#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
পিছনে তাকিয়ে দেখি দিয়া।কেনো জানি কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল না।তাই চলে আসতে যাচ্ছিলাম কিন্তু দিয়া আবার বলল
“ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল।”
কি মনে করে আবার রুমের ভিতরে গেলাম।দিয়া হুট করেই আমার পা জড়িয়ে ধরে বলল
“ভাইয়া আমাকে তুমি মাফ করে দেও।আমি সে দিন খুব ভয় পেয়েছিলাম।তুমি যদি আম্মুর কাছে সেইসব কথা বলে দেও তাই আমি ওমন করেছিলাম।প্লিজ ভাইয়া আমাকে তুমি মাফ করে দেও।”
কেনো জানি দিয়ার কথায় আজ আমার কাছে নাটকীয় বা মিথ্যা মনে হচ্ছে না।ওকে সবসময় ছোট বোনের নজরে দেখেছি।আজ সেই বোনই পায়ে বসে কান্না করে ক্ষমা চাচ্ছে।আমি বললাম
“দিয়া আমার পা ছেড়ে দে।আমার এই সব পছন্দ না।”
“না ভাইয়া।তুমি যতক্ষণ না আমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছো ততক্ষণ আমি তোমার পা ছাড়বো না।”
“পা টা ছেড়ে দে বোন।আমি তোকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছে।আমি আর ওই সব কিছুই এখন আর মনে রাখি নি।”
দিয়া আমার পা এখনো ছাড়ে নি।পা ধরে কান্না করছে।ভাগ্য ভালো আমার রুমটা সব থেকে ভিতরে ছিল।না হলে দিয়ার কান্না শুনে এতক্ষণে মানুষের ভিড় জমে যেত।আমার পা ছাড়িয়ে নিয়ে দিয়াকে খাটে বসিয়ে পানি গ্লাসটা এগিয়ে বললাম
“পানিটা খেয়ে নে।”
পানি খেয়ে দিয়া এখনো কান্না করছে।কিন্তু আগের থেকে কিছুটা কম।দিয়ার পাশে বসে বললাম
“সেই সময় তোকে বলেছিলাম না আমি হিয়াকে পছন্দ করি।তাহলে তুই এমনটা কিভাবে করলি বলতো?”
“ভাইয়া আমিও তো তোমাকে পছন্দ করতাম।তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য ওই রকম করেছিলাম।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ভাইয়া।সেটা জন্য আমি লজ্জিত।”
“শুন দিয়া তুই যেটা তখন করেছিস সেটা আবেগের বসে করেছিস।তুই তখন মাত্র দশম শ্রেণীতে পড়তি।তখন তোর কাছে নতুন সব কিছুই ভালো লাগতো যেমন আমি।তাই আমি তোকে তখন না বলে দেই।কিন্তু তুই পরে মামিকে কি বললি বল?সেটা কি তোর ঠিক হয়েছে।মামির কাছে আমি ছোট হয়ে গেলাম।আম্মুও আমার সাথে কথা বলে না।পরের থেকে এমন কাজ কারো সাথে করিস না ঠিক আছে।”
দিয়া কান্না করতে করতে মাথা নেড়ে হ্যা বলল।আর কিছুসময় থেকে দিয়া চলে গেল।পরে আব্বুর কথা মনে পরলো।আব্বু বলেছিল বাসায় এসে যেনো তার সাথে দেখা করি।এখনো আব্বুর সাথে দেখা হয় নি।আব্বু আম্মুর রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম তারা দুজনই রুমে আছে।আব্বুকে বললাম
“আব্বু আসবো?”
“হ্যা ভিতরে আয়।”
ভিতরে গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম।আম্মু তখন রুমটা গুছিয়ে রাখছিল।আব্বু বলল
“এক্সাম কেমন হয়েছে তোর?”
“ভালোই হয়েছে।”
“আমি বলছিলাম কি তোর তো এখন এক্সাম শেষ।তোর ভাই তো আমার বিজনেসটা দেখলো না তুই যদি বিজনেসটা সামলাতি তাহলে ভালো হত।”
আমি চাচ্ছিলাম না আব্বু বিজনেসটা এখন সামলাতে কিন্তু আব্বু যেহেতু বলছে তাই কিছুটা মনে হল আব্বুর বিজনেসটা দেখাশুনো করা দরকার।আব্বুও বা আর কত করবে আমাদের জন্য।কথাগুলো বলতে যাবো তার আগেই আম্মু বলল
“তোমার ছেলের কি নিজের কোনো যোগ্যতা নেই নাকি?যার কারনে বাবার বিজনেস সামলাতে হবে।”
বুঝলাম আম্মু এখনো আমার উপর রেগে আছে।হয়তো আমার প্রতি তার আগের মত সেই বিশ্বাসটা আর নেই।আব্বু হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি আব্বুকে বলতে না দিয়েই বললাম
“আমার এই সব বিজনেস ভালো লাগে না আব্বু।আমি জব করবো।রেজাল্ট বের হলেই জবের জন্য অ্যাপ্লাই করবো।”
“আমাদের বিজনেস থাকতে তুই জব করতে যাবি কেনো?”
“আমার এই সব ভালো লাগে না।তার থেকে ভালো তোমার বিজনেস তুমিই দেখাশুনো করো।”
রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আম্মুর কথাই ঠিক।যেহেতু আম্মু নিজেই চাচ্ছে না আমি আব্বুর বিজনেস দেখা না করি সেইখানে আমার তো যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
নিজের রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না।তাই ভাবলাম একটু ছাদে থেকে ঘুরে আসি।অনেকদিন হয়েছে ছাদে যাওয়া হয় না।ছাদে আগে থেকেই অনেক মানুষ।বেশির ভাগই আমাদের রিলেটিভ।
ছাদের এক কোণে গিয়ে দারালাম।আজ আবহাওয়াটা বের ঠান্ডা।না গরম না শীত।আবহাওয়াটা বেশ উপভোগ করছিলাম তখনি পাশে তাকিয়ে দেখি হিয়া।আমার চাচাতো বোন মেঘা আপুর সাথে হিয়া কথা বলছিল।আমার দিকে তাকাতেই হিয়া কিছুটা বিরক্তভাব নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল।মেঘা আপু আমার কাছে এসে বলল
“কেমন আছিস ভাই?”
“ভালো আপু।তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি।তোকে কত দিন পরে দেখলাম।আগের থেকে বেশি কিউট হয়েছিস।”
“আপু তুমিও না একটু বেশি বেড়িয়েই বলো।আচ্ছা মেহরাজ ভাইয়া(আপুর বর) আসে নি?”
“নারে ভাই।ও একটু অফিসের কাজে দেশের বাইরে গেছে।মনে হয় না বিয়েতে আসতে পারবে।”
“ইস ভাইয়া সাথে কত দিন দেখা হয় না।”
“আচ্ছা হিয়ার সাথে তোর কি কিছু হয়েছে?”
আপুর কথা শুনে কিছুটা চমকে গেলাম।হিয়া কি আপুকে কিছু বলেছে নাকি?আমাদের দুই পরিবার বাদে তেমন কেউ সেই ঘটনার বিষয়ে জানে না।আপুকে বললাম
“না তো আপু আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই তো হয় নি।”
“তোকে দেখে হিয়া কেমন জানি একটা বিরক্তভাব নিয়ে চলে গেল।”
“আমি ঠিক জানি না আপু।”
তখন ভাইয়া এসে বলল নিচে এসে খাবার খেয়ে যেতে।মেঘা আপু নাকি আগেই খেয়ে নিয়েছে তাই আমি নিচে গেলাম খেতে।খাবার টেবিলে সামনে গিয়ে দেখলাম আম্মু আব্বু ভাইয়া আর মামার পরিবারের সবাই বসে আছে।মনে হয় বাকিদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে।আমি খাবার টেবিলে বসতেই হিয়া বলল
“এই অসভ্যটা এইখানে কি করছে?”
হিয়ার কথাতে আম্মু বলল
“কি হয়েছে হিয়া মা?”
“ফুঁপি ও কি আমাদের সাথে খাবার খাবে নাকি?ও এই টেবিলে খাবার খেলে আমি কিন্তু খাবার খাবো না।”
মামা বলল
“হিয়া এটা কি ধরনের বেয়াদবি।ওদের বাসা ও এইখানে না খেলে কোথায় খাবে।”
আম্মু বলল
“তুই বেশি কথা বলিস না ছোট।নিলয় তোর ভাইকে বল খাবারটা রুমে গিয়ে খেতে।”
আব্বু বলল
“নেহাল কেনো ওর রুমে গিয়ে খাবার খাবে?এইটা তো নেহালের..”
আব্বুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম
“আমার জন্য কাউকে খাবার টেবিল থেকে উঠতে হবে না।ভাইয়া রহিমা খালাকে বলো আমার খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দিতে।”
আমি রুমে চলে আসলাম।কিছুসময় পর ভাইয়া আর আব্বুও আমার রুমে চলে আসলো।তাদের দেখে বললাম
“তোমরা না খেয়ে এইখানে আসলে কেনো?যাও খেয়ে আসো আম্মু না হলে রাগ করবে।”
আব্বু বলল
“রাগ করলে করুক।আমার ছেলে থেকে তার কাছে তার ভাইয়ের মেয়ে বেশি বড়।তার রাগে আমার কিছু যায় আসে না।”
ভাইয়া বলল
“আমার জন্য তোর এত অপমানিত হতে হচ্ছে তাই নারে নেহাল?”
#চলবে…