#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৪
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
আমি রুমে চলে আসলাম।কিছুসময় পর ভাইয়া আর আব্বুও আমার রুমে চলে আসলো।তাদের দেখে বললাম
“তোমরা না খেয়ে এইখানে আসলে কেনো?যাও খেয়ে আসো আম্মু না হলে রাগ করবে।”
আব্বু বলল
“রাগ করলে করুক।আমার ছেলের থেকে তার কাছে তার ভাইয়ের মেয়ে বেশি বড়।তার রাগে আমার কিছু যায় আসে না।”
ভাইয়া বলল
“আমার জন্য তোর এত অপমানিত হতে হচ্ছে তাই নারে নেহাল?”
“তুমি এ সব কি বলছো ভাইয়া।তোমার জন্য কেনো এই সব হবে।আমার ভাগ্যে ছিল তাই এমন হয়েছে।”
“তোকে বিয়েতে আসতে বলেছি বলেই এত গুলো কথা শুনতে হল।”
আব্বু বলল
“তোর বিয়ে তোর ভাই থাকবে না সেটা কিভাবে হয় নিলয়।আর এই খানে তোর বা নেহালের তো কোনো দোষ নেই।নেহালের সাথে তোর মামাতো বোনদের কিছু সমস্যা হয়েছে যার কারনে এমন হচ্ছে।আর এই সব নিয়ে এত ভাবিস না।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আমরা আর কিছু বললাম না।রহিমা খালা আমাদের জন্য খাবার দিয়ে চলে গেল।অনেকদিন পর আমরা একসাথে খাবার খেলাম।কিন্তু শুধু আম্মু নেই এখানে।খাবার শেষে ভাইয়া খালাকে খাবারের জিনিশগুলো নিয়ে যেতে বলল।বিশ্রাম করতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম ঠিক জানা নেই।ঘুমটা ভাঙলো ফোনের রিংটোনে।হাতে নিয়ে দেখি ফারু কল দিয়েছে।ও আবার এই সময় কেনো কল দিলো।রিসিভ করতেই ফারিয়া বলল
“নেহাল তুমি এখনো আসো নি কেনো?
“আজব আমি আবার কোথায় আসবো?”
“আমি জানতাম তুমি ভুলে যাবে।বিকালে না আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তোমার।এবার মনে পড়েছে।”
“সরি সরি সত্যি ভুলে গেছে ফারু।আমি এখনি আসছি।”
“সরি বলতে হবে না।আর শুনো তাড়াহুড়ো করে আসতে হবে না।আসতে ধীরে আসো ঠিক আছে।”
“তুমি রেডি হয়ে থাকো আমি আসছি।”
“আমি রেডি হয়েই তোমাকে কল দিয়েছি।এখন তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
“আমার বেশিক্ষণ লাগবে না।”
ফোন রেখে ফ্রেশ এবং রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলাম।আসলেই আমি ভুলে গিয়েছিলাম ঘুরতে যাওয়ার কথাটা।প্রায় পনে একঘণ্টা সময় লাগলো আসতে।ফারিয়াকে কল দিয়ে নিয়ে আসতে বললাম।কিছুক্ষণ পরেই ফারিয়া আমার সামনে এসে দারালো।ফারুকে দেখে দ্বিতীয় বার ক্রাশ খেলাম।আবারো সেই শাড়ি পরে বেড়িয়েছে।গতবার ফারিয়ার জন্মদিনে ওকে শাড়িতে দেখে প্রথম বার ছিল আর আজ।ফারিয়াকে বললাম
“তোমাকে না আগের বার বলেছিলাম আমার সামনে শাড়ি পরে আসতে না?তাহলে আবার কেনো শাড়ি পড়লে?”
“কেনো শাড়িতে কি আমায় অনেক বেশি খারাপ লাগছে ?”
“খারাপ লাগবে কেনো?”
“তাহলে শাড়ি পড়তে সমস্যা কি?”
“সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে তো হয়েই ছিল।আচ্ছা বাদ দেও।বলো কোথায় যাবে?”
“আরে আমি কিভাবে জানবো?তোমাদের শহর তুমি জানবে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার জায়গা আছে।”
“আচ্ছা চলো সামনের মোড় থেকে রিক্সা নিতে হবে।”
ফারিয়া কিছু না বলেই আমার বাম হাতটা জড়িয়ে ধরলো।কিছুটা চমকেই গিয়েছে।
“এই ফারু তুমি এইভাবে হাত ধরলে কেনো?”
“শাড়ি পরে ঠিক মত হাটা যায় বলো।তাই তোমাকে ধরে হাটবো।”
“মানুষ কি ভাববে?মনে করবে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা।”
“স্বামী স্ত্রীও ভাবতে পারে।এবার বেশি কথা না বলে মোড়ে চল তাড়াতাড়ি।এমনেই অনেক লেট হয়ে গেছে তোমার জন্য।”
আর কিছু না বলে ফারিয়াকে নিয়ে মোড়ে গেলাম।একটা রিক্সা নিয়ে নদীর পাশে যে পার্ক ছিল সেটা গেলাম।ফারিয়া এখনো আমার হাত ছাড়ে নি।পার্কে এসে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।এত প্রেমিকপ্রেমিকা তাদের মধ্যে নিজেকে কেমন জানি অন্য রকম লাগছে।আগে যখন বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলাম তখন এত মানুষ আসতো না।কিন্তু এখন তো বসার জায়গা পাওয়াটাই মুশকিল।আমার অবস্থা দেখে ফারু বলল
“এই নেহাল তুমি কি এইখানেই দারিয়ে থাকবে নাকি?ভিতরে চল।”
“ভিতরে গিয়ে কি হবে।বসার জায়গা তো মনে হয় পাবো না।”
“আরে সমস্যা নেই।আজ না হয় নাই বসলাম।তুমি কথা না বাড়িয়ে হাটো তো।”
ফারিয়ার কথা মত হাটতে শুরু করলাম।অনেকক্ষণ হাটলাম কিন্তু খারাপ লাগছে না।কিন্তু সবাই কেমন জানি আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।বেশি করে ছেলেরা।পরে মনে হল আমার সাথে তো ফারিয়াও আছে।আমার ধারনাই ঠিক বেশির ভাগ ছেলেরা ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন একটা বিরক্ত লাগছে।
হঠাৎ মনে হল হিয়ার মত কাউকে দেখলাম একটা ছেলের সাথে।ফারিয়া এখনো হাত ধরেই আছে তাই দেখতে যেতেও পারলাম না যে ওটা হিয়া ছিল কি না।পরে আর ভাবলাম না।হিয়া এইখানে কিভাবে আসবে ও তো আমাদের বাসায় এখন।সন্ধ্যার দিকে ফারিয়াকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।অনেকক্ষণ হয়েছে আমরা বের হয়েছি।তাই ভাবলাম কিছু খেয়ে নি।
রেস্টুরেন্টে বসে আছি খাবার অডার করে কিন্তু খাবার আসার কোনো খবরই নেই।তখন ফারিয়া বলল
“নেহাল।”
“হুম বলো।”
“তোমার অনার্স তো শেষ এখন তাহলে কি করবে?”
“কিছু দিনের মধ্যে তো রেজাল্ট দিয়ে দিবে তার পরে জবের জন্য অ্যাপ্লাই করবো।”
ফারু কিছুটা খুশি হয়ে বলল
“তাহলে তো ভালোই হবে।”
এরি মধ্যে খাবার এসে পরলো।আমি আর কথা না বাড়িয়ে খাবারে মন দিলাম।খাবার খাচ্ছি তখনি একটা পরিচিত কন্ঠে কানে আসলো।মনে হল হিয়ার কন্ঠ।তাই আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমাদের পিছনের টেবিলে একটা মেয়ে ছেলের সাথে বসে আছে মেয়েকে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে।মনে হয় কোথায় যেনো দেখেছি।মেয়েটার কি হিয়া কি না সেটা সিউর হওয়ার জন্য ফারিয়াকে রেখে ওয়াশরুমে গেলাম।আসার সময় দেখলাম আমার ধারনাই ঠিক।এটা হিয়াই ছিল।আমি টেবিলে এসে আবার খাবারে মন দিলাম।ফারু বলল
“আচ্ছা নেহাল তুমি কি আমাকে তোমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না।”
ফারিয়ার কথা শুনে খাবার রেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম।তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি ফারিয়া কি মিন করছে।আমার তাকানো দেখে হেসে বলল
“আরে তোমাদের এইখানে এসে ভাবলাম আমাকে হয়তো তোমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।তুমি তো আমার আব্বু আম্মুর সাথে পরিচিত হয়েছো তাই ভাবলাম তুমিও আমাকে তোমার পরিবারের সাথে দেখা করাবে।”
“আরে এইখানে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কি আছে।তুমি এমনেই আমাদের আত্মীয় মানে ভাবির বোন।তাহলে আবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কি আছে।”
“আমি কি তোমাদের নিজের আত্মীয় নাকি।তোমার ভাবির রিলেটিভ আমি।আর তুমি যদি আমাকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেও তাহলে তোমাদের বাসায় সবসময় আসাযাওয়া করা যাবে আর নাফিজা আপুর রিলেটিভ হয়ে কি সব সময় আসাযাওয়া করা যাবে নাকি।”
“হুম বুঝেছি।আচ্ছা আমি তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো হয়েছে এবার।”
আমার বসা অবস্থায় ফারিয়া জড়িয়ে ধরে বলল
“থ্যাংকইউ থ্যাংকইউ।এখন বলো কবে নিয়ে যাবে আমাকে?”
হতভম্ব হয়ে ফারুর দিকে তাকিয়ে আছি।কি করলো এইটা।রেস্টুরেন্টের এত মানুষের সামনে এইভাবে জড়িয়ে ধরলো।আশেপাশে আর তাকালাম না।মানুষ গুলো মনে হয় আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারু আবার বলল
“কি হল নেহাল বলো কবে নিয়ে যাবে তোমাদের বাসায়?”
আমি কিছু বলল তার আগেই ফোনে কল আসলো।বের করে দেখি ভাইয়া কল দিয়েছে।তাই রিসিভ করে বললাম
“হ্যা ভাইয়া বলো।”
“নেহাল তুই কি নাফিজার কাজিনের সাথে আছিস?
“হুম কি হয়েছে?”
“নাফিজা নাকি ওর কাজিনকে ফোনে পাচ্ছে না।তুই ওকে তাড়াতাড়ি বাসায় দিয়ে আয়।ওর কাজিনরা ওকে খুঁজছে।”
“আচ্ছা আমি এখনি নিয়ে যাচ্ছি।”
ফোনটা রেখে দিতেই ফারিয়া বলল
“নেহাল কি হয়েছে?”
“তোমাকে নাকি ফোনে পাচ্ছে না ভাবি।এখনি নাকি বাসায় যেতে হবে।আচ্ছা কারা তোমাকে খুঁজছে?”
“ওহ। আমার বাকি কাজিনরা মনে হয় এসে পড়েছে।আচ্ছা এখন তাহলে যাওয়া যাক।”
খাবারের বিল পে করে ফারিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।ভাবিদের বাসার সামনে আসতে আসতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে।ভাবিদের বাসার সামনে আসতেই উপর থেকে কিছু মেয়ে বলছে
“ওই দেখ নেহাল ভাইয়া এসে পড়েছে।”
#চলবে…