#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৫
আশেপাশে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্ধকার মহল মেতে উঠেছে পৈশাচিক আনন্দে। এই আনন্দের মূল কৃতিত্ব মূলত অরুণই পাচ্ছে। তার মতে আজ সে তাদের সবথেকে বড় শত্রুকে ধ্বংস করে এসেছে। তাই সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ওয়ারওল্ফ রাজ্যে। আশেপাশে জ্বলছে আগুনের শিখা। কালো রঙের ফুলের সুভাস আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ ভয়ানক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তাদের মহলের কোণা কোণা। অরুণ দাঁত বের করে হেসে অদ্ভুত গ্লাসে নিজের পানীয় পান করছে। তার বাবা সেই মূহুর্তে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠেন….
–“অরুণ! তোর কি মনে হয় না? মেয়ের মৃত্যুর খবর তাদের মা-বাবাকে দেওয়া উচিত?”
অরুণ গ্লাস রেখে নিজের হাসি প্রসারিত করে। আবারও গ্লাস নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলে….
–“কথাটা ভুল বলো নি। এতো বড় একটা সুখবর তাদের না জানালে হয়? চলো যাওয়া যাক।”
কিং অলক নিজের রাজকীয় চেয়ার থেকে উঠে পড়ে।
দরজা খোলাতে অধিক আলোয় চোখ মেলার চেষ্টা করে মধুরিমা ও মুহিত। যারা মাধুর্যের মা-বাবা। হ্যাঁ আজও বেঁচে আছে বন্দি অবস্থায়। ২২ বছর আগে তাদেরকে এখানে এনে বন্দি করা হয়। তারপর থেকে আজও ওরা এখানে। সবাই জানে মধুরিমা ও মুহিত নিজেরা নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মাধুর্যকে রেখে। কিন্তু কথাটা আদোও ঠিক নয়। সেদিন মাধুর্য বেবি অবজারভেশনে ছিল তাই ওকে মেরে ফেলতে এসেও খোঁজ পায়নি কিং অলক। না পেয়ে তার মা-বাবা কেই ধরে এনেছিল তারা। শত চেষ্টার পরেও বলেনি তাদের সন্তানের নাম বা তাদের ঠিকানা। তারপর থেকে তারা বন্দি অবস্থাতে নিজেদের মেয়ে জন্য অপেক্ষা করছে। এতোদিনে এই শয়তান ওয়ারওল্ফের কার্যক্রম সম্পর্কে ওরা অবগত হয়ে গিয়েছে।
মুহিত আর মধুরিমা বুঝে গিয়েছে অরুণ আর তার বাবা নিশ্চয় কোনো দরকারেই এসেছে। নয়ত বছরেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না। অরুণ এসে তাদের মুখে থাকা কাপড় আলগা করে নিচে নামিয়ে দেয়। তাদের কাঠের মতো শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। মধুরিমা বেশ ধীরে বলে…
–“কি চাই?”
অরুণ এবং তার বাবা উল্লাসের হাসি হাসে। অরুণ হাত দিয়ে কিছু একটা করে হাসিমাখা মুখে বলে ওঠে….
–“আজকে কিচ্ছু চাই না। আজ তো আমরা তোমাদের কিছু দেখাতে চাই। যা দেখলে তোমাদের পিলে চমকে যাবে।”
কথাটুকু শেষ করেই অরুণ হাত দিয়ে ঝটকা মেরে ওপরে ইশারা করতেই একটা দৃশ্য উপস্থিত হয় তাদের সামনে। দৃশ্যগুলোতে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে অরুণ তার আসল রুপে কবিতাকে আঘাত করছে। তাও খুবই জঘন্যভাবে। শেষমেশ কবিতার গলায় অরুণ তীক্ষ্ণ ধারালো তিনটে নখ দিয়ে গভীর আঘাত করে। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। সেই গলায় লাগা আঘাত থেকে ঘটে কবিতার মৃত্যু। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মুহিত আর মধুরিমা হতবাক হয়ে তাদের দিকে তাকায়। তারা ঠিক তখনো বুঝে উঠতে পারেনি অরুণ ঠিক কি বোঝাতে চাইছে। অরুণ একটু ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“মেরে ফেলেছি। তোমাদের একমাত্র মেয়েকে এই দুনিয়া থেকেই সরিয়ে ফেলেছি।”
মুহিত ও মধুরিমার বুক কেঁপে ওঠে। ছটফট করতে থাকে মুহিত। তবে কিছু একটা ভেবে শান্ত থাকে মধুরিমা। তারপর হুট করে পাগলের মতো হেসে ওঠায় সবাই চুপ হয়ে যায়।
–“বাবা, ইনি বোধহয় মেয়ে হারানোর শোকে অবশেষে পাগল হয়ে গেলেন। এদের বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? মেরে ফেললেই তো হয়।”
মধুরিমাকে লক্ষ্য করে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে ওঠে অরুণ। অরুণের কথা শুনে গর্জে ওঠে মধুরিমা।
–“ভুল করেছো তোমরা। অনেক বড় ভুল করেছো। জানি না কোন মায়ের কোল খালি করেছো। তবে আমার কোল এখনো খালি হয়নি। আমার মেয়েকে আমি অনুভব করতে পারছি। ও যেখানে সুস্থ আছে।”
মধুরিমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় কিং অলক। অরুণ মধুরিমাকে আঘাত করতে গেলে থামিয়ে দেয় সে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে মধুরিমাকে। কি বলতে চায় মধুরিমা?
–“কি অবাক হলে? যেই মেয়েকে তোমরা মেরেছো সে আমার মেয়ে নয়। ও আমার নাড়ি ছেঁড়া সন্তান। ওকে চিনতে একটুও ভুল হবে না আমার। দৃশ্যতে যা দেখলাম তাতে আমি নিশ্চিত আমাদের মেয়ে নয়। আমাদের মেয়ে তো ছিল রূপনগরীর রাজকন্যার মতো দেখতে। তাকে যে একবার দেখবে সে বিমোহিত হতে বাধ্য। ওর হাসি সবাইকে সম্মোহিত করার ক্ষমতা রাখত। যেই মেয়েটিকে হত্যা করেছো সেই মেয়ের মাঝে আমার মেয়ের কোনো গুন পাইনি।”
মুহিত ভাবুক হয়ে পড়ে। সত্যিই তো! মাধুর্যকে যতটা মাধুকরী সৌন্দর্য দিয়ে তৈরি করা ততটা ছিল না ওই দৃশ্যে থাকা মেয়েটার মধ্যে। না চাইতেও আঁতকে ওঠে কিং অলক। তবে কি ওরাই ভুল করে ফেলল? নিজের ছেলেকে ইশারায় ডেকে ফিসফিসিয়ে বলে……
–“ওরা কি বলছে? তুই কি ভুল কাউকে মেরে এসেছিস?”
অরুণ বিদ্রুপের সঙ্গে বলে….
–“হতেই পারে না বাবা। আমি প্রমাণ পেয়েছি ওই কবিতাই ভাবনা। আর আমি ১০০ ভাগ সিউর হয়েছি যখন খবর পেয়েছি ওর সঙ্গে অনুভবের বিয়ে হচ্ছে। অনুভব আর যাই হোক অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে না। তাই তো ভাবলাম যে বিয়ের দিনেই মৃত্যু দেব ভাবনার। তাই তো করলাম।”
কিং অলক কোনটা বিশ্বাস করবেন বুঝতে পারছে না। ভাবনার ভীড়ে হারিয়ে যায় সে। অরুণ ধীর গলায় বলে ওঠে…..
–“বাবা, এদের বাঁচিয়ে রেখে কোনো লাভ নেই। মেরে ফেলি?”
–“না! আমিও দেখতে চাই ওদের ভাবনা কতটুকু সত্যি হয়।”
–“বাবা তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো?”
চোখ গরম করতেই মাথা নিচু করে চুপ হয়ে যায় অরুণ। মুহিত তাদের দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসে।
–“তোমাদের সাথে এতো বছর থেকে আমরা জেনে গেছি, ৪৯ বছর আগে অধিক শক্তিশালী ভাবনাকে প্রিন্স অনুভব মারেনি। মেরেছিলে তোমরা। যার কারণে ভাবনার জন্ম হয় আবার তবে একটা মানুষের গর্ভে। আমাদের মেয়ে হয়ত অনুভবকে ভুল বুঝেছে। কিন্তু সেই ভুল বোঝাবুঝি বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে দেব না আমরা।”
কিং অলক ধমকে ওঠেন।
–“চুপ। একদম চুপ। তোমাদের যখন ইচ্ছে তখন মারতে পারি আমরা। কিন্তু আমাদের স্বার্থের কারণে মারতে পারছি না।”
–“পারবেও না।”
রাগে কটমট করে অলক অরুণকে ইশারা করে তাদের মুখ বেঁধে দিতে। অরুণও তাদের মুখ বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। বেঁধে দেয় তাদের মুখ। তবে কিং অলকের চিন্তার রেশ কাটে না। কাকে বলতে কাকে মারল অরুণ???
রেজিষ্ট্রেশন আগেই হয়ে গিয়েছে। আইনত অনুভব আর মাধুর্য স্বামী-স্ত্রী বলে অ্যাখ্যা পেয়েছে। ব্যাপারটা মাধুর্যের কাছে আনন্দে হলেও তার মুখে বিন্দুমাত্র হাসি নেই। তার মনে একটাই কথা ঘুরছে। সে প্রচন্ড অলক্ষ্মী। তার কাছে যে আসবে তার শুধু ক্ষতিই হবে। প্রথমে তার মা-বাবার কিছু একটা হয়েছে আর এখন তার বেস্টফ্রেন্ড কবিতার। এখন তার অনুভবকে নিয়েও ভয় লাগতে শুরু করেছে। চোখ থেকে আর পানিও পড়ছে না। হয়ত পানি শুকিয়ে গেছে। কত আর পড়বে? কাজি তাকে কবুল বলতে বললে কিছুক্ষণ বসে থাকে মাধুর্য। এক মূহুর্তে কিঞ্চিৎ ভাবনা জাগে মনে। সে ভ্যাম্পায়ার। অনুভবকে বিয়ে করা কি ঠিক হচ্ছে? সামিহা তার হাত নাড়া দিতেই এক দমে তিন বার কবুল বলে ফেলে মাধুর্য। অনুভব প্রথমেই কবুল বলে ফেলেছে। সকলে মিলে বলে ওঠে…
–“আলহামদুলিল্লাহ।”
বিয়ের সম্পূর্ণ হওয়ার পর চলতে থাকল খাওয়া দাওয়ার কার্যক্রম। যদিও খাওয়ার অবস্থাকে কেউই এখন নেই। কবিতার এমন নৃশংস মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। কেউ যেন মানতেই পারছে না। কবিতার মা এক কোণায় গিয়ে কেঁদে চলেছেন। উনার আর এই পৃথিবীতে কেউ রইল না।
কিছুক্ষণ অনুভবের পাশে বসে থেকে উঠতে নেয়। অনুভব ওর হাতটা কোমল ভাবে ধরে। কিছুটা চমকে পেছনে তাকায় মাধুর্য।
–“কিছু বলবেন?”
–“কোথায় যাচ্ছো? মনে রেখো, কিছু করবার আগে আমাকে অবশ্যই জানাবে। এখন শুধু তুমি নেই। তোমার সঙ্গে জুড়েছে আমার নামটাও।”
মাধুর্য স্মিত হাসে। তারপর হাসিটা মিলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে অনুভব তার হাত দিয়ে মাধুর্যের মুখে হাসি টেনে দেয়।
–“আজ থেকে তোমাকে হাসিখুশি রাখার দায়িত্ব আমার মিস. মাধুর্য চৌধুরী… উপপস…সরি! মিসেস. মাধুর্য সিনহা?”
মাধুর্য বুঝতে পারে, তাকে হাসাতে চাইছে অনুভব। মানুষটি বড়ই মন কাড়া স্বভাবের। অনুভবকে খুশি করতে একটু খানি হাসে মাধুর্য। নরম সুরে বলে….
–“আন্টির কাছে যাচ্ছি। উনি খুব ভেঙে পড়েছেন।”
মাধুর্যকে থামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয় সামিহা। তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে….
–“তোকে যেতে হবে না। আমি যাচ্ছি। তুই বরণ কিছু খেয়ে নে। দুপুরের পর থেকে কিছু পেটে পড়েনি তোর।”
–“আমি কিছু খাব না। কি করে খাবো? খাওয়ার মতো অবস্থা আমার নেই আপু।”
সামিহা কিছু বলতে চাইতেই হাত দিয়ে ইশারা করে তাকে থামিয়ে দেয় অনুভব। সামিহাকে যেতে বলে সে। ব্যাপারটা সে সামলে নিতে পারবে। সামিহা দ্রুত নেমে যায় সেখান থেকে। মাথার পাগড়ি খোলে অনুভব। মাথা যেন ঘেমে যাচ্ছিল তার। আর বড় বড় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কপালে এক সামনের চুলগুলো। কপালের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে যায় তার। পাগড়ি খুলে পাশে রাখতেই খাবার নিয়ে আসে এলিনা। অনুভবের হাতে খাবার তুলে দিয়ে চলে যায়। খাবার বলতে সেখানে রয়েছে ফলমূল। মাধুর্য এই অবস্থায় বেশি কিছু খেতে পারবে না। কাটা চামুচ দিয়ে একটা আপেলের টুকরো নিয়ে অনুভব হালকা কেশে ডেকে ওঠে….
–“মাধুর্য!”
পাশে তাকায় মাধুর্য। খাবারের প্লেট দেখে চোখমুখ জড়িয়ে ফেলে সে। বিব্রতবোধ করে বলে….
–“আমি খাব না। কেন শুধু শুধু জোর করছেন?”
–“কেন খাবে না? না খেলেই কি কবিতা ফিরে আসবে তোমার কাছে? বরণ ওর জন্য তুমি যদি কষ্ট পাও তাহলে ওরই খারাপ লাগবে। গট ইট?”
বিষন্ন মুখে সামনে তাকায় মাধুর্য। সামনে বেশ লোকজনের আনাগোনা। এর মাঝেও খাওয়া সম্ভব? আর গলার নিচে খাবার নামবেই বা কি করে?
অনুভব ধমকে বলে…..
–“খাবার মুখে নাও মাধুর্য।”
শুকনো ঢোক গিলে মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে মাধুর্য। ঢোক গিলে ছোট করে খাবার মুখে নিতেই লাইট পড়ে তাদের ওপর। সামনে হাত রেখে তাকায় অনুভব। তার বন্ধু সুযোগ বুঝে জোহান ছবি তুলছে। অনুভবের দৃষ্টি দেখে দাঁত কেলিয়ে তাকায় জোহান। মাথা চুলকে বলে….
–“ছবি। মানে ছবি তুলছিলাম। তোদের বিয়ে আর ছবি না তুললে হয়?”
–“সবসময় ফাইজলামি করবি না। কানের নিচে থাপ্পড় মারব আমি উঠলে।”
ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে অনুভব। জোহান জ্বিহ্বা কেটে এক চোখ বন্ধ করে বলে….
–“ওকে ওকে। সরি।”
সুযোগ বুঝে কেটে পড়ে ক্যামেরা হাতে নিয়ে জোহান।
বাঁকা চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে খেতে থাকে। ইতস্তত বোধ করে বলে…..
–“আপনি খেয়েছেন?”
–“না এখনো খাইনি।”
–“আপনিও খান। নয়ত আমার একা খেতে কেমন জানি লাগছে।”
মুখ ফসকে বলে ফেলে মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে নিজেই থম মেরে যায়। অনুভব মুচকি হাসে।
–“বিয়ে হতে না হতেই স্বামীভক্ত হয়ে পড়েছো। নট ব্যাড।”
মাধুর্য প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। একমনে তাকিয়ে থাকে। তার মনের একপাশে বইছে শান্তির হাওয়া। অন্যপাশে বইছে নিজের এক প্রিয়জনকে হারাবার কষ্ট।
কবিতার মাকে সামলে হিমশিম খেয়ে মাধুর্যের খাওয়া হয়েছে কি না দেখার জন্য ছুটছে সামিহা। কিছুক্ষণে মাঝেই হবে বিদায়। তাই হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল সে। তখনই ঘটে আরেক বিপত্তি। একটা ছেলের সঙ্গে কাঁধে ধাক্কা লেগে পড়তে পড়তে সামলে নেয় নিজে সামিহা। সব মিলিয়ে একপ্রকার রেগেমেগে তাকায় সামিহা। সামনে কালো ফ্রেমের চশমা আর সাদা শেরওয়ানি পড়া এক ছেলে। তার হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে যা তা অবস্থা। সে ঝুঁকে ক্যামেরা তুলছে। অতশত খেয়াল না করে সামিহা তেতিয়ে বলে ওঠে….
–“মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় না? কোনো ম্যানার্স নাই? ভীড়ের মাঝে ঠিকঠাক চলাফেরা করতে পারেন না?”
ক্যামেরা হাতে নিয়ে রেগেমেগে তাকায় জোহান। সামিহার থেকে দ্বিগুন জোরে বলে ওঠে…..
–“ও হ্যালো মিস…! আমার কোনো শখ নেই যে আপনার মতো একজন শুটকি মাছকে ধাক্কা দিতে। কোথায় পড়ে টরে যাবেন। অতঃপর নিজের হাত-পা ভেঙে বসে থাকবেন। নিজে তো চোখ মাথায় রেখে হাঁটেন। ধাক্কা দেওয়ার আসল মজা তো সুন্দরী মেয়েরদের।”
মুখটা হা হয়ে যায় সামিহার। কত বড় অসভ্য ছেলের পাল্লায় পড়েছে সে।
–“দেখি সরুন আমার পথ ছাড়ুন।”
–“এইযে মিস! এভাবে পথ ছাড়ব মানে? আমার এতো দামি ক্যামেরা ভেঙে দিয়ে এখন বলছেন পথ ছাড়ুন? এতোই সোজা নাকি? ক্যামেরার টাকা দিন পথ ছাড়ছি।”
সামিহা রাগে কটমট করে বলে….
–“মেয়েদের থেকে টাকা চান লজ্জা করে না?”
–“আমি কি আপনাকে বউ বানাতে চেয়েছি যে লজ্জা করবে? কোন বইয়ে লিখা আছে মেয়েদের থেকে টাকা চাইতে নেই?”
সামিহা পড়েছে মহা বিপদে। এই মানুষটার থেকে পিছু ছাড়াতেই হবে। সে একটু হেসে বলে….
–“হ্যাঁ মা আসছি।” (পেছন দিকে তাকিয়ে)
জোহানও সাথে সাথে পেছনে তাকায়। সেই সুযোগে ঝটপট হেঁটে চলে আসে সামিহা। জোহান সামনে ফিরে তাকে দেখতে না পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
–“কি মেয়ের বাবা! ভালো বলে ছেড়ে দিলাম। নয়ত দাঁত বের করে রক্তশূন্য করে ছেড়ে দিতাম।”
চলবে……🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এই গল্প কাল্পনিক। কেউ বাস্তবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না।