লীলাবালি🌺 #পর্ব_৫৭

0
655

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৭
আফনান লারা
.
‘বুঝলেন ভাই,শেয়ালের মাংসে এমন একটা উপাদান থাকে যেটা কিনা আপনার বাত ব্যাথাকে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দেবে।এই বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন আমার দাদাজান।তার ও বাত ব্যাথা ছিল।এমনটা করেই সেরেছে।আমি ভেবে দেখলাম শেয়াল তো কেনা যায়না,পালতেই হবে।তাই সাহসটা করেই নিলাম।এই শেয়াল গুলো আর কটা বছর পর রান্না করবো।আপনি খাবেন?দাওয়াত দিব নাহয়।আইসেন।জাহানকে বলবো ঘন করে ঝোল করতে।মোঘল মোঘল ব্যাপার আসবে।আহা!আমি গন্ধটা এখনই পাচ্ছি।বেশি করে জিরা দিতে বলবো।গন্ধটা আরও তাজা হবে।জিভে পানি এসে গেলো।স্বাদের সাথে স্বস্তি।’

অর্ণবের বাবা রঙ চায়ের কাপ হাতে চোখ কপালে তুলে সুলতান শাহের কথা শুনছিলেন।শেয়ালের মাংস খাওয়ার দাওয়াত পেয়ে হাত থেকে চায়ের কাপটাই নিচে রেখে দিয়েছেন।অর্ণবের মা ভেতরের রুমে মিজুয়ানার সাথে আলাপ করছিলেন।তাকে হুট করে ডাক দেওয়ায়ও কেমন দেখায়।এদিকে শেয়ালের মাংসের কথা শুনে তার নাওয়া- খাওয়া উঠে গেছে।দ্রুত এই জায়গা থেকে উঠে ভাগতে হবে।এই লোককে বিশ্বাস করা দায়।
না জানি চায়ের মধ্যেও উল্টো পাল্টা কিছু একটা মিশিয়েছে কিনা ঐ বাত ব্যাথার চক্করে’

সুলতান শাহ তার চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে শ্বাস নিলেন বড় করে তারপর মুচকি হেসে বললেন,’কি ভাই!ফ্লেভার পাচ্ছেন?আমি আবার তেজ পাতার ভক্ত।তবে আজ চায়ে তেজ পাতা না দিয়ে সেটার ফুল দিয়েছি।স্বাদটা অন্যরকম না?
জানেন এতে করে নাকি বাত ব্যাথার অনুপাত গড়ে কমে।সিওর না তবে শুনেছি মনে হয়।আমি শোনা কথায় বিশ্বাসী ‘

অর্ণবের বাবা কাশতে কাশতে বললেন,’বাকি সব ঠিক দিয়েছেন?মানে আদা,দারুচিনি,এলাচ?নাকি নতুনত্ব আছে সেসবেও?’

‘আরে বাস!!ধরতে পারলেন কি করে?আদার বদলে আদার খোসা জিরি জিরি করে কেটে দিয়েছি’

‘জিরিজিরি করে?তাও খোসা?তা খোসা দিলে কি হয়?’

‘কিছু হয়না।দেখতে ভাল লাগে।আর আমরা তো রঙ চা ছাঁকি না।সোজা ঢেলে দিয়েছে কাপে।দেখুন দেখুন চায়ের কাপে নিচে তেজপাতা গাছের ফুল দেখা যায়।’

অর্ণবের বাবা কাপটা আর হাতে নিলেননা।উদ্ভট রঙ চা কয়েক চুমুক খেয়ে তার অবস্থা কেমন যেন হয়ে গেছে।হয়ত এসব উপকরণে তার ক্ষতি হতোনা তার পরেও নাম শুনেই গলা খুশখুশ করছে।কোনোমতে অর্ণবের মাকে ডাক দিয়ে তিনি বললেন তার একটা জরুরি কাজ মনে পরে গেছে।এটা বলেই চলে আসলেন দোতলায়।

‘আমার ছেলে এই লোকটার বাসায় কি করে থাকে?না জানি ওদের কি খাওয়াইছে’

চিন্তিত হয়ে তিনি আগে অর্ণবের কাছে গেলেন।সে তখন ফোন টিপছিল।বাবা তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন সুলতান শাহ কেমন মানুষ।

অর্ণব ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে চেয়ে বললো,’উনি হলেন জিওগ্রাফী চ্যানেল’

বাবা বুঝেছেন অর্ণব তার স্বভাবের সাথে পরিচিত তাই আবার নিজেদের রুমে ফিরে গেছেন ওর মাকে সবটা জানাতে।
কুসুম বই দেখে দেখে খাতায় আঁকিবুকি করছিল।অক্ষর গুলোকে রুপ দেওয়ার প্রচেষ্টা।
কিছুতেই তা হচ্ছিলনা।মেজাজ খারাপ হয় তাও কিছু করার নেই।অর্ণবকে ভুল সময়ে জ্বালাতে চায়না সে।বাবা মা নাকি কাল চলে যাবেন।গ্রামের বাড়ি ফাঁকা।সাগর ভাইয়া মিশু ভাবীকে নিয়ে কক্সবাজার যাবেন, বাড়ি ফাঁকা রাখতে চাননা তারা।
শীতকাল শেষ হয়ে গ্রীষ্মকালের শুরু।রোদ শেষ হতে হতে বিকাল অনেকক্ষণ থাকে।
এই তো কিছু সময় আগেই সূর্য ডুবেছে।রাতের অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে।হালকা শীত লাগায় বই খাতা নিয়ে বারান্দা ছেড়ে কুসুম একটু ভেতরে এসে বসেছে।দেখে দেখে “অ” লিখতে পেরে অনেক খুশি হলো ।কলি একবার অর্ণব লেখা শিখিয়েছিল তবে এখন সেটা ভুলে গেছে সে।নতুন করে আবার শিখতে হবে।অর্ণব ফোন রেখে আড়মোড়া ভেঙ্গে এদিকেই আসছিল।অনেকক্ষণ কুসুমকে না দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সে বুঝি ছাদে শেয়ালের খপ্পরে পড়েছে।
বাবা মা তাদের রুমে গল্প করছেন।অর্ণবকে একটা টিভি কিনে দেবেন সে ব্যাপারে একজন আরেকজনকে যুক্তি দিচ্ছেন নানা ধরণের।অর্ণব ওদিকে না গিয়ে কুসুমের কাছে গেলো।ওকে নিচে বসে অক্ষর লিখতে দেখে সে কিছুক্ষণ কোনো শব্দ না করেই দৃশ্যটা দেখছিল।
কুসুম জানতে পারেনি ও এখানে।সে নিজের মনমত বসে বসে লিখছে।
অ ঠিকঠাক করে লিখতে পেরে খুশি হয়ে উঠলো অর্ণবকে দেখাতে যাবে বলে, তখন সামনে ওকে দেখে আচমকা ভয় পেয়ে গেছিল সে।অর্ণব ওকে ভয় পেতে দেখে বললো,’কি লিখলে দেখি?’

কুসুম খাতাটা এগিয়ে ধরেছে।অ লেখা দেখে অর্ণব টিক দিয়ে বললো বাকিগুলো ও এমন করে লিখতে।কুসুম মাথা নাড়ালো কিন্তু তারপরই অর্ণব বই খাতা সব গুছিয়ে একপাশে রেখে বললো,’তবে এখন না।আগামীকাল। আজকে তোমার অনেক পড়া হয়েছে।মাথায় এত চাপ দেবেনা। যাও বিশ্রাম নাও’

‘বিশ্রাম মানে শুয়ে থাকবো?’

‘যেমনে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে হয় তোমার তেমনে নেও।জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে নিতে পারো অথবা বসে নিতে পারো,শুয়ে নিতে পারো’

অর্ণব যে মজা করেছে তা বুঝতে পেরে কুসুম হেসে ফেললো।
অর্ণব ও হাসতে চাইলো কিন্তু কুসুমের নাকের তলা থেকে রক্তের বয়ে আসা একটা ফোটা দেখে তার হাসি মুখের বাহিরে এসে আর ফোটেনি।কুসুম নাকে হাত দিয়ে রক্তের ফোটা টা নিয়ে দেখছে।অর্ণবের বুকের ভেতরটা কেমন খালি হয়ে গেছে মনে হলো তার নিজের কাছে।
হঠাৎ সব ভুলে কুুসুমের হাত ধরে চেয়ারে এনে বসিয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে ওর নাক মুছে দিলো চুপচাপ।কুসুম ও নিরব হয়ে ছিল।
অর্ণব রক্ত মুছে দিয়ে বললো,’রিপোর্ট কাল গিয়ে নিয়ে আসবো আমি।তুমি আর পড়োনা, গিয়ে শুয়ে থাকো।খাবে কিছু?’

সে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।অর্ণব টিস্যুটাকে ফেলে স্তব্ধ হয়ে আছে।কুসুম মাথা তুলে বললো,’আচ্ছা রক্ত কেন ঝরে?’

অর্ণব উত্তর জানেনা।কুসুমের বিনা পলক ফেলা চাহনি দেখে কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললো,”বাদ দাও।চলো শুয়ে শুয়ে ফোনে কার্টুন দেখবে’

কুসুম খুশি হয়ে বললো ঠিক আছে।ওকে ফোনে কার্টুন এনে দিয়ে দূরে গিয়ে বসে রইলো সে।
‘কি রোগ মেয়েটার?রক্ত ঝরা তো সাংগাতিক ব্যাপার।ডাক্তার তো ফোনই ধরেনা।এমন কেন হয় ওর সাথে?খুব ভয় করে।মাথায় যেন একটা বোঝা চেপে আছে।
কবে এর উত্তর পাবো,বোঝাটা নামবে।চিন্তা হয় অনেক।ঐ টুকুন মেয়েটার শরীরের এমন হাল হলোই বা কেন।ভাবতে পারছিনা।বুকে জ্বালা করে।রোগের কথা শুনলে মনে হয় খুব খারাপ কিছু।আর এখন রক্ত দেখে ভয়ে বারবার গলা শুকিয়ে আসছে।
দোয়া করছি যেন খারাপ কিছু না হয়।ভালোই ভালোই ছোটখাটো রোগ হোক যেটা ঔষুধে সেরে যাবে।বড় কিছু যেন না হয়।আজই রিপোর্ট নিয়ে আসা উচিত ছিল।কাল সকাল সকালই চলে যাব রিপোর্ট আনতে।আর ভালো লাগেনা। রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসা করাবো ওর।তারপর সে সুস্থ হয়ে আবার আগের মতন হেসে খেলে থাকবে।’

কুসুম নাকে হাত দিয়ে মনে করছিল অর্ণবের ছোঁয়ার কথা।
‘কি সুন্দর করে মুছে দিলেন তিনি।কত যত্ন করেন অথচ বাহিরে থেকে বোঝান তিনি আমায় পছন্দ করেননা।শরীরের সব অসুস্থতাকে বিলীন করে দিলো তার এই যত্নটি।ওনাকে হয়ত ভালভাবে এতদিন বুঝতে পারিনি।ভাবতাম কখনও আমার দিকে ফিরে তাকাবেননা,কিন্তু উনি যথেষ্ট দায়িত্ববান এবং যত্নশীল একজন মানুষ।আমার ভাগ্য অনেক ভালো যে উনার মতন একজনকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি।আর কিছুই চাইনা আমার।’

‘কুসুম!’

‘জ্বী??’

‘ঘুম আসে তোমার?মাথা ধরেছে?’

‘নাহ।ঠিক আছি’

কুসুম উঠে বসলো শোয়া থেকে, অর্ণব দরজার ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল।পরিস্থিতি এমন ভাবে বদলে যায়!
এতটাদিন অর্ণবের জায়গায় কুসুম দাঁড়িয়ে দেখতো ওকে।আর আজ অর্ণব দাঁড়িয়ে দেখছে কুসুমকে।
বিষয়টা খেয়াল করে কুসুমের মুখে হাসির রেখা ফুটেছে।অর্ণব বোঝেনি, এগিয়ে এসে ওর পাশে বসে চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
——
আয়নার সামনে তোয়ালে ঝুলে সবসময়।সেই তোয়ালেটা সরিয়ে জুথি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে।মৃদুলের ব্যাখ্যা শুনে আজ নিজের ঠোঁট নিজেই দেখছে এক রাশ মনযোগ নিয়ে।
আয়নায় নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দেখছিল সে সেসময়ে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে জুথি ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছে।বাবা এসে বললেন,’মৃদুল এসেছে।তোর খোঁজ খবর নিতে’

‘কি??কে এসেছে বললে?’

‘মৃদুল।আরে ঐ যে অর্ণবের বন্ধু।তোকে যে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল সে।।তোর খোঁজ নিতে এসেছে।অনেকদিন নাকি তোকে দেখেনা’

বাবার কথা শুনে জুথি কিছুই বুঝতে পারলোনা।শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো মৃদুল ভদ্র ছেলের মতন ওখানে বসে আছে।
বাবা কাছে এসে আবার বললেন,’ছেলেটা তোর কত খেয়াল রেখেছিল, তুই নাকি একটিবার ওর ফোন ও ধরিসনি।এটা একেবারে ঠিক করিসনি।এতটা কেয়ারলেস হলে চলে?অন্তত অকৃতজ্ঞ হওয়া শেখাইনি তোকে’

জুথি বেশ বুঝতে পেরেছে মৃদুল বাবাকে ঘোল খাইয়েছে।
বাবা তো আর জানেননা এই ভদ্র ছেলেটি দিনে দুবার বারান্দা টপকে তাদের বাড়িতে ঢুকে আর বের হয়’

মৃদুল মিটমিট করে হাসছে আর মাথা নাড়ছে বাবার কথার তালে তালে।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here