#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৮
আফনান লারা
.
খাওয়ার সময় কুসুম বেশ কয়েকবার অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছিল।তার কারণ অর্ণব শুরুতে বোঝেনি।এই বিষয় খেয়াল করলেন সুলতান শাহ।তিনি হালকা কেশে বললেন,”তোমার কি সমস্যা হচ্ছে মা?’
-“নাহ তো’
-“তাহলে খাবার ফেলে বারবার ওর দিকে তাকাও কেন? একান্তই গোপন কথা আছে নাকি?’
কুুসুম মাথা নাড়িয়ে চুপ করে থাকলো।অর্ণব বললো ‘আঙ্কেল ঐ আসলে খেতে বসলে ওর বমি পায় শুধু।এখন খেতে পারছেনা বলে এমন করছে।এটা সমস্যা না’
-“সমস্যা না মানে?বিরাট সমস্যা। বমি পাওয়া কি ভালো লক্ষণ। আমি বলছিনা সে গর্ভবতী।কারণ যৌবনে আমি পরিবার পরিকল্পনার কর্মী ছিলাম।এখন রিটায়ার্ড। তো জানি কে গর্ভবতী আর কে না।যদি হতো তাহলে সামনে রাখা এত সুস্বাদু জলপাই আচারটা একবার হলেও মুখে দিয়ে দেখতো।
তো গর্ভবতী যখন না তাহলে বমি পাওয়া তো সমস্যা।তুমি স্বামী হয়ে বসে আছো কেন?ডাক্তার দেখাও নি?’
-‘দেখিয়েছি।রিপোর্ট ও দেখেছি।তবে একটা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলাম না।তাছাড়া রিপোর্টে কি আসে সেটা কি আর আমাদের মতন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে?সেটা তো একমাত্র ডাক্তার বুঝবে।রিপোর্ট নিয়ে তাকেই দেখাতে হবে।তিনি বসেন কুমিল্লায়।বোঝেন তো’
সুলতান শাহ গালে হাত রেখে বললেন,’ওহ এই ব্যাপার।’
—-
দুপুরের খাবার শেষে কুসুমকে মিজুয়ানা আন্টির কাছে রেখে অর্ণব গেছে মেসে।ফিরতে রাত হবে বলে গেছে।
কুসুম মিজুয়ানার পাশে বসেছিল সোফায়।তিনি পান সাজাচ্ছিলেন আর কুসুম সুপারি কেটে দিচ্ছিল।
-‘তোমার বাড়িতে কে কে আছে?’
-“আমি আর আমার মা, বাবা,ছোট বোন’
-“ঐ পোলার সাথে কি পালিয়ে বিয়ে করছো?’
-“নাহ।সবাই মিলে দিয়েছে’
-‘আমার মৃদুলের জন্য আমি তোমার মতন মেয়ে খুঁজতেছি।সুন্দর এক খানা মুখ হবে।যেন তারে দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়।আর দুষ্টু হবে।আমার ঘরে আমি আমার দুইটা মাইয়া পোলার মাঝে একটারেও দুষ্টামি করতে দেখলামনা কোনোদিন।কত স্বাদ ছিল ওরা দুষ্টুমি করবে আর আমি বকাঝকা করবো।তো এখন শেষ উপায় হলো আমার ছেলের বউ।তাকে কোনো কিছুতে বাধা দেবোনা।তা কতদূর পড়লেখা করেছো তুমি?’
কুসুমের মুখটা কালো হয়ে গেলো।মাথা নিচু করে বললো,’আমি পড়িনি।কোনোদিন ইসকুলে যাইনি’
মিজুয়ানা বেগম নিচের ঠোঁট উলটে বললেন,’সেকি!এত কিছুর পরও ঐ ছেলে তোমায় সাথে সাথে রাখছে?’
কুসুম মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,’কেন?’
-“আমাদের এই দিকে এক মেয়ে ছিল।নাম সুরমা।ও তোমার মতন পড়ালেখা জানতোনা।বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্রর মতন একটা ছেলের সাথে।কারণ সুরমাও অনেক সুন্দর ছিল।তবে গরীব ছিল।টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারেনি।ঐ ছেলে রুপে পাগল হয়ে বিয়ে করে শেষে জানতে পারলো মেয়ে অশিক্ষিত। ব্যস তালাক দিয়ে দিলো।’
কথাটা শুনে কুসুম সুপারি কাটতে গিয়ে নিজের আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেছে।
মিজুয়ানা ওর ব্যাথা পাবার আর্তনাদ শুনে তড়িগড়ি করে ওর হাত টেনে ধরলেন।ঝাপসা চোখে লাল রঙ ছাড়া কিছুই দেখলেননা।ব্যস্ত হয়ে নিজের চশমা চোখে দিয়ে বললেন,’দিলে তো নিজের সর্বনাশ করে।সুরমার জামাই ওরে ছাড়ছে।তোমার জামাই তো ছাড়ে নাই তোমারে।এরকম বেখেয়ালি হলে চলে?এখন তোমার জামাই এসে যদি আমায় বকাবকি করে?’
কুসুম আঁচল দিয়ে আঙ্গুল বাঁধতে বাঁধতে বললো,’উনাকে বলবেননা।ঠিক হয়ে যাবে এটা’
মিজুয়ানা চশমা ঠিক করে বললেন,’তুমি যে পড়ালেখা জানোনা সেটা জানে তো নাকি?’
কুসুম আস্তে করে জবাব দিলো ‘জানে’
-‘তাহলে আর কি।সুখী হবা দেখিও।’
কুসুমের চোখে পানি এসে গেছে।অর্ণব তাকে যদি কোনোদিন তালাক দিয়ে দেয় ঐ সুরমা মেয়েটার মতো?হঠাৎ উঠে চলে আসলো সে দোতলায়।দরজা আটকে নিচে বিছানো তোষকে ধপ করে বসে পড়েছে।
ভাবছে কি করে শীঘ্রই পড়ালেখা শিখবে।কলি যদি থাকতো হয়ত একটু হলেও শিখিয়ে দিতো।উনার হাতে পায়ে ধরে হলেও পড়াতে রাজি করাতে হবে আজ।
—-
মেসে ফেরার পর মৃদুলকে আজ অন্যরকম লাগলো।পাক্কা দশ মিনিট হয়েছে অর্ণব রুমে এসে বিছানায় বসে ওর দিকেই চেয়ে আছে অথচ সে শুয়ে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে বই পড়ছে।তাও কিসের বই!প্রেম সংক্রান্ত।
এতদিন বিচ্ছেদ টাইপের বই পড়তো, রুখে দাঁড়ানোর বই পড়তো আর এখন কিনা প্রেমের বই পড়ছে।বিষয়টা বড্ড ভাবাচ্ছে।জনাব সুলতান শাহ যেটা ধারণা করছেন সেটা নয়ত?এই যে মৃদুল ভাই আমাকে চিনতে পারছেন?’
মৃদুল হঠাৎ চমকে উঠে বসে বললো,’আরেহহ তুই!কখন এলি?ওহ হো তুই তো কল দিছিলি।আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল।চার্জে দিয়ে বই পড়ছি তাই’
-‘দেখি কি বই পড়ছিস?প্রেমের?
-‘না।প্রেমের কেন হতে যাবে?আমি কি ওসব পড়ি?’
-“ঐ যে আমি প্রেমের লেখা দেখলাম’
-‘তুইওনা।চুপ থাক।তোর বউয়ের কি খবর?সুন্দরী কেমন আছে?হিতাহিত জ্ঞান হয়েছে নাকি এখনও বাচ্চামো?’
-“ওসব বাদ দে।তোকে ফেন দিয়েছিলাম বাসার এড্রেস জানতে।তুই তো ধরলিনা।কত যুদ্ধ করে আমি বাসা খুঁজে পেয়েছি বাপরে!’
-“বাবাকে কেমন লাগে?
আর দুই দিন থাকতে পারবি তো?নাকি এখনি পালাবি’
-‘ভালোই, খারাপনা।জুথির সাথে আজ তোর দেখা হয়েছিল?ফোন দিলাম।সে ভাবে কথা বলতে চাইলোনা’
মৃদুল মুখ বাঁকিয়ে বইটা বন্ধ করে দিয়ে বললো,’আগামী সপ্তাহে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে’
কথাটা শুনে অর্ণব চমকে বললো,’কেন?ও তো বলেছিল যাবেনা।সামনে পরীক্ষা তাই’
-“এখন যাবে।পরীক্ষা নাকি দেবেনা।মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেছে। জোর করেও হাসাতে পারিনি।ভেবেছিলাম আরও কদিন থাকলে হাসিয়ে মাতিয়ে রাখবো।কিন্তু নাহ, সে বাঁধনে আঁটকানোর মতন না।বাঁধন ছিঁড়ে চলে যাচ্ছে।’
অর্ণব মন খারাপ করে ফেন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে জুথিকে কল করলো।জুথি তখন ব্যাগে বাবার আনা জিনিস পত্র ভরছিল।মায়ের জন্য তার কত আয়োজন।
অর্ণবের এসময়ে কল দেখে কিছুটা অবাক হয়ে রিসিভ করলো সে।
দেরি করলোনা।
-“শুনছি চলে যাচ্ছেন?’
-“হ্যাঁ’
-‘আমার সাথে রাগ করে?’
-‘নিজেকে প্রশ্ন করেন।কি কারণে মৃন্ময়ী চলে যাচ্ছে।রাখছি।আশা করি দ্বিতীয়বার ফোন করবেননা আমাকে। আর মনে করিয়ে কষ্ট দিয়েননা।এমন করলে বিদেশে ফিরে গিয়েও শান্তি পাবোনা।আপনি ভাল থাকেন,কুসুম নামের মেয়েটাকে ভাল রাখেন।আমার খবর জানার প্রয়োজন নেই।আমি কেমন আছি সেটা হয়ত আপনি জানেন।
হয়তবা জানেননা।জানলে জিজ্ঞেস করতেন ও না।আপনি জানুন বা না জানুন তাতে আর এখন কিছু যায় আসেনা’
কল কেটে দিয়েছে জুথি।অর্ণব ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলো কল করা ঠিক হয়নি।
মন খারাপ করে রুমে ফেরত এসে সব জামা গুছিয়ে নিলো সে।বাসার ফেরার পথে বাজারে গিয়ে যা যা লিস্ট করা ছিল ওসব কিনতে কিনতে রাত আটটা বেজে গেছে।
বাসায় ফিরে মৃদুলের ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো কুসুম কোথায়।জাহান এসে বললো সে তো দু ঘন্টা আগেই চলে গেছে।
অর্ণব তাই দোতলায় আসলো।কলিংবেলে ক্লিক করে হাতের ব্যাগ গুলো নিচে রাখলো।হাত ব্যাথা হয়ে গেছে বয়ে আনতে আনতে।কুসুমের কোনো সাড়া নেই দেখে এবার সে দরজা ধাক্কিয়ে বললো,’কুসুম?শুনতে পারছোনা?আমি এসেছি’
কুসুম ঘুমে ছিল।অর্ণবের গলা শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার।বিছানা ছেড়ে ছুটে এসে দরজা খুলে দিয়েছে সে।অর্ণব ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো এত দেরি হলো কেন।কুসুম কিছু বলার আগেই ওর হাতে চারটা বই ধরিয়ে দিয়েছে সে।
কুুসম বইগুলো এক হাতে ধরতে না পেরে বইগুলো ফেলে দিলো।এক হাতে ছিল আঁচলে বাঁধা আঙ্গুল।অর্ণব বইগুলো নিচ থেকে তুলতে তুলতে বললো,’এমন করলে কেন?পাতলা বই ধরতে পারলেনা?এতই ভারী?’
কুসুম ও নিচে বসে বই কোনোমতে হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে আসলো। অর্ণব বাকি ব্যাগগুলো ভেতরে এনে রেখে বললো,’দেখো যা যা বলেছো ওসব আছে কিনা।আমি মেসে বাবুর্চির রান্না করা খাবার খেতাম।সংসারের এসব কেনার অভিজ্ঞতা আমার একেবারে ছিলনা তাও আন্দাজে কেনাকাটা করে এনেছি।বইগুলো এনেছি তোমার আকাশ ছুঁই আহ্লাদ পূরণ করতে।এবার পড়ো বসে বসে।না আনলে তো সারাদিন মিন মিন করতে।আচ্ছা!কি হলো তোমার?শুনতেছো আমি কি বলছি?
ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?তোমাকে না বলেছিলাম আমি আসা অবধি এখানে আসবেনা?ওদের সাথে থাকলেই হতো, জলদি ফিরে এলে কেন?একা ভয় করেনা তোমার?’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/