লীলাবালি🌺 #পর্ব_৫

0
920

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫
আফনান লারা
.
ছবিটা আজ তার নিতেই হবে।নিয়ে লুকিয়ে রাখবে।বারবার করে দেখা হবে।লজ্জা পাওয়া হবে।এতগুলো বছর পর তার মুখ দেখা হলো এই ছবিটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবেনা তার।মিশু তার বাড়ির কথা বলা ধরছিল সেসময়ে অর্ণবের মায়ের ডাক পড়ায় চলে গেলো সেখান থেকে।কুসুম ছুটে এসে ছবিটা নিয়ে বোরকা দিয়ে লুকিয়ে রাখলো।
চা খেয়ে এবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে।ফাঁকা,শূন্য বারান্দা।নিচ তলা বাসা ওদের।বারান্দার সামনে সুপারি বাগান।বাগিচার মতন দেখতে।ওখানে আর দেখার কিছু নেই বলে সে আবার রুমে চলে আসলো।
মিশু এসে বলে গেলো অর্ণবের মা বলেছেন ও আজ থেকে এই রুমেই থাকবে।অর্ণব আসলে মিশুর সঙ্গে গিয়ে থাকবে।সাগর তো বিদেশ থাকে।
কুসুম অনেক বেশি খুশি হলো।এত খুশি যে নাচতে ইচ্ছে করছে তার।
অর্ণবের মা রান্নাঘরে পিঠা বানাচ্ছেন কুসুমের বাবার জন্য।তিনি সোফায় বসে অর্ণবের বাবার সঙ্গে গল্প করছিলেন।তিনি অবশ্য এতক্ষণ ছিলেননা।বাজারে গিয়েছিলেন সদাই আনতে।
কুসুম বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকালো।সামনে দুটো টিনের বাড়ি।ওখান পর্যন্ত তাকে আর যেতে হলোনা।দুজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে ওকে জেরা করলো।জিজ্ঞেস করলো ও কি হয় এদের।
কুসুম প্রথমে সালাম দিয়ে বললো তার চাচি আম্মা হোন অর্ণবের মা।
তার নাম কুসুম শুনে মহিলা দুজন মিলে বিড়বিড় করে একজন আরেকজনের সাথে কি যেন বলে কুসুমকে ভালো করে দেখতে লাগলো।কুসুম আসি বলে ওখান থেকে চলে আসলো বাসার ভেতর।সুবিধা ঠেকছিলোনা তেমন।প্রস্থানই মঙ্গল।পুনরায় সব রুম দেখতে দেখতে অর্ণবের মায়ের রুমের কাছে আসতেই দেখলো ফোন জ্বলছে উনার।আওয়াজ কমিয়ে রাখা বলে কেউ জানলোনা ফোন আসছে।কুসুম কাছে এসে ফোন হাতে নিলো।পড়তে জানেনা বলে বুঝলোনা কে কল করেছে।তাও রিসিভ করতে পারে সে।রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে অর্ণবের গলা শুনলো

-‘মা শোনো বাবাকে বলবা আমার সঙ্গে যেন জোরাজুরি না করে।একদম এই ঈদেও আসবোনা বলে দিলাম।
আমি জানি তুমি ফোন করেছিলে এটাই বলতে।তখন ক্লাসে ছিলাম বলে রিসিভ করতে পারিনি।বাবাকে পরিস্কার করে বলে দিবা আমাকে যেন কোনো কিছুতে জোর না করে।হ্যালো??শুনছো তো?’

কুসুমের হাত কাঁপছে।কথা বলবে নাকি বলবেনা তা ভাবতে গিয়ে সারা শরীর কাঁপছে ওর।অর্ণব হ্যালো হ্যালো বলেই যাচ্ছে।

-‘আআআআআআ’

-‘কে??আপনি কে বলছেন?’

-‘আসসালামু আলাইকুম’

-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনি কে?আমার মা কোথায়?তার ফোন আপনার কাছে কেন?’

-‘চাচি আম্মা পিঠা বানাচ্ছেন।ব্যস্ত!তাকে কি ফোনটা দেবো?’

-‘আগে বলুন আপনি কে?’

-‘রাখি তাহলে’

কুসুম ফোন রেখে এক দৌড় দিলো।আর কথা বলার শক্তি তার নেই।যা বলেছে তাই অনেক।আর কখনও ঐ রুমে সে যাবেনা।গলা শুকিয়ে গেছে।হাঁপাতে হাঁপাতে অর্ণবের রুমে এসে বসে পড়লো চুপ করে।
অর্ণব ভাবছে ফোন কে ধরেছে।তাদের বাসায় তো এমন ছোট গলার স্বরের কেউ সচরাচর আসেনা।বাড়িতে মেহমান এলো নাকি?রাতে আরেকবার ফোন দেবো মাকে।’
—–
-‘ভাইয়া শোনেন!!!’

অর্ণব থেমে গিয়ে পেছনে তাকালো।জুথি ছুটে এসে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’আব্বুকে তো চেনেন আপনি তাইনা?’

অর্ণব ইতস্তত হয়ে বললো,’তোহহ?’

-‘তো আব্বু বলছে আজকে আপনি যেন আমাদের বাসায় আসেন।আপনার সাথে নাকি উনার জরুরি কথা আছে’

অর্নব কোমড়ে হাত রেখে বললো,’আপনার বাবা জানেন কি করে আমি আপনার ডিপার্টমেন্টের?’

-‘তা তো জানিনা।আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো অর্ণব নামের চতুর্থ বর্ষের কাউকে চিনি কিনা।তো আমি হ্যাঁ বলে দিলাম।এখন বললো আপনাকে বিকালে ইনবাইট করতে।বাসা চিনেন তো??’

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।জুথিকে কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।তাই চুপ করে রইলো।জুথি ও বুঝতে পারলো অর্ণব ওকে সন্দেহের চোখে দেখছে।সে কিছু না বলে হাঁটা ধরতেই অর্ণব ওকে থামিয়ে বললো,’আমার পোস্ট থেকে হাহা রিয়েক্ট উঠিয়েছেন?”

জুথি দাঁত কেলিয়ে বললো,’নাহহহ’

এটা বলেই এক দৌড় দিয়েছে।
অর্ণব সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো।
-‘মেয়েটা এত নাছোড়বান্দা প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছি।কথা হলো পোস্ট গুলো মনে হয় ডিলেট করা ছাড়া হাতে আর কোনো উপায় নেই।মেয়েটা এত জ্বালাতন কেন করছে বুঝিনা।’

হঠাৎ নিচের তলার সিঁড়িতে ধপাস করে কারোর পড়ে যাবার আওয়াজ শোনা গেলো। অর্ণব কয়েকটা সিঁড়ি নিচে নেমে দেখলো জুথি পা ধরে বসে আছে।
তা দেখে মুখে এক গাদা হাসি ফুটিয়ে অর্ণব ওর পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,’ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’

জুথির মেজাজ খারাপ হলো।উঠে গিয়ে হাতের ব্যাগ ছুঁড়ে অর্ণবের মাথায় মেরে দিলো।অর্ণব ব্যাগটা ধরে ফেলে ব্রু কুঁচকে বললো,’এই ব্যাগ আর আমি ফেরত দিচ্ছিনা’

মূহুর্তের মধ্যেই ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো সে।জুথি রাগ নিয়ে দুপাশে তাকালো।
সবাই ওদের কান্ড দেখছিল।যখন হুশ আসলো তখনই ছুটলো সে তার ব্যাগের জন্য।ভার্সিটির বাহিরে এসে কোথাও অর্ণবকে পেলোনা।মিলিকে সাথে করে সোজা স্যারের কাছে নালিশ জানাতে গেলো।স্যার সবার আগে জিজ্ঞেস করলেন ঠিক কি কারণে অর্ণব এই কাজটা করলো।মৃদুল তখন স্যারের পাশে কাগজ গুছাচ্ছিল।সে বললো পুরো ঘটনাটা।
স্যার স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলেন সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করলে এমনটাই হবে।এ ব্যাপারে তিনি মাথা ঘামাতে চাননা।সিনিয়র ভাইয়াদের সম্মান না করে ব্যাগ ছুঁড়ে মারা কেমন কথা??’
.
মন খারাপ করে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই সামনে সেদিনের সেই ইন্টারে পড়া ছেলেটাকে আড্ডা দিতে দেখে ওর সামনে গেলো জুথি।জিজ্ঞেস করলো অর্ণবে দেখেছে কিনা।
ছেলেটা জুথিকে দেখেই চিনেছে।না চিনলে অর্ণবের ব্যাপারে কোনো তথ্যই সে কাউকে বলেনা।নিজের আপন বড় ভাইয়ার মতন দেখে অর্ণবকে সবসময়।সে বললো অর্ণব যেখানে থাকে সেখানেই গেছে।সিউরুিটি দিলোনা।
জুথি দেরি না করে সেদিকে ছুটলো।যে বাসায় অর্ণব ভাঁড়া থাকে সেটা একদম কাছেই।সেটার সামনে এসে অনেকক্ষণ সে ভাবলো যাবে নাকি যাবেনা।বাসা তিনতলায় বললো ঐ ছেলেটা।একা যাওয়া তো একদম ঠিক হবেনা তাই মিলিকে আসতে বলেছিল।সে ছবি তুলতে তুলতে আসতেছে ধীরে সুস্থে।শেষে বিরক্তি নিয়ে ওর হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে তিনতলায় উঠলো দুজন মিলে।কলিংবেলে দু তিনবার চাপার পরেও কেউ আসছেনা দেখে জুথি বারবার কলিংবেলে ক্লিক করছে।শেষে ওপাশ থেকে বিরক্ত স্বরে অর্ণব জবাব দিলো,’আসছি রে ভাই আসছি!’

দরজা খুলে দুটো মেয়েকে দেখে হাত দিয়ে গা ঢেকে বললো,’এটা কোন ধরনের ব্যবহার?ছেলেদের বাসায় আপনারা দুজন এসেছেন কেন?তাও এসময়ে?’

জুথি অর্ণবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চেয়ে চেয়ে দেখছে।মিলি হাসতে হাসতে মুখ লুকিয়ে কটা সিঁড়ি নেমেও গেছে।জুথি চোখ বড় করে বললো,’আপনার গোসলের গুষ্টি,!!!আমার ব্যাগ ফেরত দেন বলছি নাহলে খুব খারাপ হবে’

অর্ণব ভেতরের রুমে চলে গিয়ে পুরনো পাঞ্জাবিটা আবার পরে ব্যাগ নিয়ে ফেরত এসে বললো,’এই আপনার ব্যাগ।তবে আমি দিচ্ছিনা।আগে আমার সব পোস্টের থেকে হাহা রিয়েক্ট সরান তারপর’

জুথি ফোন বের করে হাহা রিয়েক্ট একটা একটা করে উঠালো।সঙ্গে সঙ্গে অর্ণব ওর আইডিতে ব্লক দিয়ে তারপর ওর হাতে ব্যাগটা দিলো।জুথি বিড়বিড় করে কিসব বলতে বলতে মিলির সঙ্গে চলে গেছে।অর্ণব দরজা লাগিয়ে নিজের দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখলো নিচে তোয়ালে পেঁচানো উপরে পাঞ্জাবি।কোন ধরনের স্টাইলে দুটো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিল তা ভেবে লজ্জা পেলো।এর আগে তাদের বাসায় কোনো মেয়ে আসেনি।ইনফ্যাক্ট তাদের নিজের রান্নাও করে একজন পুরুষ লোক।তাই রুমে এরকমই থাকা হয়।তাছাড়া এখন সে গোসল করছিল।গোসলের টাইম’

——
মিলি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।জুথি নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে পেছনে তাকালো দালানটার দিকে।অর্ণবের প্রতি রাগ অনেক বেড়ে গেছে।কি করে এই রাগ যাবে তাই ভেবে মাটি থেকে ইটের একটা কণা তুলে অর্ণবদের বাসার বারান্দার দিকে ছুঁড়ে মারলো।প্রথমবার তিন তলায় যায়নি।কিন্তু দ্বিতীয়বার গেছে।সেখানে ছিল তপন।তার গায়ে গিয়ে পড়েছে।জুথি জিভে কামড়ে দিয়ে এক দৌড় দিলো।তপন হাত ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’কেরে??কার পাকা ধানে মই দিছিলাম?’

অর্ণব মাথা মুছতে মুছতে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,’এটা ঐ ক্ষতির কাজ।আমার জানা আছে এমন দুষ্টামি ও ছাড়া আর কেউ করবেনা’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here