#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৪
আফনান লারা
.
শাড়ীটা মিশু ভাবী যেভাবে পরিয়ে দিয়েছিল ঠিক সেরকম করে পরতে না পারলেও মোটামুটি চলার মতন করে পরে কুসুম বের হয়েছে।মুখটা ধুয়ে নিয়েছে সাথে।রুমে অর্ণব নেই।মনে হয় নামাজ পড়তে গেছে।কুসুম টেবিলের উপর ওর ব্যাগটা দেখলো।কি যে আনন্দ হলে মনে।খুশিতে কি যে করতে ইচ্ছে করছে।
অর্ণব যে আসবে তা সে একেবারেই জানতোনা।জলদি করে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো মা রান্নাঘরে কাজ করছেন সাথে কাছের একটা বাড়ির মেয়ে বেগম।বেগম বাড়ি বাড়ি কাজ করে।ওকে ডেকে আনা হয়েছে কাজের চাপ বেশি বলে।আগে তো মিশু ভাবী হাত লাগালে সব হয়ে যেতো কিন্তু এখন যে সাগর ভাইয়া এসেছে।মা কিছুতেই তাকে রুম থেকে বের হতে দিলেননা।
কুসুম সেখানে গিয়ে বললো সেও নাস্তা বানাবে।মা প্রথমে মানা করলেন পরে বললেন রুটি বানিয়ে দিতে পারে।
কুসুম সুন্দরমতন রুটি বানাতে বসে গেলো।
গরুর গোশত দিয়ে সাগর ভাইয়াকে রুটি খেতে দেবেন।
অর্ণব নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে এসেছে।বাড়িতে ঢোকার আগে সাগর ভাইয়াদের বারান্দায় তাদের দুজনকে একসাথে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে এসেছিল সসে।ভাইয়া যদি তাকে ওখান দিয়ে আসতে দেখতো তাহলে নিজেই লজ্জা পেতো।গোসল করে বারান্দায় মিশু চুল মুছতেছিল, সেসময়ে সাগর ও হাজির হয়েছিল।
অর্ণব হাসিমুখে তার রুমে চলে এসেছে।কুসুম রুটি বানিয়ে বললো অন্য কাজ দিতে।মা বললেন আপাতত অর্ণবের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে আসতে।
অর্ণব শুয়ে শুয়ে ফেসবুক দেখছিল।কুসুম কাপটা রেখে কি মনে করে এক চুমুক দিলো তারপর দৌড় দিয়ে চিনির কৌটা নিয়ে এসে চিনি মেশালো।এত কান্ড করার পর ওর মনে হলো সে তো চায়ে চুমুক দিয়ে ফেলেছে।তাই কাপটা নিয়ে আবার চলে যাওয়া ধরতেই অর্ণব বললো চায়ের কাপ দিয়ে যেতে।
“ইয়ে আসলে আমি তো চুমুক দিয়ে ফেলছি।আমার মনে হয়েছিল চিনি দি নাই।পরে খেয়ে দেখলাম সত্যি চিনি দিইনি।’
অর্ণব কপাল কুঁচকে চায়ের কাপটা নিলো তারপর বললো,’কেমন করে চুমুক দিছিলে?মানে চুমুক দেওয়ার ও তো অনেক ধরন আছে।জিভ লাগিয়েছিলে?’
কুসুম অর্ণবের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,’এই যে এমন করে খেয়েছি”
অর্ণব তব্দা হয়ে বসে আছে।এর কি উত্তর সে দেবে তা ওর নিজেরই জানা নাই।কুসুম কাপটা আবারও ওর হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো খাবে কিনা
-“না থাক।এই কাপ তুমিই খাও।যে দুবার চুমুক দিছো কাপে আর চা নেই।বাচ্চাদের মুখের খাবার খেলে একটা রোগ হয় শুনেছিলাম।নাম ভুলে গেছি’
-“আমি তো বাচ্চা নই’
-“ঠিক।তুমি তো বাচ্চা নও। তুমি বাচ্চার থেকে যদি ছোট কিছু হয়ে থাকে তবে সেটা তুমি’
কুসুম রাগ করে কাপটা নিয়ে চলে গেছে।বাহিরে বের হতেই সাগরের সামনে পড়লো।
ওকে সালাম দিয়ে চুপ করে থাকলো সে।সাগর সালাম নিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো।তারপর ভেতরের রুমে অর্ণবের কাছে গিয়ে বসেছে।অর্ণব ভাইয়াকে দেখে হেসে ঘুরে বসলো।
-‘তো বল কেমন লাগে বউরে?’
-“কেমন লাগে তা তো সবটাই তুমি জানো।ঘটা করে আর কি বলবো।’
সাগর অর্ণবের ঘাঁড়ে হাত রেখে মুছে দিয়ে বললো,’থাক ভাই।মেনে নে।বাবা তোর ভালো ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
—–
কুসুম ঐ চায়ের কাপ রেখে আরেকটা কাপ হাতে নিয়ে আসার সময় মিশুকে দেখলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন করছিল।বারবার পাউডার গলায় লাগিয়ে ঘঁষছিল সে।কুসুম এগিয়ে গিয়ে বললো,’আপু কি করো?’
মিশু ভয় পেয়ে আয়নার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বললো,’না ঐ আসলে গলায় কি যন কামড় দিছিলো যার কারণে পাউডার দিছিলাম যেন না চুলকায়।’
কুসুম সাত পাঁচ না ভেবে এক দৌড় দিয়েছে।মিশু ভাবলো কুসুম হয়ত বুঝে গেছে তাই সে হাসলো মিটমিট করে।সাগর বাবার ঘরে গেছে এবার।অর্ণবের হাতে কুসুম চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ড্রয়ারগুলোতে পাউডার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।শেষে একটা পাউডার বের করে জয়ের হাসি দিয়ে ছোটা ধরতেই অর্ণব বললো,’দাঁড়াও!আমার পাউডার কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’
-“এটা দিলে পোকার কামড়ের দাগ ঠিক হয়ে যায় তাই না?’
-“হুম তো?’
-“তো মিশু ভাবীর গলায় পোকা কামড় দিছে।উনার কাছে এই পাউডার নেই।তাই এটা নিয়ে যাচ্ছি’
-“গলায় পোকার কামড় মানে!কিসের পোকা আসলো বাসার ভেতর।ওওওওওও!
এই যাঃ।দাঁড়াও কুসুম!!
কুসুম মিশু ভাবীর রুমের দিকে চললো।অর্ণব বিছানা থেকে নেমে ছুটে এসে ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়েছে।হাত থেকে পাউডারটা কেড়ে নিয়ে বললো,’দেওয়ার দরকার নেই’
-“কেন?পোকা কামড়িয়েছে।আসেন আপনিও দেখবেন”
-“চুপ!কোনো পোকার কামড় না এটা।চলো আমার সঙ্গে।’
-“আশ্চর্য আমি নিজের চোখে দেখছি এই টুকুন করে লাল হয়ে ছিল।আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি সহ চলুন।দেখবেন।’
অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে বললো,’দেখতে হবেনা আমার।তুমি এ বিষয়ে আর একটা কথাও বলবেনা।যাও নিজের কাজে যাও’
-“পাউডারটা দিলে ভালো হতো’
-“তোমাকে দেওয়াবো আমি।যাও বলছি’
ধমক শুনে কুসুম রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে।অর্ণব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
এই মেয়েটাকে কে বোঝাবে ওটা পোকার কামড় না।লাভ বাইট ছিল।ভাবীও না!!উনি পারতেন বোঝাতে।সেটা না বুঝিয়ে বাচ্চাকে বাচ্চার মতন করে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর একটুর জন্য আমাকে লজ্জার গোডাউনে ফেলে দিতো এ মেয়ে।
—-
অর্ণব কিছুক্ষণ পর বাজারে ঘুরতে গেছে।সাগর ভাইয়া আর মিশু ভাবী তাদের রুমে।বাবা মা উঠানে লাউশাকের পাতা নিতে নিতে আলাপ করছিলেন।রয়ে গেলো কুসুম।সে নিজের ফোন হাতে নিয়ে দেখে আবার রেখে দিলো।অর্ণব তো এখানেই।ভুলেই গিয়েছিল।এতদিন ফোন করতে করতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।এবার সারা বাড়িতে একা একা হাঁটছে সে।
আর কেনো কাজ নেই।নিজেকে বড় একা লাগে।আগে মিশু ভাবীর সাথে কথা বলে সময় কাটতো আর এখন মিশু ভাবীর ও খবর নাই।নিজেকে অসহায় মনে হয় অনেকৃ
অর্ণবদের বাসায় বেগম নামের যে মেয়েটা কাজ করে সে ভেটকি মেরে বললো,’তুমি তো এমনিতেও অসহায়’
কুসুম তার কথার মানে বুঝলনা।ছাদে এসে ফুলগাছগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল।আজকাল সকাল হলেই প্রচণ্ড মাথা ধরে।এর আগে এমন ব্যাথা ছিলনা।কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে এই সমস্যাটা হচ্ছে।সে কি ব্যাথা রাত পর্যন্ত রয়ে যায়।কিন্তু উনার সাথে কথা বললে ঐ ব্যাথার কথা আর মনেই থাকেনা!
ঐ তো কি সুন্দর একটা ফুল।তবে গন্ধ বিচ্ছিরি।একবার শুকে কি অবস্থা হয়েছিল।বাপরে!’
—-
অর্ণব বাজার থেকে এসে গোসল করে ছাদের দিকে আসছিল গামচা শুকাতে দিয়ে কিছুক্ষণ রোদে বসে থাকবে।ছাদে এসে দেখলো কুসুম ছাদের রেলিং ধরে বমি করছে।অর্ণব কাছে এসে বললো,’কি হইছে তোমার?এখানে কি করতেছো?’
কুসুম আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললো,’ঐ যে বললাম খেতে গেলে বমি পায়।আজ এসেই গেলো’
-“এখন আবার কি খেতে বসেছিলে?’
-“ফুলের মধু।এই ফুলটা দেখছেন?’
-“হ্যাঁ।লিচু ফুল’
-“এটার মধু মজা।আমি মুখে দিয়েছিলাম আর বমি এসে গেলো’
অর্ণব কুসুমের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে মুখে দিয়ে চুষে বললো,’কই আমার তো বমি আসলোনা।তোমার সমস্যা আছে।ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।হাবিজাবি খেয়ে পেট নষ্ট করছো।এখন ভালো জিনিসেও বমি পায় তোমার’
-‘আমি বাহিরের খাবার খাইনা।খেতে পারিনা বমি আসে’
-“ঐ তো!খালি পেটে তেতুল খেতে,কাঁচা আম খেতে তাই এমন অসুখ হয়েছে তোমার।’
চলবে♥