#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
খাবারের বিল পে করে ফারিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।ভাবিদের বাসার সামনে আসতে আসতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে।ভাবিদের বাসার সামনে আসতেই উপর থেকে কিছু মেয়ে বলছে
“ওই দেখ নেহাল ভাইয়া এসে পড়েছে।”
উপড়ে তাকিয়ে দেখি ভাবিদের বাসার বারান্দায় অনেকগুলো মেয়ে দারিয়ে হইচই করছে।কিন্তু সবাই আমাকে চিনলো কিভাবে?ভাবনার বিষয়?ফারু বলল
“দারিয়ে আছো কেনো?উপরে চলো।”
“না আজ না।অন্য একদিন।”
“অন্য একদিন মানে?এখনি তুমি আমার সাথে উপরে যাবে।না হলে আমার রক্ষে থাকবে না।সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
আমাকে টেনে উপরে নিয়ে গেল।একটা রুমে বসে আছি।চারদিক দিকে অনেকগুলো মেয়ে আমাকে ঘিরে বসে আছে।নিজেকে কেমন জানি লাগছে।এতগুলো মেয়ে মাঝে আমি একা বসে আছি।কাউকেই চিনি না।কিন্তু সব গুলো মেয়ে আমাকে ঠিকই চিনে।একটা ছোট মেয়ে বলল
“নেহাল ভাইয়া নেহাল ভাইয়া তুমি আমাকে তোমার সাথে ঘুরতে নিয়ে গেলে না কেনো?আমাকে ঘুরতে নিয়ে চলো।আমি তোমার সাথে ঘুরতে যাবো।”
আমি অসহায়ের মত বসে আছি।মেয়েটার নামও তো জানি না।তাই বললাম
“আচ্ছা পরের বার গেলে তোমাকে নিয়ে যাবো।ঠিক আছে।”
ফারিয়া এসে বলল
“রিয়া তোকে তোর আম্মু ডাকছে যা।”
সেই ছোট মেয়েটা চলে গেল।তাহলে ওর নাম রিয়া।ফারিয়াকে দেখে কিছুটা প্রাণ ফিরে এলো।ফারিয়া রুমে আসতেই কয়েকজন মেয়ে চলে গেল।কিন্তু কারনটা অজানা।ফারিয়া সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।সবাই নাফিজা ভাবির কাজিন কিন্তু ফারিয়ার সাথে বেশ ভাব তাদের।ওদের সাথে কিছুসময় কথা বলে নাফিজা ভাবির সাথে দেখা করে বাসায় চলে আসলাম।
বাসার বেল বাজাতেই রহিমা খালা দরজা খুলে দিল।রুমে যাচ্ছিলাম তখনি বসার রুম থেকে হিয়া বলল
“জানো ফুঁপি কিছু মানুষ আগে অসভ্য ছিল কিন্তু আজ রেস্টুরেন্ট দেখলাম অসভ্য সাথে নির্লজ্জও হয়ে গেছে।লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।”
খেয়াল করে দেখলাম হিয়া কথাটা আমার দিকে তাকিয়েই আম্মুকে বলছে।আমি কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে আবিরকে কল দিলাম।
“আবির একটা কাজ করে দিতে পারবি?”
“আরে নেহাল এতে বলার কি আছে।বল কি কাজ।”
“তোকে একটা ছেলের ছবি পাঠাচ্ছি।ছেলের সম্পর্কে একটু খোজ বের করতো।”
“আচ্ছা আমি তোকে খোজ নিয়ে বলছি।”
“ঠিক আছে খোজ নিয়ে জানাস।এখন রাখছি।”
শুয়ে পরলাম।অনেকটা ক্লান্ত লাগছে।রুমে কারো আসার শব্দ পেলাম।দরজায় তাকিয়ে দেখি আমার খালাতো বোন মিরা।আমাকে দেখে বলল
“কিরে কই ছিলি তুই?আসার পরে তোকে পেলাম না বাসাতে।”
“একটু বাইরে গিয়েছিলাম।তুই কখন এসেছিস?”
“সন্ধ্যার দিকে।”
রুমে দিয়ার আগমন।দিয়া বলল
“কেমন আছো মিরা আপু?”
“ভালোই।তোর কি খবর?”
“আমিও ভালো আছি।কি করছিলে তোমরা?”
“নেহালের সাথে কথা বলতে আসলাম।আসার পর তো ওকে পাই নি তাই।”
তিনজন মিলে কিছুসময় কথা বললাম।কথা শেষে মিরা আমাকে নিয়ে খাবার খেতে গেল।কিছুটা ভয় করছিল।হিয়া যদি আবার দুপুরের মত অপমান করে।সেটা নিয়ে কিছুটা ভয়ে ছিলাম।
কিন্তু না খাবার টেবিলে আমরা বেশির ভাগ কাজিনরা ছিলাম।হিয়া ছিল না।হয়তো আগেই খেয়ে নিয়েছে।
রাতে ঘুমানো সময় আমাকে আমার রুম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল।মিরা আর মেঘা আপু আমার রুম দখল করে নিয়েছে।কিছু করার নেই।অসহায় হয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম।আমাকে দেখে বলল
“মন খারাপ করিস না।কয়েকদিনই তো কথা এখন আমার রুমে শুয়ে পর।”
কিছু না বলে ঘুয়ে পরলাম।ভেবেছিলাম আজ ঘুমটা ভালো হবে কিন্তু এইখানে তো ঘুমানোই যাচ্ছে না।ভাইয়া তার হবু বউের সাথে প্রেমালাপ শুরু করে দিয়ে।কিছুদিন পর তাদের বিয়েই হচ্ছে তাহলে এখন এত কথা বলার কি আছে বুঝিনা।না এইভাবে কথা বললে ঘুমানো সম্ভব না।ভাইয়াকে বললাম
“ভাইয়া।”
“হ্যা বল।”
“তুমি কি এখন কথা বলবে নাকি ঘুমাবে?”
“পরে ঘুমাবো।এখন কথা বলবো।”
কিছু না বলে ভাইয়ার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বললাম
“কথা শেষ করে রুমে আসবে।তার আগে যদি রুমে এসে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করো তাহলে তোমার ফোন সহ তোমাকেও ভাইরে পাঠিয়ে দেবো।”
ভাইয়া কথা বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সেই দিকে খেয়াল না দিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে আবিরের ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম।আবিরের পিছনে রানাও দারিয়ে ছিল।ওরা একেবারে ব্যাগ নিয়ে এসে হাজির।আব্বু এসে বলল
“নেহাল তোর তারেক আঙ্কেলকে একটু খাবারের আর বিল্ডিং সাজানো কথাটা বলে আয়।আর কি কি লাগছে সেই গুলো ঠিক করে আসিস।”
ফ্রেশ হয়ে আবির আর রানাকে নিয়ে বাইরে থেকে নাস্তা করে গেলাম তারেক আঙ্কেলের দোকানে।বিয়ের সব কাজগুলো ওনাকে অডার দেয়া হলে ওনি কাজ গুলো করে দেন।কি কি লাগবে সব কিছু বলে খাবারের হিসাবটা দিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় আসতেই ভাইয়ার সাথে দেখা।আমাকে দেখে বলল
“নেহাল একটু নাফিজাদের বাসায় যা তো।”
ভাইয়ার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার অবস্থা দেখে বলল
“এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি।নাফিজার নাকি তোর সাথে কিসের জানি কাজ আছে তাই যেতে বলছে।”
আবির আর রানাকে সাথে নিয়ে ভাবিদের বাসায় গেলাম।ভেবেছিলা ফারিয়া হয়তো কোনো কারনে ডেকেছে কিন্তু না।ডেকেছে ভাবির আব্বু।ওনার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওনি ভাইয়ার অফিসের বস।ভাইয়া তার অফিসেই কাজ করে একটা ভালো পোস্টে।এই কারনেই বলি ভাইয়া আব্বুর বিজনেস না সামলিয়ে অন্য জব কেনো করলো।
ওনি যেই কারনে আমাকে ডেকেছে তা হল এখন ওনার সাথে গিয়ে বিয়ের সব আয়োজনে সাহায্য করতে হবে।তাদের তো কোনো ছেলে নেই।তার মধ্যে নাফিজা ভাবি বলেছি আমি নাকি ফারিয়ার ফ্রেন্ড তাই ভাবি আমাকে ডেকে আনিয়েছে।
ভাবির আব্বুর সাথে সারাদিন থেকে সব আয়োজন করে সন্ধ্যার ওনাদের বাসায় আসলাম।সাথে আমার ফ্রেন্ডরাও ছিল।কিন্তু ওরা শুধু সাথেই ছিল সব কিছু আমাকেই করতে হয়েছে।ভাবিদের বাসায় এসে নাস্তা করা শেষে ভাবির আব্বু আমাকে ওনার রুমে ডেকে পাঠালেন।আমি ওনার রুমে গিয়ে কিছুসময় কথা বলে আসার সময় আমাকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল।সেটা দেখে আমি বললাম
“আঙ্কেল আপনি কি আমাকে আপনার ছেলের মত মনে করেন নাকি নাফিজা ভাবির দেবর মনে করেন?”
“নেহাল তোমাকে আমার ছেলে মতই মনে করি।কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেনো বললে?”
“আপনার যদি আজ কোনো ছেলে থাকতো তাহলে সেও তো আপনার সাথে আজ বিয়ের কাজে সাহায্য করতো তাই না।”
“হ্যা সেটা তো করতো।”
“তাকেও কি আপনি এইভাবে এইরকম প্যাকেট এগিয়ে দিতেন।”
আঙ্কেল চুপ করে কিছুসময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।পরে প্যাকেটটা পাশে রেখে আমাকে তার ডান পাশে বসতে ইশারা করলো।আমি তার পাশে বসতেই ওনি বলল
“আসলে আমি তোমাকে সেই হিসেবে এটা দেই নি।খুশি হয়ে মন থেকে দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার আচরণে বুঝলাম তুমি নিলয়ের মতই ভালো।আমার কাজে যদি খারাপ লেগে থাকে তাহলে মনে কিছু করিয়ো না।”
“না না কিছু মনে করি নি।শুধু আমাদের জন্য দোয়া করেন তাহলেই আমরা খুশি থাকবো।”
“সেটা তো সবসময় করি।”
আমরা কথা বলছিলাম তখনি ফারিয়া এসে বলল
“বড় আব্বু আসবো?”
“হ্যা ভিতরে আয়।কিছু কি বলবি?”
“হ্যা নেহালকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।কিছু দরকার ছিল।”
“আচ্ছা যা।যাও নেহাল।পারলে মাঝেমধ্যে আমাদের সাথে দেখা করে যেও।”
মাথা নেড়ে হ্যা বলে ফারিয়ার সাথে চলে গেলাম।ফারিয়া আমাকে নিয়ে একটা রুমে গেল।রুমটাতে কেউ ছিল না।আমাকে রুমে বসিয়ে ফারিয়া চলে গেল।কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরে আসলো সাথে কিছু খাবার নিয়ে।পাশে বসে খাইয়ে দিয়ে বলল
“সারাদিন অনেক কাজ করতে হয়েছে তাই না।ইস মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।”
“আরে মাত্রই তো খেলাম আবার খেতে পারবো না।আর তেমন তো কাজ ছিল না হালকা কিছু কাজ ছিল।”
“চুপ করে বসো খাও তো।বেশি কথা বলো না।”
আর কিছু বললাম না।ফারু খুব যত্ন সহকারে খাইয়ে দিল।খাওয়া শেষ করে ভাবি আর তার আম্মুর সাথে দেখা করে বন্ধুদের নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।বাসায় আসার সময় রানা বলল
“নেহাল ফারিয়া যে তোর ফ্রেন্ড হয় সেটা তো আমাদের আগে বলিস নি?”
“আরে এইখানে বলার কি আছে।”
আবির বলল
“নেহাল একটা মেয়েকে দেখলাম খুব সুন্দর।তুই কি চিনিস মেয়েটাকে?”
“দেখলে হয়তো চিনবো।আবার দেখে বলিস তাহলে বলতে পারবো।”
“আচ্ছা।”
রানা বলল
“আচ্ছা ফারিয়া কি সিঙ্গেল?মানে ওর কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”
#চলবে…