#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_০৬
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
আর কিছু বললাম না।ফারু খুব যত্ন সহকারে খাইয়ে দিল।খাওয়া শেষ করে ভাবি আর তার আম্মুর সাথে দেখা করে বন্ধুদের নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।বাসায় আসার সময় রানা বলল
“নেহাল ফারিয়া যে তোর ফ্রেন্ড হয় সেটা তো আমাদের আগে বলিস নি?”
“আরে এইখানে বলার কি আছে।”
আবির বলল
“নেহাল একটা মেয়েকে দেখলাম খুব সুন্দর।তুই কি চিনিস মেয়েটাকে?”
“দেখলে হয়তো চিনবো।আবার দেখে বলিস তাহলে বলতে পারবো।”
“আচ্ছা।”
রানা বলল
“আচ্ছা ফারিয়া কি সিঙ্গেল?মানে ওর কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”
“দেখ ফারিয়া সেই রকম মেয়ে না।ওকে নিয়ে উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আনিস না।”
রানা আর কিছু বলল না।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কাজিনদের সাথে কিছুসময় আড্ডা দিলাম।রাতের খাবার শেষে ঘুমানো সময় ভাইয়ার সাথে দেখা।আমাকে দেখে বলল
“তুই আমার ভাই নাকি নাফিজার ভাই?আমার বিয়ের আয়োজন না করে তুই ওর বিয়ের আয়োজন করে দিলি কাহিনী কি?”
“দেখো ভাইয়া প্রথমে তো আমি ইচ্ছে করে ওই বাসাতে যাই নি।ভাবি ডাকিয়ে এনেছে।আর ভাবির আব্বু এমন ভাবে বলল যে তার সাথে না গিয়েও পারলাম না।আর সব থেকে বড় কথা ভাবির কোনো ভাই নেই যে তার আব্বুর সাথে সব কাজে সাহায্য করবে।তাই আমি একটু সাহায্য করে দিয়েছি।তাতে কি হয়েছে বলো?”
ভাইয়া একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে শুয়ে পরলো।আমিও আর কিছু বললাম না।ঘুমিয়ে পরলাম।পরের দিন থেকে বাসার সবাই মহা বেস্ত হয়ে গেল।ডেকোরেশন কাজ রিলেটিভদের কাজ সব মিলিয়ে অনেকটা বেস্ত সময় কেটে গেল।
এর মধ্যে আম্মু হিয়া আর মামির সাথে আমার সেই আগের মত আছে।তাদের কোনো চেঞ্জ দেখতে পেলাম না।গত দুদিন ধরে ফারিয়া আমাদের বাসায় আসতে চাচ্ছে কিন্তু আমি কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে সেটা এড়িয়ে যাচ্ছে।ফারিয়াও কারনটা জানতে চেলো না।আমি ইচ্ছে করেই এখন আমার ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি না।
ফারিয়ার কিছুটা সন্দেহ হল।ফারিয়া ওর বোন নাফিজার কাছে গিয়ে জানতে চাইলো নেহালের বিষয়।
“আপু নেহালের বিষয়ে তুমি কি কিছু জানো?”
“আমি আবার কি জানবো?”
“না নামে আমি কয়েকদিন ধরে ওদের বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু নেহাল আমাকে কিছু একটা বুঝিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে।তুমি কি এই বিষয়ে কিছু জানো?”
“আমার ঠিক জানা নেই।আচ্ছা আমি নিলয়ের সাথে কথা বলে দেখি।নিলয় ঠিকই হয়তো জানে।”
নাফিজা নিলয়কে কল দিয়ে এই বিষয়ে চাইলে নিলয় বলে
“আসলে মামার পরিবারের সাথে নেহালের একটু সমস্যা হয়েছিল।যার কারনে আম্মু কিছুটা রেগে আছে নেহালের উপর।এর জন্যই হয়তো নেহাল ফারিয়াকে এখন পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি রাখছি।”
নাফিজা ফোন রেখে ফারিয়াকে নিলয়ের সাথে ফোনে বলা কথাগুলো বলে।ফারিয়া কিছুটা ভেবে ঠিক করে সে নেহালদের বাসায় যাবে নেহালকে না বলেই।
“আচ্ছা আপু তুমি কি নেহালদের বাসা চিনো?”
“হ্যা চিনি তো।কেনো?”
“ঠিকানাটা দেও তো একটু কাজ আছে।”
“তুই কিন্তু যাস না।কাউকে সাথে নিয়ে যাস।না হলে তোর কিছু হলে তোর আব্বু আমাকে কথা শুনাবে।”
“আরে তুমি সেই সব নিয়ে টেনশন করো না।”
ফারিয়া নাফিজার থেকে ঠিকানা নিয়ে তার এক কাজিনের সাথে নেহালদের বাসায় চলে আসলো।নেহালদের বাসায় এসে বেল বাজাতেই দিয়া এসে দরজা খুলে দিল।ফারিয়াকে দেখে বলল
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?”
“আমি নিলয় ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম।ভাইয়া কি বাসায় আছে?”
“হ্যা আছে তো।ভিতরে আসুন।”
দিয়া ভিতরে গিয়ে নিলয়ের সাথে ফারিয়ার দেখা করিয়ে দিল।ফারিয়া আর নাফিজার কাজিনকে দেখে নিলয় অবাকই হয়েছে।নিলয় বলল
“আরে ফারিয়া তুমি?এইখানে আসবে আমাকে আগে বলো নি কেনো?ইস তাহলে আগেই আম্মুকে বলে দিতাম তোমার আসার কথা।”
“আরে ভাইয়া এসেছি তো আপনার থেকে কিছু জানতে?”
“আমার কাছে জানতে এত কষ্ট করে আসার কি আছে।ফোনে বললেই তো পারতে।”
“ফোনে হতো না তাই সরাসরি দেখা করতে এসেছি।আচ্ছা নেহালের সাথে কি কোনো সমস্যা হয়েছে আপনার মামার পরিবারের?”
ফারিয়ার কথা শুনে নিলয় কিছুটা চমকে গেল।ফারিয়া হঠাৎ এই সব জানতে যাচ্ছে কেনো?
“তুমি হঠাৎ এই সব জানতে চাচ্ছো কেনো?”
“নেহাল আপনার আম্মুর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছে না।আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।বলেন না ভাইয়া”
“তুমি কিন্তু নেহালকে বলো না আমি তোমাকে এই বিষয়ে বলেছি।”
“আরে না ওকে কিছুই বলবো না।”
“আসলে একটু আগে যে মেয়েটা তোমাকে এইখানে নিয়ে এসেছে ও আমার মামাতো বোন দিয়া।দিয়া নাকি নেহালকে পছন্দ করে।কিন্তু নেহাল দিয়ার বড় বোন হিয়াকে পছন্দ করতো।দিয়া সাথে নেহালের এইটা নিয়ে কিছু সমস্যা হয় সেটা আমি ঠিক জানি না।একদিন দিয়া বলে নেহাল নাকি দিয়ার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছে।এইটা শুনেই আম্মু নেহালের সাথে কথা বলে না।নেহাল কিন্তু ওমন ছেলে না।”
“আমি জানি ভাইয়া নেহাল কেমন।তা আপনার আম্মু কোথায় এখন?”
“আম্মু তো মনে হয় রুমেই আছে।কেনো?”
“ওনার সাথে একটু দেখা করে যাই।এত কষ্ট করে যখন এসেছি দেখা না করে যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
নিলয় ফারিয়া আর নাফিজার কাজিনকে নিয়ে তার আম্মুর রুমে গেল।ওদেরকে নাফিজার কাজিন বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিলয় চলে আসে।আম্মু বলল
“কেমন আছো তোমার?”
নাফিজা বলে
“আমরা আন্টি ভালোই আছি।আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি।”
“আন্টি নেহালকে তো দেখছি না।নেহাল কোথায়?”
“তুমি নেহালকে কিভাবে চিনো?”
“আমি আর নেহাল তো একই ভার্সিটি পড়াশুনো করেছি।”
“ওহ আচ্ছা।”
“জানেন আন্টি নেহাল না খুব ভালো।আমি ওর সাথে কত কিছু করি কিন্তু কোনো দিন আমার সাথে খারাপ কিছু করে নি।নেহালকে দেখে বুঝা যায় ও কত ভালো পরিবারের ছেলে।একবার ভার্সিটিতে এক মেয়ে বলছে নেহাল নাকি খারাপ ছেলে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নি।আমি জানি নেহাল কেমন ছেলে।কারো শুনা কথা শুনে আমি নেহালকে অবিশ্বাস করি নি।আচ্ছা আন্টি আজ তাহলে আসি।”
ফারিয়া নাফিজার কাজিনের সাথে চলে আসলো।এই দিকে নিলয়ের আম্মু নেহালের বিষয়টা ভাবতে থাকলো।আমি সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যার বাসায় আসলাম।দেখলাম আম্মু আমার রুমে।আমাকে দেখে কিছু না বলে আম্মু বেড়িয়ে গেল।আমিও কিছুটা অবাকই হয়েছি।হঠাৎ আম্মু আজ আমার রুমে?পরে আর তেমন ভাবলাম না।হয়তো কিছু একটা নিতে এসেছিল।
আগামীকাল থেকে সবাই শপিং এ যাবে।তাই সকালে উঠেই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো।আমি গিয়েছিলাম কারন ভাইয়া জোড় করে নিয়ে এসেছে।শপিং এ গিয়ে বারবার হিয়ার সাথে চোখাচোখি হচ্ছে আর হিয়া বিরক্ত নিয়ে সেই জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে।তাই কিছুটা বিরক্ত হয়ে আমি সেইখান থেকে চলে আসি।
রাতে সবাই শপিং থেকে বাসায় ফিরে আসে।আমি তখন ছাদে ছিলাম।মনে হল কেউ আমার পিছনে দারিয়ে আছে।তাকিয়ে দেখি দিয়া।দিয়াকে দেখে বললাম
“কিরে এইখানে কি করিস?”
“তেমন কিছু না এমনেই আসলাম।তুমি কি করছিলে ভাইয়া?”
“ভালো লাগছিল না তাই এসেছিলাম।”
“হিয়া আপুকে কি এখনো পছন্দ করো?”
#চলবে…