লীলাবালি🌺 #পর্ব_১৫

0
827

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১৫
আফনান লারা
.
অর্ণব রাগ করে কল কেটে দিয়েছিল।

-‘আপনি থামবেন সাগরের বাবা??আমি কাঁদছি তো কি হয়েছে?বিয়েটা অর্ণব করবে।তার মত আমাদের নিতেই হতো।
কুসুমকে আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে কিন্তু যে সারাটা জীবন কাটাবে ওর সঙ্গে তার তো পছন্দ হয়নি।তাহলে বিয়েটা আমরা ওর অমতের ভিত্তিতে দিয়ে দুজনকেই অসুখী করে রাখতাম?
যা হয়েছে ভাল হয়েছে।জোর করে বিয়ে দিলে ওরা কেউই ভাল থাকতোনা।
অর্ণব যারে পছন্দ করে বিয়ে করুক না কেন আমি হাসিখুশি মেনে নেবো।আমার কোনো আপত্তি নাই।আপনি আর এই কথা ধরে বসে থাকবেননা।ছেলের সুখই আমাদের সুখ।ওর সামনে পরীক্ষা। ওকে এসব বললে রাগ করে কি না কি করে বসবে।পড়ায় মন বসাতে পারবেনা।তাছাড়া সামনে যে পরীক্ষাটা ও দিবে সেটা তো ফাইনাল পরীক্ষা। আপনার উচিত বকাবকি না করে ওকে বুঝানো।সুন্দর করে বুঝালে হয়ত বুঝবে।আর না বুঝলে কি করার।হয়ড কুসুমের ভাগ্যে আমাদের অর্ণব নেই।জোরাজুরিতে তো আর ভাগ্য বদল হয়না।’
—–
ভার্সিটিতে আসার পর থেকো অর্ণব কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছিলনা।বাবার বলা কথাগুলো খুব খারাপ লেগেছে।
-‘আসলেই কি কুসুমকে বিয়ে করলে আমার ভাল হতো?
কিন্তু আমার মন মানছিলনা বলেই তো বিয়েটা করিনি।শুরু থেকেই ওকে আমার ভালো লাগতোনা।এমন নয় যে সে কুৎসিত,তার মন ভাল না,তার শরীর সুন্দরনা।সে পারফেক্ট কিন্তু আমি তাকে বিয়ে করতে চাইনা।’

ভাবতে ভাবতে দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ওয়ালের সাথে একটা বাড়ি খেয়ে গেলো সে।মাথায় হাত রেখে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই চুপ করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।জুথি নিরবতা ভেঙ্গে ফিক করে হেসে ফেললো।’হাহাহাহা’

অর্ণব কপাল কুঁচকে ক্লাসের ভেতরে ঢুকলো।জুথিকে তার পাশের দুটো মেয়ে বললো কেন সে হাসছে।এটা ঠিক হলোনা।
জুথি কোনো উত্তর দিলোনা।অর্ণব বই টেবিলে রেখে হাত দিয়ে চুলগুলোকে ধরে এক টান দিয়ে চেয়ারে বসলো।প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। চোখ বন্ধ করে বড় একটা দম ফেলে বললো,’কি পড়া ছিল যেন??রেডি করো সবাই।আমি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো’

জুথি মাথা লুকিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিল।অর্ণব বই খুলেই বললো,’জুথি দাঁড়াও।আমি কবিতার লাইন বলছি তুমি ব্যাখা করবে’

জুথি সোজা হয়ে দাঁড়ালো।অর্ণবের মুখে কবিতার লাইন শুনে ব্যাখা করতে পারলোনা।চোরের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো শুধু। অর্ণবের মন চাইলো কানে ধরিয়ে ওরে বিশবার উঠ বস করাতে।কিন্তু পারলোনা করিম স্যারের ভয়ে।মনে মনে নিজেকে আয়ত্তে এনে ঠাণ্ডা মাথায় বললো ওকে বসতে।জুথি ভেবেছিল আজ তাকে অর্ণব যত কঠিন শাস্তি আছে তা দেবে।কিন্তু আচমকা ওর এমন সুন্দর ব্যবহার একদমই আশা করেনি সে।
পুরো ক্লাসে একবারও অর্ণব তাকালোনা ওর দিকে।ক্লাস শেষ করে মেসে চলে এসেছে আবার।
জুথি অহেতুক পুরো ভার্সিটিতে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।ঐদিনের সপই ছেলেটা,আদিলের কাছ থেকে জানতে পারলো অর্ণব মেসে ফিরে গেছে।
-‘কি ব্যাপার!!উনার কি হয়েছে?আমার উপর রাগ নাকি অন্য কিছু?তখন যে হাসছিলাম একটু সে কারণে নারাজ নাকি?
থাক আমার কি!’
ভাবতে ভাবতে রিকশা একটা নিলো জুথি।অর্ধেক পথ যাবার পর কি মনে করে রিকশা ঘুরিয়ে অর্ণবের মেসের দিকে চললো।সেখানে রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো দালানটার সামনে।
অর্ণব বই নিয়ে বারান্দায় লম্বা হয়ে শুয়ে ছিল কার্পেট বিছিয়ে।বইতে মন দিতে না পেরে চোখ বুজে শুয়ে ছিল।রুমে মৃদুল ফোনে জোরে জোরে গান বাজাচ্ছে’নিঃস্ব করেছো আমায়!! গানটা’
মন চাইছে গ্রিল ভেঙ্গে ওটা দিয়ে ওর মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে আসতে।সবসময় চিল মুডে থাকে সে।ওর চিল মুড দেখে অর্ণবের নিজেরই মাঝে মাঝে হিংসা হয়।একটা মানুষের ভাল লাগবে,খারাপ লাগবে,কিছু লাগবেনা এই টাইপ নিয়েই তো একটা মানুষের মন হয়,আর মৃদুলকে দেখি খোদার বারো মাস চিল মুডে থাকে।জীবনে মন খারাপ করে থাকেনা।অবশ্য এর পেছনে বিরাট বড় একটা কারণ আছে।আর তা হলো অনামিকা নামের একটা মেয়ে ওকে চিট করেছিল।তার পর থেকে মৃদুল এমন হয়ে গেছে।ওর কাছে এখন সব ভাল্লাগে।
ইশ! আমাকে যদি কেউ চিট করতো তাহলে আমিও এমন চিল মুড নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম।কিন্তু আমি উল্টে একটা মেয়েকে চিট করেছি।সে চিল মুডে আছে কিনা জানিনা।কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমার ভালো লাগা ছুটি নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।মন খারাপের সঙ্গে সংসার করতে হচ্ছে।
হঠাৎ নিচ থেকে ইটের টুকরা একটা এসে কপালের মাঝখানটায় এসে পড়লো তাট।আচমকা ভয় পেয়ে মনে হলো কলিজা বুকের চামড়া ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছে।বুকে থুথু দিয়ে অর্ণব উঠে বসলো।কণাটা দেখে রেগেমেগে উঠে দাঁড়িয়ে আবারও নিচে কণাটাকে ফেরত মারতে গিয়ে দেখলো জুথি মাথায় হাত দিয়ে বলছে,’আমায় মারবেন না।আমি তো আপনাকে ডাকতে কণা মারলাম’

অর্ণব কণাটা ফেলে পেছনে তাকালো
মৃদুল গান শুনতে শুনতে মরার মতন ঘুমায় এখন।অর্ণব আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসলো।ওর কাছে এসে বললো,’কি চাই?আপনাকে বললাম না যখন তখন এসে পড়বেননা।আমার প্রব্লেম হয়।আর এটা কোন ধরনের ব্যবহার?কণা দিয়ে কি এবার আমার মাথা ফাটানোর প্রতিজ্ঞা করেছেন?’

-‘সরি।কি করবো বলুন?নিচ থেকে গলা ফাটিয়ে ডাককেও তো শুনেননা। তাই এই পন্থা অবলম্বন করতে হয়।যাই হোক যে কারণে এখানে আসা।আপনি আজ আপনাদের ক্লাস না করেই চলে আসলেন কেন?’

-“আমাদের কদিন পরে ফাইনাল পরীক্ষা। ক্লাস হবেনা’

-‘তো আমি যে দেখলাম তপন ভাইয়া ক্লাসে ঢুকছে?’

-‘তপন তো সেকেন্ড ইয়ারে।’

জুথি হাতের আঙুল খাঁমছে খাঁমছে আস্তে করে বললো,’আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?আমি যে তখন হাসলাম?’

-‘রাগ হয়েছিল।তবে আমার মন ভাল ছিলনা বলে আপনার এমন ব্যবহারে পাত্তা দেইনি।আপনার তো স্বভাবই এমন।শিক্ষার অভাবে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করবেনই তো।এটাই স্বাভাবিক ‘

জুথি রেগে গিয়ে বললো,’বাবা আমাকে সব শিক্ষা দিয়েছে।আমি ওগুলো শিখতে পারিনি এটা আমার দোষ।তাদের নিয়ে কিছু বলবেননা’

অর্ণব আঙুল তুলে বললো,’এটা বয়েজ মেস।গলা নামিয়ে কথা বলবেন।আর কখনও এখানে আসবেন না।মানুষ অন্য কিছু ভাববে।আপনি ভুলে যাবেননা আপনি একটা মেয়ে,আর আমি ছেলে।ছোট হয়ে এত সাহস দেখানো ভালোনা’

জুথি রেগে চলে যেতে যেতে বললো,’যাব না আপনার সাথে কুমিল্লায়। বাবাকে গিয়ে বলবেন আমি নিজে আপনার সঙ্গে যেতে চাইনা।আপনি খুব খারাপ!আপনার জীবনে বিয়ে হবেনা।এই জন্য মানুষের ভাল করতে নেই।মনের কথা কিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম আর উনি আমায় এক গাদা কথা শুনালেন।আর কখনও আপনার ক্লাস করবো না ‘

অর্ণব না শোনার ভান করে চলে গেছে ভেতরে।
—-
কুসুম যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল অর্ণবের বাবা মা দুজনে সেসময়ে ওকে দেখতে এসেছিলেন।ঘুমন্ত দেখে তাকে জাগাতে মানা করে তারা উঠোনে চেয়ারে এসে বসলেন।
কুসুমের বাবা অর্ণবের কথা জিজ্ঞেস করতেই অর্ণবের বাবা নিরাশ হয়ে বললেন,’কি আর বলবো!ওর কথা জিজ্ঞেস করে আমাদের আর লজ্জা দিবেননা।এত বুঝালাম কিন্তু সে বোঝার পাত্র না।’

-‘আপনারা জোরজবরদস্তি করবেন না দয়া করে।বিয়েতে তার মত না থাকলে এই বিয়েতে দু পরিবার খুশি হলেও তারা দুজন খুশি হতে পারবেনা।’

-‘শুনলাম আপনাদের এদিকে নাকি জঙলের অংশে দস্যুদের আস্তানা আছে?আমার কুসুম,আর কলি মাকে সাবধানে রাখিয়েন।আজকালকার যুগে যুবতী মেয়েদের নিয়ে যত চিন্তা।’

কুসুমের মা বাবা দুজনে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন।উনাদের এ বিষয়ে জানানো উচিত নাকি অনুচিত তাই ভেবে কথাটা গোপন রাখলেন তারা।চা নাস্তা করে তারা নদীর ধারে হাঁটতে বের হলেন।গল্প করতে করতে কিছু সময় কাটাবেন ভেবে।ততক্ষণে কুসুমের ঘুম ভাঙ্গলে দেখা করে একেবারে তারপর যাবেন।কুসুম সারারাত পায়ের ব্যাথায় ঘুমোতে পারেনি বলে এখন ঘুমাচ্ছে।অর্ণবের মা তার ফোন কুসুম যে বিছানায় শুয়ে ছিল সেখানে রেখে ওর মায়ের সঙ্গে পুকুর ঘাঁটে বসে গল্প করছিলেন।ফোন বাজার আওয়াজ হতেই কুসুমের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।উঠে বসে ফোনের দিকে চেয়ে দেখলো কল এসেছে।অর্ণবের কল ছিল।ইংরেজি Ornob লেখা ছিল বলো সে বুঝতে পারলোনা এটা কার কল।আন্দাজ করে অর্ণবের কল এসেছে ভেবে রিসিভ করে কানে ধরলো সে
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here