে সিজনালি।মনে হয় ওখান থেকে কিনেছে’
-‘তো মালাটাকে ওমন সাজিয়ে রেখেছিস কেন?আমায় দে।আমি চারুকলার সুজনের কাছে সেল দিয়ে ঐ টাকায় সিঙ্গারা খাবো’
অর্ণব মালাটা নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে বললো,’নাহ থাক।হয়ত ভুলে আমার কাছে রয়ে গেছে। কোনো একদিন দেখা হলে ফেরত দেবো।’
মেসেঞ্জারে কল এসেছে।অর্ণব ফোন হাতে নিয়ে দেখলো জুথির কল।
এই মেয়েটা ইচ্ছে করে জ্বালাচ্ছে নাকি আর ৫টা মেয়ের মতন সেও প্রেমে পড়ে গেলো।হ্যালো?’
-“ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’
(গানটা বাজছে)
মৃদুল হাসতে হাসতে শুয়ে পড়েছে।অর্ণব ফোন রেখে বললো,’এই মেয়েটা নিজে একটা পাগল। আমাকেও পাগল বানাতে হাত ধুয়ে নেমেছে।তার বাবা আবার আমায় দায়িত্ব দিয়েছে তারে নিয়ে কুমিল্লা যেতাম।মানে যত জুট ঝামেলা সব আমার ঘাঁড়ে এসে পড়ে।
জুথি ইচ্ছে করেই অর্ণবকে জ্বালাচ্ছে।কারণটা হলো যাতে অর্ণব রাগ করে এসে বলে সে জুথিকে কুমিল্লা নিয়ে যেতে পারবেনা।জুথির ইচ্ছা নাই কুমিল্লা যাওয়ার।কারণ ওখানে চাচার বাসার পাশের বাসার একটা ছেলে তার জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় পাগল।ওর ভয়ে সে যেতে চায়না।কিন্তু বাবাকে বিষয়টা বলার পর তিনি সিরিয়াস নেননি।চাচা দেখতে চান বলে এখন বলছেন একবার গিয়ে দেখে আসলে কিছু হবেনা।সে ট্রিপটা কেন্সেল করতেই অর্ণবকে জ্বালাচ্ছে যেন সে মানা করে দেয়।তেমনটাই হলো
অর্ণব মেসেজ করে বললো সে ওকে নিয়ে কুমিল্লা যেতে পারবেনা।জুথি মনের আনন্দে ফোন রেখে কফি বানাতে চলে গেছে।
বিকালবেলা গোসল করে বেরিয়ে অর্ণব আসরের নামাজ পড়তে মাথায় টুপি পরে চললো মসজিদে।সেখানে দেখা হয়ে গেলো জুথির বাবার সঙ্গে।সে তাঁকে বললো কুমিল্লা গেলেও তার দেরি হবে।জুথিকে সে নিতে পারবেনা।তার অনেক সমস্যার বাহানা দিয়ে দিলো উনাকে।কিন্তু জুথির বাবা ওকে এমন পেঁচিয়ে ধরলো সে আর না করতে পারেনি।
এদিকে তার মেয়ে যে কি পরিমাণ জ্বালাতন করছে তা বললে তো মনে হয় না বিশ্বাস করবে।কারণ বাপের সামনে সে তো ভদ্র হয়ে থাকে।
——-
-‘নদীর ওপারে ঢাকায় যাবার পথ।ওখানে বুঝি তিনি থাকেন।বুঝি জীবনে আর কখনও তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হবার সুযোগ হবেনা?ইশ! যদি ভারত চলে যাবার আগে একটিবার দেখা পেতাম।কতইনা ভাল হতো।শেষ দেখা দেখে নিতাম।’
ব্রেসলেট টাকে উঁচুতে তুলে কুসুম অর্ণবের কথা ভাবছিল।দূর থেকে কলি ছুটে এসে বললো,’বোন মায়ে তোমারে ডাকে।ভারতে নাকি তোমায় ঈদের আগেই পাঠাবে’
কুসুম চমকে কলির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এত তাড়াতাড়ি কেন?আমি যামুনা’
-‘চলোই না।মায়ে কইছে সজনে খালার বাড়িতে যাবে তোমারে কিসের ঝাড়ফুঁক দেওয়াবে।’
-‘আমি ওসবে বিশ্বাস করিনা।আর এখন ওসবের কি প্রয়োজন?’
-‘আমি তো তা জানিনা।জলদি আসতে বললো।সজনে খালা নাকি শহরে যাবে।তার সময় নাই তেমন।তোমার কাজ সেরে তিনি চলে যাবেন।তাই তো আমি ছুটতে ছুটতে এলাম তোমায় নিয়ে যেতে’
-‘মাকে গিয়ে বলবি আমি ওসবে বিশ্বাস করিনা।যাবনা আমি’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/