#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৯
আফনান লারা
.
-‘বাবা শুনো!আমি এই বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে করতে পারবোনা।আমাকে প্লিজ রেহায় দাও।’
বাবা রুটি ছিঁড়ে মুখে দিয়ে অর্ণবের দিকে ফিরে বসলেন।ডাইনিংয়ে ছিলেন তিনি।গম্ভীর গলায় বললেন,”ওর তো ষোল চলে নাহয় দু এক বছর পর ওরে বিয়ে করবি তুই।তখন তো সে আর বাচ্চা থাকবেনা।নাকি আরও কোনো সমস্যা আছে?পড়াশুনার দোহাই দিবিনা।বউরে দিয়ে তুই তো চাকরি করাবিনা।বউ তোর সংসার সামলাবে।তার জন্য হিসাব নিকাশ,অ,আ ই ঈ, ১.২.৩.৪.৫.৬ এগুলা তো তুই এক ঘন্টা ধরলেই শিখিয়ে নিতে পারবি।মাশাল্লাহ দিলে কুসুম যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। ওকে তুই একদিন শিখালে পরেরদিন সে নিজ থেকে পারবে।তাহলে আর কিসের সমস্যা তোর?
রুপে তো আছেই।খাটো ও না।আর কি চাই?নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করিস।যদি করিস তবে তার নাম আমার সামনে নিবিনা।আমি তোকে বিয়ে করালে কুসুমের সাথেই করাবো তা নাহলে বউ নিয়ে বাসা ভাঁড়া নিয়ে থাকবি।আমার বাসায় আসবিনা’
বাবা অর্ধেক রুটে রেখেই চলে গেছেন।কুসুম দরজার কিণারায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।অর্ণব রেগে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।কুসুমের কি মনে পড়ে সেও ছুটলে ওর পিছু।
দুপাশে সুপারি বাগান।আর মাঝে মাটির পথ।অর্ণব দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছে।কুসুম ওর সাথে এত দ্রুত যেতে না পেরে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললো,’একটু থামুন’
অর্ণব থেমে পেছনে তাকালো।কুসুম ও দাঁড়িয়ে পড়েছে।অর্ণবকে চুপ থাকতে দেখে সে আস্তে করে এক পা দু পা ফেলে কাছে আসলো।অর্ণবের চোখ লাল হয়ে গেছে।পারছেনা কুসুমকে কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছে।
কুসুম ভয়ে ভয়ে সামনে এসে বললো,’আমি চাচার সঙ্গে কথা বলবো আজ।
আপনি চিন্তা করবেননা।এই বিয়ে আমি হতে দেবোনা কিছুতেই।’
-‘বাবা আমার কথা শোনেন না।আপনার কথা শুনবেন কোন দুঃখে?’
-‘কারণ উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতন দেখেন, যথেষ্ট স্নেহ করেন।আমার কথা নিশ্চয় রাখবেন।একটা চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই”
কথা শুনে কোনো জবাব না দিয়ে অর্ণব অন্যদিকে ফিরে চলে গেছে।কুসুম ছুটলো অর্ণবের বাবাকে খুঁজতে।তিনি মসজিদের পাশের পুকুরঘাটে বসে ছিলেন।কুসুম তাকে পেয়ে সিঁড়িতে গিয়ে বসলো তারদিকে ফিরে।তিনি ওকে দেখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,’কি আর বলবো তোমায় মা!আমার ছেলে বোঝেনা যে আমি তার ভাল চাই।সে তোমায় বিয়ে করলে কত সুখী হবে তা বিবেচনা করেই তো আমি তোমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।আর সে আমার কথা রাখলোনা।শুরু থেকে তার অমত দেখে আসছি।এরকম অমত দেখালে কি করে জোর করে বিয়ে দিই?
ভেবেছিলাম তিনটা বছর আমাদের ছেড়ে থেকে সে মন বদলাবে।আমাদের মায়া তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করবে।
তোমার বাবাকে কি জবাব দেবো তাই ভাবছি।তোমার এত ছোট বয়সে মন ভাঙ্গলো।আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো’
কুসুম একটা শুকনো পাতা ছিঁড়তে ছিঁড়তে পানির দিকে চেয়ে বললো,’বাবাকে যা বলার আমি বলবো।আপনি ওসব ভাববেননা।তাছাড়া এই বিয়েতে আমারও মত নেই।উনি আনাকে পছন্দ করেন না।জোর খাটিয়ে যদি বিয়েও করেন না তিনি সুখী হবেন আর না আমি।
তার চেয়ে বরং তিনি যেমন করে জীবন যাপন করতে চান উনাকে সেটাই করতে দিন।আমার ভাগ্য হয়ত তিনি নেই’
অর্ণবের বাবা হাত দিয়ে চোখ মুছে চলে গেলেন।বাসায় এসে দেখলেন অর্ণব তার ব্যাগ গুছাচ্ছে।তার ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার আর কটা দিন বাকি।তাকে চলে যেতে হবে।ঈদে আসতে পারে আবার না ও আসতে পারে।
বাবা কিছু না বলে তার রুমে চলে গেছেন।কুসুম দূরে থেকে অর্ণবের ব্যাগ গোছানো দেখছে।তার চোখে পানিতে টলমল করছে।তার জন্য একটা ছেলে তার বাবার সঙ্গে অভিমান করে এতবছর পর এসে আবার চলে যাচ্ছে।তার আর কি করা উচিত?কি করলে আর কারো মনে কোনো খুঁত থাকবেনা।
অর্ণব ব্যাগ নিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বাবার রুমের বাহিরে এসে বললো,’আমি যাই বাবা’
খালি হাতেই এসেছিল সে।বাসায় কিছু জামাকাপড় ছিল আজ সেগুলো ও নিয়ে নিলো।মা কাঁদছেন শুধু।ভাবছেন ও বুঝি আর ফিরবেনা।
অর্ণব চলে যাচ্ছে।কুসুম ছুটতে ছুটতে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি আজ চলে যাবো।হয়ত আর কখনও আপনাকে দেখবোনা। আপনিও দেখবেন না।এখন আমি একটা জিনিস চাইলে দিবেন?’
অর্ণব জিজ্ঞেস করলো কি চাই।কুসুম ওর হাতের ব্রেসলেটের দিলে আঙ্গুল তুলে বললো,’এটা আমায় দিবেন?’
-‘এটা দিয়ে আপনি কি করবেন?’
-“এমনি চাইলাম।আপনার বেশি প্রিয় হলে দিতে হবেনা’
অর্ণব হাত থেকে ব্রেসলেটটা খুলে কুসুমের হাতে দিয়ে বললো,’খাওয়া দাওয়া ঠিক ঠাক করবেন আর ভালো থাকবেন।পারলে আমায় মাফ করে দিবেন।আমি আপনার যোগ্য না’
কথাটা বলে চলে গেলো সে।কুসুম যতদূর চোখ গেলো অর্ণবের চলে যাওয়া দেখলো।যেন বুকের ভেতরটার একটা দড়ি ঐ মানুষটার বুকের সঙ্গে জোড়া লাগানো।সে যাচ্ছে আর বুকে দড়িটার টান লেগে ব্যাথা করছে।
-‘কষ্ট হয়।তবে মানুষটা নিষ্ঠুর।আমায় তিনি চান না।দড়িটা কেটে ফেললেই তো পারেন।কেন এত বেদনা দেয়’
কুসুম মাটিতে বসে কাঁদলো অনেকক্ষণ।উত্তরের বাতাসে কান্না থামিয়ে চোখ মোছার সময় ঘাসের উপর অর্ণবের ব্রেসলেটটা দেখতে পেয়ে ব্যস্ত হয়ে সেটাকে তুলে ওড়নার সাথে বেঁধে নিলো সে।আর কখনও এই মানুষটাকে নিয়ে সে ভাববেনা।মানুষটা তার নয়।শুধু শুধু আরেকজনের হক নিয়ে সে কেন স্বপ্ন দেখবে।এটা তো অন্যায়।
—–
ঢাকায় ফিরতে দুপুর হয়ে গেলো।সেই সকালে বেরিয়েছিল সে।ব্যাগ রেখে সোজা ক্লাসে চলে আসলো অর্ণব।বারোটার সময় তার ক্লাস শুরু।ভার্সিটিতে এসে ডিপার্টমেন্টে ঢুকার সময় জুথিকে দেখলো একটা ছেলের কান টেনে ধরে কিসব বলছে।বিষয়টা দেখার জন্য এগিয়ে গেলো সে।গিয়ে জানতে পারলো এই ছেলে নাকি জুথির চুল কেটে নিয়েছে তাবিজ করবে বলে, জুথি এটাই বললো।
কোনোরকমে জুথির থেকে ছেলেটাকে ছাড়িয়ে অর্ণব তাকে প্রশ্ন করলো কেন সে চুল কেটেছে।
-“ভাইয়া শুনো আমি চুল ইচ্ছে করে কাটিনি।চুইংগাম খাচ্ছিলাম সেটা বেঞ্চে লাগিয়ে আমি ওয়াশরুমে গেছিলাম এই মেয়েটা বেঞ্চের সাথে হেলান দিয়ে ফ্যান দেখছিল বোকার মতন তাকিয়ে।তো তখন ওর চুলে চুইংগাম পুরোটা লেগে যাওয়ায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম তা দেখে।ভাবলাম আমাকে কাঁচা চিবাবে।ওর যা রাগ।তাই কেঁচি দিয়ে ঐ টুকুন কেটে নিছি।ওরে তাবিজ করবো কোন দুঃখে?
যে মেজাজ!!ওরে কে বিয়ে করবে?’
অর্ণব জুথির দিকে তাকালো।জুথি চোখ বড় করে বললো,’চুইংগাম ছুটাতে পারোনা ভাল কথা।আমাকে বললেই হতো।
তাই বলে আমার চুল কাটবে তুমি?স্যারের কাছে নালিশ করবো একদম।”
-“সরি বইন।মাফ করে দাও।আর জীবনে চুইংগাম খাবোনা।এই কানে ধরলাম।’
-‘চুইংগাম খাবানা কেন?অবশ্যই খাবা তারপর নিজের চুলে লাগাই দিবা,আমি আসি চুল কাটি দিব।তখন বুঝবে কত ধানে কত ভুষি।কত চাল সেটা বুঝতে হবেনা।অনেক খোসাতে চাল থাকেনা’
অর্ণব কপাল চাপড়ে চলে গেছে তার ক্লাসে।জুথির ক্লাসমেটরা ইনবক্সে অর্ণবকে শুধু নক দিয়ে জ্বালাচ্ছে। একজন বললো অর্ণব কাল রাতে যে অফলাইন হয়েছিল এখনও নেটে আসেনি।জুথি ওদের সবার কথা শুনে আর বাসায় গেলোনা।ভার্সিটিতে থেকে গেলো।অর্ণব ক্লাস থেকে বের হতেই জুথিকে দেখলো সে দেয়ালিকা পড়ছে কোণায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় আওয়াজ করে।কোনো কথা না বলে সে চলে যেতে নিতেই জুথি ছুটে এসে বললো,’আরে দাঁড়ান একটু”
-“কি চাই?’
-‘আমাকে প্লিজ আনব্লক করুন না ভাইয়া’
-“তারপর হাহা রিয়েক্টের বন্যা বসিয়ে দিতেন?দরকার নাই।’
-‘আচ্ছা হাহা দেবোনা।কোনো রিয়েক্টই দিবনা।প্লিজ আনব্লক করবেন?’
-“আপনাকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা ‘
অর্ণব চলে গেলো।জুথি পিছু পিছু আসতে আসতে বললো,’যদি আনব্লক না করেন তবে ফেক আইডি খুলে আপনার আইডি যত সালে খুলছিলেন তত সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত পোস্ট দিছেন সবগুলেতে হাহা মেরে আসবো’
অর্ণব থেমে গেলো।মেজাজ এমনিতেও খারাপ তার উপর মেয়েটা এত জ্বালাচ্ছে।ফোন বের করে আনব্লক করে পেছনে তাকিয়ে বললো,”শান্তি?’
জুথি দাঁত কেলিয়ে মাথা নাড়ালো।অর্ণব কিছুদূর গিয়ে আবারও পেছনে ফিরে বললো,’আপনি না আমায় সহ্য করতে পারেননা?তাহলে আনব্লক কেন করালেন?’
-‘শুনলাম অন্য মেয়েরা আপনাকে মেসেজ দেয়।আপনি নেটে নাই।তারা টেনসন করছিল।আমি তাই চাইলাম আপনার আইডিতে জায়গা পেয়ে আমিও টেনসন করবো’
জুথির কথাগুলো অর্ণবের সুবিধার লাগলোনা।যে মেয়ে তাকে একটুও পছন্দ করেনা সে কিনা এমন মিষ্টি কথা বলছে?ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট নেওয়া যাবেনা।আবার কি না কি করে বসে।আইডি ভর্তি রিলেটিভে ভরা।তার উপর সেরা সিঙ্গেল সিনিয়র ভাইয়া হিসেবে যে পদবী আমার আছে এই মেয়েটা এক সেকেন্ডে সেটা উল্টাই দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।এরে বিশ্বাস করা যাবেনা।নজরে নজরে রাখতে হবে”
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/