#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৫,৭৬
আফনান লারা
৭৫
আরও একবার বোকা বনে যাবার কারণে অর্ণবের মুখ দিয়ে আর টু শব্দটাও বের হয়নি।হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরে এসেছে তারা।বাসায় ঢোকার সময় মৃদুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওকে ডাকছিল আসার জন্য।তাই কুসুমকে যেতে বলে সে গেলো মৃদুলের কাছে।বিছানায় এসে বসতেই জাহান দিয়ে গেলো মিল্কশেক।এসব দেখে অর্ণব জানতে চাইলো এটাতে কালোজিরা,তুলসি মেশানো আছে কিনা।
‘আরে ভাই এটা আমি বানাতে বলেছি,বাবা জানেনা।জানলে হয়ত ওসব মিক্স করে দিতো।ঠাণ্ডা মাথায় মিল্কশেকটা সাবাড় কর,একেবারে নিশ্চিন্তে’
‘ তা কি কারণে ডাক দিলি?’
‘আগে মেসে রাত জেগে আমরা আড্ডা দিতাম আর এখন কি জন্য ডাকলাম তার কৈফিয়ত চাচ্ছিস?’
‘বাদ দে এবার ভাই।ভুল হয়েছে আমার।’
‘হুম।অনেক বড় ভুল।আচ্ছা শুন,তোর থেকে পরামর্শ চাইতে ডেকে আনলাম।সেটা হলো,আমি যদি জুথিকে নিজের করে পেতে চাই,মানে তাকে প্রপোজটা করে ফেলি তোর কি মত?সে কি ফিরিয়ে দেবে?’
অর্ণব বালিশ বুকে ধরে নড়েচড়ে বসে বললো,’দেখ!জুথি আমার উপর প্রচণ্ড রেগে আছে।তোকে ভালবাসে কিনা জানিনা।তবে আমার উপর তার যে রাগ জমে আছে তার কারণেই সে তোকে মেনে নিতে পারছেনা।কারণ তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।এটাই যত দোষের
‘তাহলে এখন কি করবো?আমি যদি জুথিকে নিজের করতে না পারি তবে আমার বাবাকে তো চেনোস।ঠিক তোর বাবার মতন।ধরে কম বয়সী বোকা একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে’
অর্ণব গালে হাত রেখে বললো,’ঐ ভাল।তারা সহজসরল হওয়ায় একটা সময়ে বেশ ভাল লাগে সবকিছু।তখন ভয় জাগে এইই সুখের দিন শেষ না হয়ে যায়।সারাক্ষণ মাথায় এই চিন্তা লেগে থাকবে’
‘আমি বুঝি আসলে।কার লাইফে কে আছে এটা তো আগে থেকেই ঠিক করা।তোর ভাগ্যে কুসুম থাকার কথা ছিল।আর আমার ভাগ্যে অনামিকা ছিলনা।ছিল ওরই মতন অন্য একজন।তবে সে জুথি কিনা জানিনা এখনও।
কিন্তু আমি তারে চাই।মন থেকে চাই।তাকে খুব ভালবেসে ফেলেছি
পাগলামো করি বলে হয়ত সে ইগনর করছে অনেক।কি করবো!তাকে দেখলো পাগলামো বেড়ে যায়।দমিয়ে রাখতে পারিনা।দেখছিস তো!তোর সামনে আমি নরমাল।অথচ ও সামনে থাকলে পাগলামোর পরিমাণ বেড়ে যায়।তার তো তোর মত নম্র ভদ্র ছেলে পছন্দ।আমি তো সেটা না।আমি ঠিক তার উল্টো। হাসিখুশি থাকি সর্বদা।ভদ্রতা আছে তবে কেবল গুরুজনদের সামনে।’
‘তুই যেমন তোকে তেমন করে একজন পছন্দ করবে।তবে সেটা যদি জুথি হয় তবে আমি খুশি হবো।কারণ সে খুব ভাল একটা মেয়ে।তোর লাইফটাকে আগেরমতন সুন্দর করে তুলবে ‘
‘তুই খুশি তো?’
‘অবশ্যই!তোর কি মনে হয়?ঘরে বউ রেখে অতীতের মেয়েটাকে নিয়ে মনে ফিলিংস ধরে রেখেছি?’
‘তবে বল কুসুমের প্রতি ফিলিংসটা কিরকম আজকাল?দেখি তো সব।কত আদর তোর ওর প্রতি।বাপরে বাপ!”
অর্ণব মুচকি হেসে মিল্কশেকটা মুখে দিয়ে সব আবার ফেলে দিলো।মৃদুল মাথা বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
‘তোর বাপে,দ্যা গ্রেট সুলতান শাহ!মিল্কশেকে চুপিসারে কালোজিরা বাটা ঢুকিয়ে দিছে।আর কত অত্যাচার করবি?’
‘জাহানকে একশোবার করে বলে দিয়েছিলাম রান্নাঘরে যেন বাবাকে ঢুকতে না দেয়।তবে কালোজিরা আসলো কই থেকে?এই জাহান!!জাহানননন??’
‘জ্বী ভাই’
‘বাবা এসেছিল রান্নাঘরে?’
‘নানির কসম আমি রান্নাঘরে তারে আসতে দেইনি।আপনার কথা হারে হারে পালন করছি’
‘তবে কালোজিরা বাটা আসলো কই থেকে?আমি তো ভাবলাম চকলেট গুড়া এগুলো তাই কালো দেখায়’
‘আমি গ্লাস টেবিলে রেখে বাহিরে গেছি চেয়ার আনতে।আপনার আব্বা চেয়ার আনতে বলেছিলেন তাই।তখন কিছু ঘটলো না তো?’
‘ওটাই তো ভুল করেছো।শেয়ালের কাছে মুরগী বন্দক দিয়ে গেছো’
—–
কুসুমের হাতে একটা হালকা রঙের,একেবারে হালকা রঙের হলুদ শাড়ী একটা মা দিয়ে বললেন,’একটু গোসল করে এটা পরে আয়।চেহারার এমন হাল করে জামাইর সামনে থাকিস তুই?এমন করলে কখনও জামাই ভালবাসবে?’
‘উনি তো এমনিতেই কত যত্ন করেন’
‘যত্ন একদিকে আর ভালবাসা একদিকে।চুপ করে যেটা বললাম কর।যাঃ’
—
মৃদুলের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাসায় ফিরে আসলো সে।রুমে গিয়ে শুনতে পেলো কুসুমের ডাক।বাথরুমে বসে হাত বের করে মাকে ডাকছে মগ দেওয়ার জন্য।
হাতে সাবানের ফ্যানা সব।
অর্ণব একটা মগ এনে ওর হাতে দিলো।সাথে সাথে ও মাথা বের করলো মাকে মুচকি হাসি দেখিয়ে ধন্যবাদ জানাবে বলে।এ সময়ে অর্ণবকে ওখানে দেখে হাত থেকে মগটাই ফেলে দিয়েছে সে।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ফেললো দেরি না করে।
অর্ণব মগটা তুলে বললো,’মগ লাগবেনা?’
‘আপনি নিচে রেখে যান’
অর্ণব ফ্লোরে মগটা রেখে বারান্দার দিকে চলে গেছে।মিনিট বিশেক পর ভেজা পা ফ্লোরে রেখেছে কুসুম।কোঁকড়া চুল গুলো দলা পেকে আছে।গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল সে।দরজার ওপারে যাওয়ার আগে এক ধাক্কা খেলো হঠাৎ,তাও অর্ণবের সঙ্গে।সে ভেবেছিল ও হয়ত বারান্দায়।কিন্তু অর্ণব গিয়েছিল পানি খেতে ডাইনিংয়ের কাছে।
কুসুম চায়নি নতুন শাড়ীতে এত জলদি অর্ণব ওকে দেখুক।নতুন একটা লজ্জা তাকে হানা করেছিল এতক্ষণ।ধাক্কা খেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখন।
অর্ণব ওকে ভাল করে দেখছে।দেখা শেষ করে বললো,’শাড়ী পরা তো হয়নি’
‘মায়ের কাছেই যাচ্ছিলাম,ঠিক করবো বলে’
‘তোমার মা নামাজ পড়তেছেন মনে হয়।দাও আমি ঠিক করে দিই’
কুসুম না বলে ছুটে চলে গেল কলির কাছে।দ্বিতীয়বার আর পেছনে তাকায়নি।
অনেকক্ষণ কেটে যাবার পরেও কুসুম ঘুমাতে আসছেনা বলে অর্ণব রুম থেকে বের হলো ওর খোঁজ করতে।জবা ফুল গাছের সাইডের বারান্দায় বসে সে আলতা লাগাচ্ছিল।এতক্ষণ কলিও সাহায্য করছিল কিন্তু তার ঘুমের নেশা ধরায় উঠে চলে গেছে।তাই এখন কুসুমই একা একা বসে আলতা লাগায়।
অর্ণব ওর পাশে এসে নিচে বসেছে।এরপর ওর হাত থেকে আলতা নিয়ে বললো,’অন্ধকারে যে আলতা লাগাচ্ছো, দেখতে পাও?’
‘অনেকবার লাগিয়েছি এমন অন্ধকারে।অভ্যাস আছে’
‘দাও বাকিটা আমি লাগিয়ে দেই’
কুসুম পা সরিয়ে ফেলে আলতাটাও কেড়ে নিয়ে বললো,’নাহ।বাকিটুকু আমি পারবো।আপনি ঘুমান গিয়ে’
‘রাতে কার জন্য এত সাজা হচ্ছে?বর তো আমি’
অর্ণবের কথায় কুসুমের অনেক লজ্জা লাগলো।এত লজ্জা যে সে উঠে চলে গেছে।
অনেক অনেক আগে একবার সে অর্ণবকে বলেছিল জুথি তার কি বা হতে পারে।বউ তো সে নিজে।এর জের ধরে আজ পর্যন্ত অর্ণব ওকে খোঁচায়’
বিছানায় উঠে পা বাহিরে রেখে কুসুম লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে।আলতা শুকালে পা টেনে নেবে।
হঠাৎ পায়ে সুড়সুড়ি লাগায় লাফিয়ে বসে দেখলো অর্ণব হাঁটু গেড়ে বসে আলতা লাগিয়ে দিচ্ছে বাকিটুকু।
কুসুম পা সরাতে যেতেই ও হাত দিয়ে ধরে আটকে বললো,’ ‘আহা নড়ছো কেন!কাজটা ভালভাবে করতে দাও আমায়।’
অর্ণব যতক্ষণ ধরে আলতা লাগাচ্ছিল কুসুম ততক্ষণ কি সব ভাবছিল।পর কাজটা যখন শেষ হবার পথে ঠিক সেসময়ে কুসুম বললো,’আমার অসুখ হয়েছে বলে আমার প্রতি আপনার এত টান বুঝি?’
‘কিসের টানের কথা বলছো?এগুলো তো দায়িত্ব ‘
‘ওহহ!এর বেশি না?’
‘যদি বেশি বলি তবে তুমি আবার বলবে অসুখ তো তাই।মাথা থেকে যেদিন ঝেড়ে ফেলবে এই কথাটা সেদিন আমি তোমায় বলবো আমি এসব কেন করি।তার আগে না।এবার ঘুমাও’
কুসুম হেলান দিয়ে বসলো।মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তাকে কেমন লাগছে।
অর্ণব বললো,’ভারী সুন্দর’
‘এর বেশি কিছুনা?’
‘এর চেয়ে বেশি আর কি হবে?ওহহহ।লীলাবালি?’
‘হুম।আপনার কাছ থেকে পাওয়া আমার কাছে সব চাইতে বড় প্রশংসা ‘
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৬
আফনান লারা
.
বাবার ঘর থেকে কোরআন শরীফ পাঠের সুমধুর ধ্বনি ভেসে চলেছে সম্পূর্ণ বাড়ি জুড়ে।নিচ তলা থেকে সুলতান শাহের ও কোরআন শরীফ পড়ার সুর ভেসে আসছিল।
মনটাকে শুদ্ধ করতে এই একটা সুরই যথেষ্ট। ফ্লোরে বসে ছিল অর্ণব।দুপাশ থেকে বিভিন্ন আয়াতের মিষ্টি সুর শুনছে চোখ বন্ধ করে।
বিছানায় ঘুমাচ্ছে কুসুম।
সেবার কথা হয়েছিল প্রতি ভোর বেলায় নামাজ শেষ করে বই পড়তে বসা হবে।অ,আ,১,২ শেখা হবে।
আর এখন তারে আমি ভোরবেলায় একটু শান্তিতে ঘুমোতে দেখি,সারাটারাত আমি তারে অসুস্থতার সাথে যুদ্ধ করতে দেখি।ভোরের দিকে এসে সে ঘুমায়।তার চোখ জিরোয়।কি করে তাকে বই পড়ার জন্য ডেকে তুলতাম?
ভাবতে ভাবতে উঠে এসে ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিলো সে।পায়ের আলাতাটা উজ্জ্বল হয়ে আছে ওর।হলুদ শাড়ীর সাথে লাল আলতা ভীষণ মানিয়েছে।
——
সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই রান্নাঘরে দুজন বেয়ানের রান্নার ঢল পড়ায় আওয়াজে হইহুল্লড় জমে গেলো।
কুসুম আর শুয়ে থাকতে পারলোনা।চট করে উঠে বসে গেছে।উঠে বসাতে কান থেকে একটা জবা ফুল খুলে হাতের কাছে গিয়ে পড়লো।এটা এখানে কে রেখে গেলো ভাবতেই দোটানায় পড়ে যেতে হয়েছে।ও ভেবেছিল হয় অর্ণব নয়ত কলি।অর্ণব হঠাৎ এমন কেন করবে তাই ভেবে সে ধরে নিল এটা বুঝি কলির কাজ।মুখ ধুয়ে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করার পর সে জানলো এটা কলির কাজ ও নয়।তবে কি সত্যি অর্ণব করেছে?
ফুলটাকে খোঁপা করে কুসুম তাতে বেঁধে রাখলো।
সকালের নাস্তায় আজ একটা দারুণ খাবার তৈরি করেছেন দুই বেয়াইন মিলে।আর তা হলো শাহী সিমুই।
ঘ্রাণে চারিদিক মৌ মৌ করায় বাগানে সুলতান শাহকে এই নিয়ে দশবার পায়চারি করতে দেখা গেছে।কুসুম বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরে ওনাকে দাওয়াত করলো সকালের নাস্তার জন্য।পরে মা এসে বললেন শুধু তাকে কেন।বাকিদের ও আসতে বলুক।
এবার বাকিরাও এসে হাজির।বাসায় আর জায়গা নেই।জায়গার অভাবে কুসুম আর কলি বারান্দায় বসে সিমুই খাচ্ছিল।
মম ও ওদের পাশে এসে বসেছে।
‘তোমার খোঁপার জবা ফুলটা এই গাছের বুঝি?’
‘হ্যাঁ’
‘জানো এই গাছটা আমার যখন ১৫বছর বয়স,জন্মদিনে বাবা এটা বাগানে লাগিয়েছিল।যদিও জবা আমার পছন্দের নাহ তবে দেখতে সুন্দর আর এই গাছটা লতা টাইপের বলে বাবা এনেছিল।দেখোইনা দোতলা বাড়ির সৌন্দর্য্য কেমন করে তুলে ধরেছে??তোমার বুঝি এই ফুল অনেক প্রিয়?’
‘হুমমম অনেক।আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক গুলো গাছ আছে,গোলাপি আর সাদা জবা’
—
‘আর কয়বার তাকাবি?যা তোর বউয়ের পাশে গিয়ে বোস।দূর থেকে আর কত দেখবি?তোরই তো বউ’
অর্ণব মাথা চুলকে সরে দাঁড়িয়েছে।মৃদুল খেয়াল করলো তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।ফোন নিয়ে দেখলো জুথির কল।একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মতন অবস্থা।এটা কি সত্যি জুথির কাজ?
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।তাও বিশ্বাস অবিশ্বাসের বালাই ছেড়ে রিসিভ করলো সে।জুথি জানতে চাইলো ও কেমন আছে।
‘ভাল।আচ্ছা তোমার কি শরীর খারাপ?তুমি তো জীবনেও আমায় ফোন করোনা।তবে আজ কেন?কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’
‘কিসের সমস্যা হবে?আমি আপনাকে কল করতে পারিনা?”
‘হাজার বার পারো।কিন্তু এমন তো করোনা।এই প্রথম করলে।তাই জানতে চাইলাম সব ঠিক আছে কিনা’
‘একদম ঠিক।মানুষের মন এতবার তো খারাপ হয়না তাই না?আমি বেশ ভাল আছি।’
‘ভাল আছো যখন তখন চলে এসো এখানে’
‘নাহ।এখন না।মন একেবারে ভাল হোক তারপর দেখা যাবে আর এটা সিঙ্গাপুর। ঢাকা বরিশাল না যে বললেই রওনা হয়ে যাব’
‘তবে কি মনে করে মৃদুলকে মনে নিলেন?কোনো বিশেষ কারণ?’
‘আজকে আমি বাংলা বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম।একটা কবিতার ব্যাখা বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।আপনি তো সিনিয়র ভাইয়া।বুঝিয়ে দেবেন?’
‘ধুর!ভাবলাম রোমান্টিক মুডে আছো। তোমার থেকে আসলে এসব আশা করাটাই বোকামি।কল কাটলাম।মাথা ঠাণ্ডা হলে আমি নিজেই ফোন দেবো’
মৃদুল কল কেটে গাল ফুলিয়ে চলে আসলো অর্ণবের কাছে।
অর্ণব ওর দিকে চেয়ে বললো,’ননির পুতুলের সাথে ভেজাল করে এসেছিস?তোর তো সাহস কম না’
অর্ণবের কথা শুনে মৃদুল ঢোক গিললো।ফোনটা পকেট থেকে আবার বের করে জুথিকে কলব্যাক করেছে।কিন্তু সে ধরেনি।কপালে হাত দিয়ে মৃদুল বললো,’ভুলে গেছি জুথি একটা ঘাঁড়ত্যাড়া মেয়ে।আসলে ওর সাথে কল কাটার মতন ব্যবহার এর আগে করিনি আমি।
জানিনা আর কোনোদিন কল ধরবে কিনা।এই প্রথমবার সে কল দিলো আর আমি কিনা কেটে দিলাম।ধুর!সবসময় সব মনে থাকে??’
‘আরে টেনশন নিস না।আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবে।তাড়াহুড়োর কিছু নেই।জুথি বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে’
তখনই জুথির কল দেখে মৃদুল লাফিয়ে উঠলো।রিসিভ করে চুপ করে আছে ভয়ে।
জুথি বললো,’সরি ভাইয়া,আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।কল দিয়েছিলেন?রাগ শেষ আপনার?’
মৃদুল ফোন সরিয়ে ফিসফিস করে অর্ণবকে বললো,’এরে রাগ করার কথা কার ছিল?আমার নাকি জুথির?’
‘জুথির’
‘তবে সে ক্যান বলতেছে রেগে আছি আমি,মানে মৃদুল’
‘এ্যাহ!কি বলিস!’
‘হ্যালো ভাইয়া?শুনতে পাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ।শুনছি।না না আমি একটুও রেগে নেই।তুমি বলো কি বলবে’
‘পড়াটা বুঝিয়ে দেবেন?ভিডিও কল দেবো?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ,পিজিক্স,কেমিস্ট্রি, বায়োলজি।কি পড়তে চাও বলো আজই পড়িয়ে দেবো’
‘আমি বাংলা ডিপার্টমেন্টের।বাংলা পড়ালেই চলবে’
—–
আজ অর্ণব তার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারটা দেখতে গেছে।কুসুমের এর চেয়ে খারাপ আর কোনোদিন লাগেনি।ও চলে গেছে এক ঘন্টাও হয়ত হয়নি।অথচ এরই মধ্যে কতবার যে কুসুম দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছে এই চিন্তায় যে অর্ণব কখন আসবে।
অর্ণবেরও ভাল লাগছেনা অফিসে এসে।এতদিন কাজে গ্যাপ দেওয়ায় এখন সে জোর করেও মন বসাতে পারছেনা কিছুতে।মন চায় কুসুমকে একবার দেখতে।কি করছে কে জানে।
—-
এতদিন কুসুম তার ফোনটাকে আলমারিতে তুলে রেখেছিল।দরকার নেই বলে এই কাজটা সে করেছে।
কিন্তু আজ এই ফোনের বড়ই দরকার হয়ে দাঁড়ানোয় সে ফোন আলমারি থেকে বের করে হাতে নিয়েছে।
কল করবে নাকি করবেনা তাই ভাবছিল।কলি লাফিয়ে এসে ওর পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,’বুবু তোমার ফোন দাও।গেমস খেলবো’
কুসুম ওর দিকে ফিরে বললো,’আচ্ছা তুই জানিস ছবি সমেত কল কি ভাবে করা যায়?’
‘ইন্টারনেট লাগে।তোমার ফোনে সেটা আছে?’
‘জানিনা তো’
‘তাহলে নাই।যে জানেই না তার ফোনে ইন্টারনেট আছে কিনা তার ফোনে এমবি থাকার কথানা।তা কি জন্য জানতে চাইলা?’
”না এমনি।’
‘দুলাভাইরে ফেন দিবে?’
‘না না’
‘চাচাজান দেখছিলাম দুলাভাইর বড় ভাইয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছে,তার ফোনে মনে হয় নেট আছে।তুমি তার ফোন দিয়ে দুলাভাইর সাথে কথা কইবা?’
‘আরে না থাক।কি ভাববেন উনি।আর তোর দুলাভাই তো জলদি চলে আসবেন।এত কিছুর দরকার নেই।তুই চল কাগজকলম নে।আমায় চিঠি লেখা শিখিয়ে দে।’
—-
কুসুমের ফোন বাজছে।এই নিয়ে পাঁচবার।সে গেছিল বাগানে।কলির ডাক শুনে ছুটে এসেছিল দোতলায়।হাঁপাতে হাঁপাতে কল রিসিভ করলো অবশেষে।
‘কই ছিলে তুমি?শরীর ভাল আছে?’
‘হ্যাঁ আমি ঠিক আছি’
‘তবে এত দেরি কেন?
‘বাগানে ছিলাম।দুপুরের খাবার খেতে আসবেন না?’
‘নাহ।আমার এখানে অনেক কাজ।তুমি খেয়ে নাও’
কুসুম মুখটা ফ্যাকাসে করে জিজ্ঞেস করলো তবে কখন আসবে।
‘সন্ধ্যা হতে পারে।’
‘ওহ।আমি ভাবলাম এখন আসবেন’
‘অনেক কাজ জমা হয়ে আছে।আমি না থাকায় কর্মচারী গুলা দোকানের অবস্থা খারাপ করে রেখেছে।সব সামলাচ্ছি।এক গ্লাস পানি খাবারও সময় পাইলাম না’
‘পানি খেয়ে নিন।’
‘তুমি বাসায় থাকো।বের হইওনা।বাগানেও যাওয়ার দটকার নেই।আমি বিকালে আবার কল দিব কেমন?’
—–
বিকাল শুরু হয় হয়ত ৩টা,৪টা থেকে।কুসুম সেই ৪টা থেকে অপেক্ষা করছিল অর্ণবের কল আসার।কোনো কল আসছেনা দেখে সে নিজেই নিল ফোন দেবে বলে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তার ফোনে একটা টাকাও নেই।
বাবার কাছে গিয়ে বলতে লজ্জা করছে বলে যেতেও পারছেনা।
উনার সাথে কথা বলা খুব দরকার, কিন্তু লজ্জার সাথে পেরে উঠতে না পেরে গালটা ফুলিয়ে বসে রইলো বিছানায়।
চলবে♥