#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১১
আফনান লারা
.
অর্ণব মেসে ফিরে বই পড়াতে যে ডুব দিয়েছিল রাত নয়টা বাজে এখনও তার কোনো খোঁজ নেই।পড়ছে তো পড়ছেই।মৃদুল বাইরে থেকে দশবার গিয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে তাও ওর নড়চড় দেখলোনা।মিনিট পাঁচেক হলো বারান্দায় উদ্ভট আওয়াজ হচ্ছে।যেন কিছু একটা বার বার করে পড়ছে।
বই থেকে মুখ তুলে অর্ণব সেদিকে তাকালো সন্দেহের চোখে।চোখের সামনে একটা কঙ্কর উড়ে এসে পড়তে দেখলো সে।বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় পা রাখতেই আরেকটা এসে ওর কপালে লাগলো বরাবর।
কপাল ঘষতে ঘষতে নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে নিচে বসে আরও কণা খুঁজছে মারবে বলে।হাতে কয়েকটা ধরে রেখেছে মনে হয়।হাত মুঠো করা।থ্রি পিস পরা গায়ে।খোঁপা করে ক্লিপ বেঁধে রেখেছে।সাথে জিন্সের জ্যাকেট।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল মেয়েটাকে।মুখ তুলতেই দেখলো ওটা জুথি।
এমন অসময়ে ওকে এখানে দেখে চেঁচিয়ে অর্ণব বললো,’কি সমস্যা আপনার?মাথা কি গেছে?’
জুথি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো’নিচে আসুন, বলছি।নাহলে এই গোটা ইটটা ছুঁড়ে মারবো ধরে’
অর্ণব ডানে বামে তাকিয়ে বাসা থেকে বের হলো।নিচে এসে আবারও ডানে বামে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে বললো,’আপনার কি শরীর খারাপ?মানে মাথার মগজ কি একেবারেই গুলে গেছে?আজ এমন জ্বালাচ্ছেন কেন বলুন তো?মানুষ দেখলে কি বলবে জানেন?বলবে প্রেম করছি’
-“আপনি বাবার আকুতি মিনতি শুনে গলছেন কি জন্যে আগে সেটা বলুন?সাফ সাফ বলে দিতে পারলেন না যে আপনি আমায় সাথে নিয়ে কুমিল্লা যেতে পারবেননা?আমার বাবা আমি ভয় পাবো,আপনি কেন ভয় পাবেন?আশ্চর্য! ‘
-“আপনার বাবা কিন্তু আমার স্যার।তাকে আমি ভয় পাব না তো কে ভয় পাবে?
কথা এটা বলার জন্য এত রাতে একা একা এখানে চলে আসলেন?সাহস আপনার দশ তলা দালানের সমান!’
-‘একা না।আমার ছোট ভাইও এসেছে।ঐ তো আইস্ক্রিম কিনতে দোকানে গিয়েছে।তা এখানে এসে বলবো না তো কি করবো?আপনি অফলাইন হয়েছেন চৌদ্দ ঘন্টা ধরে।সেই বিকালে যে কথা বলছিলেন আর কোনো খবর নাই আপনার।বিয়ে সাদি করে নিয়েছেন নাকি?’
-‘আমার পরীক্ষা সামনে।যান বাসায় যান।আপনার বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি তিনি আমার কোনো কথাই শুনলেন না।আমার আর কিছু করার নেই’
জুথি বিড়বিড় করে কিসব বলতে বলতে চলে গেলো।অর্ণব মাথা তুলে উপরে তাকাতেই দেখলো মৃদুল আর তপন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে।এটা দেখে ছুটে গেলো সে।
ওরা এবার এই ভিডিও ফেসবুকে ছাড়বে নির্ঘাত।
——-
-‘বোন এই পাথরের ব্রেসলেটটা কে দিলো তোমায়?’
চৌকিতে দুবোন মিলে কাঁথার নিচে শুয়ে শুয়ে মাথার উপরের চাল দেখছিল।কলির প্রশ্ন শুনে কুসুম ব্রেসলেটটাকে লুকিয়ে ফেলে বললো,’পেয়েছি এক জায়গায়।এখন থেকে এটা আমার।আচ্ছা এটার নাম কি বললি?’
-‘ব্রেসলেট ‘
-‘ওহ।আচ্ছা তোকে কতদিন বলেছি আমায় পড়াশুনা শিখিয়ে দে।তুই পারবি আমি জানি।একবার চেষ্টা কর না!’
কলি উঠে বসে বই খাতা বিছিয়ে বললো,’তোমায় কতদিন শিখাতে বসেছি??তুমিই তো এক কানে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে ফেলো সব।এগুলো মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে হয়।নাও বসো দেখি।আমি যেটা লিখলাম সেটা লিখো।তারপর নাম বলছি অক্ষরটার’
কলির দেখাদেখি ত্যারাব্যাঁকা করে কুসুম “অ” লিখলো।কলি বললো এটা “অ”
কুসুম খাতাটাকে সামনে ধরে মুখ ঢেকে চোখ একটা বের করে বললো,'”অ” এর সাথে কি যোগ করলে অর্ণব নাম লেখা যাবে?’
কলি ব্রু কুঁচকে বললো,’কেন শিখবে?সে কি তোমায় বিয়ে করবে?তাহলে তার নাম শিখে তোমার কি উপকার হবে?’
কুসুম মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,’শিখিয়ে দে না!!দেখ আমি লিখতে পেরেছি।
পুরো নামটা শিখিয়ে দে।তোরে দোয়া করে দেবো অনেক’
—–
রুমে পা রাখতেই মৃদুল আর তপনের দাঁত কেলানো দেখে অর্ণব ব্রু নাচিয়ে বললো,’কি??এমন দাঁত কেলাচ্ছিস কেন তোরা?’
-‘কেলাবো না?গভীর রাতে একটা মেয়ে আসে দেখা করতে।তুইও পড়াশুনা ছেড়ে নিচে যাস দেখা করতে।আমরা কিছু বুঝিনা??শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো প্রয়োজন নেই।আমরা সব বুঝে গেছি।’
-‘ভুল বুঝেছোস তোরা।এসব কিছুইনা….’
-‘আমাদের আর বোঝাতে হবেনা।তোর আর জুথির কাপল ভিডিওটাকে ‘তুম সে মোহাব্বাত হে হা””””বাস তুম সে হা ‘
গানটার সঙ্গে এড করে আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের গ্রুপে পোস্ট করে দেবো।তোর যত মেয়ে পাগলা ফ্যান আছ সব আমাদের খাতায় যোগ হবে।আহা আই এম অগ্রিম সেলিব্রেটি’
অর্ণব বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে।তপন ফিসফিস করে বললো,’জুথির ছবি এটা।যদি পোস্ট করিস তো ও তোকে কলেজের সামনের দিঘিতে চুবাবে।চিনিস না ওরে?’
-‘আরে জানি জানি।অর্ণবকে ভয় দেখালাম।’
——
-‘আপনে সত্যি সত্যি কুসুমকে ভারতে পাঠিয়ে দেবেন?আচ্ছা এমন করলে হয় না?ওরে আমরা ঘরে লুকাই রাখবো সারাদিন? ‘
-‘কলির মা বোকার মতন কথা বলবানা।আমাদের মেয়ে পাখি না যে খাঁচায় বন্দি করে রাখতে পারবো।ও মানুষ।প্রয়োজনে তাকে ঘর থেকে বের হতেই হবে।আমি এত বড় রিস্ক নিতে পারবো না।ঈদের আগের দিন ও চলে যাবে।রাজুর বোন পলি আছেনা?ও তো ভারতে যাবার কাগজপত্র সব রেডি করেছে।ওর সঙ্গে কুসুমকে দিয়ে দেবো।মেয়েটা অনেক সাহসী।শক্তিও আছে।একা হাতে দিনে একশো পাঁচহনের টিফিন বানায় স্কুলের।ও আমাদের কুসুমকে আগলে রাখতে পারবে।আমরা তো যেতে পারুমনা।টাকায় কুলাবেনা।’
-‘মেয়েটাকে আবার কবে দেখবো কে জানে।এই তো সেদিন এলো।আহারে আবার কোল খালি হবে।আমার আদরের মেয়েটা শুরু থেকে দূরে দূরে থাকছে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে।আচ্ছা একটা কাজ করলে হয়না?ভাল একটা ছেলে দেখে যদি ওর বিয়ে দিয়ে দিই?’
-‘ভাল ছেলে বললেই পাওয়া যায়??যাদের পাই তারা তো আর কুসুমের যোগ্যনা।ওরা রুপ দেখে পাগল হয়ে আসে।কিন্তু তাদের ব্যবহারে তো আমি কুসুমের মঙ্গল দেখিনা।একজনের ব্যবহারে আপ্লুত হয়ে ছিলান আর সে আমাদের দূরে ঠেলে দিলো।আহা কতই না ভাল হতো যদি কুসুমের সাথে অর্ণব বাবার বিয়ে হতো।একটু শান্তিতে মরতে পারতাম’
—–
কুসুম বিশটা পৃষ্ঠা নষ্ট করেছে অর্ণব লিখতে গিয়ে।কলি যেমন করে লিখেছে তেমন করে হচ্ছেইনা।বিরক্ত জাগছে নিজের উপর।
-“কেন আমি এত অশিক্ষিত হলাম?কেন আমি সবার মতন পড়াশুনা জানিনা?তাহলে তো আজ এইদিন আসতোনা আমার সামনে।আমি উনার স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখতাম।কেন আমি পড়াশুনা পারিনা?পোড়া কপাল আমার’
রাগ করে খাতাটা ছুঁড়ে মারলো কুসুম।ঘর থেকে বেরিয়ে সুপারি গাছের সাথে বাঁধা বস্তার দোলনায় গিয়ে বসলো সে।কোমড়ে আটকানো ব্রেসলেটটা হঠাৎ নিচে পড়ে হালকা আওয়াজ হলো। অন্ধকারে আবার সেটা খুঁজতে শুরু করেছে কুসুম।দুপুরবেলা মা একটা প্লেট আলমারি থেকে বের করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন সেটার ভাঙ্গা টুকরো ফেলেছেন এখানেই।অন্ধকারে মাটিতে হাত বুলাতে বুলাতে কাঁচের সঙ্গে হাত লাগিয়ে উহুঃ শব্দ করে উঠলো সে। তাও ওসব বাদ দিয়ে ব্রেসলেটটা আগে খু্ঁজে বের করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। হাতের সব রক্ত মাথায় মুছে নিলো এবার।ছোট থেকেই রক্ত দেখলে চুলে মুছে ফেলে সে।রক্ত ঝরা দেখা পছন্দ না একদম।আর গায়ে মুছলে দাগ দেখা যাবে তাই মাথায় মুছে এমন ভাব করে যেন কিছুই হয়নি।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/