#স্বপ্ন_কেনার_দামে
#দ্বিতীয়_খন্ড
৮
তালাকের কাজ করতে গিয়ে রিদম বুঝতে পারলো
বিয়ে করাটা বরং খুব সহজ ছিল। কাজী অফিসে যাওয়ার পরিবর্তে ফয়সাল বাসাতেই কাজী সাহেবকে নিয়ে এসেছিলেন বিয়ে পড়াতে। সাক্ষী হয়েছিল রিক্তা ফয়সাল, আর ফয়সালের আরেক বন্ধু হেনা।
বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের সময় কাজী সাহেবের সামনে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন প্রাপ্ত বয়সী পুরুষ ও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা সাক্ষী প্রয়োজন। ফয়সাল যেহেতু বিয়ের আয়োজন করেছিল, আর আগে থেকেই ঠিক করাছিল যে সে, হেনা আর রিক্তা সাক্ষী হবে তাই তাদের সবার এনআইডি কার্ডের কপি রেখেছিল। রিদমও তার এনআইডি কপি নিয়ে এসেছিল। শুধু অরণীরই কোন ধারণা ছিল না। কাজী সাহেব একটু আপত্তি তুললেও ফয়সাল বাড়তি টাকা দিয়ে রাজি করায়। এনআইডির কপির পরিবর্তে কলেজের আইডি কার্ড দেখায় প্রাপ্ত বয়সীর প্রমাণ হিসেবে। কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দেন। পরের দিন একজন উকিলের কাছে গিয়ে রিদম আর অরণী দুইশো টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামায় সাক্ষর করে এবং বিয়ের কাবিনমুল রেজিস্ট্রি করায়। অরণী বোকা, তখন বুঝতেই পারেনি বিয়ের পরিকল্পনা ওদের আগে থেকেই করা ছিল, তাই তো সব গুছানোই ছিল। যখন বুঝেছে তখন আর ফেরার উপায় ছিল না।
আর এখন তালাকের চিন্তা করতে গিয়ে রিদম দেখলো, বিয়ে করার চেয়ে বিয়ে ভাঙতে নিয়ম কানুন অনেক বেশি। আসলে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনকে খেলা না বানিয়ে ফেলার জন্যই হয়তো আইনকানুনের এত বেড়াজাল বানানো হয়েছে। কিন্তু যাদের মন একে অপর থেকে উঠে যায়, তাদের আর কতটাই বা বেড়াজাল আটকে রাখা যাবে। জাল ছিড়তে হলে দু’জন রাজি হলেই হবে। রিদম জানে অরণী বিয়ে ভাঙতে চায় না। আর সে নিজে কী চায় তা সে নিজেও জানে না। রিদম অরণীকে চায়, কিন্তু তাকে ধরে রাখার কোন চেষ্টা করতে রাজি না। হতাশা, রাগ, হিংসা অপারগতা সবকিছু মিলে রিদম যেন পাল ভাঙা এক নৌকারই নামান্তর। যার সামনে কোন লক্ষ্য নেই, যার পাল ধরার কোন মাঝি নেই। যে অকুল দরিয়ায় ভাসছে কোন গন্তব্য ছাড়া। কিন্তু নিজের অবস্থার জন্য দায়ী করছে উত্তরের হাওয়াকে!
তালাকের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে রিদম জানলো বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক দিতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে তিন দফায় আইনি পত্র বা ডিভোর্স লেটার পাঠাতে হয়। প্রতি ত্রিশ দিনের ব্যবধানে একেকটি চিঠি পাঠাতে হয়। নব্বই দিনের মধ্যে কোন সমঝোতা না হলে তালাক কার্যকর হয়। এই নোটিশ পাঠানোরও আইনি প্রক্রিয়া আছে। যে পক্ষ তালাক দিবে সে নোটিশের এককপি পাঠাবে অপরপক্ষ যে এলাকায় থাকে সে এলাকার পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে আর এক কপি পাঠাবে যাকে তালাক দিবে তাকে। সেই নোটিশে শুধু রিদমের সাক্ষর থাকলেই হবে না। সাক্ষীদের সাক্ষরও লাগবে। অর্থাৎ ফয়সাল, রিক্তা, হেনা সবারই সাইন লাগবে। এই নোটিশ ত্রিশদিন পরপর তিনবার পাঠাতে হবে। নব্বই দিনের ভেতর ভুল বোঝাবুঝি অবসান করার জন্য সালিশ পরিষদ দুই পক্ষের দু’জন মানুষ নিয়ে কমিটি গঠন করে চেষ্টা করবে। ফয়সালকে তার বাবা চিটাগং নিয়ে গিয়েছেন। রিক্তার তো কোন খোঁজ খবরও নেই। ফেসবুক ডিএক্টিভেটেড। আর হেনাকে ভালো করে চেনেও না রিদম।
এই সবকিছু জেনে বুঝে রিদমের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। গোপনে বিয়ে কিভাবে ভাঙা যায় সে পথ খুঁজছিল গত কয়েকদিন। লোক জানাজানি করে অরণীকে বদনাম করার কোন ইচ্ছে তার ছিল না।
কিন্তু অরণীর কাজিন যখন অরণীর বাগদানের ছবি মুখবইয়ে দিলো, রিদমের গায়ে যেন জ্বালা ধরে গিয়েছে। অরণী, তার অরণী, যে দুইদিন আগেও রিদমের কাছে হন্যে হয়ে ছুটি এসেছিল, সে এমন সেজেগুজে আরেকজনের পাশে বসে আছে। ইচ্ছে করেই সেখানে অভিনন্দন লিখেছে রিদম। দেখতে চেয়েছে অরণী কী বলে। কিন্তু অরণীকে স্বাভাবিক ভাবে কবিতা আবৃত্তি করে পোস্ট দিতে দেখে রাগ যেন আরও মাথার উপর উঠে গিয়েছে। অরণীর আবৃত্তিতে মাহিদের কাব্যিক সব কমেন্ট দেখে ইচ্ছে করছে মাহিদের গলা টিপে দিয়ে আসতে। একবার ভেবেছিল মাহিদকে নক করে সব বলবে। কিন্তু তারপর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। এই বাগদানের এমনিতেও কোন ভিত্তি নেই। অরণী এখনো কাগজে কলমে রিদমের স্ত্রী। তালাক দিতে চাইলেও নব্বই দিন লাগবে। তাহলে মাহিদের সাথে পনের দিন পরে বিয়ে এমনিতেও সম্ভব নয়।
রিদম হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় মাহিদের কাছে অরণীকে হারাবে না সে। অরণী রিদমের জিদ, ভালোবাসা, ঘৃণা সবকিছু। অরণীকে ভেঙেচুরে গড়ার অধিকার শুধু তার। যে পাখিকে নিজের বাসায় একটু একটু করে বড়ো করেছে, আজ তাকে ডানা ঝাপটে উড়ে যেতে দিবে না রিদম। অমিয়র পোস্ট দেখেছে রিদম। হবু দুলাভাইয়ের সাথে আগামীকাল বোনের বিয়ের কেনাকাটা করতে যমুনা ফিউচার পার্কে যাচ্ছে অমিয়। সবকিছু ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় রিদম। নিজের জিনিস ছিনিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।
জিনিস! হ্যাঁ জিনিসই তো। অরণী তো তারই। অরণীর নরম ঠোঁট, গালের তিল, রেশমী কালো চুল আর গভীর জলের মতো টলমলে শরীর তো রিদমেরই। মনটা যেমন তেমন, শরীর অধিকার তো রিদম ছাড়বে না। সামনে মাহিদই আসুক, আর অন্য কেউ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে। কিভাবে অরণীর কোথায় আঘাত করতে হবে ভালোই জানা আছে রিদমের। এইবার আর ফয়সালের সাহায্যও প্রয়োজন নেই তার।
(চলবে)