লীলাবালি🌺 #পর্ব_১৬ আফনান লারা

0
800

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১৬
আফনান লারা
.
-‘মা কেমন আছো?বাবা কি আমার সাথে বেশি রাগ করে আছে?’

কুসুম চুপ করে অর্ণবের গলার আওয়াজ শুনছিল মনযোগ দিয়ে।অর্ণব কোনো সাড়া না পেয়ে আবার বললো,’হ্যালো??’

-‘আমি কুসুম’

অর্ণব অবাক হলো কুসুমের কণ্ঠ শুনে।কুসুম মায়ের ফোন পেলো কোথায়?পরে বুঝলো মা হয়ত তাদের বাড়ি গেছে।কুসুম আর কিছু বলেনি।নিজের নাম বলে সেও চুপ করে আছে।অর্ণব গলা ঠিক করে বললো,’কেমন আছেন?’

-‘এই আছি এক রকম। মরি নাই’

কথাটা যেন কুসুম খোঁচা মেরে বললো।অর্ণব বেশ বুঝতে পেরেছে।
এরকম কথারই যোগ্য সে।তাই রাগ না করে ফের বললো,’পায়ে কি কামড় দিয়েছিল আপনার?’

-“পোকা’

-‘এখন সুস্থ বোধ করছেন?’

-‘হুম।আচ্ছা রাখছি।

কুসুম ফোন রেখে দিলো।অর্ণবের কথা শুনে মনে শান্তি পেলেও বারবার করে মনে পড়ছে এই মানুষটা তাকে চায়না।তার ভাগ্যে এই মানুষটা নেই।
যার কারণে বাধ্য হয়ে সে কলটা কেটে দিয়েছে।অর্ণব ফোন সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে ভাবলো ঐটুকুন একটা মেয়ের আবার কি রাগ!
-‘আমি মোটেও তাকে দোষ দিচ্ছিনা।আমার উপর তার রাগ একেবারে স্বাভাবিক।
যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।আমার উপর রাগ থাকলে আমাকে ভুলতে তার কম সময় লাগবে।কিন্তু মা বাবা এটা বোঝেননা।কি দরকার সবসময় ওর খোঁজখবর রাখার?এমন করলে সে তো চেয়েও আমায় ভুলতে পারবেনা।বারবার গিয়ে তারা ওকে মনে করিয়ে দিচ্ছে অর্ণব নামের একটা ছেলের সঙ্গে একবার কুসুমের বিয়ের কথা চলছিল।তা ভেঙ্গে গেছে এখন।’

-‘কুসুমের জন্য কি আপনারা ছেলে দেখছেন ভাই?’

-‘না কি যে বলেন!চাইলেই কি আর আমার কুসুম মায়ের জন্য ভাল একটা ছেলে পাবো?তাছাড়া বয়স হোক আরও।এখনও ছোট সে।ভাবছি ঈদের আগে ভারত পাঠিয়ে দেবো’

অর্ণবের বাবা চমকে বললেন,’সেকি!কেন?এখানে থাকলে কি সমস্যা? ‘

-‘সমস্যা বলতে কিছুইনা।ভারতে ওর নানি একা তো।তাই সেখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি। হাওয়া বদল করলে মনটাও ভাল হয়ে যাবে ওর।এই ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম’

অর্ণবের বাবা মন খারাপ করে বসলেন।এরপর বললেন,’তাহলে তো আর কুসুমের দেখা পাবোনা তাহলে।আহারে তারে আমার খুব মনে পড়বে।’

কুসুমের বাবা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন তার আর কিছু বলার নেই।সব নিয়তি।এসব কি আর আমাদের হাতে আছে?

বাবা চা খেতে খেতে একটা পুরোনো দিনের গান শুনছিলেন।
জুথি তার সামনে এসে বসেছে পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে কিন্তু তিনি এখনও টের পাননি।
চোখ বুজে চা খেয়ে যাচ্ছেন।শেষে অডিও স্পিকারটা বন্ধ করে দিয়ে জুথি বললো,’বাবা আমি এসেছি।দেখেছো?’

-‘আরে তুই।কখন এলি?’

-“অনেক আগে।তুমি তো খেয়ালই করলেনা।যাই হোক, একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবার জন্য এখানে এসেছিলাম’

বাবা চায়ের শূন্য কাপটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে নড়েচড়ে বসে বললেন,’কি প্রশ্ন?’

-‘আমার কি শিক্ষার অভাব?’

-‘এত বড় কথা কে বললো তোকে?’

-“বলেছে একজন।বলোইনা উত্তর’

-“না।আমার মেয়ের মাঝে কোনো খুঁত নেই।তবে সে এই কথা কেন বললো তাই ভাবছি।এর পেছনে কি কেনো কারণ আছে?
নাহলে হুট করে একটা মানুষ এসে কেন বলবে তোর শিক্ষার অভাব?’

-‘না কিছুনা।যা বোঝার বুঝা হয়ে গেছে।আচ্ছা শোনো, আমি বলে দিচ্ছি আমি কুমিল্লা যাবোনা’

বাবা চশমা পরে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললেন,’তুই এমনিতেও কেনো আত্নীয়ের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করিসনা।এবার নিজের আপন চাচাদের বাড়ি যেতেও মানা করলে লোকে বলবে সমাজ নাই।’

জুথি পিছু পিছু এসে বললো,’আমার অর্ধেক আত্নীয় বিদেশে থাকে।এখানে আত্নীয় বলতে চাচা চাচিই আছেন।’

-‘সেজন্য তাদের সঙ্গে তোর দেখা করতেই হবে।আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।বাজারে যাচ্ছি কিছু লাগলে বল’

জুথি মুখ ঘুরিয়ে তার রুমে চলে আসলো।সবাই যেন জোট পাকিয়েছে ওর বিরোধিতা করার জন্য।ভাগ্যে মনে হয় লেখা আছে ঈদের আগে কুমিল্লা যাবার কথা।ধ্যাত!
কত কি করলাম কোনো কিছুতেই লাভ হচ্ছেনা।’

-‘কিরে অর্ণব?ওমন মূর্তির মতন বসে আছিস কেন?তোর বাচ্চা বউ কল করেছিল নাকি?’

মৃদুলের কথা শুনে অর্ণবের মুখা চুপসে গেলো।গোল গোল চোখে চেয়ে রইলো ওর মুখের দিকে।মৃদুল ওর এমন চাহনি দেখে ভাবলো সে কি অপরাধ করে ফেলেছে নাকি কথাটা বলে।পরে ওর সামনে বসে চুটকি মেরে বললো,’কিরে?কোন জগতে আছিস?আমি তো ফান করলাম’

-“ফান করে সত্যিটাই বললি’

-“ঐ কুসুম তোর নাম্বার পেলো কই?’

-“ঐ যে ভাগ্য!মাকে কল করলে কুসুম যে স্থানেই থাকুক না কেন কোনো না কোনো উপায়ে তার সঙ্গে আমার কথা হয়ে যায়’

মৃদুল পা গুছিয়ে বসে বললো,’তা কি কথা হলো ঐ পিচ্চির সাথে?’

-“ম্যাচিউর একটা মেয়ে রাগ করলে সে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমরা সচরাচর অধিক সময় ধরে ভাবনাচিন্তা করে থাকি।কিন্তু পিচ্চি একটা মেয়ে যখন রাগ করে তখন হাসবো নাকি কাঁদবো তা ভাবতে থাকি।তার রাগ তো নামেই রাগ।এই রাগকে মূল্য দিতে গেলেও মনে হয় ফলাফল একটা চকলেট দিলে শেষ’

মৃদুল হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।অর্ণব মাথা ঘুরিয়ে বললো,’হাসছিস?অবশ্য হাসিরই কথা এটা।ঐ টুকুন একটা মেয়ে আবার রাগ করে আমার সাথে।সে জানে তার রাগ আমি কখনও ভাঙ্গাবোনা তাও রাগ করে।কি অধিকারত্ব তার একটু ভেবে দেখ’

মৃদুল ঠিক হয়ে বসে বললো,’অধিকার নিশ্চয় আছে’

-“মানেহ্?’

-‘মানেটা সহজ।তুই ইদানিং কুসুমের কথা অনেক ভাবিস।যদি আগের অর্ণব হতি, কুসুমের গলা শুনেই লাইন কেটে দিতি।কিন্তু তুই সেটা করলি না।বরং দু চারলাইন কথাও বললি ওর সঙ্গে,এখন আবার তার রাগ নিয়ে গবেষণা করছিস।কুসুম পিচ্চি হলেও বুঝ জ্ঞান তার যথেষ্ট হয়েছে। যার কারণে সে তোর মনের কথা বুঝতে পেরে অধিকার খাটাচ্ছে।আমার মনে হয় তুই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিস ঠিক তবে এর অনুশোচনা তোকে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে।হায়রে অর্ণব!ফেঁসে গেলি!’

মৃদুলের কথা যেন তীরের মতন লাগলো।বুকে হাত রেখে অর্ণব পুনরায় মূর্তির মতন বসে রইলো।যেটা হচ্ছে সেটা সে চায়না।মোটেও চায় না।তাহলে সেটা কেন হচ্ছে?কেন ঘুরে ফিরে ভাগ্য সেই জায়গায় গিয়ে আঁটকাচ্ছে যাকে প্রত্যাখান করে সে ঢাকায় ফিরে এসেছিল।
-‘তাহলে কি কুসুমের সাথেই আমার বিয়ে হবে?
মৃদুল তুই আমাকে ভয় লাগালি ক্যান একটু বলবি?
তোর কাছে মন খুলে কিছু কথা বললাম,কোথায় একটু সাহস জুগাবি তা না করে ভুলভাল চিন্তাভাবনা মাথায় ঢুকিয়ে দিলি?ছ্যাঁকা খাওয়ার প্রতিশোধ এখন অনামিকাকে না পেয়ে আমার উপর দিয়ে ঝাড়ছিস?’

-‘একদমই না।আচ্ছা তুই কি শুনতে চাইছিস?তাই বলছি।তোর বিয়ে জুথি ম্যাডামের সঙ্গে হবে।তোর স্বপ্নের সেই নারী।অতিরিক্ত ম্যাচিউর।অতিরিক্ত দুষ্টু!অতিরিক্ত বুঝদার!অতিরিক্ত….. ‘

-‘জুথি ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই?ওরে বিয়ে করলে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। জাস্ট টিচার হয়ে ওরে সামলাতে আমার হিমশিম খেতে হচ্ছে।বিয়ে করলে আমি মরেই যাবো।ওরে সামলানোর জন্য একজন কোমল মনের অধিকারী পুরুষ দরকার।সংসারে একজনের মন নরম হতে হয়।জুথির মন শক্ত,ওর জন্য নরম মনের ছেলে লাগবে।ওর সঙ্গে আমার খাটবেনা।সংসারে তাহলে ইট ছোঁড়াছুঁড়ি হবে সারাক্ষণ।’

মৃদুল অর্ণবের ঘাঁড় ঝাঁকিয়ে বললো,’তাহলে বলবো জুথি তোর জীবনে আসার পর থেকে তোর মন শক্ত থেকে নরমের দিকে যাচ্ছে।এটা কিসের লক্ষণ ভাই?তুমি তো মাইয়াদের ধারের কাছেও ঘেঁষতা না।এখন রাত বিরাতে জুথির সাথে তোমারে দেখা যায়।ব্যাপার কি?’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here